পাহাড়ে যেসব বাঙ্গালীরা থাকেন ওদের মধ্যে কি বাঙ্গালী ভদ্রলোক নাই? নাকি সবাই শুধু সেটেলার?
(১)
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীরা বসবাস করছে আজকে থেপারে রাঙ্গামাটি যখন ছোট্ট একটা টাউন ছিল, যখন সবাই সবাইকে সেই টাউনে চিনত, রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রামে আসা যখন একটা সারা দিনের অভিযান ছিল সেই সময়েও রাঙ্গামাটিতে বাঙ্গালীরা বসবাস করতো। শুধু রাঙ্গামাটি না, রাঙ্গামাটির বাইরে আরও উপরে দুর দূরান্তে বাঙ্গালীরা বসবাস করতো। ওরা ব্যাবসা বাণিজ্য করতে সমতল ভূমি থেকে পাহাড়ে গিয়েছে, সেখানে থেকে গেছে, বাড়িঘর করেছে, মিশে গেছে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে। ব্যাবসা বাণিজ্য মূলত সেইসব বাঙ্গালীরাই করতো। অন্তত রাঙ্গামাটির কথা বলতে পারি, পাহাড়িরা খুবই সহজ সরল জীবন যাপন করতো তখন (এখনো করে, তবে বদলে গেছে অনেকখানি)। বাঙ্গালী ব্যাবসায়ীরা ওদেরকে টুকটাক ঠকাত, তারপরেও ভালোই ছিল ওরা। সেসময় পাহাড়ি বসত করতে যাওয়া লোকেদের সাথে পাহাড়ি এই বোকাসোকা মানুষগুলির একধরনের লাভ-হেইট সম্পর্ক ছিল। বাঙ্গালীদের মনে ওদের প্রতি একটু সম্মান সহানুভূতিও ছিল বটে। মনে রাখতে হবে সেই বাঙ্গালীরা জানতো এবং স্বীকার করতো যে আমরা পাহাড়িদের এলাকায় বাস করি- আদিবাসী কথাটা তখন বাংলায় বেশী চলত না, কিন্তু বাঙ্গালীরা ঠিকই জানত এবং মানতো যে পাহাড়িরাই সেখানকার মুল, আজকে যাকে বলে আদিবাসী।
সেখানেও দ্বন্দ্ব একটা ছিল। পাহাড়ি বাঙ্গালীর মধ্যে সেই সময়ের দ্বন্দ্বটা মূলত ছিল ব্যাবসায়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। সেরকম কোন বড় ব্যাবসা না, দোকানদারি মহাজনি ঠিকাদারি এইসবই ছিল ব্যাবসা। পাহাড়িরা সেই সময় খুব একটা ব্যাবসা বাণিজ্য করতো না, যদিও বিশেষ এলাকা হিসেবে পাহাড়িরা ব্রিটিশ আমল থেকেই বিশেষ সুবিধা এসব ভোগ করতো।
(২)
মুশকিল হয়েছে জিয়াউর রহমান যাদেরকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করার জন্যে নিয়ে গিয়ে সেখানে বসিয়েছে ওদের নিয়ে। এরা সেখানে গেছেই একটা শত্রুভাবাপন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। এরা সেখানে গেছেই সেখানকার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করার জন্যে। এরা সেখানে গেছেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেখানকার আদবাসিদেরকে সংখ্যালঘু বানিয়ে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে। এরা সেখানে গেছেই পার্বত্য এলাকার বহু প্রকৃতি, অরণ্য জিববৈচিত্র্য সবকিছু ধ্বংস করে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে। ক্ষমতা থাকলে ওরা গোটা পার্বত্য এলাকাকে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে সমতল ভূমি বানিয়ে সেটাকে নোয়াখালী ময়মনসিংহ কিংবা রংপুর দিনাজপুর বানিয়ে ফেলতো। আমরা এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে নানারকম সমস্যা তৈরি করার জন্যে যেই সেটেলারদের কথা বলি, এরা হচ্ছে তারা। জেনেরাল জিয়াউর রহমান যাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়েছিল।
পাহাড়ের সবকিছুর প্রতিই সেটেলারদের তীব্র ঘৃণা। সেটেলারদের এতদিনে দ্বিতীয় প্রজন্মও চলে এসেছে। ওরা পাহাড়ের যা কিছু আদি তার সবকিছুই ঘৃণা করে। ওরা আদিবাসীদেরকে দেখতে পারেনা, আদিবাসীদের সংস্কৃতি সহ্য করতে পারেনা সেকথা তো আমরা জানিই। এরা ফারের প্রকৃতিও অপছন্দ করে। ওরা চায় সব পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলা হোক, সেখানে ইমারত বানাবে ওরা, মার্কেট হোটেল, শুঁড়িখানা, পতিতালয়। দুর দূরান্তে পাহাড়ের ঢাল কেটে সেখানে সেটেলাররা একটা পাঞ্জেগানা নামাজের জায়গা বানাবে। আপনি তাকে না পারবেন বাধা দিতে বা পারবেন সেই পাঞ্জেগানার ঘর বন্ধ করে দিতে। ওরা পাহাড় কেটে মসজিদ বানাবে মাদ্রাসা বানাবে। সেখানে সমতল থেকে আরও লোক নিবে, আরও বাচ্চা ফুটাবে। তারপর একদিন পাশের কিয়াংটা ভেঙ্গে ফেলবে।
(৩)
সেটেলারদের সাথে আলাপ করে দেখবেন, বা ওদের বাচ্চাদের সাথে। ওরা আপনাকে বলবে ওরা পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্ননয়ন চায়। উন্নয়ন মানে কি? উন্নয়ন মানে নাকি আরও বিল্ডিং আরও বন ধ্বংস, আরও পাহাড় ধ্বংস। উন্নয়ন মানে নাকি সমতল ভূমি থেকে আরও মানুষ নিয়ে গিয়ে সেখানে আদিবাসীদেরকে সংখ্যালঘু বানিয়ে দেওয়া। উন্নয়ন মানে নাকি রাঙ্গামাটি শহরে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে সেখানে শত শত সমতলভূমির লোক নিয়ে গিয়ে চাকরি দেওয়া, হাজার হাজার সমতলভূমির ছেলেমেয়ে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো।
আপনি হয়তো ভয়ে ভয়ে বলতে চাইবেন তাইলে এখানকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, আদিবাসীদের জীবনযাত্রার ধরন, প্রকৃতি, পরিবেশ এদের কি হবে? এখানকার আদিবাসীদের ভূমির অধিকারের কি হবে? সেটেলাররা আপনাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিবে। ওদের কথা হচ্ছে। 'আদিবাসী? কিসের আদিবাসী? চাকমারা ত্রিপুরারা এখানে আদিবাসী না। এখানে কোন আদিবাসী নাই। বাংলাদেশের আইনে সংবিধানে কোন আদিবাসীর কথা বলা হয়নাই, আদিবাসী শব্দ ব্যাবহার করা হয়নাই। খামোশ! ঐ শব্দই মুখে আনবেন না।' আপনাকে থেমে যেতেই হবে। কেননা আমাদের সরকারও এরকমই বলে, আদিবাসী শব্দ ব্যাবহার করা যাবেনা।
আপনি হয়তো মিন মিন করে বলবেন, 'না মানে পাহাড়ের সংস্কৃতি ভাষা ঐতিহ্য এইগুলি একটু খেয়াল রাখতে হবেনা!' ওরা আপনার মুখের উপর তুরি মেরে আপনার কোথা উড়িয়ে দিবে। 'পাহাড়ের চুড়ায় জুম চাষ করা আর জঙ্গলে বসে দচুয়ানি খাওয়া কোন সংস্কৃতি না। এগুলি সব তুলে দিতে হবে। এটা একটা মুসলিম কান্ট্রি। তাছাড়া এগুলি দেখলে উন্নয়ন হবেনা।'
সাবধান। ভুলেও সেটেলারদের সাথে আদিবাসী অধিকার মানবাধিকার নির্যাতন ইত্যাদি নিয়ে তর্ক করবেন না। আপনি যত বিশিষ্ট লোকই হন না কেন, আপনাকে মাইর দিতে পারে।
(৪)
আমি দীঘিনালার ঘটনা নিয়ে একটা স্ট্যাটাস লিখেছিলাম বলে কয়েকটা ছেলে ইনবক্সে আর মন্তব্যে আজেবাজে গালি ফালি দিয়েছে। এরকম ঘটনা নতুন না। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলারদের হাতে আদিবাসী শিশু ধর্ষণেরও যদি আপনি প্রতিবাদ করেন ওরা এসে তর্ক জুড়ে দিবে। পাহাড়িরা নাকি সন্ত্রাসী, ইউপিডিএফ চাঁদাবাজি করে ইত্যাদি। আমি বলি, তো ইউপিডিএফ কার কাছে থেকে চাঁদা তুলেছে সেজন্যে শিশু ধর্ষণ জায়েজ হয়ে গেল? ওরা বলে, তা হয়না, কিন্তু আপনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা বুঝতে পারছেন না, ঢাকায় বসে বসে ফেসবুকে এইসব লেখা সহজ, সাহস থাকলে রাঙ্গামাটি এসে কয়েক রাত ঘুমিয়ে যান।
আমি ওদের যুক্তি বুঝিনা। এই কথা বললেই ওরা আরও গালি দেয়।
আমি সেইসব বিশাল পণ্ডিত সেটেলার নওজোয়ান ভাতিজাদেরকে বলি, বাবুরে, তোমার যদি এতই উন্নয়নের শখ শিক্ষা বিস্তারের শখ ইমারত নিরমানের শখ, তো যাও না কেন তোমার বাপের জেলা ময়মনসিংহ দিনাজপুর নোয়াখালী বরিশাল কিংবা রংপুরে, সেখানে গিয়ে তোমার উন্নয়ন বিদ্যার খেইল দেখাও। সেখানে ইমারত বানাও মার্কেট বানাও হোটেল বানাও শুঁড়িখানা বানাও। আমরাও না হয় যাবো সেখানে বটুয়া ভরে টাকা নিয়ে। আর কিছু বললাম না।
(৫)
একটা তথ্য দিয়ে রাখি। রাঙ্গামাটি জেলায় জামাত শিবির ঢুকেছে সেটেলারদেরই হাত ধরে। রাঙ্গামাটির কোথা বিশেষভাবে জানি, কারন শিবির যখন রাঙ্গামাটিতে প্রথম প্রকাশ্যে আসে আমি তখন রাঙ্গামাটি কলেজেই পড়ি। ওদের কাজকর্ম সম্পর্কে সম্যক ওয়াকেবহাল ছিলাম। অনুমান করি পাহাড়ের অন্যান্য স্থানেও জামাত শিবির একইভাবে ঢুকেছে।
--
লেখক- ইমজিয়াজ মাহমুদ
রাঙামাটি সরকারী কলেজের সাবেক ছাত্র ও আইনজীবি
https://m.facebook.com/imtiaz.mahmood/about?refid=17
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীরা বসবাস করছে আজকে থেপারে রাঙ্গামাটি যখন ছোট্ট একটা টাউন ছিল, যখন সবাই সবাইকে সেই টাউনে চিনত, রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রামে আসা যখন একটা সারা দিনের অভিযান ছিল সেই সময়েও রাঙ্গামাটিতে বাঙ্গালীরা বসবাস করতো। শুধু রাঙ্গামাটি না, রাঙ্গামাটির বাইরে আরও উপরে দুর দূরান্তে বাঙ্গালীরা বসবাস করতো। ওরা ব্যাবসা বাণিজ্য করতে সমতল ভূমি থেকে পাহাড়ে গিয়েছে, সেখানে থেকে গেছে, বাড়িঘর করেছে, মিশে গেছে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে। ব্যাবসা বাণিজ্য মূলত সেইসব বাঙ্গালীরাই করতো। অন্তত রাঙ্গামাটির কথা বলতে পারি, পাহাড়িরা খুবই সহজ সরল জীবন যাপন করতো তখন (এখনো করে, তবে বদলে গেছে অনেকখানি)। বাঙ্গালী ব্যাবসায়ীরা ওদেরকে টুকটাক ঠকাত, তারপরেও ভালোই ছিল ওরা। সেসময় পাহাড়ি বসত করতে যাওয়া লোকেদের সাথে পাহাড়ি এই বোকাসোকা মানুষগুলির একধরনের লাভ-হেইট সম্পর্ক ছিল। বাঙ্গালীদের মনে ওদের প্রতি একটু সম্মান সহানুভূতিও ছিল বটে। মনে রাখতে হবে সেই বাঙ্গালীরা জানতো এবং স্বীকার করতো যে আমরা পাহাড়িদের এলাকায় বাস করি- আদিবাসী কথাটা তখন বাংলায় বেশী চলত না, কিন্তু বাঙ্গালীরা ঠিকই জানত এবং মানতো যে পাহাড়িরাই সেখানকার মুল, আজকে যাকে বলে আদিবাসী।
সেখানেও দ্বন্দ্ব একটা ছিল। পাহাড়ি বাঙ্গালীর মধ্যে সেই সময়ের দ্বন্দ্বটা মূলত ছিল ব্যাবসায়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। সেরকম কোন বড় ব্যাবসা না, দোকানদারি মহাজনি ঠিকাদারি এইসবই ছিল ব্যাবসা। পাহাড়িরা সেই সময় খুব একটা ব্যাবসা বাণিজ্য করতো না, যদিও বিশেষ এলাকা হিসেবে পাহাড়িরা ব্রিটিশ আমল থেকেই বিশেষ সুবিধা এসব ভোগ করতো।
(২)
মুশকিল হয়েছে জিয়াউর রহমান যাদেরকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করার জন্যে নিয়ে গিয়ে সেখানে বসিয়েছে ওদের নিয়ে। এরা সেখানে গেছেই একটা শত্রুভাবাপন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। এরা সেখানে গেছেই সেখানকার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করার জন্যে। এরা সেখানে গেছেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেখানকার আদবাসিদেরকে সংখ্যালঘু বানিয়ে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে। এরা সেখানে গেছেই পার্বত্য এলাকার বহু প্রকৃতি, অরণ্য জিববৈচিত্র্য সবকিছু ধ্বংস করে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে। ক্ষমতা থাকলে ওরা গোটা পার্বত্য এলাকাকে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে সমতল ভূমি বানিয়ে সেটাকে নোয়াখালী ময়মনসিংহ কিংবা রংপুর দিনাজপুর বানিয়ে ফেলতো। আমরা এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে নানারকম সমস্যা তৈরি করার জন্যে যেই সেটেলারদের কথা বলি, এরা হচ্ছে তারা। জেনেরাল জিয়াউর রহমান যাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়েছিল।
পাহাড়ের সবকিছুর প্রতিই সেটেলারদের তীব্র ঘৃণা। সেটেলারদের এতদিনে দ্বিতীয় প্রজন্মও চলে এসেছে। ওরা পাহাড়ের যা কিছু আদি তার সবকিছুই ঘৃণা করে। ওরা আদিবাসীদেরকে দেখতে পারেনা, আদিবাসীদের সংস্কৃতি সহ্য করতে পারেনা সেকথা তো আমরা জানিই। এরা ফারের প্রকৃতিও অপছন্দ করে। ওরা চায় সব পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলা হোক, সেখানে ইমারত বানাবে ওরা, মার্কেট হোটেল, শুঁড়িখানা, পতিতালয়। দুর দূরান্তে পাহাড়ের ঢাল কেটে সেখানে সেটেলাররা একটা পাঞ্জেগানা নামাজের জায়গা বানাবে। আপনি তাকে না পারবেন বাধা দিতে বা পারবেন সেই পাঞ্জেগানার ঘর বন্ধ করে দিতে। ওরা পাহাড় কেটে মসজিদ বানাবে মাদ্রাসা বানাবে। সেখানে সমতল থেকে আরও লোক নিবে, আরও বাচ্চা ফুটাবে। তারপর একদিন পাশের কিয়াংটা ভেঙ্গে ফেলবে।
(৩)
সেটেলারদের সাথে আলাপ করে দেখবেন, বা ওদের বাচ্চাদের সাথে। ওরা আপনাকে বলবে ওরা পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্ননয়ন চায়। উন্নয়ন মানে কি? উন্নয়ন মানে নাকি আরও বিল্ডিং আরও বন ধ্বংস, আরও পাহাড় ধ্বংস। উন্নয়ন মানে নাকি সমতল ভূমি থেকে আরও মানুষ নিয়ে গিয়ে সেখানে আদিবাসীদেরকে সংখ্যালঘু বানিয়ে দেওয়া। উন্নয়ন মানে নাকি রাঙ্গামাটি শহরে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে সেখানে শত শত সমতলভূমির লোক নিয়ে গিয়ে চাকরি দেওয়া, হাজার হাজার সমতলভূমির ছেলেমেয়ে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো।
আপনি হয়তো ভয়ে ভয়ে বলতে চাইবেন তাইলে এখানকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, আদিবাসীদের জীবনযাত্রার ধরন, প্রকৃতি, পরিবেশ এদের কি হবে? এখানকার আদিবাসীদের ভূমির অধিকারের কি হবে? সেটেলাররা আপনাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিবে। ওদের কথা হচ্ছে। 'আদিবাসী? কিসের আদিবাসী? চাকমারা ত্রিপুরারা এখানে আদিবাসী না। এখানে কোন আদিবাসী নাই। বাংলাদেশের আইনে সংবিধানে কোন আদিবাসীর কথা বলা হয়নাই, আদিবাসী শব্দ ব্যাবহার করা হয়নাই। খামোশ! ঐ শব্দই মুখে আনবেন না।' আপনাকে থেমে যেতেই হবে। কেননা আমাদের সরকারও এরকমই বলে, আদিবাসী শব্দ ব্যাবহার করা যাবেনা।
আপনি হয়তো মিন মিন করে বলবেন, 'না মানে পাহাড়ের সংস্কৃতি ভাষা ঐতিহ্য এইগুলি একটু খেয়াল রাখতে হবেনা!' ওরা আপনার মুখের উপর তুরি মেরে আপনার কোথা উড়িয়ে দিবে। 'পাহাড়ের চুড়ায় জুম চাষ করা আর জঙ্গলে বসে দচুয়ানি খাওয়া কোন সংস্কৃতি না। এগুলি সব তুলে দিতে হবে। এটা একটা মুসলিম কান্ট্রি। তাছাড়া এগুলি দেখলে উন্নয়ন হবেনা।'
সাবধান। ভুলেও সেটেলারদের সাথে আদিবাসী অধিকার মানবাধিকার নির্যাতন ইত্যাদি নিয়ে তর্ক করবেন না। আপনি যত বিশিষ্ট লোকই হন না কেন, আপনাকে মাইর দিতে পারে।
(৪)
আমি দীঘিনালার ঘটনা নিয়ে একটা স্ট্যাটাস লিখেছিলাম বলে কয়েকটা ছেলে ইনবক্সে আর মন্তব্যে আজেবাজে গালি ফালি দিয়েছে। এরকম ঘটনা নতুন না। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলারদের হাতে আদিবাসী শিশু ধর্ষণেরও যদি আপনি প্রতিবাদ করেন ওরা এসে তর্ক জুড়ে দিবে। পাহাড়িরা নাকি সন্ত্রাসী, ইউপিডিএফ চাঁদাবাজি করে ইত্যাদি। আমি বলি, তো ইউপিডিএফ কার কাছে থেকে চাঁদা তুলেছে সেজন্যে শিশু ধর্ষণ জায়েজ হয়ে গেল? ওরা বলে, তা হয়না, কিন্তু আপনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা বুঝতে পারছেন না, ঢাকায় বসে বসে ফেসবুকে এইসব লেখা সহজ, সাহস থাকলে রাঙ্গামাটি এসে কয়েক রাত ঘুমিয়ে যান।
আমি ওদের যুক্তি বুঝিনা। এই কথা বললেই ওরা আরও গালি দেয়।
আমি সেইসব বিশাল পণ্ডিত সেটেলার নওজোয়ান ভাতিজাদেরকে বলি, বাবুরে, তোমার যদি এতই উন্নয়নের শখ শিক্ষা বিস্তারের শখ ইমারত নিরমানের শখ, তো যাও না কেন তোমার বাপের জেলা ময়মনসিংহ দিনাজপুর নোয়াখালী বরিশাল কিংবা রংপুরে, সেখানে গিয়ে তোমার উন্নয়ন বিদ্যার খেইল দেখাও। সেখানে ইমারত বানাও মার্কেট বানাও হোটেল বানাও শুঁড়িখানা বানাও। আমরাও না হয় যাবো সেখানে বটুয়া ভরে টাকা নিয়ে। আর কিছু বললাম না।
(৫)
একটা তথ্য দিয়ে রাখি। রাঙ্গামাটি জেলায় জামাত শিবির ঢুকেছে সেটেলারদেরই হাত ধরে। রাঙ্গামাটির কোথা বিশেষভাবে জানি, কারন শিবির যখন রাঙ্গামাটিতে প্রথম প্রকাশ্যে আসে আমি তখন রাঙ্গামাটি কলেজেই পড়ি। ওদের কাজকর্ম সম্পর্কে সম্যক ওয়াকেবহাল ছিলাম। অনুমান করি পাহাড়ের অন্যান্য স্থানেও জামাত শিবির একইভাবে ঢুকেছে।
--
লেখক- ইমজিয়াজ মাহমুদ
রাঙামাটি সরকারী কলেজের সাবেক ছাত্র ও আইনজীবি
https://m.facebook.com/imtiaz.mahmood/about?refid=17
No comments
Post a Comment