চাকমা ইতিহাস
মানুষ যখন কোন দেশ বা জায়গা বা গ্রাম বা রাস্তার নামকরণ করে তখন যা যা বিষয় খেয়াল রাখে তা হল তাদের
ইতিহাস,
ঐতিহাসিক ব্যক্তি,
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ইত্যাদি।
মানুষ
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক কারনে এক ভুখন্ড থেকে অন্য ভুখণ্ডে চলে
যায় (migration)। তারা নতুন ভুখন্ড, এলাকা, গ্রাম, রাস্তা ইত্যাদির নামকরণ
করে তাদের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ব্যক্তি এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুসারে। এইভাবে
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ইত্যাদি দেশের অনেক এলাকা, গ্রাম,
শহর ইউরোপের অনেক এলাকা, গ্রাম, শহর ও ব্যক্তির নাম অনুসারে নামকরণ করা
হয়েছে। পার্বত্য চত্তগ্রামের অনেক গ্রাম এলাকাও বাংগালী মুসলমানদের ইতিহাস,
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে।
“চম্পকনগর”
সংস্কৃত চম্পানগরের চাকমা ভাষার বিকৃত রূপ। আর বার্মাতেও এই নামের বিকৃত
রূপে একটা জায়গা আছে। প্রশ্ন এই সংস্কৃত চম্পানগর বার্মায় কি করে আসলো?
সুতরাং চাকমারা বার্মা থেকে এসেছে -- তা মনে করা কি আদৌ ঐতিহাসিকভাবে নিরাপদ বা তা কি শেষ কথা?
বার্মার
জনগোষ্ঠীতে প্রাচীন উত্তর-পুর্ব ভারতীয় (নেপালসহ) মঙ্গলয়েড জনগোষ্ঠীর একটা
উপাদান মিশে গেছে -- তা বহু গবেষণায় পাওয়া যায়। মনে করা হয় তারা শাক্যদের
একটা অংশ। তারা বার্মায় "থেট" নামে পরিচিত। তারা বুদ্ধের পরবর্তী সময়ে
বিদুধভ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে কপিলাবস্তু ত্যাগ করে উত্তর-পুর্ব ভারতের
বিভিন্ন জায়গাসহ বার্মা পয্যন্ত সরিয়ে পড়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। তাদের
একটা অংশ ভারতের বিহার রাজ্যে চম্পা বা চম্পানগর (বর্তমান ভাগলপুর জেলা)
এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাস করছিল। পরবর্তীতে ১২০০ শতাব্দীর দিকে
তারা সেখান থেকে মুহম্মদ বখতিয়ার খীলজি কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে ত্রিপুরা ও
পার্বত্য চত্তগ্রামে সরিয়ে পরে। ১৬০০ শতাব্দীতে তাদেরকে "চাকমা" নামে
অভিহিত করা হয়।
চাকমারা যে ভারত থেকে এসেছে তার প্রমান --
১)
তাদের ভাষা (ইন্ডো-আরিয়ান ভাষাগোষ্ঠী যেমন পালি, সংস্কৃত, অহমীয়া ইত্যাদি)
এবং ধর্ম ও সংস্কৃতি। ভাষা একটা জাতির পরিচায়ক। উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল,
বাংলাদেশ, বার্মা, থাইল্যাণ্ড – এই এলাকায় শুধু শাক্য, চাকমা (তঞ্চংগ্যাসহ)
আর অহমীয়া হলেন একমাত্র মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠী যাদের ভাষা ইন্ডো-আরিয়ান এবং
যারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী-- অবশ্য অহমীয়ারা হিন্দুদের প্রভাবে তাদের আসল ধর্ম
ও সংস্কৃতি অনেকটা হারিয়ে বসেছে!
২) নেপালের শাক্যদের সঙ্গে অহমীয়া ও চাকমাদের নৃতাত্ত্বিক সাদৃশ্য – মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠী।
এর অনুসিদ্ধান্ত -- তাদের মধ্যে নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আছে।
নিখিল চাকমা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
No comments
Post a Comment