চীনের জনসম্পদ ও বাংলাদেশের জনসম্পদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা (২য় পর্ব)
![]() |
চীনের উৎসব জুড়েই থাকে তাদের সংস্কৃতি |
পুলক কান্তি বড়ুয়া:
দুর্গম মৃত্যুযাত্রায় বাংলাদেশের যে সম্পদ কাতরায় বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে, সেই একই সম্পদ বদলে দিল চীন কে, করে তুলল অর্থনৈতিক পরাশক্তি। কিন্তু কিভাবে? চীন থেকে ঘুরে এসে karunews24.com এর উপদেষ্টা পুলক কান্তি বড়ুয়া, লিখেছেন সেই অজানা কথা। আজ প্রকাশিত হলো ধারাবাহিক লেখার দ্বিতীয় পর্ব:
বর্তমান ব্যবস্থায় জনশক্তি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একাংশ নিরাপদ হয়ে, আরো আরো চাই-এ পরিণত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অথর্ব হয়ে উঠে, অন্য অংশ নিরাপত্তাহীনতায় সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উঠে। যে কারণে সরকার উন্নয়ন করলেও ভোট এর নিশ্চয়তা নাই। কারণ সেই অর্থনৈতিক ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তাহীনতা, মাইগ্রেশন এর মাধ্যমে দেশত্যাগ আমাদের মত দক্ষ জনশক্তি ঘাটতির রাষ্ট্রের জনসম্পদ তৈরী না হওয়ার অন্যতম কারণ। একে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল বিবেচনা করা জরুরী। মেধাবীরা বিপুল অর্থের কারণে অন্য দেশে চলে যায়, বিনিময়ে আমরা যা পাই তা মূলত স্থবির অর্থনীতি, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে না। বরং সমাজ জীবনে অর্থনৈতিক মুদ্রাস্ফীতি তৈরী ও আমাদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য কে চরম ভাবে প্রতিনিয়ত শঙ্করায়িত করে, সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটি করে তা হচ্ছে প্রজন্মের দেশপ্রেম নষ্ট করে দেয়। দেশপ্রেমবিহীন জনগণ জনশক্তিতে পরিণত হয় না। কর্পোরেট কালচারে সে হয় বিদেশী কোম্পানির কেনা গোলাম, তার বিক্রি হয়ে যাওয়া সত্তা একদিন তাকে স্থায়ী অভিবাসী করে তুলে। তার প্রজন্ম আর বাংলায় কথা বলে না, ধীরে ধীরে আমার সম্পদ হয়ে যায় আরেকজনের সম্পদ। ওই মরীচিকা এতই তীব্রতা সৃষ্টি করে যে, সাধারণ গ্রামের শিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত, অদক্ষ জনগণ জমি বিক্রি, ধার দেনা, ধর্ম বিক্রি করে বৈধ উপায়ে না পারলে, অবৈধ উপায়ে জীবনের সমস্ত ঝুঁকি নিয়ে সে পাড়ি দিতে চায় সেই সব দেশে। হতে চায় ওদের মত, থেকে যেতে চায় সারাজীবন। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে দেশপ্রেমহীনতা তৈরি হয়। কিন্তু ওরা জানে না, ওখানে দক্ষ জনগোষ্ঠীর বাইরে অন্যদের জীবন নরকের মতই দুর্বিষহ। এই মানুষগুলো ওখানে গিয়ে যে নিয়মানুবর্তিতা পালন করে, যে শ্রম দেয়, তার সিকিভাগ যদি দেশে এসে দিত, হতো উদ্যোক্তা তাহলে আমরা এক জনসম্পদের অর্থনৈতিক মুক্তিসম্পন্ন জাতিতে পরিণত হতাম। কিন্তু তারা তা করে না বা করতে পারে না মূলত নিরাপত্তাহীনতার কারণে। তাই আমার ব্যক্তিমত হলো, সরকার কে সর্বাগ্রে জনগনের জীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে হবে। তবেই বিপুল এই জনগণ জনসম্পদে পরিনত হবে।
ভুলে গেলে চলবে না, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এই অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে। শুধু অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেই একটি জাতি ত্রিশ লক্ষ প্রাণ দিয়েছে, তাই সেই একই স্বপ্ন দেখতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পরে শত মানুষের প্রাণ হারানো ও সমুদ্রে মৃত্যু ঝুঁকি নেয়া মোটেই বিচিত্র বিষয় নয়। আমরা আমাদের স্বাধীনতা কে অর্থবহ করতে পারিনি বলেই আজও সমুদ্রে ভেসে বেড়াই। একটি রাজনৈতিক জাতির স্বার্বভৌম অর্থনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করতে স্বাধীনতার পর চল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে শুধু নেতার অভাবে। অথচ মাত্র নয় মাস লেগেছিল স্বাধীনতা অর্জন করতে। কেন না নেতা পেয়েছিলাম। পৃথিবীর বহু জাতিগোষ্ঠী শুধু নেতার অভাবে পঞ্চাশ বছর সংগ্রাম করেও স্বাধীনতা আজও অর্জন করতে পারে নি। সুতরাং আজ সময় এসেছে সঠিক সিদ্ধান্তের! স্বাধীনতার মূলমন্ত্রের সাথে কোনো রাজনীতি, আলোচনা, সমালোচনা থাকতে পারবে না, থাকবে না জাতির জনককে নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা, সংবিধানের চার মৌলিক প্রশ্নে যে কোনো আলোচনা, রাজনীতি, সমালোচনা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত, যা চীন করেছে। স্বাধীনতা একটি মীমাংসিত বিষয়, এই বিষয়ে কোনো আপস থাকতে পারে না। কঠিন শাস্তির বিধান করে, জাতিকে অপরাজনীতি থেকে রক্ষা করতে হবে। নতুবা বঙ্গবন্ধুকেও ওই মানবপাচারকারীদের মত দালাল উপমা বহন করতে হবে। কেননা তিনিও অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। সুতরাং অর্থনৈতিক মুক্তির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু কে প্রকৃত জাতির জনকে পরিণত করতে হবে। আর এজন্য জনগনকে কর্মমুখী শিক্ষা দিতে হবে। জাতির জনকের প্রশ্নে কঠিন আইন দরকার যেমন মাওসেতুং প্রশ্নে চীনের আইন, যেমন করে চীন জনগণ কে কর্মমুখী শিক্ষা দিয়েছে। তাই তার জনগণ পাল্টে দিয়েছে নিষিদ্ধ চীন।
আজ সারা পৃথিবীর যে কোনো ব্যবসায়ীর চীন যেতেই হবে, যদি ব্যবসা করতে হয়। আরেকটি মজার বিষয় শুনুন, একটি দেশে একই ধর্মের নব্বই ভাগ মানুষের দেশে সেই ধর্মের কেন আরও প্রচার করতে হবে? এই সাধারণ প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে চীনের মত ধর্মীয় সকল রাজনীতি, ব্যবসা, আইনগতভাবেই নিষিদ্ধ করতে না পারলে, ধর্মব্যবসায়ীরা জনগনকে কখনই শিল্প ও অর্থনৈতিক মুক্তির বিপ্লব ঘটাতে দেবে না। কারণ আফিম এর ব্যবসার জন্যে বোধহীন জনগনের প্রয়োজন, শিক্ষা এদের প্রধান শত্রু, নারী এদের কাছে হুমকি। ব্যবসা হারানোর ভয়ে তাই এরা হয়ে উঠে হায়নার চেয়ে হিংস্র, ধর্মের বাণী সাম্য, মৈত্রী, ক্ষমা এদের অভিধানে থাকে না। কারণ এদের লক্ষ্য কখনই ধর্মীয় বাণী প্রচার নয়, লক্ষ্য ব্যবসা। ওদের পুঁজি ধর্মীয় আবেগ সৃষ্টি করে জনগনের সম্পদ লুণ্ঠনের মাধ্যমে, অরাজক অবস্থা তৈরী করে ক্ষমতা দখল। চীনে একসময় ভয়াবহ বৌদ্ধ ধর্মীয় সন্ন্যাসীদের উৎপাত ছিল। সাধারণ বিচার থেকে শুরু করে গ্রামের মাতব্বরী, ব্যবসা, বানিজ্য সবই ওই বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা মাষ্টার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। এরা ধ্যান এর অপব্যবহারের মাধ্যমে কুংফু (এক ধরনের শক্তির ধ্যান)বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে সাধারণ জনগণ কে চাকর বাকরের মত ব্যবহার করত। নানা ধরনের কালো মন্ত্রে পুরো চীন হয়ে উঠেছিল এক ভৌতিক নিষিদ্ধ দেশ। দেশটির নব্বই ভাগ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হয়েও নানামতের গুরুর আবির্ভাব ঘটে। এক গুরুর সাথে অন্য গুরুর যুদ্ধে একই ধর্মের লোকজন নিজেরা নিজেরা প্রতিনিয়ত সংঘাতে লেগে থাকে ও নৃশংস মৃত্যুর স্বীকার হত, যেমন এখনো দালাইলামা তিব্বতের প্রধান ধর্মীয় গুরু হয়েও অনেকটা রাজার মত তার অবস্থান। তার রয়েছে পৃথিবী জুড়ে লক্ষ লক্ষ সমর্থক, শিষ্য। তিনি পায়খানা করলে সেই পায়খানা ছোট ছোট বড়ি বানিয়ে শুকিয়ে তাঁর শিষ্যরা দীক্ষা নেয়ার সময় এখনো খায়। ধর্মের নামে চীনের এই মাপের প্রকান্ড বৌদ্ধ ধর্মীয় অপ- বিশ্বাসের বিরুদ্ধে, চীন সরকার নিয়েছিলেন কঠোর অবস্থান। সারা বিশ্বমতকে তোয়াক্কা না করে, দালাইলামা ও তার অনুসারীদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে চীন থেকে বের করে দেন। আজ সেই তিব্বতের চেহারা পাল্টে গেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও উঁচু ট্রেন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে তিব্বতের জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি ও জীবনমান বদলে দিয়েছেন চীন সরকার। ওখানের জনগণ কে যদি প্রশ্ন করি তোমরা কি দালাইলামা কে চাও? তারা বলে আমরা ঘৃনা করি। এই হচ্ছে প্রকৃত তথ্য, যা আমি চীনে গিয়ে জেনেছি। অথচ সাম্রাজ্যবাদীরা তাকে দিয়েছে শান্তির জন্যে নোবেল। কিন্তু তিনি সংগ্রাম করছেন স্বাধীন ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে, অথচ তিব্বতের মানুষ কি দারিদ্রের মধ্যে, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মধ্যে বাস করত তা বলে বুঝানো যাবে না। সুতরাং এই প্রশ্নে সরকার কে চীনের মত কঠোর হতে হবে।
আইন করে ভবিষ্যত সকল পথ বন্ধ করে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠনের মাধ্যমে তাই করতে চেয়েছিলেন, আজ সময়ের ব্যবধানে তা হয়ত আর সম্ভব নয়। কিন্তু সুযোগ এসেছে জনগনের উপর ভরসা নয়, জনগনকেই সরকারের উপর ভরসা করতে শিখানো। এই জনগণ যখন জনসম্পদে পরিনত হয়ে, নিজ অর্থনীতি বদলে ফেলবে, তখন জনগনের উপর রাষ্ট্রের দায়িত্ব দিন। তখন বলুন জনগনই সরকারের শক্তি। এখন জনগণ বোধহীন, দারিদ্রতার চাপে ব্যক্তিসত্ত্বাহীন, অর্থের বিনিময়ে ভোটাধিকার বিক্রি করে, অপপ্রচারে বিশ্বাস করে, অর্ধ শিক্ষিত, অদক্ষ, এখন যদি এদের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করে দেশের মুক্তি ঘটাতে কেউ চায়, তার জন্যে চীন এর আজকের সাফল্যের পিছনের প্রেক্ষাপট জানা ও চীন সফর খুব খুব প্রয়োজন।
দুর্গম মৃত্যুযাত্রায় বাংলাদেশের যে সম্পদ কাতরায় বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে, সেই একই সম্পদ বদলে দিল চীন কে, করে তুলল অর্থনৈতিক পরাশক্তি। কিন্তু কিভাবে? চীন থেকে ঘুরে এসে karunews24.com এর উপদেষ্টা পুলক কান্তি বড়ুয়া, লিখেছেন সেই অজানা কথা। আজ প্রকাশিত হলো ধারাবাহিক লেখার দ্বিতীয় পর্ব:
বর্তমান ব্যবস্থায় জনশক্তি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একাংশ নিরাপদ হয়ে, আরো আরো চাই-এ পরিণত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অথর্ব হয়ে উঠে, অন্য অংশ নিরাপত্তাহীনতায় সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উঠে। যে কারণে সরকার উন্নয়ন করলেও ভোট এর নিশ্চয়তা নাই। কারণ সেই অর্থনৈতিক ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তাহীনতা, মাইগ্রেশন এর মাধ্যমে দেশত্যাগ আমাদের মত দক্ষ জনশক্তি ঘাটতির রাষ্ট্রের জনসম্পদ তৈরী না হওয়ার অন্যতম কারণ। একে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল বিবেচনা করা জরুরী। মেধাবীরা বিপুল অর্থের কারণে অন্য দেশে চলে যায়, বিনিময়ে আমরা যা পাই তা মূলত স্থবির অর্থনীতি, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে না। বরং সমাজ জীবনে অর্থনৈতিক মুদ্রাস্ফীতি তৈরী ও আমাদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য কে চরম ভাবে প্রতিনিয়ত শঙ্করায়িত করে, সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটি করে তা হচ্ছে প্রজন্মের দেশপ্রেম নষ্ট করে দেয়। দেশপ্রেমবিহীন জনগণ জনশক্তিতে পরিণত হয় না। কর্পোরেট কালচারে সে হয় বিদেশী কোম্পানির কেনা গোলাম, তার বিক্রি হয়ে যাওয়া সত্তা একদিন তাকে স্থায়ী অভিবাসী করে তুলে। তার প্রজন্ম আর বাংলায় কথা বলে না, ধীরে ধীরে আমার সম্পদ হয়ে যায় আরেকজনের সম্পদ। ওই মরীচিকা এতই তীব্রতা সৃষ্টি করে যে, সাধারণ গ্রামের শিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত, অদক্ষ জনগণ জমি বিক্রি, ধার দেনা, ধর্ম বিক্রি করে বৈধ উপায়ে না পারলে, অবৈধ উপায়ে জীবনের সমস্ত ঝুঁকি নিয়ে সে পাড়ি দিতে চায় সেই সব দেশে। হতে চায় ওদের মত, থেকে যেতে চায় সারাজীবন। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে দেশপ্রেমহীনতা তৈরি হয়। কিন্তু ওরা জানে না, ওখানে দক্ষ জনগোষ্ঠীর বাইরে অন্যদের জীবন নরকের মতই দুর্বিষহ। এই মানুষগুলো ওখানে গিয়ে যে নিয়মানুবর্তিতা পালন করে, যে শ্রম দেয়, তার সিকিভাগ যদি দেশে এসে দিত, হতো উদ্যোক্তা তাহলে আমরা এক জনসম্পদের অর্থনৈতিক মুক্তিসম্পন্ন জাতিতে পরিণত হতাম। কিন্তু তারা তা করে না বা করতে পারে না মূলত নিরাপত্তাহীনতার কারণে। তাই আমার ব্যক্তিমত হলো, সরকার কে সর্বাগ্রে জনগনের জীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে হবে। তবেই বিপুল এই জনগণ জনসম্পদে পরিনত হবে।
ভুলে গেলে চলবে না, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এই অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে। শুধু অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেই একটি জাতি ত্রিশ লক্ষ প্রাণ দিয়েছে, তাই সেই একই স্বপ্ন দেখতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পরে শত মানুষের প্রাণ হারানো ও সমুদ্রে মৃত্যু ঝুঁকি নেয়া মোটেই বিচিত্র বিষয় নয়। আমরা আমাদের স্বাধীনতা কে অর্থবহ করতে পারিনি বলেই আজও সমুদ্রে ভেসে বেড়াই। একটি রাজনৈতিক জাতির স্বার্বভৌম অর্থনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করতে স্বাধীনতার পর চল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে শুধু নেতার অভাবে। অথচ মাত্র নয় মাস লেগেছিল স্বাধীনতা অর্জন করতে। কেন না নেতা পেয়েছিলাম। পৃথিবীর বহু জাতিগোষ্ঠী শুধু নেতার অভাবে পঞ্চাশ বছর সংগ্রাম করেও স্বাধীনতা আজও অর্জন করতে পারে নি। সুতরাং আজ সময় এসেছে সঠিক সিদ্ধান্তের! স্বাধীনতার মূলমন্ত্রের সাথে কোনো রাজনীতি, আলোচনা, সমালোচনা থাকতে পারবে না, থাকবে না জাতির জনককে নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা, সংবিধানের চার মৌলিক প্রশ্নে যে কোনো আলোচনা, রাজনীতি, সমালোচনা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত, যা চীন করেছে। স্বাধীনতা একটি মীমাংসিত বিষয়, এই বিষয়ে কোনো আপস থাকতে পারে না। কঠিন শাস্তির বিধান করে, জাতিকে অপরাজনীতি থেকে রক্ষা করতে হবে। নতুবা বঙ্গবন্ধুকেও ওই মানবপাচারকারীদের মত দালাল উপমা বহন করতে হবে। কেননা তিনিও অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। সুতরাং অর্থনৈতিক মুক্তির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু কে প্রকৃত জাতির জনকে পরিণত করতে হবে। আর এজন্য জনগনকে কর্মমুখী শিক্ষা দিতে হবে। জাতির জনকের প্রশ্নে কঠিন আইন দরকার যেমন মাওসেতুং প্রশ্নে চীনের আইন, যেমন করে চীন জনগণ কে কর্মমুখী শিক্ষা দিয়েছে। তাই তার জনগণ পাল্টে দিয়েছে নিষিদ্ধ চীন।
আজ সারা পৃথিবীর যে কোনো ব্যবসায়ীর চীন যেতেই হবে, যদি ব্যবসা করতে হয়। আরেকটি মজার বিষয় শুনুন, একটি দেশে একই ধর্মের নব্বই ভাগ মানুষের দেশে সেই ধর্মের কেন আরও প্রচার করতে হবে? এই সাধারণ প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে চীনের মত ধর্মীয় সকল রাজনীতি, ব্যবসা, আইনগতভাবেই নিষিদ্ধ করতে না পারলে, ধর্মব্যবসায়ীরা জনগনকে কখনই শিল্প ও অর্থনৈতিক মুক্তির বিপ্লব ঘটাতে দেবে না। কারণ আফিম এর ব্যবসার জন্যে বোধহীন জনগনের প্রয়োজন, শিক্ষা এদের প্রধান শত্রু, নারী এদের কাছে হুমকি। ব্যবসা হারানোর ভয়ে তাই এরা হয়ে উঠে হায়নার চেয়ে হিংস্র, ধর্মের বাণী সাম্য, মৈত্রী, ক্ষমা এদের অভিধানে থাকে না। কারণ এদের লক্ষ্য কখনই ধর্মীয় বাণী প্রচার নয়, লক্ষ্য ব্যবসা। ওদের পুঁজি ধর্মীয় আবেগ সৃষ্টি করে জনগনের সম্পদ লুণ্ঠনের মাধ্যমে, অরাজক অবস্থা তৈরী করে ক্ষমতা দখল। চীনে একসময় ভয়াবহ বৌদ্ধ ধর্মীয় সন্ন্যাসীদের উৎপাত ছিল। সাধারণ বিচার থেকে শুরু করে গ্রামের মাতব্বরী, ব্যবসা, বানিজ্য সবই ওই বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা মাষ্টার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। এরা ধ্যান এর অপব্যবহারের মাধ্যমে কুংফু (এক ধরনের শক্তির ধ্যান)বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে সাধারণ জনগণ কে চাকর বাকরের মত ব্যবহার করত। নানা ধরনের কালো মন্ত্রে পুরো চীন হয়ে উঠেছিল এক ভৌতিক নিষিদ্ধ দেশ। দেশটির নব্বই ভাগ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হয়েও নানামতের গুরুর আবির্ভাব ঘটে। এক গুরুর সাথে অন্য গুরুর যুদ্ধে একই ধর্মের লোকজন নিজেরা নিজেরা প্রতিনিয়ত সংঘাতে লেগে থাকে ও নৃশংস মৃত্যুর স্বীকার হত, যেমন এখনো দালাইলামা তিব্বতের প্রধান ধর্মীয় গুরু হয়েও অনেকটা রাজার মত তার অবস্থান। তার রয়েছে পৃথিবী জুড়ে লক্ষ লক্ষ সমর্থক, শিষ্য। তিনি পায়খানা করলে সেই পায়খানা ছোট ছোট বড়ি বানিয়ে শুকিয়ে তাঁর শিষ্যরা দীক্ষা নেয়ার সময় এখনো খায়। ধর্মের নামে চীনের এই মাপের প্রকান্ড বৌদ্ধ ধর্মীয় অপ- বিশ্বাসের বিরুদ্ধে, চীন সরকার নিয়েছিলেন কঠোর অবস্থান। সারা বিশ্বমতকে তোয়াক্কা না করে, দালাইলামা ও তার অনুসারীদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে চীন থেকে বের করে দেন। আজ সেই তিব্বতের চেহারা পাল্টে গেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও উঁচু ট্রেন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে তিব্বতের জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি ও জীবনমান বদলে দিয়েছেন চীন সরকার। ওখানের জনগণ কে যদি প্রশ্ন করি তোমরা কি দালাইলামা কে চাও? তারা বলে আমরা ঘৃনা করি। এই হচ্ছে প্রকৃত তথ্য, যা আমি চীনে গিয়ে জেনেছি। অথচ সাম্রাজ্যবাদীরা তাকে দিয়েছে শান্তির জন্যে নোবেল। কিন্তু তিনি সংগ্রাম করছেন স্বাধীন ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে, অথচ তিব্বতের মানুষ কি দারিদ্রের মধ্যে, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মধ্যে বাস করত তা বলে বুঝানো যাবে না। সুতরাং এই প্রশ্নে সরকার কে চীনের মত কঠোর হতে হবে।
আইন করে ভবিষ্যত সকল পথ বন্ধ করে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠনের মাধ্যমে তাই করতে চেয়েছিলেন, আজ সময়ের ব্যবধানে তা হয়ত আর সম্ভব নয়। কিন্তু সুযোগ এসেছে জনগনের উপর ভরসা নয়, জনগনকেই সরকারের উপর ভরসা করতে শিখানো। এই জনগণ যখন জনসম্পদে পরিনত হয়ে, নিজ অর্থনীতি বদলে ফেলবে, তখন জনগনের উপর রাষ্ট্রের দায়িত্ব দিন। তখন বলুন জনগনই সরকারের শক্তি। এখন জনগণ বোধহীন, দারিদ্রতার চাপে ব্যক্তিসত্ত্বাহীন, অর্থের বিনিময়ে ভোটাধিকার বিক্রি করে, অপপ্রচারে বিশ্বাস করে, অর্ধ শিক্ষিত, অদক্ষ, এখন যদি এদের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করে দেশের মুক্তি ঘটাতে কেউ চায়, তার জন্যে চীন এর আজকের সাফল্যের পিছনের প্রেক্ষাপট জানা ও চীন সফর খুব খুব প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: karunews24.com
No comments
Post a Comment