পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির দেখা নেই
হিমেল চাকমা, রাঙ্গামাটি থেকে
আলো দেখছে না পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি। ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তির পর ৫ বার কমিশন গঠন হলেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় গত বছর সেপ্টেম্বরে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ার উল হককে চেয়ারম্যান করে ষষ্ঠবারের মতো কমিশন গঠন হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে কমিশনের কার্যত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এর পরিবর্তে ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে বেশ ক’টি ঘটনা চোখে পড়েছে। সর্বশেষ রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের বগাছড়িতে হামলা-জ্বালাও পোড়াও ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার কয়েকটি বিরোধপূর্ণ এলাকায় এখনো ১৪৪ ধারা বহাল রেখেছে প্রশাসন।
বগাছড়ি পরিদর্শনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভূমিবিরোধকে কেন্দ্র করে বগাছড়ির সাম্প্রদায়িক ঘটনাটি ঘটেছে।
পার্বত্য চুক্তির দীর্ঘ বছরেও পাহাড়ে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় লেগে আছে সংঘাত। একই ভূমি আদিবাসী ও বাঙালিরা দাবি করায় ঘটছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। উত্তেজনা বাড়ছে উভয়ের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, নতুন কমিশন গঠন হওয়ার পর গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ও গত ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর আহ্বানে পৃথক দুটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া না গেলেও ওই বৈঠককে আগের বৈঠকগুলোর মতো ভাবছেন সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের পর পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০১ সালের ১৭ জুলাই ‘পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১’ সংসদে পাস হয়। কিন্তু জেএসএস ও পার্বত্য চুক্তির আলোকে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অভিযোগ তাদের মতামত ছাড়া ২০০১ সালে আইনটি পাস হওয়ায় চুক্তির সঙ্গে ২৩টি বিরোধ বিষয় সৃষ্টি হয়েছে।
এই আইন সংশোধন না হলে তারা ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আশা করে না। তাই সরকার একের পর এক কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলেও পার্বত্যাঞ্চলের প্রতিনিধিরা চেয়ারম্যানকে অসহযোগিতা করে আসছিলেন।
অবশেষে গত সরকারের আমলে আইনে ২৩টি বিরোধ বিষয়ের মধ্যে সংশোধনের জন্য ১৩টি বিষয়কে চূড়ান্ত করা হয়। এরপর ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন (সংশোধিত) ২০১৩’ নামে এর খসড়া প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে। পরে ২০১৩ সালে ১৬ জুন প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলটি তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা সংসদে উত্থাপনের পর তা জনমত যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হলে তা আর সংসদে ফিরে আসেনি। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয় সরকার।
চুক্তি সম্পাদনকারী পক্ষের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা মানবকণ্ঠকে বলেন, ২০০১ সালের বিরোধপূর্ণ আইনটি সংশোধন হয়নি। এ অবস্থায় কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আইন সংশোধন না হলে কমিশন ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। ফলে ভূমি বিরোধ যেভাবে আছে সেভাবে থেকে যাবে।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার উল হক মানবকণ্ঠকে মোবাইল ফোনে বলেন, আইনটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের পার্বত্য এলাকার সদস্যরা সমন্বয় করছেন না। রাস্তাঘাট খুললে আমি পার্বত্য এলাকায় যাব। সেখানে গিয়ে কাজগুলো গুছিয়ে আনার চেষ্টা করব। যতটুকু পারি এগুনোর চেষ্টা করব।
যে কারণে পাহাড়ে ভূমি বিরোধ: পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধের অন্যতম কারণ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের প্রথাগত আইনকে অস্বীকার করা। ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার পার্বত্যাঞ্চলে সমাজ ও ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য আইন প্রণয়ন করে। যা ১৯০০ সালের শাসনবিধি বা হিলট্রাক্টস্ ম্যানুয়েল নামে পরিচিত। এই আইনে প্রথাগত সার্কেল চিফ ও হেডম্যান নেতৃত্ব স্বীকৃত। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির আলোকে প্রণীত পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও ২০০১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনেও হিলট্রাক্টস্ ম্যানুয়েল স্বীকৃতি লাভ করে।
কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৯-৮০ দশকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সমতল থেকে বাঙালি পুনর্বাসন শুরু হয়। ১৯০০ সালের শাসনবিধি ও আদিবাসীদের প্রথাগত নেতৃত্বকে অস্বীকার করে পুনর্বাসিত বাঙালিদের ভূমির বন্দোবস্ত দেয়া শুরু করে সরকার। এতে সৃষ্টি হয় ভূমির দৈত মালিকানা। আদিবাসীদের ভোগ করে আসা ভূমিগুলো বন্দোবস্ত পেয়ে দখল করতে শুরু পুনর্বাসিত বাঙালিরা। এ ভূমি নিয়ে সংগঠিত হয়েছে একাধিক হত্যা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা। জীবন বাঁচাতে ভূমি ফেলে ভারতে আশ্রয় নেয় আদিবাসীদের বিরাট একটি অংশ। অনেকে ভারতে না গিয়ে নিজ ভূমি ছেড়ে নিরাপদ গন্তব্যে পালিয়ে বেড়াতে থাকে। যারা ভারত প্রত্যাগত ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নামে পরিচিত।
সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহসভাপতি ও খাগড়াছড়ি হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরা মানবকণ্ঠকে বলেন, ১৯০০ সালের হিলট্রাক্টস্ ম্যানুয়েল অনুযায়ী সার্কেল চিফ ও হেডম্যানরা তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছে। এ আইন অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা যুগ যুগ ধরে যে ভূমির ব্যবহার ও মালিকানা স্বীকৃত। ভূমির মালিকানা বা ব্যবহার নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে বিরোধ নেই।
পুনর্বাসিত বাঙালিদের সংগঠন সমঅধিকার আন্দোলনের রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি পেয়ার আহমেদ মানবকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হিলট্রাক্টস্ ম্যানুয়েল মানার কোনো যুক্তি আছে বলে মনে করি না। তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালে যে ভূমি কমিশন আইন গঠন করা হয়েছে তাতে কমিশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ছাড়া বাঙালিদের কোনো প্রতিনিধি নেই। যে ভূমিগুলোর কাগজপত্র আছে সেগুলো প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেয়ার আর যেগুলোর কাগজপত্র নেই সেগুলো ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টনের দাবি জানান পেয়ার আহমেদ।
পাহাড়ের স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ের ভূমি বিরোধ সরকার দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির আলোকে প্রণীত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১’ অনুযায়ী এসব ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তির ১৮ বছর পরও এসব ভূমি বিরোধ একটিও নিষ্পত্তি করতে পারেনি কমিশন।
তথ্যসুত্র : মানবকণ্ঠ
আলো দেখছে না পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি। ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তির পর ৫ বার কমিশন গঠন হলেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় গত বছর সেপ্টেম্বরে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ার উল হককে চেয়ারম্যান করে ষষ্ঠবারের মতো কমিশন গঠন হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে কমিশনের কার্যত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এর পরিবর্তে ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে বেশ ক’টি ঘটনা চোখে পড়েছে। সর্বশেষ রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের বগাছড়িতে হামলা-জ্বালাও পোড়াও ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার কয়েকটি বিরোধপূর্ণ এলাকায় এখনো ১৪৪ ধারা বহাল রেখেছে প্রশাসন।
বগাছড়ি পরিদর্শনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভূমিবিরোধকে কেন্দ্র করে বগাছড়ির সাম্প্রদায়িক ঘটনাটি ঘটেছে।
পার্বত্য চুক্তির দীর্ঘ বছরেও পাহাড়ে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় লেগে আছে সংঘাত। একই ভূমি আদিবাসী ও বাঙালিরা দাবি করায় ঘটছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। উত্তেজনা বাড়ছে উভয়ের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, নতুন কমিশন গঠন হওয়ার পর গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ও গত ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর আহ্বানে পৃথক দুটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া না গেলেও ওই বৈঠককে আগের বৈঠকগুলোর মতো ভাবছেন সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের পর পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০১ সালের ১৭ জুলাই ‘পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১’ সংসদে পাস হয়। কিন্তু জেএসএস ও পার্বত্য চুক্তির আলোকে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অভিযোগ তাদের মতামত ছাড়া ২০০১ সালে আইনটি পাস হওয়ায় চুক্তির সঙ্গে ২৩টি বিরোধ বিষয় সৃষ্টি হয়েছে।
এই আইন সংশোধন না হলে তারা ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আশা করে না। তাই সরকার একের পর এক কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলেও পার্বত্যাঞ্চলের প্রতিনিধিরা চেয়ারম্যানকে অসহযোগিতা করে আসছিলেন।
অবশেষে গত সরকারের আমলে আইনে ২৩টি বিরোধ বিষয়ের মধ্যে সংশোধনের জন্য ১৩টি বিষয়কে চূড়ান্ত করা হয়। এরপর ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন (সংশোধিত) ২০১৩’ নামে এর খসড়া প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে। পরে ২০১৩ সালে ১৬ জুন প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলটি তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা সংসদে উত্থাপনের পর তা জনমত যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হলে তা আর সংসদে ফিরে আসেনি। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয় সরকার।
চুক্তি সম্পাদনকারী পক্ষের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা মানবকণ্ঠকে বলেন, ২০০১ সালের বিরোধপূর্ণ আইনটি সংশোধন হয়নি। এ অবস্থায় কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আইন সংশোধন না হলে কমিশন ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। ফলে ভূমি বিরোধ যেভাবে আছে সেভাবে থেকে যাবে।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার উল হক মানবকণ্ঠকে মোবাইল ফোনে বলেন, আইনটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের পার্বত্য এলাকার সদস্যরা সমন্বয় করছেন না। রাস্তাঘাট খুললে আমি পার্বত্য এলাকায় যাব। সেখানে গিয়ে কাজগুলো গুছিয়ে আনার চেষ্টা করব। যতটুকু পারি এগুনোর চেষ্টা করব।
যে কারণে পাহাড়ে ভূমি বিরোধ: পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধের অন্যতম কারণ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের প্রথাগত আইনকে অস্বীকার করা। ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার পার্বত্যাঞ্চলে সমাজ ও ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য আইন প্রণয়ন করে। যা ১৯০০ সালের শাসনবিধি বা হিলট্রাক্টস্ ম্যানুয়েল নামে পরিচিত। এই আইনে প্রথাগত সার্কেল চিফ ও হেডম্যান নেতৃত্ব স্বীকৃত। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির আলোকে প্রণীত পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও ২০০১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনেও হিলট্রাক্টস্ ম্যানুয়েল স্বীকৃতি লাভ করে।
কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৯-৮০ দশকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সমতল থেকে বাঙালি পুনর্বাসন শুরু হয়। ১৯০০ সালের শাসনবিধি ও আদিবাসীদের প্রথাগত নেতৃত্বকে অস্বীকার করে পুনর্বাসিত বাঙালিদের ভূমির বন্দোবস্ত দেয়া শুরু করে সরকার। এতে সৃষ্টি হয় ভূমির দৈত মালিকানা। আদিবাসীদের ভোগ করে আসা ভূমিগুলো বন্দোবস্ত পেয়ে দখল করতে শুরু পুনর্বাসিত বাঙালিরা। এ ভূমি নিয়ে সংগঠিত হয়েছে একাধিক হত্যা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা। জীবন বাঁচাতে ভূমি ফেলে ভারতে আশ্রয় নেয় আদিবাসীদের বিরাট একটি অংশ। অনেকে ভারতে না গিয়ে নিজ ভূমি ছেড়ে নিরাপদ গন্তব্যে পালিয়ে বেড়াতে থাকে। যারা ভারত প্রত্যাগত ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নামে পরিচিত।
সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহসভাপতি ও খাগড়াছড়ি হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরা মানবকণ্ঠকে বলেন, ১৯০০ সালের হিলট্রাক্টস্ ম্যানুয়েল অনুযায়ী সার্কেল চিফ ও হেডম্যানরা তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছে। এ আইন অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা যুগ যুগ ধরে যে ভূমির ব্যবহার ও মালিকানা স্বীকৃত। ভূমির মালিকানা বা ব্যবহার নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে বিরোধ নেই।
পুনর্বাসিত বাঙালিদের সংগঠন সমঅধিকার আন্দোলনের রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি পেয়ার আহমেদ মানবকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হিলট্রাক্টস্ ম্যানুয়েল মানার কোনো যুক্তি আছে বলে মনে করি না। তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালে যে ভূমি কমিশন আইন গঠন করা হয়েছে তাতে কমিশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ছাড়া বাঙালিদের কোনো প্রতিনিধি নেই। যে ভূমিগুলোর কাগজপত্র আছে সেগুলো প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেয়ার আর যেগুলোর কাগজপত্র নেই সেগুলো ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টনের দাবি জানান পেয়ার আহমেদ।
পাহাড়ের স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ের ভূমি বিরোধ সরকার দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির আলোকে প্রণীত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১’ অনুযায়ী এসব ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তির ১৮ বছর পরও এসব ভূমি বিরোধ একটিও নিষ্পত্তি করতে পারেনি কমিশন।
তথ্যসুত্র : মানবকণ্ঠ
No comments
Post a Comment