বুদ্ধ পূজার ফল
►লিখেছেন ইলা মুৎসুদ্দী
একদা
অন্তরিক্ষচারী বিদ্যাধর উত্তর মহাথের আকাশপথে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখেন
বত্রিশ উত্তম লক্ষণসম্পন্ন সুমেধ নামক সম্যক সম্বুদ্ধ হিমালয়ে পর্বতাগ্রে
অগ্নির ন্যায়, পূর্ণিমার পূর্ণচন্দ্রের মত এবং সুপুষ্পিত সদৃশ বনরাজি
আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে আছেন। বিমল বুদ্ধরশ্মিতে সুশোভিত ভগবানকে দেখে আনন্দময়
চিত্তে গভীর শ্রদ্ধা উৎপন্ন করে উত্তর
মহাথের দিব্য গন্ধযুক্ত তিনটি কর্ণিকার ফুল অন্বেষণ করে নরদেবশ্রেষ্ঠ
সম্যক্ সম্বুদ্ধকে পূজা করেন। সেই পূজার ফলে কি কি লাভ হয়েছিল পড়–ন।
- ১। বুদ্ধের প্রভাবে সেই ফুল তিনটি ঊর্ধ্ববৃন্ত ও অধোমুখী হয়ে শাস্তাকে ছায়া প্রদান করেছিল।
- ২। সেই সুকর্ম ও প্রার্থনার ফলে মৃত্যুর পর মর্ত্যলোক ত্যাগ করে ত্রয়স্ত্রিংশ দেবলোকে উৎপন্ন হয়।
- ৩। তথায় সুবর্ণ ধ্বজাশোভিত, সহস্র কামরা ও লক্ষ দরজাযুক্ত, যাট যোজন উচু এবং ত্রিশ যোজন বিস্তৃত ‘কর্ণিকারী’ নামক শততল বিমান উৎপন্ন হয় এবং স্বর্ণময়, স্ফটিক ও লোহিতঙ্কাদি বিবিধ মণিময় পালঙ্ক এবং সেই পালঙ্কে অতি কোমল মহার্ঘ শয্যা উপাধান উৎপন্ন হয়।
- ৪। ষাট সহস্র তূর্য সকাল-সন্ধ্যা সেবা করত এবং নাচ-গান বাদিত্রাদিতে নিরন্তর আমোদিত থাকতেন এবং ত্রিদশপুরে উত্তম খাদ্য-পানীয় ভোগ করে সুরসুন্দরীদের দ্বারা সেবিত হয়ে সেই বিমানে নিত্য দিব্যসুখে রত ছিলেন।
- ৫। পাঁচশত বার দেবলোকে রাজত্ব করেন। তিনশত বার মনুষ্যলোকে চক্রবর্তী রাজা হয়েছিলেন। অসংখ্যবার এক এক দেশের রাজা হয়েছিলেন। ভবাভবে সংসরণের সময় কখনও দরিদ্র হননি, সর্বদা মহাধনশালী হয়েছিলেন- ইহা বুদ্ধাপূজারই ফল।
- ৬। নরকাদি দুর্গতিতে পতিত না হয়ে সর্বদাই দেব ও মনুষ্যলোকে উৎপন্ন হয়েছেন। মনুষ্যলোকেও নীচকুলে উৎপন্ন না হয়ে সর্বদা উচ্চ ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণকুলেই জন্ম নিয়েছিলেন এবং হস্তীযান, অশ্বযান, পাল্কী ও রথ সকলই লাভ করেছিলেন।
- ৭। দাস, দাসী এবং অলঙ্কৃত সুন্দরী নারী , কম্বল, রেশমীবস্ত্র, ক্ষৌম ও কার্পাসবস্ত্র, নববস্ত্র, নবফল ও নব অগ্ররসযুক্ত ভোজন সবই, লাভ করেছিলেন বুদ্ধপূজারই ফলে।
- ৮। ইহা খাও, ভোগ কর, এই উত্তম শয্যায় শয়ন কর এমন অভ্যর্থনা এসবই সর্বদা লাভ করেছেন এবঙ সবসময় অতি উন্নত যশঃ ও অভেদ্য পরিষদ ছিল। তিনি মহাপ্রভাবশালী, সর্বত্র পূজিত এবং জ্ঞাতিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন - ইহা বুদ্ধপূজারই ফল।
- ৯। শীত ও গ্রীষ্মে কখনও কষ্ট পাননি। দেহে দাহ এবং মনে কখনও দৌর্মনস্য অনুভব হয়নি।
- ১০। দেবলোক হতে চ্যুত হয়ে পুণ্যপ্রভাবে শ্রাবস্তীর মহাধনবান মহাশাল ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করে বিপুল কামসুখ ত্যাগ করে সপ্তমবর্ষ বয়সে প্রব্রজিত হয়ে অর্হত্ত্ব মার্গফল লাভ করেন।
- ১১। চক্ষুষ্মান বুদ্ধ উত্তর মহাথেরর গুণ অবহিত হয়ে উপসম্পদা প্রদান করেন এবং তরুণ বয়সেই তিনি পূজনীয় হয়ে
সমাধিতে
সুদক্ষ ও অভিজ্ঞায় পারমিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। দিব্যচক্ষু বিশুদ্ধ হয়েছিল,
প্রতিসম্ভিদা প্রাপ্ত, ঋদ্ধিপাদে কোবিদ এবং ধর্মে পারমিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন-
ইহা বুদ্ধপূজারই ফল।
- ১২। ত্রিশহাজার কল্প পূর্বে যে বুদ্ধপূজা করেছিলেন তার ফলে কখনও দুর্গতি গমন করেননি এবং সর্ববন্ধন ছিন্ন করে ত্রিবিদ্যা লাভ করে বুদ্ধশ্রেষ্ঠ কর্তৃক অভিনন্দিত হয়ে উত্তর মহাথের কর্তৃক বুদ্ধশাসন কৃত হয়েছে।
ইহা বুদ্ধ পূজারই ফল।
সূত্র:- মহামঙ্গল সূত্র
No comments
Post a Comment