সাজেক মাজলংয়ে একদিন

সাধনাজ্যোতি ভিক্ষু

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি থানার দুর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চল সাজেক ইউনিয়নে মাজলং একটি গ্রাম। এটি ঘিরে একটি বাজারও গড়ে উঠেছে। এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের নাম অতুলাল চাকমা। এ এলাকায় চাষ যোগ্য জমি নেই বললেই চলে। অধিকাংশ লোক জুম চাষ কিংবা গাছ, বাঁশ বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। এলাকার লোকের কাজ থেকে শুনেছি তাও চাষ করতে দেওয়া হয় না এলাকার আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলো। বাজার এলাকায় ৫০ হতে ৬০ পরিবার চাকমা বসবাস করে বলে জানা যায়। সম্প্রতি এটি একটি থানা হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এলাকার অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত। আশে পাশে প্রাইমারী স্কুল থাকলেও একটি মাত্র জুনিয়র স্কুল রয়েছে। তাও এখন সরকারীভাবে রেজিষ্টার ভূক্ত হয়নি।
মাজলং এর নামকরণ করার পিছনে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে। এ স্থানে একটি ছোট্ট নদী রয়েছে আগের সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এলাকার লোক সেই জায়গা দিয়ে আসা যাওয়া করার সময় বলতো ( তুই আগে যা মুই দিবে মাজ লং) তুমি যাও আমি কিছু মাছ ধরে নিই। সেই থেকে স্থানটির নাম হয় “মাজলং”। খাগড়াছড়ি পার্বত্য দীঘিনালা হতে একটি পিষ্ঠ করা সরকারী রাস্তা রুলুই পর্যন্ত গেছে। এটি একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম। এই রুলুই হতে ভারতীয় সীমান্তে চার/পাঁচ ঘন্টা পায়ে হেঁেট যেতে হয়। এই রুলুই গ্রামে খুকী ৩০/৪০ পরিবার বসবাস করে। এই স্থানে সরকারী একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানা যায়। এরি মধ্যে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি সফর করে গেছেন। সেখানকার পাহাড়িদের কাছ থেকে শুনেছি সরকারী ভাবে ঐ পরিবার গুলো ঘর তৈরী করে দেয়া হচ্ছে।
যাই হোক আমি চট্টগ্রাম শহরে রফতানি পক্রিয়াজাতকরণ জোনে সিইপিজেড এলাকায় ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হিলচাদিগাং বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করি। সেই সুবাদে এখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বহু পাহাড়ি জীবন জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী চাকুরী করে অবস্থান করে। স্বভাবতইঃ তারা ধর্মীয় কারণে বৌদ্ধ বিহারে এসে থাকে। তাদের কাছ থেকে সাজেকে মাজলং এর কথা অনেক বার শুনেছি কিন্তু এক বারও যাওয়া হয়নি। একদিন হঠাৎ বাবু দীপংকর চাকমা আমাকে ফোন করে বলে যে, ভন্তে আপনিসহ ড. জিনবোধি ভন্তেকে ফাং করছি সাজেকে মাজলং সংঘদান অনুষ্ঠানে জন্য এবং অপানি ড. জিন বোধি ভন্তেকে ফাং করে দিন। এ কথা শোনার পর আমার হৃদয়ে আনন্দের হিল্লোলে ভরে উঠে। আমি তখন ভন্তেকে বার বার ফোন করেও পাইনি। তখন দীপংকরকে বললাম ভন্তেকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে সে জানতে পারে ভন্তে ভারতে ভ্রমণে চলে গেছে। এর পর দীপংকর বাবুও মাজলং যাওয়ার ব্যাপারে আমাকে আগ্রহের সহিত যেতে বললো না। আমি ম্লান হৃদয়ে মনে মনে বললাম এবারও বুঝি সাজেকে যাওয়া হবে না। হয়তো যদি আমি নামদামী ভিক্ষু হতাম তাহলে স্পেশালভাবে আমাকে ফাং করে নেওয়া হতো। যাই হোক আমার দুর্ভাগ্য নামীদামী ভিক্ষু হতে পারিনি। আপাতত সে জায়গায় যাওয়ার কথা আমি বাদও দিয়েছি।
গত ১লা ফেব্রুয়ারী তারিখে আমার দ্বারা প্রব্রজিত দুই জন শ্রমণকে উপসম্পদা দেওয়ার জন্য পার্বত্য বৌদ্ধ মিশনে যাই। পার্বত্য বৌদ্ধ মিশনে উপসম্পদা করে দেওয়ার কারণ হলো এখানে শহরাঞ্চলে সীমাঘর নেই তাই। খুব ভোরে প্রাতরাশঃ সমাপ্ত করে সকাল ৭টায় বিআরটিসি বাসে করে খাগড়াছড়ি রওনা দিয়ে ১১টা সময় পার্বত্য বৌদ্ধ মিশনে পৌঁছি। এরপর দুপুরের ভোজন সমাপ্ত করে একটু বিশ্রাম করে ভিক্ষুসংঘ উপস্থিত হওয়ার পর শ্রমণদের সীমা ঘরে নিয়ে ভদন্ত সুমনালংকার উপাধ্যায়ত্বে উপসম্পদা প্রদান করি। অবশ্যই আমি অনুশাসকের ভূমিকা পালন করি। এই অনুশাকের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে নিজেই অনুশাসিত হয়। এখানে একটি কথা না বললে না হয় আমি চট্টগ্রাম জেলায় বড়–য়া সমাজে ভিক্ষুদের  শ্রমণ ও উপসম্পদার গ্রহন করি এবং দীর্ঘ বার বছর পর্যন্ত বিভিন্ন বড়–য়া বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করি। বড়–য়া ভিক্ষু সমাজে যে নিয়মে উপসম্পদা প্রদান করা, এখানে তার ভিন্ন ভাবে উপসম্পদা দেওয়া নিয়ম আমার পরিলক্ষত হয়। তাই আমি “কম্মবাচা” গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদসহ করে প্রকাশ করার আবশ্যকীয়তা অনুভব করলাম। উপসম্পদা অনুষ্ঠানে তিন জন শ্রমণকে উপসম্পদা প্রদান করা হয় এবং মোট ১১জন ভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন।
 সন্ধ্যা সময় কপোকথনের সময় সুমনালংকার ভন্তে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আগামি কাল আমার কোন প্রোগ্রাম আছে কিনা? আমি উত্তর দিলাম আমার তেমন কোন প্রোগাম নেই। তখন তিনি আমাকে বললেন, তাহলে আগামিকালকে সাজেকে মাজলং সংঘদান অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে অবশ্যই যেতে হবে। আমি প্রথমে যেতে রাজী হয়নি। এক প্রকার ভন্তে আমাকে যেতে বাধ্য করলেন। এ সব ঠিকটাক করে উভয়ে যার যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু বিছানায় ঘুমানো অনেক চেষ্ঠা করেও ঘুমাতে পারলাম না। আমার অসুখের পর মাঝে মধ্যে এভাবে ঘুমাতে পারি না। সকালে চিন্তা করলাম ভন্তের সঙ্গে যাব কিনা? ভন্তে রেগে যাবে ভেবে চিন্তা করে ভন্তে কিছু না বলে গাড়িতে উঠে গেলাম আনমনা ভাবে। গাড়িটি চলতে থাকে ঘন্টা দুয়েক চলার পর বাঘাইহাট বাজারে পৌঁছি। গত কয়েক বছর আগে দুইবার চাকমা-বাঙ্গালি সেটেলার সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় দুইবার পরির্দশনের জন্য এই স্থানে আসি। সে সময় এখানে যে ধবংসের বিভিষিকা দেখে ছিলাম মনে পড়লে সত্যিই গা শিউরে উঠে। সে সময় আমরা জোর দাবী জানিয়েছিলাম যে, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে যথাযথ ক্ষতি পুরণ দিয়ে পুর্নবাসিত করা। কিন্তু সরকার তা না করে শুধু ক্ষতিগ্রস্থ দুটি বৌদ্ধ মন্দির পূনঃনির্মাণ করে দিয়ে দায় ছেড়েছেন। বর্তমানে এখানে দেখি পাহাড়িরা নিজেদের প্রচেষ্ঠায় আবার নিজের ঘর-বাড়ি গড়ে তুলে বসতি গড়েছে।
     সকাল ১০টা সময় যথারীতি অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়। ভিক্ষুসংঘকে ফুলের তোরা ও সংগীতে মাধ্যমে বরণ করে নেওয়ার পর উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন বাবু মিঠুন চাকমা। তিনি তার বক্তব্যে ভ্রাতৃত্ব সংঘাতের কথা তুলে ধরে বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ ভ্রাতৃত্ব সংঘাতের কারণে জাতির অস্তিত্ব সম্মূখীন। ভ্রাতৃত্ব সংঘাত বন্ধ করে কিভাবে সকলের ঐক্য মতের ভিত্তিতে জাতির মুক্তির জন্য আন্দোলন করে স্বাধীকার আদায় করা যায় এবং বুদ্ধের নির্দেশিত “সপ্ত অপরিহানীয় ধর্ম” দেশনা করার জন্য ভিক্ষুসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।
    এরপর ভদন্ত নন্দ পাল ভন্তে দেশনা প্রদান করেন। তিনি বিভিন্ন উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে ধর্ম দেশনায় মাঝে মাঝে ইংরেজীও বলেছেন, আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম যে জায়গায় একটি মাত্র জুনিয়র স্কুল তাও সবে মাত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে ইংরেজী বলে দেশনা করলে জন সাধারণের কতটুকু বোধ্যগম্য হবে সত্যিই চিন্তার বিষয়। এমনিতেই বৌদ্ধ ধর্মের কঠিন ও জঠিল বিষয় গুলো সহজেই বোধগম্য হয় না। তাহলে কি করে ইংরেজীতে বলে বুঝা সম্ভব। দরকার সহজ বিষয় গুলো সহজ, সরল ভাষায় দেশনা প্রদান করে বুঝিয়ে বলা। এরুপ ভাবে ধর্ম দেশনা করে সকালে বেলার অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা হয়। এর পর দুপুরের ভোজন দেওয়া হয়। দুপুরের ভোজন দেওয়া হয়েছিল মাছলং এর জুনিয়র স্কুলে রুমের ভিতর। এতে ভিক্ষুসংঘকে ভাগ করে বসানা হয় অথার্ৎ পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ একরুমে বনভিক্ষুসংঘ অন্য রুমে। ব্যাপারটি আমার মোটেই ভালো লাগেনি। কারণ এমনিতেই পার্বত্য ও বনভিক্ষুদের মত পার্থক্য, মত ভেদ রয়েছে।  তার পরেও এরুপ এই মত ভেদ কিভাবে নিরসন করা সম্ভব হবে।
    বিকাল ২টা সময় সকালের ন্যায় উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ভদন্ত দেব মিত্র মহাস্থবির মহোদয়। উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবু অতুলাল চাকমা। তিনি বক্তব্যে এলাকার শান্তি ও সুশৃঙ্খলার বজার রাখার পাশাপশি কর্ম ফলের প্রত্যক্ষ ফল সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি এক সময় বন্দুক দিয়ে একট বড় প্রজাতির (ডুং¹) পাখি শিকার করেন। একজোড়া পাখি হতে একটি পাখি গুলি করে মেরে ফেলে। অন্য পাখিটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত ডাক দিয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে বিচরণ করেছিল। এক সপ্তাহ পরে তাকে স্বপ্নে দেখালো যে, ঐ জীবত পাখিটি বলছিল তুমি আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছ তুমিও তোমার স্ত্রীকে হারাবে। সেই সপ্তাহেই চেয়ানম্যান বাবুর স্ত্রী সামান্য অসুখে মারা যায়। সেই জন্যে বলা হয়েছে, কর্মের লিখন যায় না খন্ডন। কর্ম সৃষ্টি করলে অবশ্যই একদিন তাকে ভোগ করতে হবে। বৌদ্ধ সাহিত্যেও বলা হয়েছে,  “কম্মস্সকা সত্তা, কম্ম-দায়াদা, কম্ম-যোনি, কম্ম-বন্ধু, কম্ম-পটিসরণা, যং কর্ম্ম করিস্সতি, কল্যাণং বা পাপকং বা তস্স দায়াদ ভবিস্সতি। কম্মং সত্তে বিভজন্তি-যদিদং হীনপ্প তত্তা যায়তি।” অথার্ৎ প্রাণীগণ নিজ নিজ কর্মাধীন। কর্মই প্রাণীগণের একান্ত আপন বা স্বকীয়। এরা কর্মেই উত্তরাধিকারী। কর্ম সর্বজীবের পুনর্জন্মের হেতু, কর্মই বন্ধু, কর্মই প্রকৃষ্ট আশ্রয়। শুভ বা অশুভ কর্মের মধ্যে যে যেরুপ কর্ম সম্পাদন করে, সে সেরুপ কর্মেরই উত্তরাধিকারী হয়। তার বক্তব্য শেষ করার পর চাদঁগা বোধিপাল ভাবনা ক্ষেন্দ্রের অধ্যক্ষ ভদন্ত রতœপ্রিয় ভিক্ষুকে দেশনা প্রদানের জন্যে দেওয়া হয়। তিনিও তার বক্তব্যে সাজেক ইউনিয়নে একমাত্র জুনিয়র স্কুল রেজিষ্ট্রেশন করার কাজ করছেন এবং কতটুকু কাজ অগ্রসর হয়েছে সে বিয়য়ে আলোচনা করেন। এরপর আমি মনে করেছিলাম আমাকেও দেশনা করতে হবে। আমি মনে মনে প্রস্তুতিও নিয়ে ছিলাম যে, আমার এরুপ একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রথম আসার অভিব্যক্তি প্রকাশ করবো। যথেষ্ট সময় থাকাতেও আমাকে দেশনায় দেওয়া হলো না। পরে বলে দেওয়া হল যে সময়ের অভাবে আমাকে দেশনায় দিতে পারেননি। আমি মনে মনে অস্বত্বি বোধ করেছিলাম কিন্তু মুখে কিছু না বলে নিরবে বসে রইলাম। আমি মনে মনে ধারণা করেছিলাম এর পিছনে গতি কয়েক ভিক্ষুদের মধ্যে কটুশাল রয়েছে। পরে জানতে পারলাম আমি যাই ধারণা করেছিলাম তাই। এর পর পার্বত্য বৌদ্ধ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা ভদন্ত সুমনালংকার মহাথেরোকে দেশনা প্রদান করার জন্য অহ্বান করা হয়।
দেশনার প্রসঙ্গে সুমনালংকার ভন্তে বলেন, সকালে দেখে ছিলাম দায়কেরা বোতল হাতে করে পানি নিয়ে এসে নন্দ পাল ভন্তের কাছ থেকে ছোঁয়াইয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সে দুপুরে খাওয়ার পর চলে গেছে। তিনি যখন চলে গেছেন এখন আমার পালা, আমার কাছ থেকেও পানি ছোয়াইয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি আর না করতে পারলাম না। কারণ সকালে নন্দ পাল ভন্তে করে দিয়ে গেছেন আামি যদি করে না দিই তাহলে বলবে ইনি কেমন ভন্তে? পানি ছোঁইয়ে যদি রোগ ভালো হয়, তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে হাসপাতাল তৈরী করতে হতো না, ডাক্তারি শিক্ষতে হতো না। এ প্রসঙ্গে একদিন যোগাসিদ্ধি ভিক্ষু শাসন রক্ষিত ভিক্ষুকে বলেছিলেন, “ঔ শাসনরক্ষিত তুই সেঙ্গেয়ানত ডুবি হিয়া ন থাসসোই, সেঙ্গেয়ানত ডুবি থেলেগোই তত্তুন আর কষ্ঠগরা নপরিবঅ।” অথার্ৎ  ও শাসনরক্ষিত সিঙ্গি নদীতে কেন ডুবে থাকো না। সিঙ্গি নদীতে ডুবে থাকলে তোমার আর কষ্ঠ হবে না। কারণ সমস্ত সিঙ্গি নদী ঔযুধে পরিণত হবে। কাজেই তোমাকে কষ্ঠ করে আর পানি ছোঁইয়ে দিতে হবে। অতএব পানি ছেঁয়ানো ব্যাপারটি সম্পূর্ন অবান্তর এবং দায়ক/দায়িকদের ধোঁকা দেওয়া সামিল। ধর্ম নামে অধর্ম প্রচার করার সামিল। এ ব্যাপারটি প্রায়ই বনভিক্ষুদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। কাজেই মিথ্যা ধর্ম প্রচার থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
দেশনার প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এক রাজা তার মেয়ের সয়ম্বর (বিবাহ) সভা আয়োজন করেন। যে ব্যক্তি তার উত্তর দিতে পারবে তার সঙ্গে তার মেয়েটি বিবাহ দেবে কিন্তু উত্তর দিতে না পারলে তার দাসী হয়ে থাকতে হবে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে রাজা, যুবরাজ এ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন কর্ েকিন্তু সদুত্তর দিতে না পেরে একে একে বন্দী হয়। এরপর সর্বজন সাধারণের জন্য উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহনের জন্য উন্মূক্ত ঘোষনা করা হয়। তখন এক শুকর পালক এ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করে। সে রাজা সামনে গিয়ে যে মাত্র আসন গ্রহন করে তখন রাজা তাকে একটি আঙ্গুল তুলে দেখায়। তখন সে দুইটি আঙ্গুল তুলে দেখায়, রাজা তিনটি আঙ্গুল তুলে দেখালে সে একটি আঙ্গুল তুলে দেখায়। তখন রাজা শুকর পালকের উত্তরে অত্যন্ত খুশী হয়ে তার মেয়েকে বিবাহ দিলেন।
এবার রাজাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তিনি কি প্রশ্ন করেছেন এবং কি উত্তর পেয়েছেন? রাজা বললেন আমি তাকে একটি আঙ্গুল উঁিচয়ে দেখানো মানে আমি তাকে বলেছিলাম জগতে সৃষ্টিকর্তা এক জন মহাব্রহ্ম আছেন। সে দুটি আঙ্গুল দেখায়, তার মানে শুধু মহাব্রহ্ম নন বিষ্ণুও আছেন।  আমি তিনটি আঙ্গুল দেখার মানে হল, শুধু মহাব্রহ্ম, বিষ্ণু নন শিবও আছেন। এর পর সে একটি আঙ্গুল দেখার কারণ হল, জগতে সৃষ্টিকর্তা মাত্র এক জন দ্বিতীয় কেউ নেই।
এদিকে শুকর পালকের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করা হল, রাজা কি প্রশ্ন করেছেন এবং কি বা উত্তর দিয়েছেন? সে বলল, রাজা কি আর প্রশ্ন করবেন তিনি আমাকে একটি আঙ্গুল দেখিয়েছেন, আমি তাকে দুটো দেখিয়েছি। কারণ তিনি আমার কাছ থেকে একটি শুকর চেয়েছেন, আমি তাকে দুটো দেবো বলেছি। তিনি তিনটি আঙ্গুল দেখিয়েছেন মানে তিনি তিনটি শুকর চেয়েছেন। আমি তাকে একটি বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছি তার মানে  রাজার লোভ বেড়েছে আমি তাকে একটির পরিবর্তে দুটো দেব বলেছি, সে আরো তিনটি চাচ্ছেন লোভ বেড়েছে। আমি তাকে একটিও দেব না বলেছি। তাই বুড়ো আঙ্গুলটা দেখিয়েছি। সে জন্যে আমি বলি ধর্মকে না বুদ্ধে রাজা আর শুকর পালকে ভূমিকার মতো ধর্মে অপব্যাখ্যা বা ভূল আচরণ করে যাচ্ছি। তাই ধর্মকে বুঝে আচরণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। ধর্মকে বুঝে আচরণ করতে পারলে সবার মঙ্গল হবে। ভদন্ত সুমনালংকার মহাথেরো দেশনার পর সভাপিত ভদন্ত দেবমিত্র মহাথের তাঁর সভাপতি ভাষণে ব্যক্তি, পরিবার তথা সমাজ ও রাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে অপরিহার্য নীতি সপ্ত অপরিহানীয় ধর্ম সম্পর্কে দেশনা করে সভা সমাপ্ত করেন। সভা সমাপ্তি পর আমরাও গাড়িতে উঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে নিজ মন্দিরে প্রত্যাগমন কররাম।



সাধনাজ্যোতি ভিক্ষু
বি, এ (অনার্স) এম, এ. এম, এড.
অধ্যক্ষ, হিলচাদিগাং বৌদ্ধ বিহার, বন্দর, চট্টগ্রাম।




No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.