মহামুনি বুদ্ধ মূর্তির ইতিহাস!বুদ্ধের জীবিত অবস্থায় বানানো ৫ম বুদ্ধ মূর্তি: (The History of Mahamuni Buddha, Mandalaya)
শ্রীমৎ অজান বিশুদ্ধনন্দ ভিক্ষু প্রেরিত
বার্মায় যে কটি বুদ্ধ মূর্তি রয়েছে তার মধ্যে মহামুনিবুদ্ধ এবং মুন অং মাইন (Mahamuni Buddha and MunAung Myin Buddha) অন্যতম। উল্লেখ্য মুন অং মাইনমুর্তিটি ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়া ভারতে আগুনের মাধ্যমে গলাতে ব্যর্থ হয়ে বার্মায়ফেরত দেন। আর মহামুনি বুদ্ধকে ধনাবতী নগর থেকে নিয়ে বিভিন্ন যায়গায় নিয়ে যাওয়ার কারণেনাকি বার্মার উপর অভিশাপ পরে। যার কারণে এই দেশটি এখনো গরীব হয়ে রয়েছে। আমাদের আজকেরআলোচনা মহামুনি বুদ্ধ নিয়ে। বার্মার মান্ডালায়ে অবস্থিত মহামুনি প্যাগোডা বিশ্বের অন্যতমসুন্দর বুদ্ধের প্রতিমূর্তির মধ্যে একটি। ধারণা করা হয় এই মূর্তি আরাকান থেকে এখানেনিয়ে আসা হয়েছিল। শোয়েডাগন প্যাগোডার পর পরই এটি বার্মার অন্যতম তীর্থকেন্দ্র। পুরানোঐতিহ্য অনুসারে বিশ্বাস করা হয় বুদ্ধের প্রতিমূর্তি বুদ্ধের সময় পাঁচটা তৈরি করা হযেছিল: যার মধ্যে দুটি ভারতে (হিমালয়েও হতে পারে), দুটি স্বর্গে আর আরেকটি হলো এই মহামুনিবুদ্ধ। জনশ্রুতিতে রযেছে খীষ্ট্রপূর্ব ৫৫৪ সালে বুদ্ধ আরাকানের ধনাবতী বা ধানিয়াওয়াদি (Dhanyawadi) নগরে এসেছিলেন তখন রাজা চন্দ-সূরিয়া (Sanda Thuriya) এই মূর্তি তৈরিকরে বুদ্ধের পূজার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। তারপর মূর্তি তৈরি হওয়ার পর বুদ্ধ মুর্তিটিকে জীবন্ত করেন। এবং যেটি দেখতে হয়েছিল অবিকল বুদ্ধের মতো। সময়ের পরিবর্তনে এই মুর্ অনেকরাজা কতৃক চুরি হয় এবং কোন এক সময়ে এটিকে মাটির নিচে গর্ করে রাখা হয় কোন এক জঙ্গলে।মান্দালয়ে এটিকে আনা হয় ১৭৮৪ সালে রাজাবোদপায়ার সময়ে এবং প্যায়াগী প্যাগোডাতে এটিকেরাখা হয়। এটির উচ্চতা হলো ৩.৮ মিটার। #বিস্তারিত নিম্মে উল্লেখ করা হলো: জনশ্রুতি অনুসারে গৌতম বুদ্ধ আরাকানের ধনাবতীনগরে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। বুদ্ধ আকাশ পথে মহাশ্রাবক আনন্দ সহ তাঁর ৫০০জন শিষ্য নিয়ে সালাগিরি পর্বতের পাশে খাউক্রা(Khaukrah) শহরে আগমন করেন যখন ঐ দেশের রাজার ২৬ তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্টিতহচ্ছিল। আরাকানের রাজা ও তাঁর মহারানীচন্দ্রমালা (তাঁর সাথে ১৬০০ মহিলা ছিল) এবং মন্ত্রী- রাজ্যের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাবুদ্ধকে সম্মান দেখাতে সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁরা সকলেই বুদ্ধের ধর্মে দীক্ষিত হন এবং বুদ্ধের শ্রাবস্তীগমনের পূর্বে তিনি পূজার জন্য বুদ্ধকে নিকট থেকে একটি প্রতিচ্ছবি প্রার্থনা করেন। এই উদ্দেশ্যে বুদ্ধ একটি বোধিবৃক্ষে এক সপ্তাহের জন্যসমাধিতে নিমগ্ন থাকেন। ঐ সময় দেবরাজ ইন্দ্র বিশ্বকর্মাকে নিয়ে স্বর্গ থেকে মর্তে আগমনকরেন। এবং রাজা ও প্রজাদের দান করা অলংকার দিয়ে তিনি বুদ্ধের প্রতিচ্ছবি নির্মান করেন।ঐ সময় বুদ্ধ যেন পরমানন্দে থাকতে পারেন সেই জন্য দেবরাজ ইন্দ্র আরো একটি আলাদা বাসস্থানতৈরি করেন বুদ্ধের জন্য। সাতদিন পর বুদ্ধের প্রতিমূর্তি তৈরি সম্পন্ন হয় এবং অতি নিখুঁতভাবেসম্পন্ন হয় যে বুদ্ধ তা দেখে সন্তুষ্ট হন। পরে তিনি নিজের বুকে হাত দিয়ে মুর্তির বুকেহাত বুলান এভাবে তিনবার করে তিনি মুর্তিটিকে জীবন দান করেন। কথিত আছে জীবন্যাস করারসাথে সাথে মুর্তিটি দাড়িঁয়ে যায়। ভগবান এই মুর্তির নাম রাখেন চন্দসার (Candasara) বুদ্ধের ছোট ভাই। বুদ্ধ তখন আরো বলেন এই চন্দসারের মধ্যেআমার সব গুন বিদ্যমান থাকবে শুধু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি মূর্তিটিকে কথা বলাএবং হাঁটতে নিষেধ করেন। তাই যারা এই মুর্তির পূজা করবে তারাও বুদ্ধকে পূজার সম পূন্যলাভ করবে। বুদ্ভ আরো উল্লেখ করেন এই মূর্তি বুদ্ধ শাসনের ৫০০০ বছর কাল পর্যন্ত স্থিতথাকবে। #আরাকানের মধ্যে নয়টি ঘটনা ঘটার কথা প্রচলিত আছে যখন মূর্তিটিরপ্রতিষ্টা হয় এবং বুদ্ধ মুর্তি প্রতিষ্টার পরও যা বিদ্যমান রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।সেই নয়টি ব্যাপার হলো: ১. এই মূর্তি ধোয়ার জন্য পবিত্র জল কখনোই যে পাত্রে রাখাহউক না কেন উপছাইয়া পরবে না। ২. যে পাত্র বুদ্ধের শির ধোয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিলসে পাত্র বছরের পর বছর যে রকম ছিল সেরকমেই থাকবে। (সম্ভবত: পাঁচ হাজার বছর।) ৩. সন্ধায় পূজা করার সময় নাকি এই বুদ্ধমূর্তি থেকে ছয় রংয়েরজ্যোতি বের হয়। ৪. অবিশ্বাসীরা এই জ্যোতি দেখতে পায় না। ৫. যত সংখ্যক পূজারীই আসুক না কেন এই বিহারে সহজেই অবস্থানকরতে পারবে। 6. বিহারের অবস্থিত বৃক্ষের সব পাতা বুদ্ধের দিকে তাকিয়েদেখছে এমন ভাবে থাকবে। ৭. বিহারের উপর কোন পাখি উড়বে না। ৮. সরূপ পাথরের যে মুর্তি রাখা হয়েছে মহামুনি বুদ্ধের সামনেসেগুলো খারাপ দেবতাদের আগমন নজরে রাখবে। ৯. প্রহরী সরূপ পাথরের যে মুর্তি রাখা হয়েছে মহামুনি বুদ্ধেরসামনে সেগুলো খারাপ দেবতাদের বিহারে প্রবেশে বাধা দিবে। এই মূর্তি তৈরি করার পর এর পরিশিষ্ট অংশ দিয়ে আরো ৭ টি বড় (১০ থেকে ১২ ইন্চি সাইজের), ১৯ টি মাঝারি এবং ১০৭ টি ছোট মুর্তিবানানো হয় মহামুনি বুদ্ধ প্রতিমূর্তি তৈরি করার পর। এই সব মুর্তির মধ্যে কয়েকটি আবার বাংলাদেশে রয়েছে। এইদিক দিয়ে আমরা সৌভাগ্যবান। যার মধ্যে চিংম্রমে, রামুতে, বান্দরবান রাজবিহারে, এবং রোয়াংছড়িতে রয়েছে যেগুলো বড় সাইজের গুলো। ছোট সাইজেরও কিছু কিছু বাংলাদেশে নাকি রয়েছে। যেমন: মহাকিয়াং চাক্রামুনি বুদ্ধ। আমাদের উচিত এই বুদ্ধমূর্তিরপূজা করা এবং নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখা!
রক্তিম বড়ুয়া
**সব্বে সত্তা সুখীতা হোন্তু জগতের সকল প্রানী সুখী হোক ,বুদ্ধের শাসন বিস্তৃত হোক ,বুদ্ধের শাসন শ্রীবৃদ্ধি হোক ,বুদ্ধের শাসন চিরজীবী হোক ।।
No comments
Post a Comment