শ্রাবণী পূর্ণিমার তাৎপর্য
লিখেছেনঃ ইলা মুৎসুদ্দী
সপ্তপর্ণী গুহায় প্রথম সঙ্গীতিঃ
তথাগত বুদ্ধের পরিনির্বাণের মাত্র ৩ মাস পরে মগধরাজ অজাতশত্র“র পৃষ্ঠপোষকতায় অরহত মহাকশ্যপ স্থবিরের সভাপতিত্বে রাজগৃহের বেভার পর্বতের সপ্তপর্ণী গুহায় ৫০০ শত অরহত ভিক্ষুদের উপস্থিতিতে প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি বা ভিক্ষু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই শ্রাবণী পূর্ণিমা তিথিতে। তথাগত বুদ্ধের পরিনির্বাণের এত অল্প সময়ের মধ্যে কেন এই সম্মেলন আহবান করা হল, তা অরহত মহাকশ্যপ এর বর্ণনায় আমরা জানতে পারব। কুশীনারায় মল্ল রাজাদের যুগ্ম শালবৃক্ষ তলে তথাগত বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণে নিবৃত্ত হলে মল্লরাজা ও অমাত্যবৃন্দ ভিক্ষুসংঘের অনুমতিক্রমে ভগবানের দেহ সূক্ষ্ম নূতন বস্ত্র দ্বারা আবেষ্টন করত তৎপর সুধুনিত কার্পাস দ্বারা ৫০০ যুগবার বেষ্টন করে স্বর্ণময় তৈলপূর্ণ পাত্রে স্থাপন করতঃ নানাবিধ সুগন্ধি দ্রব্য দ্বারা পূর্ণ করে অপর স্বর্ণময় পাত্র আবৃত করলেন,অতপর উত্তর দক্ষিণ ১২০ হাত, পূর্ব পশ্চিম ১২০ হাত চিতা রচনা করতঃ মল্লরাজাদের নগরের পূর্ব পাশ্বে মুকুট বন্ধন নামক মঙ্গলশালায় তৈলপূর্ণ স্বর্ণময় আধারসহ চিতার উপর ভগবানের দেহ আরোপিত করলেন। সেই সময়ে ভগবান বুদ্ধের অশীতি মহাশ্রাবকের অন্যতম অরহত মহাকশ্যপ তার ৫০০ জন ভিক্ষুসংঘসহ পাবানগর হতে কুশীনারার দিকে আসছিলেন। পথিমধ্যে তিনি এক বৃক্ষমূলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সময়ে আজীবক সম্প্রদায়ভূক্ত এক সন্ন্যাসী রৌদ্রের তাপ নিবারনার্থে এক দিব্য মন্দার পুষ্প মাথার উপর ধরে সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। অরহত মহাকশ্যপ জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলেন যে, সপ্তাহ খানেক আগে তথাগত মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হয়েছেন সেই পরিনির্বাণ স্থানে অনেক স্বর্গীয় পুষ্প পতিত হয়েছে। এই মন্দার পুষ্প সেখান থেকেই সংগৃহীত হয়েছে। অরহত মহাকশ্যপ ধ্যানস্থ হয়ে তথাগতের পরিনির্বাণ সম্পন্ধে নিশ্চিত হলেন। তথাগতের পরিনির্বাণ সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সঙ্গে থাকা আরো ৫০০ জন ভিক্ষু যাঁরা অনেকেই বুদ্ধকে দেখেনি তাঁরা শোকাবেগ সংবরণ করতে না পেরে কেউ বুক চাপড়িয়ে, কেউ মাথায় হাত দিয়ে, কেউ কেউ ছিন্নবৎ ভূতলে পতিত হয়ে ইতস্ততঃ এই বলে ক্রন্দন করছিলেন যে অতিশীঘ্রই ভগবান নির্বাপিত হলেন। অতি শীঘ্রই চক্ষুষ্মান পৃথিবী হতে অর্ন্তহিত হলেন। বিশেষ করে যারা পৃথকজন ভিক্ষু ছিলেন অর্থাৎ মার্গফল প্রাপ্ত হননি তারা কান্না থামাতে পারছিলেন না। সেই ভিক্ষুদের মধ্যে বৃদ্ধকালে প্রব্রজিত সুভদ্র নামে এক ভিক্ষু ছিলেন। তিনি শোকাহত ভিক্ষুগণকে বললেন তোমরা শোক করিও না। বিলাপ করিও না। আমরা এখন সেই তথাগতের বিভিন্ন শাসন, আদেশ ও নির্দেশ হতে মুক্তি পেয়েছি। এখন আমরা যা ইচ্ছা তা করতে পারব। অরহত মহাকশ্যপ ভিক্ষুদের সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, বন্ধুগণ তথাগত বুদ্ধ আমাদের পূর্বেই বলে গেছেন যে, যা কিছু প্রিয় ও আদরণীয় তা থেকে আমাদের পৃথক হতে হবে।যা জাত, ভূত, সংকৃত তা নশ্বর। তাই তথাগতের শরীরও বিনাশ হবে না এমনটি হতে পারে না। কিন্তু ভিক্ষু সুভদ্রের উক্তিতে অরহত মহাকশ্যপ হৃদয়ে বড়ই ব্যথা পাইলেন। মাথায় বব্জ্র পতনের ন্যায় বোধ হইল, ইহাতে তাঁর মহাধর্ম সংবেগ উৎপন্ন হল। ভগবান পরিনির্বাণ হয়েছেন মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছে এখনও তাঁর সুবর্ণময় দেহ ধরণীপৃষ্ঠে বিদ্যমান। ভগবান কর্তৃক অতি কষ্টে স্থাপিত এই শাসনে কোন পাপ ময়লা উৎপন্ন হতে দেয়া যাবে না। এই পাপ বর্ধিত হয়ে আরও পাপ সহায় বৃদ্ধি পাইলে শাসন বিনষ্ট হবে। এই মুহুর্তে এই দুর্বিনীত বৃদ্ধকে চীবরচ্যুত করলে লোকেরা নিন্দা করবে, তারা বলবে তথাগতের মহাপরিনির্বাণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শিষ্যরা পরষ্পর কলহে লিপ্ত হয়েছে অথচ তথাগতের দেহ এখনও বিদ্যমান। এই বিষয়ে এখন নীরব থাকাই উত্তম। ভগবানের দেশিত ধর্ম অসংগৃহীত পুষ্প রাশির ন্যায় রয়েছে।কাজেই ধর্ম বিনয় সংগ্রহ করে তা দৃঢ় সুতায় গ্রথিত পুষ্পরাশির ন্যায় নিশ্চল হবে। মহাকারুণিক বুদ্ধ আমার সাথে চীবর বিনিময় করেছিল,হস্ত উর্ধ্বে উঠিয়ে আমাকে চন্দ্রের সাথে উপনীত করেছিলেন। তাঁর সমস্ত শাসন ৩ বার আমার উপর ন্যস্ত করেছিলেন সুতরায় আমি বেঁচে থাকতে অধর্ম ও অবিনয়বাদীর বিস্তার না ঘটতেই অবশ্যই এই ধর্ম বিনয় সংগ্রহ এবং ভিক্ষু সম্মেলন করব। তবে বিষয়টি তিনি আপাতত গোপন রাখলেন, অতঃপর সশিষ্য কুশীনারার দিকে অগ্রসর হলেন। ঐ সময়ে মল্লরাজাদের মধ্যে ৪ জন প্রধান মল্ল নূতন বস্ত্র পরিধান করে ভগবানের চিতায় বার বার চেষ্টা করেও অগ্নিসংযোগ করতে ব্যর্থ হলেন। অরহত অনিরুদ্ধ স্থবিরকে এর কারণ ও হেতু জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে, যতক্ষণ অরহত মহাকশ্যপ স্থবির তাঁর শিষ্যগণসহ এসে ভগবানের চরণ বন্দনা না করবেন ততক্ষণ চিতায় আগুন প্রজ্জ্বলিত হবে না। তিনি এখন কুশীনারার পথে রয়েছেন। সবাই আশ্চর্য্য হয়ে চেয়ে রইলেন তিনি কেমন ভিক্ষু, যিনি এসে ভগবানের চরণ বন্দনা না করলে চিতা জ্বলবে না? সকলে উদগ্রীব হয়ে তাঁর পথ পানে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর অরহত মহাকশ্যপ চিতার স্থলে এসে চতুর্থ ধ্যানে মগ্ন হয়ে অধিষ্ঠান করলেন, তথাগতের পাদদ্বয় আমার মস্তকে এসে স্থিত হোক অধিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে মহাকারুণিক বুদ্ধের সুবর্ণ বর্ণ পাদদ্বয় স্বর্ণময় তৈল পূর্ণাধার চন্দন চিতা ভেদ করে মহাকশ্যপের কপালে স্থিত হল। তিনি ভগবানের সেই পাদদ্বয় জড়িয়ে ধরে মস্তকে স্থাপন করলেন। উপস্থিত জনতা এই অত্যাশ্চর্য্য ব্যাপার দেখে মহাধ্বনি দিতে লাগলেন, সেই ৫০০ ভিক্ষু যাঁরা আগে অনেকেই বুদ্ধকে দেখেননি তারাও বুদ্ধের পাদদ্বয় বন্দনা করলেন। বন্দনা করা শেষ হলে ভগবানের চিতা আপনা-আপনি জ্বলে উঠল। অতঃপর দাহক্রিয়া শেষ হলে অরহত মহাকশ্যপ সেখানে উপস্থিত ৭ লক্ষ ভিক্ষুর সামনে বৃদ্ধ ভিক্ষু সুভদ্রের অন্যায় উক্তির কথা প্রকাশ করলেন। উপস্থিত ভিক্ষুগণ সুভদ্র ভাষিত উক্তি শুনে ভীষণ মর্মাহত হলেন। অরহত মহাকশ্যপ ধর্ম বিনয় পরিশুদ্ধ করার প্রস্তাব করলে সকলে তা সমর্থন করলেন।উপস্থিত ভিক্ষুগণের অনুরোধে অরহত মহাকশ্যপ বুদ্ধ প্রশংসিত ত্রিপিটক বিশারদ ধর্ম বিনয়ে গভীর জ্ঞানী প্রতিসম্ভিদাপ্রাপ্ত এরূপ ৫০০ অরহত ভিক্ষু নির্বাচন করলেন। আনন্দ স্থবির তখনও অরহত হতে পারেননি বলে তাঁর নাম উল্লেখ করেননি। ভদন্ত আনন্দ স্থবিরের নাম তালিকাভূক্ত করার জন্য উপস্থিত ভিক্ষুসংঘ বিনীতভাবে অনুরোধ জানালে অরহত মহাকশ্যপ তাঁকেও তালিকাভূক্ত করলেন। কারণ তিনি ভগবানের প্রধান সেবক হিসাবে সবসময় কাছে কাছে থাকতেন বিধায় সম্মেলনে স্মৃতিমান আনন্দের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশী। এই সম্মেলন কখন কোথায় অনুষ্ঠিত হবে সেই বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য তালিকাভূক্ত ভিক্ষুদের নিয়ে অরহত মহাকশ্যপ রাজগৃহ অভিমুখে যাত্রা করলেন।অন্যান্য ভিক্ষুসংঘকে তাদের নিজ নিজ বাসস্থানে বা আরামে চলে যাবার নির্দেশ দিলেন। তখন মগধের রাজা ধর্মপ্রাণ অজাতশত্র“ ভিক্ষুসংঘের আগমন সংবাদ পেয়ে খুবই খুশী হলেন এবং অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। রাজগৃহে উপস্থিত হয়ে রাজার নিকট ধর্ম বিনয় সংগায়ন করার প্রস্তাব করলে রাজা তাৎক্ষণিকভাবে সম্মত হয়ে অরহত মহাকশ্যপকে বললেন আপনারা বিশ্বস্থভাবে ধর্ম সংগায়ন করুন আমার রাজাজ্ঞা আপনাদের ধর্মাজ্ঞা সু-প্রতিষ্ঠায় প্রবর্তিত হউক। অতঃপর রাজা ভিক্ষুদের অনুমতিক্রমে সপ্তপর্ণী গুহাদ্বারে পঞ্চশত ধর্মমন্ডপ প্রস্তুত করলেন। দক্ষিণ দিকে উত্তরমুখী করে স্থবিরগণের আসন সু-সজ্জিত করলেন। মন্ডপের মধ্যভাগে পূর্বমুখী করে ভগবানের আসন তুল্য ধর্মাসন নির্মাণ করে দন্ডখচিত ব্যজনী স্থাপন পূর্বক দেবতুল্য চমৎকার এক মন্ডপ তৈরী করালেন।
ভদন্ত আনন্দের অরহত্ত্ব প্রাপ্তি ও সম্মেলনে যোগদানঃ
শ্রাবণী পূর্ণিমার পূর্বদিন ভিক্ষুসংঘ ভদন্ত আনন্দ স্থবিরকে উৎসাহ দিতে লাগলেন।অরহত না হয়ে সম্মেলনে যোগদান করা আপনার উচিত হবে কি? আমাদের অনুরোধে হয়ত আপনাকে তালিকাভূক্ত করেছেন কিন্তু বীর্যবানের পক্ষে ইহা শোভনীয় নয়। ধর্ম ভান্ডারাধ্যক্ষ হিসাবে খ্যাত, তথাগতের সঙ্গে ছায়ার মত বিচরণকারী ধর্ম বিনয়ে পন্ডিত আনন্দ স্থবির লজ্জায় এক রাত্রির মধ্যেই অরহত্ত্ব ফল প্রাপ্ত হওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলেন। আনন্দ ভাবলেন আমাকে অরহত হতে হবে এবং অরহত হয়েই সম্মেলনে যোগদান করতে হবে। সমস্ত রাত্রি তিনি তার মনের শক্তি দিয়ে কায়গত স্মৃতি ভাবনায় রত হলেন। সারারাত্রি অবিশ্রান্ত কঠোর সাধনা করে বিনিদ্র রজনী যাপন করলেন তথাপি তৃষ্ণামুক্ত হতে পারেননি। বার বার বুদ্ধের কথা স্মরণ করছেন, বুদ্ধ বলেছিলেন -- অচিরেই তুমি তৃষ্ণামুক্ত হবে। বুদ্ধবাণী তো মিথ্যা হতে পারে না। হতাশায় ও বেদনায় ক্লান্ত হয়ে শয়ন উদ্দেশ্যে ভূমিতল হতে পদতল উঠাচ্ছেন। হেলে পড়ছেন বালিশে মাথা রাখার ইচ্ছায়। ঠিক সেই সময়েই তিনি অরহত্ত্ব মার্গফল লাভ করলেন। সম্মেলন আরম্ভের কিছুক্ষণ পূর্বেই তিনি তাঁর জন্য রক্ষিত আসনে মাটি ভেদ করে উপবিষ্ট হলেন। উপস্থিত সকলেই বুঝলেন যে আনন্দ বীর্যবানের পরিচয় দিয়েছেন এবং ভিক্ষু করণীয় কাজ সম্পাদন করেছেন। যথাসময়ে অরহত মহাকশ্যপের সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদানের জন্য বিনয়ধর উপালী স্থবিরকে আহবান জানালেন। উপালী স্থবির ধর্মাসনে বসে বিনয় আবৃত্তি করলেন। পূর্বোক্ত নিয়মে আনন্দ স্থবির ধর্মাসনে বসলেন। অরহত মহাকশ্যপ তাঁকে সূত্র ও অভিধর্ম বিষয়ে প্রশ্ন করলেন অরহত আনন্দ স্থবির উত্তর প্রদান করেন। সেই উত্তর যথাযথ হচ্ছে কিনা উপস্থিত ভিক্ষুরা তা পর্যালোচনা করেন। এইভাবে পঞ্চশত অরহত দ্বারা প্রথম সঙ্গীতির কার্য্য সু-সম্পাদিত হয়েছিল বলে ইহা পঞ্চশতিকা সঙ্গীতি নামে অভিহিত।চারমাস ধরে এই সঙ্গীতি চলেছিল। অরহতগণের আবুত্তি পরম্পরা বুদ্ধবাণী চলে আসছিল, অরহতগণ এতই স্মৃতিবহুল ছিলেন যে, তাঁদের কোন বই পুস্তক বা গ্রন্থের প্রয়োজন ছিল না।
শ্রাবণী পূর্ণিমার পূর্বদিন ভিক্ষুসংঘ ভদন্ত আনন্দ স্থবিরকে উৎসাহ দিতে লাগলেন।অরহত না হয়ে সম্মেলনে যোগদান করা আপনার উচিত হবে কি? আমাদের অনুরোধে হয়ত আপনাকে তালিকাভূক্ত করেছেন কিন্তু বীর্যবানের পক্ষে ইহা শোভনীয় নয়। ধর্ম ভান্ডারাধ্যক্ষ হিসাবে খ্যাত, তথাগতের সঙ্গে ছায়ার মত বিচরণকারী ধর্ম বিনয়ে পন্ডিত আনন্দ স্থবির লজ্জায় এক রাত্রির মধ্যেই অরহত্ত্ব ফল প্রাপ্ত হওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলেন। আনন্দ ভাবলেন আমাকে অরহত হতে হবে এবং অরহত হয়েই সম্মেলনে যোগদান করতে হবে। সমস্ত রাত্রি তিনি তার মনের শক্তি দিয়ে কায়গত স্মৃতি ভাবনায় রত হলেন। সারারাত্রি অবিশ্রান্ত কঠোর সাধনা করে বিনিদ্র রজনী যাপন করলেন তথাপি তৃষ্ণামুক্ত হতে পারেননি। বার বার বুদ্ধের কথা স্মরণ করছেন, বুদ্ধ বলেছিলেন -- অচিরেই তুমি তৃষ্ণামুক্ত হবে। বুদ্ধবাণী তো মিথ্যা হতে পারে না। হতাশায় ও বেদনায় ক্লান্ত হয়ে শয়ন উদ্দেশ্যে ভূমিতল হতে পদতল উঠাচ্ছেন। হেলে পড়ছেন বালিশে মাথা রাখার ইচ্ছায়। ঠিক সেই সময়েই তিনি অরহত্ত্ব মার্গফল লাভ করলেন। সম্মেলন আরম্ভের কিছুক্ষণ পূর্বেই তিনি তাঁর জন্য রক্ষিত আসনে মাটি ভেদ করে উপবিষ্ট হলেন। উপস্থিত সকলেই বুঝলেন যে আনন্দ বীর্যবানের পরিচয় দিয়েছেন এবং ভিক্ষু করণীয় কাজ সম্পাদন করেছেন। যথাসময়ে অরহত মহাকশ্যপের সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদানের জন্য বিনয়ধর উপালী স্থবিরকে আহবান জানালেন। উপালী স্থবির ধর্মাসনে বসে বিনয় আবৃত্তি করলেন। পূর্বোক্ত নিয়মে আনন্দ স্থবির ধর্মাসনে বসলেন। অরহত মহাকশ্যপ তাঁকে সূত্র ও অভিধর্ম বিষয়ে প্রশ্ন করলেন অরহত আনন্দ স্থবির উত্তর প্রদান করেন। সেই উত্তর যথাযথ হচ্ছে কিনা উপস্থিত ভিক্ষুরা তা পর্যালোচনা করেন। এইভাবে পঞ্চশত অরহত দ্বারা প্রথম সঙ্গীতির কার্য্য সু-সম্পাদিত হয়েছিল বলে ইহা পঞ্চশতিকা সঙ্গীতি নামে অভিহিত।চারমাস ধরে এই সঙ্গীতি চলেছিল। অরহতগণের আবুত্তি পরম্পরা বুদ্ধবাণী চলে আসছিল, অরহতগণ এতই স্মৃতিবহুল ছিলেন যে, তাঁদের কোন বই পুস্তক বা গ্রন্থের প্রয়োজন ছিল না।
সূত্র ঃ শিক্ষক দীপংকর বড়ুয়া রচিত বুদ্ধ জীবন পরিক্রমা।
No comments
Post a Comment