বড়দের প্রতি শিশুর আচর

সৌজন্যবোধ না দেখানো: সালাম না দেওয়া, তাঁদের বসার জন্য চেয়ার ছেড়ে না দেওয়া, তাঁদের সামনে টেবিল বা সোফায় পা তুলে পা নাচানো, তাঁদের বিশ্রামের সময় উচ্চ শব্দে গান বাজানো ইত্যাদি।
ব্যঙ্গ করা: তাঁদের নানা রকম অসৌজন্যমূলক বাক্য দিয়ে ব্যঙ্গ করা। তাঁদের হাঁটা-চলা, বাচনভঙ্গি নকল করে অন্যদের দেখানো।
ধমক দেওয়া: দাদা-দাদি বা অন্য বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে খিটখিটে মেজাজে কথা বলা। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে ঝাঁজিয়ে ওঠা, অন্যদের সামনে তাঁদের ধমক দেওয়া, ঘর থেকে বের হয়ে অন্য ঘরে চলে যেতে বলা ইত্যাদি।
তুচ্ছ জ্ঞান করা: তাঁদের সবসময় তাচ্ছিল্য করা। তাঁরা ‘কিছুই বোঝেন না’—এ ধরনের মনোভাব পোষণ করা। কথায় কথায় অকর্ম্মণ্য বলা।
কুরুচিপূর্ণ কথা বলা বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা। বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁদের গালিগালাজ করা ও শারীরিকভাবে আঘাত করা, ধাক্কা দেওয়া ইত্যাদি।
কেন এমনটা করে?
শিশুদের আচরণ মূলত আশপাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশের বিভিন্ন আচরণের প্রতিফলন। তাই কেন শিশুরা বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করে, তা বুঝতে হলে তার আশপাশের পরিবেশের দিকে নজর দিতে হবে। সাধারণত যেসব কারণে শিশু এ রকমটা করে থাকে তা হলো—
বাবা-মা যদি শিশুর সামনে তার দাদা-দাদি বা নানা-নানিকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে বা তাঁদের সমালোচনা করে। স্বাভাবিক কথাবার্তা ও আচরণে এমনটা প্রকাশ করে যে বয়োজ্যেষ্ঠরা তাদের পরিবারে বোঝা বা অপাঙ্ক্তেয়।
বাবা-মা বা তাঁদের মধ্যে যেকোনো একজন যদি বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন।
টিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকেও শিশুরা এসব শেখে।
প্রাথমিক অবস্থায় শিশুকে সৌজন্যতাবোধ শিক্ষা না দিলে এবং বড়দের সম্মান করতে না শেখালে।
বাবা-মায়ের মধ্যে তীব্র দাম্পত্য কলহ চলতে থাকলে।
শিশুর মধ্যে কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার জাতীয় আচরণজনিত মানসিক সমস্যা থাকলে।
কখনো কখনো বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য দ্বারা শিশু ক্রমাগত উত্ত্যক্ত হলেও এমনটা হতে পারে।
শিশুর মধ্যে এ ধরনের আচরণ থাকলে ভবিষ্যতে তার মধ্যে ব্যক্তিত্বের সমস্যাসহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, শিশুর ভবিষ্যৎ পারিবারিক ও সামাজিক জীবন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
কী করবেন
শিশুকে এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত রাখতে হলে যা যা করতে পারেন—
শিশুকে ছোটবেলা থেকেই সৌজন্যবোধের চর্চা করাতে হবে
বাবা-মায়েরা কখনো শিশুর সামনে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের (দাদা-দাদি, নানা-নানি) নিয়ে সমালোচনা করবেন না, শিশুর সামনে বয়স্কদের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করবেন না বা তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না
বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের অতীত কর্মমুখর জীবন, তাঁদের অবদান ও অর্জন শিশুর সামনে তুলে ধরতে হবে। শিশুর সামনে দাদা-দাদি, নানা-নানির প্রশংসা করুন। তাঁদের বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন পালন করার চেষ্টা করুন, শিশুর মাধ্যমে তাঁদের উপহার দিন।
পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য উভয়ের মতামত নিন।
শিশুর সামনে দাম্পত্য কলহ এড়িয়ে চলতে হবে।
কোথাও বেড়াতে গেলে দাদা-দাদি বা নানা-নানি ও শিশুদের একসঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
দাদা-দাদি বা নানা-নানির কোনো আচরণ শিশুকে উত্ত্যক্ত করছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখে তাদের বুঝিয়ে বলুন।
টিভির কোনো অনুষ্ঠান বা নাটকে বয়স্কদের প্রতি এ ধরনের আচরণ দেখানো হলে তা দেখা থেকে শিশুকে বিরত রাখুন।
শিশুর মধ্যে কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার জাতীয় আচরণজনিত মানসিক সমস্যা আছে কিনা বোঝার জন্য প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
সুত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অধূনা
No comments
Post a Comment