দাউ দাউ আগুনের উপর ফুটন্ত তেলের মধ্যে বৌদ্ধ ভিক্ষু , কিভাবে সম্ভব ?

 মেডিটেশন করে ব্যক্তিজীবনের অনেক কিছুই পাওয়া সম্ভব, এমন কি কিছু কিছু রোগ বালাই ও যে যথোপযুক্ত মেডিটেশনের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব সে কথা অনস্বীকার্য। তাই বলে মেডিটেশন করে এমন কোন শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করা কি সম্ভব, যার ফলে আপনি বসে থাকবেন ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে অথচ আপনার কিছুই হবে না ? উত্তর সম্ভবত না।

তবে সম্প্রতি থাইল্যান্ডের নং বুয়া লাম্পফু প্রদেশের এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ অনলাইনে ব্যপক সাড়া ফেলেছে।

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু পদ্মাসনে বসেছেন, তবে সাধারণ কোন পদ্মাসনে নয়, একটি তেল ভর্তি বিশাল কড়াইয়ের মধ্যে আর সেই কড়াইয়ের নীচে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আর সেই পদ্মাসনে বসা অবস্হায় তার ভক্ত অনুরাগীরা বিভিন্ন জিনিস পত্র তার হাতে দিচ্ছে, যা সে কাঠি দিয়ে টোকা দিয়ে দিচ্ছে, ভক্তদের ধারণা এতে করেই তাদের জিনিসটি ভিক্ষুর আশির্বাদ পুষ্ট হচ্ছে। আর সম্মোহন শেষে যে তেলের মধ্যে ভিক্ষু বসেছিলেন, তা বোতলে ভরে বিক্রি করা হয় ভক্তদের মাঝে।
হঠাৎ করে তেলের মধ্যে কাউকে নির্বিঘ্নে বসে থাকতে দেখলে এবং সেই তেলের নীচে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখলে যে কারোই বিভ্ড়ান্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক।

তবে সন্দেহপ্রবন বিজ্ঞানীরা ভিডিওটি দেখে এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরেছেন, যা খুব সহজেই আপনার এই বিভ্রমকে কাটিয়ে তুলবে। চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের অধ্যাপক জেসেডা ডেনডুয়ানবোরিপাং এর মতে ভিডিওটি দেখে কোন জায়গায় বোঝার উপায় নেই ভিক্ষু যে তেলের মধ্যে বসে ছিল , সেটি ফুটন্ত তেল ছিল। তেলটি ফুটন্ত ছিল কিনা তা বোঝার একমাত্র উপায় হল তেলের তাপমাত্রা নির্নয় করা। আর ভিডিওতে দেখে যেটুকু বোঝা যায়, তেলটি অবশ্যই ফুটন্ত ছিল না ।
আর অদ্ভুত পাত্রটিতে আসলে দুই স্তরে তৈরী, দুই স্তরের মাঝে রয়েছে তাপ অপরিবাহক পদার্থ, যার ফলে নীচে যতই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলুক না কেন, সেই তাপ কখনোই পৌঁছায় না উপরের তেলে। এখানেই শেষ নয়, জেসেডা এর আগে ২০১২ সালে আরো একবার দেখিয়েছেন, নানাভাবে এই ধরণের বিভ্রম তৈরী করা যায়। ২০১২ সালে জেসেডা একটি ভিডিও তৈরি করে দেখিয়েছেন, একটি পাত্রে নীচে পানি দিয়ে তার উপর তেল ঢাললে সেই পাত্রকে যতই গরম করা হোক না কেন, শুধুমাত্র পানিই গরম হবে , কখনো তেল ফুটবে না এমন কি সেই তেলের মধ্যে হাতও ঢুকানো যাবে।

এদিকে ইউটিউবে ভিডিও আপলোডকারীর দাবী, বৌদ্ধ ভিক্ষুটি কড়াইয়ে নামার আগে কড়াইয়ের নীচে এক বিশেষ ধরণের গাছগাছালির অস্তরন দেওয়া হয়েছিল, যা তাপ প্রতিরোধক। ঘটনা যায় হোক না কেন, এধরণের কাজ করতে সাহসের প্রয়োজন সে কথা না বললেই নয়।

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.