পুণ্যশীলা জননী
স্মৃতিধর শীলানন্দ মহাস্থবির
মাতাপিতু উপট্ঠানং পুত্তদারস্স সঙ্গহো,
অনাকুলাচ কম্মন্তা এতং মঙ্গল মুত্তমং। (মঙ্গলসূত্র, সুত্তনিপাত)
অথার্ৎ- মাতা-পিতার সেবা করা, স্ত্রী-পুত্রের যথাযথ ভরণ পোষণ করা পঞ্চ বাণিজ্য (অস্ত্র, বিষ, প্রাণী, মদ্য এবং মাছ বা মাংস ব্যবসা) ও অকুশল কর্ম ত্যাগ করে সৎব্যবসা দ্বারাই জীবিকা নির্বাহ করা- উত্তম মঙ্গল।
রাঙ্গুনীয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সুপ্রাচীন কাল থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ভাবাদর্শে প্রতিষ্ঠিত একটি আদর্শ এলাকা হিসাবে প্রতিভাত। দীর্ঘকাল চট্টগ্রাম ও রাঙ্গুনীয়া অঞ্চল বার্মার আরাকান রাজাদের অধীনে ছিল এবং অধিবাসীরা ছিল মারমা, তনচংগ্যা, চাকমা, মগ, বড়–য়া, তালুকদার এবং মুৎসুদ্দী, চৌধুরী গোষ্ঠী সহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপজাতির গোষ্ঠী। তাঁদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অনেক নিদর্শন এখনও সর্বত্র বিদ্যমান। প্রাচীন সুখ বিলাস সুখদেব রাজার রাজধানী এবং রাজানগর চাকমা রাজার রাজধানী। এগুলি রাঙ্গুনীয়ার বৌদ্ধ সভ্যতারও নিদর্শন। চাকমা রাজা পূণ্যশীলা কালিন্দীরাণী ১৮৫৭খ্রি: সর্বপ্রথম থেরবাদী বৌদ্ধ আর্দশে মহাপ-িত সংঘরাজ ভদন্ত সারমেধ মহাস্থবিরের কাছে দীক্ষা গ্রহন করেছিলেন। গুরুদেবের প্রতি সম্মাণে তিনি সম্মাণনা প্রদান করেগৌরবদান করেন। রাজানগর রাজবিহার, বৌদ্ধ সাহিত্যের প্রাচীনতম নির্দশন, অত্রবিহারে প্রথম পবিত্র ভিক্ষুসীমা (পাষাণ সীমা) প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁরই ১৯৫০খ্রি: বদান্যতায় সর্বপ্রথম বৌদ্ধরঞ্জিতা’ গ্রন্থ রচিত এবং প্রকাশিত হয়। পবিত্র ‘পরিবাস’ ব্রত উদযাপন ঐতিহাসিক কীর্তি। চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের এবং উপ-বিহারাধ্যক্ষ পালি বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মায়ানমার সরকার কর্তৃক মহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ উপাধি প্রাপ্ত, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বনায়নে পুরষ্কার প্রাপ্ত, বহুগ্রন্থপ্রণেতা, বৌদ্ধ গবেষক, আন্তর্জাতিক সাংঘিক মনীষা ড. জিনবোধি ভিক্ষু পরমারাধ্য পূজনীয় মাতার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে অগাধ শ্রদ্ধা ও ভক্তি চিত্তে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করার খবর শুনে আমি খুবই আনন্দিত। সরলপ্রাণ নিত্যানন্দ স্থবির, কর্মবীর সুমঙ্গল মহাস্থবির, বিনয়শীল সত্যনন্দ স্থবির, আর্যবংশ স্থবির, রাষ্ট্রপাল সহ অনেক মহাপুরুষের জন্মস্থান ঐতিহ্যবাহী বেতাগী গ্রাম। উক্ত গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত আদর্শ ও ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন স্নেহলতা বড়–য়া। উপযুক্ত বয়সে ঐতিহ্যবাহী ঘাটচেক নিবাসী এক আলোচিত আদর্শ পরিবারের সুসন্তান যামিনী রঞ্জন বড়–য়ার সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। সংসার জীবনে স্নেহলতা বড়–য়ার শিক্ষা দীক্ষায় জ্ঞান ও ধ্যানে, কর্মে, প্রেরণায় একটি আদর্শ পরিবার হিসেবে গড়ে তোলেন। উপাসিকার উদ্যম ও প্রচেষ্ঠায় বিবিধ কুশল কর্ম সম্পাদন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে অত্র গ্রামের আদি বিহারে পবিত্র পরিবাসব্রত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল মহাসমারোহে। তখন থেকে এ গ্রামের সকলের সঙ্গে আমার নিবিড় সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেই ইতিহাস ও স্মৃতি আমার জানা আছে। শ্রদ্ধেয় উপসংঘরাজ সুগতবংশ মহাস্থবির আমাদের রাউজান বিমলানন্দ বিহারে বহু বছর অধ্যক্ষ হিসেবে ছিলেন। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ছিল মধুর। তাঁর শাস্ত্রজ্ঞান ছিল অসাধারণ। রাউজানের সর্বস্তরের বৌদ্ধরা তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন এবং তাঁর জ্ঞানগম্ভীর ধর্মদেশনা শুণে মুগ্ধ ছিলেন। তাঁর জন্মস্থানও একই গ্রামে। নতুন করে ঘাটচেক ধর্মামৃত বিহার নির্মাণের জন্য জিন বোধি ভিক্ষুর বদন্যতায় ভূমিদান সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। রাঙ্গুনীয়ার ঘাটচেক বৌদ্ধ গ্রাম আজ ধন্য ও গৌবরের সাথে স্নেহলতা উপাসিকার বহুবিধ গুণের কথা এক বাক্যের সকলেই স্বীকার করে থাকেন। রতœগর্ভা মাতার ঋণ শোধ করার লক্ষ্যে অতি শ্রদ্ধার সাথে মহান পুণ্যানুষ্ঠান করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ড. জিনবোধি ভিক্ষুর আশা সফল হউক এবং প্রতি আমার একান্ত আর্শীবাদ রইল। এই স্মরণিকা প্রকাশে বৌদ্ধদের বহু উপকার সাধিক হবে বলে আশা করি।
মাতাপিতু উপট্ঠানং পুত্তদারস্স সঙ্গহো,
অনাকুলাচ কম্মন্তা এতং মঙ্গল মুত্তমং। (মঙ্গলসূত্র, সুত্তনিপাত)
অথার্ৎ- মাতা-পিতার সেবা করা, স্ত্রী-পুত্রের যথাযথ ভরণ পোষণ করা পঞ্চ বাণিজ্য (অস্ত্র, বিষ, প্রাণী, মদ্য এবং মাছ বা মাংস ব্যবসা) ও অকুশল কর্ম ত্যাগ করে সৎব্যবসা দ্বারাই জীবিকা নির্বাহ করা- উত্তম মঙ্গল।
রাঙ্গুনীয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সুপ্রাচীন কাল থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ভাবাদর্শে প্রতিষ্ঠিত একটি আদর্শ এলাকা হিসাবে প্রতিভাত। দীর্ঘকাল চট্টগ্রাম ও রাঙ্গুনীয়া অঞ্চল বার্মার আরাকান রাজাদের অধীনে ছিল এবং অধিবাসীরা ছিল মারমা, তনচংগ্যা, চাকমা, মগ, বড়–য়া, তালুকদার এবং মুৎসুদ্দী, চৌধুরী গোষ্ঠী সহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপজাতির গোষ্ঠী। তাঁদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অনেক নিদর্শন এখনও সর্বত্র বিদ্যমান। প্রাচীন সুখ বিলাস সুখদেব রাজার রাজধানী এবং রাজানগর চাকমা রাজার রাজধানী। এগুলি রাঙ্গুনীয়ার বৌদ্ধ সভ্যতারও নিদর্শন। চাকমা রাজা পূণ্যশীলা কালিন্দীরাণী ১৮৫৭খ্রি: সর্বপ্রথম থেরবাদী বৌদ্ধ আর্দশে মহাপ-িত সংঘরাজ ভদন্ত সারমেধ মহাস্থবিরের কাছে দীক্ষা গ্রহন করেছিলেন। গুরুদেবের প্রতি সম্মাণে তিনি সম্মাণনা প্রদান করেগৌরবদান করেন। রাজানগর রাজবিহার, বৌদ্ধ সাহিত্যের প্রাচীনতম নির্দশন, অত্রবিহারে প্রথম পবিত্র ভিক্ষুসীমা (পাষাণ সীমা) প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁরই ১৯৫০খ্রি: বদান্যতায় সর্বপ্রথম বৌদ্ধরঞ্জিতা’ গ্রন্থ রচিত এবং প্রকাশিত হয়। পবিত্র ‘পরিবাস’ ব্রত উদযাপন ঐতিহাসিক কীর্তি। চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের এবং উপ-বিহারাধ্যক্ষ পালি বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মায়ানমার সরকার কর্তৃক মহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ উপাধি প্রাপ্ত, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বনায়নে পুরষ্কার প্রাপ্ত, বহুগ্রন্থপ্রণেতা, বৌদ্ধ গবেষক, আন্তর্জাতিক সাংঘিক মনীষা ড. জিনবোধি ভিক্ষু পরমারাধ্য পূজনীয় মাতার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে অগাধ শ্রদ্ধা ও ভক্তি চিত্তে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করার খবর শুনে আমি খুবই আনন্দিত। সরলপ্রাণ নিত্যানন্দ স্থবির, কর্মবীর সুমঙ্গল মহাস্থবির, বিনয়শীল সত্যনন্দ স্থবির, আর্যবংশ স্থবির, রাষ্ট্রপাল সহ অনেক মহাপুরুষের জন্মস্থান ঐতিহ্যবাহী বেতাগী গ্রাম। উক্ত গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত আদর্শ ও ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন স্নেহলতা বড়–য়া। উপযুক্ত বয়সে ঐতিহ্যবাহী ঘাটচেক নিবাসী এক আলোচিত আদর্শ পরিবারের সুসন্তান যামিনী রঞ্জন বড়–য়ার সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। সংসার জীবনে স্নেহলতা বড়–য়ার শিক্ষা দীক্ষায় জ্ঞান ও ধ্যানে, কর্মে, প্রেরণায় একটি আদর্শ পরিবার হিসেবে গড়ে তোলেন। উপাসিকার উদ্যম ও প্রচেষ্ঠায় বিবিধ কুশল কর্ম সম্পাদন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে অত্র গ্রামের আদি বিহারে পবিত্র পরিবাসব্রত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল মহাসমারোহে। তখন থেকে এ গ্রামের সকলের সঙ্গে আমার নিবিড় সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেই ইতিহাস ও স্মৃতি আমার জানা আছে। শ্রদ্ধেয় উপসংঘরাজ সুগতবংশ মহাস্থবির আমাদের রাউজান বিমলানন্দ বিহারে বহু বছর অধ্যক্ষ হিসেবে ছিলেন। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ছিল মধুর। তাঁর শাস্ত্রজ্ঞান ছিল অসাধারণ। রাউজানের সর্বস্তরের বৌদ্ধরা তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন এবং তাঁর জ্ঞানগম্ভীর ধর্মদেশনা শুণে মুগ্ধ ছিলেন। তাঁর জন্মস্থানও একই গ্রামে। নতুন করে ঘাটচেক ধর্মামৃত বিহার নির্মাণের জন্য জিন বোধি ভিক্ষুর বদন্যতায় ভূমিদান সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। রাঙ্গুনীয়ার ঘাটচেক বৌদ্ধ গ্রাম আজ ধন্য ও গৌবরের সাথে স্নেহলতা উপাসিকার বহুবিধ গুণের কথা এক বাক্যের সকলেই স্বীকার করে থাকেন। রতœগর্ভা মাতার ঋণ শোধ করার লক্ষ্যে অতি শ্রদ্ধার সাথে মহান পুণ্যানুষ্ঠান করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ড. জিনবোধি ভিক্ষুর আশা সফল হউক এবং প্রতি আমার একান্ত আর্শীবাদ রইল। এই স্মরণিকা প্রকাশে বৌদ্ধদের বহু উপকার সাধিক হবে বলে আশা করি।

No comments
Post a Comment