পানছড়ি লোগাং হত্যাকান্ড

অসীম চাকমা 
(তথ্যসূত্র: অসীম চাকমা পেইজবুক হতে সংগৃহীত)
ছবিটি প্রতিকী স্বরুপ ব্যবহার করা হয়েছে
খাগড়াছড়ি জেলা পানছড়ি উপজেলায় লোগাং হত্যাকান্ড পার্বত্য চট্টগ্রাম ইতিহাসে একটি কলংকিত অধ্যায়। ১৯৯২ সালে ১০ এপ্রিল এ লোমহর্ষক ঘটনাটি সংগঠিত হয়। যা বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করেছিল। এটি ঘটেছিল বিএনপি দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধান মন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সেই সময় পানছড়ি এলাকার ৩৩নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোন কমান্ডার মেজর খালিদ রেজা দায়িত্ব ছিলেন।এই হত্যাকান্ডটি একটি বিরাট উৎসবকে স্তব্ধ করে দেয়। এই ঘটনার আজ পর্যন্ত বিচারতো দূররে কথা, সরকার ঘটনার সত্যতাও স্বীকার করেনি, করেনি। নি¤েœ লোগাং হত্যাকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা গেল :


ঘটনার সূত্রপাতঃ
একটি চাকমা যুবতী লোগাং গ্রামে পুনবার্সিত বাঙ্গালি সুমলমানের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকান্ডের সূত্রপাত। যুবতীটি যখন কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলো সেই সময় কয়েকজন পুনর্বাসিত বাঙ্গালি মুসলমান বা সেটেলার তাকে ধর্ষণ করতে থাকার সময় সে কৃষিকাজের ব্যবহৃত কাশি দিয়ে তাদের একজনকে আঘাত করলে, পরে সে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায়। পরে এই ঘটনা শান্তিবাহিনীর উপর চাপানো হয়। এই হত্যার জবাবে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপস্থিতিতে লোগাং গ্রামের পাহাড়ী ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। পাহাড়ি গ্রামে সেনাবাহিনী, আনসার, ভিডিপি ও সেটেলাররা একযোগে আক্রমণ চালায়। ওরা নিরস্ত্র, হত-দরিদ্র সাধারণ পাহাড়িদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে নির্বিচারে গুলি করে। সেটেলারদের দায়ের আঘাতে প্রাণ যায় অনেকের। হতাহতের সংখ্যা কত হবে, কেউ তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারছেন না। পুরো এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। মৃতের প্রকৃত সংখ্যা সঠিকভাবে নির্ণয় করা না হলেও, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে হাজারের অধিক জুম্ম নারী-পুরুষ-শিশু হত্যার কথা বলা হয়েছে।
সে দিন ১৯৯২ সালে ১০ এপ্রিল প্রতি বছরের ন্যায় “বৈসাবির” উৎসবের প্রস্তুতি পাহাড়িদের ঘরে ঘরে পুরোদমে চলছে। এটি ত্রিপুরাদের বৈসুক, মারমাদের সাংগ্রাই এবং চাকমাদের বিজু- এক সঙ্গে “বৈসাবি” নামে পরিচিত। এটি পাহড়িরা জাতীয় উৎসব হিসাবেই পালন করে থাকে। এই উৎসব তিন দিন ব্যাপি চলে- চৈত্রের শেষ দু’দনি এবং ১লা বৈশাখ। চাকমাদের বিজু উৎসবের প্রথম দিন ফুল বিজু, দ্বিতীয় দিন মূল বিজু, তৃতীয় দিন গইজ্যাপইজ্য বিঝু বলা হয়। এ সময়ে মেয়েরা ৩০ চৈত্র ভোরে পাহাড়ী নদীতে ফুল দিয়ে উৎসব শুরু করেন। নতুন জামাকাপড় পরে ঘুরে বেড়ায় শিশুরা। স্থানে স্থানে নাচ, গানে, অনুষ্ঠান হয়, বাড়িতে বাড়িতে বেড়ায়, খায়। এভাবে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে উৎসব শেষে হয়।
উৎসব শুরুর ঠিক এক দিন আগে লোগাং- এ দরিদ্র, নিরীহ, নিরস্ত্র শত শত মানুষ নিহত হলেন শিশু, নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধ। তখন মধ্যাহ্ন প্রচ- দুপুরে ঘরে ক্লান্ত দুর্বল অসহায় মানুষেরা প্রহর গুনছে। হিং¯্র আক্রমন হল তখনই। খোলা ঘরে কিংবা ঘরে ছিটকিনি দিয়ে আগুন ধরানো হলো শত শত বাড়ীতে। আগুন ধরালো যারা, যারা দা, বটি, লাঠি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপেিয় পড়লো তারা সবল; তাদের বরঞ্চ আগুন নেভানোর দায়িত্ব- দুর্বলকে রক্ষা করার দায়িত্বের কথা বলেই তারা আছে। শত শত ক্ষুদ্র কুটির নিমেষে পুড়ে ছাঁই হয়ে গেল, পুড়ল মানুষ। নারী-শিশু মাথা হাত পা পোড়া আধপোড়া দেখেছেন অনকেইে।

ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণঃ
সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সেটলাররা খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং গুচ্ছগ্রামে বর্বর গণহত্যা সংঘটিত করে। শান্তিবাহিনী কর্তৃক এক বাঙালি রাখাল বালককে হত্যার মিথ্যা অভিযোগে তারা এ হত্যাকান্ড চালায়। এতে কয়েকশত পাহাড়ি হতাহত হয়। অনেকে নিঁখোজ হয়ে যায়। সেদিন শিশু, বৃদ্ধ, নারী কেউই রেহাই পায়নি। অগ্নিসংযোগ করে ছাঁই করে দেওয়া হয় ৭ শতাধিক ঘরবাড়ি।
লোগাং গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে শত শত পাহাড়ি, অধিকাংশ চাকমা বৌদ্ধ নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা ১৩ শতাধিক পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়েছে। এই সংখ্যা সঠিকভাবে নির্ণয়ের কোন উপায় নেই। তবে ১৩ শত না হলে সেটা যে শত শত তাতে কোন সন্দেহ নেই। নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রেও এই সংখ্যা ১৩৮ বলে কেই কেই উল্লেখ করেছেন ।
আরো এক সূত্রে জানা যায়, ঘটনার জের ধরে সেনা-সেটেলার দল প্রায় ১৫০০ পাহাড়ি জনসংখ্যা অধ্যুষিত গ্রামে হামলা চালিয়ে হত্যা করে প্রায় ৪০০ পাহাড়িকে। এতে ৮০০ পাহাড়ি বাড়ী- ঘরে লুটপাট অগ্নিসংযোগ করা হয়। পাশের গ্রামগুলো থেকে প্রায় ২,০০০ হাজার পাহাড়িকে শরনার্থী হয়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হয়। ঘটনার একমাস পড়ে দেখা যায় মানুয়ের পুড়ে যাওয়ার চিহৃ। এ ঘটনাটি অনেকে ষাটের দশকের শেষের দিকে ভিয়েতনামে “মাই মাই” গ্রাম মার্কিন সামরিক আক্রমণের সঙ্গে তুলা করেছে।

গণমাধ্যমের ভূমিকাঃ
  পার্বত্য চট্টগ্রামে তখনকার সময়ের গণমাধ্যমের ভূমিকা নিরপেক্ষ ছিল না। তাদের নিকট হতে বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক সংবাদ পাওয়া কখনও আশা করা যায় না। পাহাড়ের তথ্য-সাংবাদিকতার খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান এই তিন পার্বত্য জেলার সাংবাদিকদের তখন আসলে নিয়ন্ত্রণ করতো নিরাপত্তাবাহিনী বা সেনাবাহিনী। সেনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে তথ্য-সংবাদ পরিবেশনের উপায় ছিলো না। তিন জেলার তিনটি প্রেসক্লাবও উদ্বোধন করেছেন তিন জন মেজর জেনারেল। এ প্রেসক্লাবগুলো হচ্ছে সাংবাদিকদের কবরখানা! কোন একটি ঘটনার সংবাদ পরিবেশন করতে হলে তা ঠিক করে দিতো সেনাবাহিনী।
১০ই নভেম্বর হত্যান্ডের পরের দিন সকাল সাড়ে সাতটার বিবিসির রেডিওতে খাগড়াছড়ি সংবাদদাতার বরাত দিয়ে প্রচার করা হয় উল্টো খবর। লোগাঙে নাকি শান্তিবাহিনীর আক্রমণে মাত্র ১০ জন পাহাড়ি ও তিনজন বাঙালিসহ মোট ১৩ জন মারা গেছেন। এই হলো তখনকার সময়ের পার্বত্য চট্টগ্রামে গণমাধ্যমের ভূমিকা।

বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পরির্দশনে সেনাবাহিনীর বাধা প্রদানঃ
বৈসাবি উপলক্ষে ঢাকা থেকে আগত রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, লেখক, সাংবাদিকরা ১২ এপ্রিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন বা পানছড়ি লোগাং হত্যাকান্ডের স্থান পরিদর্শনের জন্য কয়েকটি ভাঙাচোরা জিপ (স্থানীয় নাম চাঁদের গাড়ি) ভাড়া করে লোগাঙের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন ঢাকা থেকে আগত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ । সফরসঙ্গীর মধ্য ছিলেন প্রয়াত লেখক আখতারুজ্জামন ইলিয়াস, অর্থনীতিবিদ ও লেখক আনু মুহাম্মদ, প্রয়াত ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান শাজাহান, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আহাদ আহমেদ খন্দকার, (তৎকালীন অখন্ড ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি)।
পানছড়ি যাওয়ার পথে পথে চলে নিরাপত্তা তল্লাশী, জেরা, তালিকা ইত্যাদি দিতে হতো। লোগাঙের আগেই চাঁদের গাড়িগুলোকে আটকে দেওয়া হয়, পানছড়ি বাজার সংলগ্ন সেনা চেকপোস্টে। সেখানে হাজির হন ৩৩ নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোন কমান্ডার মেজর খালিদ রেজা। তিনি তখন পানছড়ির জোনের দায়িত্বে ছিলেন। লোগাং যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্নে তুমুল তর্কাতর্কি বাধে দুপক্ষের মধ্যে।
মেজর খালিদের কথা একটাই, লোগাঙে যাওয়া নাকি নিরাপদ নয়। যে কোনো মুহূর্তে সেখানে নাকি শান্তিবাহিনী আবারও পাল্টা হামলা করতে পারে। তাছাড়া, তার সন্দেহ, এরাই হয়তো শান্তি বাহিনীর আমন্ত্রণে লোগাং যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি এসেছে। তাই লোগাং ‘অঘটনের’ জন্য পরোক্ষভাবে তারাও হয়তো জড়িত। নইলে এরা ঘটনার পর পরই সেখানে হাজির হলো কী ভাবে? বিঝু-টিঝু আসলে নাকি ফালতু অজুহাত। এই সফর দলটি ঘটনা স্থলে যেতে না পেরে খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে যতটুকু তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন তা নিয়ে ঢাকায় ফিরে যান।
ঠৈাটকাটা ব্লগার শহদিুল ইসলাম সবুজ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের একটি বিস্মৃতির বিরুদ্ধাচারণমূলক সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আলাপকালে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের হত্যাকান্ডের পর ১৮ এপ্রিল, ১৯৯২ ঢাকায় সংবাদ সম্মলেনের মাধ্যমে এই হত্যাকা-ের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা বলেন। পার্বত্য জেলা ভিত্তিক একটি প্রকাশনা রাডারে সেই প্রতিবেদনটি প্রকাশতি হয়েছিল।
সরকারও এর সত্যতা প্রথমে অস্বীকার করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত এই হত্যাকান্ডটি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং দেশীয় ও আন্তজার্তিক বিরুদ্ধ মতামত, এখনো ক্ষীণও যাতে জোরদার হয়ে উঠতে না পারে সে জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক উর্ধতন সরকারী ব্যক্তি এলাকা সফর করে পাহাড়িদের নিরাপত্তার ব্যাপারে গালভরা আশ্বাস দেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও এলাকা পরির্দশন করে পাহাড়িদের স্বপক্ষে কিছু কথা বলেন, কিন্তু এই ঘটনা তাদের মধ্যে যে বিশেষ কোন ক্রোধ অথবা প্রকৃত বিরোধিতার সৃষ্টি করেছে তার পরিচয় এ বক্তব্যে মধ্যে দেখা যায় না। যেই লাউ সেই কডু।

প্রতিবাদ ও বিক্ষোভঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈসাবি উৎসবের ২ দিন আগে সংঘটিত এ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা পাহাড়ি সমাজ। এই বর্বর হত্যাকান্ডের ফলে বৈসাবি’র আনন্দ উৎসব যেন শোক সাগরে পরিণত হয়। ১৩ এপ্রিল’৯২ উৎসবের মূল দিন খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে হাজার হাজার লোকের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা থেকে আগত রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, লেখক-সাংবাদিকরাও আনন্দ উৎসবের পরিবর্তে আপামর জনগণের সাথে একাত্ম হয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়। খাগড়াছড়ির হাজার হাজার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সেদিন বাঁধ ভাঙা পানির মতো রাজপথে নেমে প্রথম সরকারের বর্বরতার প্রতিবাদ জানান। স্বতঃস্ফুর্তভাবে বৈসাবি উৎসব বর্জন করা হয়। নিহতদের সম্মান জানাতে রান্না করা পাজন (মূল উৎসবের দিন হরেক রকমের সবজি দিয়ে তৈরি খাদ্য বিশেষ) চেঙ্গী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ এপ্রিল’৯২ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় লোগাং অভিমুখে ঐতিহাসিক পদযাত্রা। হাজার হাজার নারী-পুরুষ এতে অংশ নেন। ঢাকা থেকে আসা রাজনৈতিক দলের নেতা, ছাত্র নেতা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী-লেখকরাও পাহাড়ি জনগণের সাথে সংহতি জানিয়ে এই পদযাত্রায় অংশ নেন। সেনাবাহিনীর সকল বাধা-বিঘœ অতিক্রম করে লোগাং পোড়াভিটায় গিয়ে তারা ফুল দিয়ে নিহতদের সম্মান জানান।

মানবাধিকার কর্মীর বিবৃতিঃ
এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৩জন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, লেখক, আইনজীবি, সাংবাদিক, ছাত্রনতো ও মানাবাধিকার কর্মীর যুক্ত বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের নাম হল: ১. পঙ্কজ ভট্টার্চায, সাধারণ সম্পাদক, ন্যাপ; ২. দিলীপ বড়ুয়া সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদশে সাম্যবাদী দল; ৩. নিজামুল হক নাসিম, আইনজীবী, বাংলাদশে সুপ্রীমি কোর্ট; ৪. শাহজাহান মিয়া, সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন; ৫. আনু মুহাম্মদ, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ৬. সৈয়দ হাশমী, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ৭. মোস্তফা ফারুক, কেন্দ্রেীয় নেতা, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল; ৮. আদিলুর রহমান খান শুভ্র, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ৯. সারা হোসনে, ব্যারস্টিার; ১০. নাসির-উদ-দৌজা, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন; ১১. আহাদ আহমেদ, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন; ১২. বিপ্লব রহমান, প্রকাশন সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন; ১৩. প্রিসিলা রাজ, সংবাদদাতা, প্রিয় প্রজন্ম; ১৪. আব্দুল জলিল ভুইঞা, ডেইলী স্টার; ১৫. আখতার আহমেদ খান, বাংলার বাণী; ১৬. সলিমউল্লাহ সেলিম, আলোকচিত্র সাংবাদিক; ১৭. সৈয়দ সারোয়ার আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ অবজারভার; ১৮. গুবীর দাস, ভোরের কাগজ; ১৯. আহমেদ যোবায়ের, দৈনিক জনতা; ২০. রোজালীন কান্তা, হটলাইন, বাংলাদেশ; ২১. শিশির মোড়ল, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ; ২২. মাসুদ আলম, জাতীয় যুব জোট।
বিবৃতিতে কয়েক সুপারিশ পেশ করা হয়। তা হল ঃ
(১) অবিলম্বে লোগাং হত্যাকান্ডের স্বাধীন, নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। পুরো ঘটনা বিস্তারিতভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পর্যায়ক্রমে এতদিন যত হত্যাকান্ড, ধর্ষণ, নিপীড়ন হয়েছে সেই ঘটনাবলীর বিচার বিভাগীয় তদন্তকার্য পরিচালনা করে সকল তথ্য প্রকাশ করতে হবে ও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।
(২) পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ২০ বছরে সৃষ্ট পরিস্থিতি, রাজস্ব ব্যয় ও তার ফলাফল সম্পর্কে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
(৩) পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সমাধানের জন্য বলপ্রয়োগের নীতি বর্জন করে বিষয়টিকে সংসদের অধীনস্থ করতে হবে এবং ঐ সংসদে খোলাখুলি আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৪) সংসদ সদস্য ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে ঐ অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠী-দল ও সামাজিক ব্যক্তিত্বসমূহের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে এবং ঐ অঞ্চলে সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করবার প্রয়োজনীয় পরিবশে সৃষ্টি করতে হবে।
(৫) প্রশাসনকে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে বেসামরিক নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিত্বিমূলক প্রশাসন কার্যকর করতে হবে।
(৬) অঞ্চলের সমগ্র জনগণকে হাতেগোণা কিছু লোকের শান্তিবাহিনীর সঙ্গে এক করে দেখার বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গি বর্জন করতে হবে। ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাসমূহ যাতে নিজ নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে এ দেশের সব মৌলিক অধিকার ধারণ করে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে


তথ্যসূত্রঃ
১) ভোরের কাগজ, আনু মুহাম্মদ, ১লা জুন ১৯৯২ইং।
২) সিএউটি নিউজ ডটকম, “পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এদিন: লোগাং গণহত্যা” ১০ এপ্রিল, ২০১৫ইং।
৩) মুক্তমনা ডটকম, একটি লোমহর্ষক গণহত্যার কাহিনী, বিপ্লব রহমান, ৮এপ্রিল ২০১১ইং।
৪) ঠোটকাটা ডটকম, পোস্ট সাডিয়া, কিছুই দেখিনা, কিছুই শুনি না, কিচুই বুঝি না” আনু মুহান্মদ, ১১এপ্রিল ২০১৫ইং
৫) পার্বত্য চট্টগ্রাম নিপীড়ণ ও সংগ্রাম, সম্পাদনায়- বদরুদ্দীন উমর, সংস্কৃতি প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৭ইং পৃ-২৪,৪৯।
৬) সামহোয়ারইন বল্ক ডটকমনেট “রাঙামাটির কাউখালী কলমপতিতে ১৯৮০ সালের ২৫ মার্চ সংঘটিত গণহত্যা” মিঠুন চাকমা, ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ইং।
৭) রাড়ার, ১৮ এপ্রিল, ১৯৯২ইং।
 

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.