বিশ্বশান্তি প্যাগোডা: স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন

চট্টগ্রাম: নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পাহাড়ঘেরা এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কত যে মনোরম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, এখানে নির্মিত হয়েছে স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন বিশ্বশান্তি প্যাগোডা। যা সমৃদ্ধ করেছে এই ক্যাম্পাসকে।

গোবিন্দ গুনালংকার বৌদ্ধ ছাত্রাবাস এবং বৌদ্ধদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত বিশ্বশান্তি প্যাগোডা। শুধু সৌন্দর্যের সাক্ষী নয়, এর সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রতিদিন ভিড় করে শতশত শিক্ষার্থী এবং পর্যটক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জোবরা গ্রামে প্রায় ১৬ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে এই বিশ্বশান্তি প্যাগোডা।

বিশ্বশান্তি প্যাগোডা প্রতিষ্ঠার পেছনে যার অসামান্য অবদান তিনি হলেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু, প্রয়াত মহামান্য দশম সংঘরাজ শ্রী জ্যোতি পাল মহাথেরো। মহান এই ব্যক্তির অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার ফলে গড়ে উঠে ধর্মীয় উপসনালয় বিশ্বশান্তি প্যাগোডা এবং ছাত্রাবাস।

বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং ধর্ম শিক্ষার কয়েকজন ছাত্রের জরাজীর্ণ বসবাস নব্বইর দশকের শুরু পর্যন্ত স্থানটির মালিকানা ধরে রেখেছিল।  ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৮ এই চার বছরে এটির ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে।

ইতালির রেডক্রস সোসাইটির অর্থায়নে এবং স্থপতি সাইফুল হকের নকশায় এখানে নির্মিত হয়েছে আবাসন এবং জ্ঞান চর্চার প্রয়োজনীয় একটি একক পরিসর।

দুটি প্রশস্ত উঠানের চারপাশ ঘিরে দ্বি-তল ভবনের বিন্যাস করেছিলেন স্থপতি সাইফুল হক। অসাধারণ কারুকার্যে নির্মিত ভবনের ছাত্রাবাসটি দুটি ব্লকে বিভক্ত।

দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের ছাত্রদের শয়ন কক্ষগুলো পৃথক করা হয়েছে। যার মাঝে রয়েছে খোলা উঠান এবং তাকে ঘিরে থাকা এক লম্বা করিডোর। এই করিডোরে বসে ছাত্ররা পরস্পর বিনিময় করে তাদের সুখ দুঃখের অনুভূতি।

এখানকার সুবিশাল হলরুম, গ্রন্থাগার, কম্পিউটার ল্যাব, জাদুঘর, সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের অফিস সবকিছুর মাঝে রয়েছে রুচিশীলতার এক অনন্য ছাপ।

১৯৯৬ সালে উদ্বোধন হওয়া এ বিশাল ছাত্রাবাসটিতে ৮০ জন ছাত্রের বসবাস। শুধুমাত্র পাহাড়ি ও বাঙালি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছাত্ররা আবাসিক ছাত্র হওয়ার আবেদন করতে পারে। যার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদেরকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হয়।

উত্তীর্ণদেরকে ছয় হাজার টাকা জামানতের বিনিময়ে আবাসিক হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। আবাসিক ছাত্রদের মাসিক খরচ বাবদ দিতে হয় ১৫শ টাকা।

এর সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে যেতে প্রতিদিন ভিড় জমান শতশত ছাত্র-ছাত্রীসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটক। দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটকদের সাক্ষাৎও মিলে এ স্থানে।

প্রাচীন নবাব বাড়ির আদলে নির্মিত কূপের প্রান্ত ঘেঁষে সাজানো ফুলের টব, স্বচ্ছ কূপের জলে বাস করছে পদ্ম-শালুক এবং তার পাশে রয়েছে এলোমেলো বাঁশবন। এসবই যেন সৌন্দর্য পিয়াসীদের মনের খোরাক। ধর্মীয় উপাসনালয় থাকায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নিয়মিত যাতায়াত হয় পবিত্র এ স্থানটিতে।

প্যাগোডাতে যাতায়াতের প্রধান সড়কের জীর্ণশীর্ণ অবস্থা লক্ষ্যণীয়। বর্ষাকালে এ রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়ার দুর্ভোগ বেড়ে যায় বহুলাংশে। আর রাতে এ রাস্তাটি যেন অন্ধকার ভূতের গলি।

এত কিছুর পরেও যেন প্যাগোডা দাঁড়িয়ে রয়েছে সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে। বিশ্বশান্তি প্যাগোডার স্থপতি জ্যোতিপাল মহাথেরোর পূর্ণ স্মৃতি সংরক্ষণ করার জন্য এই ছাত্রাবাসের ছাত্ররা ২০০৫ সাল থেকে আয়োজন করে আসছে জ্যোতিপাল স্মৃতি বৃত্তি পরীক্ষাসহ নানা কল্যাণমূলক কর্মসূচি। ছাত্র ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে তাদের এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

সূত্র : নতুনবার্তা.কম

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.