বাবা ধীরেন্দ্র লাল তালুকদার অতঃপর শ্রীমৎ নন্দসার ভিক্ষু (১৯১০-২০১৩)


- রেলী তালুকদার

পারিবারিক পটভূমি ঃ
তালুকদারী সত্ত্বে রাজ অফিসের মোহারঞ্চিত দলিল-পত্রাদি মোতাবক পেজ্ঞ্যাংশ্রী গোজার বামন গোষ্ঠীর পুরান বংশানুক্রমিক অনুযায়ী শ্রী পহরচান তালুকদার ছিলেন চাকমা রাজের ৯ (নয়)টি তালুকের মধ্যে একটি তালুকের তালুকদার। তিনি চারপুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন তাঁর পুত্রগণ শ্রী চন্ডীচরণ তালুকদার, শ্রী গঙ্গাচরণ তালুকদার, শ্রী চন্দ্র কান্ত তালুকদার ও শ্রী সূর্য্যকান্ত তালুকদার এবং দু’কন্যার নাম শ্রীমতি মিলাপুদি তালুকদার ও শ্রীমতি খেধাবি তালুকদার। শ্রী চন্ডীচরণ তালুকদার বড়চেগে গোজা দেওয়ান গোষ্ঠীর শ্রী চন্দ্রধন দেওয়ান ও শ্রী ইন্দ্রধন দেওয়ানের ভগ্নী শ্রীমতি চিন্তাপুতি দেওয়ানের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাদের সংসারে নয় পুত্র (নয় পুত্রের মধ্যে অল্প বয়সে দুইপুত্র মারা যায়) যথাক্রমে শ্রী রাজচন্দ্র তালুকদার, শ্রী রাজ কুমার তালুকদার, শ্রী রাম চন্দ্র তালুকদার, শ্রী কাঁশী চন্দ্র তালুকদার, শ্রী আদি চন্দ্র তালুকদার, শ্রী বঙ্গচন্দ্র তালুকদার ও শ্রী চিত্র কুমার তালুকদার এবং শ্রীমতি কবাবি তালুকদার নামে একটি কন্যা সন্তানের জনক-জননী  ছিলেন।
পরবর্ত্তীতে তালুক প্রথা বিলোপ হলে শ্রী পহরচাঁন তালুকদারের ১ম পুত্র শ্রী চন্ডীচরন তালুকদার সুবলং এর পানছড়ি মৌজার হেডম্যান হন। তিনি কোন একটি বিশেষ জটিল মোকদ্দমায় রাজ অফিসের অমতে প্রজাপক্ষে স্বাক্ষী প্রদান করলে রাজা অসন্তোষ হলে তাঁকে হেডম্যান পদবী হতে অপসারণ করেন, অতঃপর তিনি মৌজা হারিয়ে অপমানে লোকালয় ছেড়ে বরকলের উপরে ঠেগা খালের গুইছড়ি মূখে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের কারণে অল্প কয়েক বছরের মধ্যে জুম, কাট্টন এবং ব্যবসা কারবার করে সেই এলাকার সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। শ্রী চন্ডীচরণ তালুকদারের তৃতীয় পুত্র শ্রী রাম চন্দ্র তালুকদার বাঘাচোলা প্রাইমারী স্কুলের পাঠ শেষে রাঙ্গামাটি হাই স্কুলে কিছুদিন পড়াশুনা করার পর প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকতা শুরু করেন। জনশ্রুতি আছে, তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত না হলেও কথাবার্তায় অতীব সুপন্ডিত ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রকার কারু-কাজে যেমন কর্মঠ তেমনি সাহসী ও পটু ছিলেন বলে জানা যায়।
তিনি কাচালং ভেলীর লংগদু নিবাসী স্বনামধন্য শ্রী নব চন্দ্র কার্বারীর ভাগিনী শ্রীমতি চঞ্চুনি চাকমার সহিত শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হন। তাদের সোনার সুখের সংসারে ৮ অক্টোবর ১৯১০ সালে ফুটফুটে প্রথম পুত্রধন শ্রী ধীরেন্দ্র লাল তালুকদার এক শুভক্ষণে জন্ম গ্রহণ করেন এর বছর দু’পরে শ্রীমতি বিজলী লতা (ধীরেনপুতি) তালুকদারের জন্ম হয়। শ্রী রাম চন্দ্র তালুকদারের কপালে ইহ জগতের সুখ আর বেশী দিন সইলোনা তিনি ছোট্ট দু’টি অবুঝ সন্তান ও অসহায় স্ত্রীকে রেখে চলে গেলেন না ফেরার রাজ্যে। এদিকে শ্রীমতি চঞ্চুনী চাকমা ছোট্ট দু’টি অবুঝ সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে কোন কুল-কিনারার দিশা পাচ্ছেন না যখন, সে মহুর্তে দ্বিতীয় বিবাহের সম্বন্ধ এলে সন্তানের ভূত-ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তাতে মত প্রদান করেন। কিন্তু নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর-নিথর দ্বিতীয় সংসারে মাত্র ৩/৪  বছরের মাথায় শ্রীমতি চঞ্চুনী চাকমাও পরপাড়ে পাড়ি জমান । এরপরই শ্রী ধীরেন্দ্র লাল তালুকদার (৮/৯) ও শ্রীমতি বিজলী লতা (ধীরেনপুতি) তালুকদার (৬/৭) হলেন পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ। এরপর ছোট্ট দু’টি শিশু  শ্রী ধীরেন্দ্র লাল তালুকদার ও শ্রীমতি বিজলী লতা (ধীরেনপুতি) তালুকদারের আশ্রয়স্থল হয় মাতুলালয়ে। সেখানে তাঁদের নানীর আদর-¯েœহে ও মামা-মামীদের অকৃত্রিম মমতায় কাটতে লাগলো শিশু বেলার দিনগুলো । তখনকার সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা না হওয়ায় তাঁদের পিতৃকুলের আত্মীয়-স্বজনদের নিকট তাঁদের পিতৃ-মাতৃ বিয়োগের দুঃসংবাদ দেরীতে পৌঁছায়। তখন তাঁদের কাকা শ্রী আদি চন্দ্র তালুকদার বি,এ পাশ করেন এবং কাট্টলী নিবাসী হেংজে গোজার মুরুব্বী সুনামধন্য শ্রী আনন্দ মোহন দেওয়ানের কন্যা শ্রীমতি যুবামিনী দেওয়ানের সহিত বিবাহ সম্বন্ধ করেন বটে তখন পর্যন্ত তাঁদের কুলে কোন সন্তানাদি না হওয়ায় তিনি শ্রী ধীরেন্দ্র লাল তালুকদার ও শ্রীমতি বিজলী লতা তালুকদারকে নিজের পুত্র-কন্যার মত প্রতিপালন করতে লাগলেন। ইত্যবসরে শ্রী আদিচন্দ্র তালুকদার কাচালং তুলাবান এম,ই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করার পর পরিবার নিয়ে কাক্কুয্যামূখ নামক গ্রামে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন শুরু করেন। সে সময় শ্রী ধীরেন্দ্রলাল তালুকদারকে নতুন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন এবং শ্রী ধীরেন্দ্রলাল তালুকদার তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে গৃহাস্থলী কাজ-কর্মে আত্ম নিয়োগ করেন। শ্রী আদি চন্দ্র তালুকদার শিক্ষকতার পাশাপাশি চাষ-বাস ও কাঠ-বাঁশের ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্য পরিচালনা করতেন। এদিকে শ্রী আদিচন্দ্র তালুকদার ও শ্রীমতি যুবামিনী দেওয়ানের সংসারে পর পর ৫ (পাঁচ) পুত্র ও ১ (এক) কন্যা সন্তান তাঁদের কোলজুড়ে আসেন।

সাংসারিক জীবন ঃ
শ্রী ধীরেন্দ্রলাল তালুকদার প্রাপ্ত বয়সে হেদলাটছড়ার নিবাসী ও পেটান্যামাছড়া মৌজার হেডম্যান পন্ডিত প্রবর শ্রী প্রাণহরি তালুকদারের দ্বিতীয় কন্যা শ্রীমতি প্রীতিবালা তালুকদারের সহিত শুভ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শ্রী ধীরেন্দ্রলাল তালুকদার তাঁর কর্মময় জীবনে যেমন ছিলেন কর্মঠ তেমনি ছিলেন সৎ ও নিষ্ঠাবান। তাই তাঁর কাকার সংসারের যাবতীয় চাষ-বাস ও কাঠ-বাঁশের ব্যবসা- বাণিজ্যের কার্য পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর উপর বত্যায় এবং তিনি অতি নিষ্ঠার সহিত কাকাতো ভাই-বোনদের দেখাশুনা ও পড়াশুনার সহযোগিতামূলক দায়িত্বও পালন করেন।  এ কারণে শ্রী আদিচন্দ্র তালুকদারের শিক্ষকতার দায়িত্ব পালনে কোনরুপ যেমন ব্যাঘাত ঘটেনি তেমনি তার সন্তানদের লেখাপড়া শিখাতেও অসুবিধে হয়নি। এদিকে শ্রী ধীরেন্দ্রলাল তালুকদার ও শ্রীমতি প্রীতিবালা তালুকদারের ঘরে শ্রী আদি চিত্তি নামে একটি পুত্র সন্তান জন্ম হয়ে বছর দু’য়েকের মধ্যে মৃত্যু হয়। পরে শ্রীমতি শেফালিকা তালুকদার ও শ্রী চন্দ্র শেখর (খুকুমনি) তালুকদারের জন্মের ২/৩ বছরের মাথায় তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী শ্রীমতি প্রীতিবালা তালুকদারকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেও কর্মকে ছাড়েননি। এদিকে তাঁর শাশুড়ী এবং শ্বশুড়ও শ্রী প্রাণহরি তালুকদার ও কাকিমা এবং কাকা শ্রী আদিচন্দ্র তালুকদারের চোখে-মূখে ঘুম ও খাওয়া-নেওয়া নেই, সবাই চিন্তিত ছোট্ট শিশু দু’টির ভবিষ্যৎ কি হবে, কিভাবে লালন-পালন করা যায় এভাবে সাত-পাঁচ ভাবতে লাগলেন। অপরদিকে শ্রী প্রাণহরি তালুকদার তাঁর ছোট্ট নাতিন-নাতিনীদের লালন-পালনের জন্য সংগোপনে খোঁজতে থাকেন তাঁর সদ্য বিপতœীক জামায়ের জন্য নববধু যে রমনী ছোট্ট শিশুদের প্রতিপালনে করবে না কোন প্রকার অবহেলা-অনাদর।
অবশেষে শ্রী প্রাণহরি তালুকদার তাঁর নিকটাত্মীয় ভাই নানিয়াচরের ছোট মাওরুম নিবাসী শ্রী জয়কুমার দেওয়ানের সদ্য যৌবনপ্রাপ্তা কন্যা তদানীন্তন জেলা প্রশাসকের পেশকার শ্রী তেজেন্দ্রলাল (ডাঃ এ,কে দেওয়ানের পিতা) দেওয়ানের ভাইঝি শ্রীমতি শশী প্রভা দেওয়ানের সহিত শ্রী ধীরেন্দ্র লাল তালুকদারকে ২য় বিবাহ সম্বন্ধ করার ব্যাপারে শ্রী আদিচন্দ্র তালুকদারের নিকট প্রস্তাব জ্ঞাপন করলে তিনিও খুশী হয়ে সাথে সাথে সম্মতি প্রদান করেন এবং তিনিও মুরুব্বীদের আদেশ এবং ছোট্ট দু’টি ছেলে-মেয়ের কথা চিন্তা করে উক্ত প্রস্তাব মেনে নেন আর তারপর মহাধুমদামের মাধ্যমে বিবাহ কার্য সম্পাদন হলে শ্রী ধীরেন্দ্রলাল তালুকদার ও শ্রীমতি শশী প্রভা দেওয়ান উভয়ে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এই নতুন সংসারে পর্যায়ক্রমে শ্রীমতি চঞ্চলা তালুকদার, শ্রী অসীম কুমার তালুকদার বর্তমানে শ্রদ্ধেয় সুমনালংকার মহাথের, শ্রী শংকর তালুকদার, শ্রীমতি উজ্জ্বলা তালুকদার, শ্রী সম্রাট তালুকদার, শ্রী উদয়ন তালুকদার, শ্রী বেলজিয়াম তালুকদার ও সর্ব কনিষ্ঠা শ্রীমতি রেলী তালুকদারসহ মোট ৬ (ছয়) পুত্র এবং ৪ (চার) কন্যা বর্তমান জীবিত থেকে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত আছেন। এরই মধ্যে অনেক বছর চলে যায় বিৃটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল হয় আর বাবার জ্ঞাতিবর্গের কিছু অংশ ঠেগা, বাঘাচোলা ও কাচালং ভেলীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান নন আর  কাপ্তাই বাঁধের পর পরেই অধিকাংশ ভারতের অরুনাচল ও মিজোরামে চলে গেলেও শুধুমাত্র বাবাই লংগদু তিনটিলায় দেশ-মাতৃকার টানে থেকে যান।
হয়ত বাবার অতীত জন্মে পূণ্যফলের হেতু থাকায় তাঁর পিতৃতুল্য কাকার সহিত ভারতে পাড়ি না জমানোর কারণে ‘বহুজন হিতায় বহুজন সুখায়’Ñ এ মহান আর্দশের মূর্তপ্রতিক, আধ্যাত্মিক সাধকপুরুষ ও জ্ঞান তাপস পরম শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে ১৯৭০ সালের শেষভাগে ধর্মপ্রাণ উপাসক শ্রী অনিল বিহারী চাকমাসহ অনেক ভক্তপ্রাণ দায়ক-দায়িকাদের সহিত তিনিও আন্তরিক ভক্তি সহকারে লংগদুর তিনটিলা বনবিহারে অবস্থানের জন্য ফাং করেন এবং সেবা-পূজা করে পূণ্য অর্জনের সুযোগ প্রাপ্ত হন। এর পর শুরু হয় বাবার জীবনে আর এক নতুন অধ্যায়। বাবা মাকে সঙ্গে করে প্রায়শঃ প্রত্যেকদিন পূজ্য বনভান্তের দর্শণার্থে ও ধর্ম দেশনা শ্রবণ মানসে বিহারে যেতেন এবং প্রতিটি উপোসথ দিবসে উপোসথশীল প্রতিপালন করতেন। এরপর বুদ্ধশাসনাধিকারী হলেন নিজ কুলপুত্র শ্রী অসীম কুমার তালুকদারকে বনভান্তের নিকট প্রব্রজ্যা প্রদানের মাধ্যমে। বাবার যে সমস্ত  খারাপ অভ্যাস ছিল তা ত্যাগ করে তথাগত বুদ্ধের নির্দেশিত পথে অর্থাৎ সম্যকভাবে থাকবার প্রচেষ্টায় ছিলেন সদাসর্বদা ।
আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি তিনি তাঁর সংগ্রহে থাকা ৪/৫টি মাত্র বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ বার বার শব্দ সহযোগে পড়তেন এবং এ অভ্যাসটি যতদিন শারিরীকভাবে সবল ছিলেন ততদিন পর্যন্ত চর্চা করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে লংগদু গণহত্যার সময় সেদিন রাত্রে এক কাপড়ে পালিয়ে এসে আমাদের পরিবারের সদস্যদের আশ্রয়স্থল হয় পার্বত্য বৌদ্ধ মিশন । পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বাবার অন্তরে বাঙ্গালী ভীতি কেটে যায়নি তাই তিনি তাঁর ছেলে শ্রীমৎ সুমনালংকার ভান্তের সান্নিধ্যে থেকে যান এবং প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা বুদ্ধ বন্দনা ও ধর্মীয় গ্রন্থাদি পড়ে সারাদিন কেটে দিতেন অথচ পিবিএমের শতশত ছেলে-মেয়েদের কোলাহল তাঁর একাগ্রতা বিনষ্ট করতে পারতো না। এরপর ২০০০ খ্রীষ্টাব্দে আমার জন্মধাত্রী মা প্রয়াত হলে বাবা একা হয়ে পড়েন এবং বছর দুই পর তাঁর আপন জ্ঞাতি দর্শনের জন্য ভারত গমন করেন এবং সেখানে ৯ মাস অবস্থান করে ফিরে আসেন।

ভিক্ষুত্ব জীবন ঃ বুদ্ধের মতে জল, বায়ু, তাপ ও মাটির দ্বারা সৃষ্ট সমস্ত বস্তুই পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে অনাদি অনন্তকাল ধরে প্রবাহমান। তাই তথাগত সম্বুদ্ধ জগতের কার্যকারণ নীতি অবলোকন করেই অনিত্য, দুঃখ ও অনাত্মা বিষয় এর উপলব্ধি করে দীর্ঘ পরিক্রমার অন্তঃসাধনে ব্রতী হবার জন্য বারবার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। বুদ্ধের এ অমৃতবাণী বাবা শেষ জীবনে এসে উপলব্ধি করে আত্মদর্শন ও আত্মমুক্তির পথকে খুজে পেলেন। কারণ একটাই ‘জন্ম জন্মান্তরে থাকলে ভাগ্য, সংসার ছেড়ে হয় বৈরাগ্য।’ পরম শ্রদ্ধেয় বাবা জাগতিক নিয়মে আবর্তিত হয়ে যেমন এসেছিলেন তেমনি সবার মত শূন্য হাতে এসেও অসাধারণ ত্যাগ- তিতিক্ষা ও উচ্চতর জীবন, ব্রহ্মচর্য জীবন- উদযাপন করবার লক্ষ্যে ১১ই এপ্রিল ২০০৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রব্রজ্যা এবং ১৪ মে ২০০৫ খ্রীষ্টাব্দে তারিখে উপসম্পদা বা অতি উত্তম সম্পদ লাভ করে দীর্ঘ ৯ বছর সাধনার মাধ্যমে সার্থক জীবনতরীকে জ্ঞানে গুণে কানায় কানায় পূর্ণ করে সবার চোখের অন্তরালে  ৯ অক্টোবর ২০১৩ খ্রীষ্টাব্দ খুব ভোরে নিভৃতে সবার অলক্ষ্যে চলে গেলেন।

অনিচ্চা বত সঙ্খারা উপ্পাদ বয ধম্মিনো, উপ্পজ্জিত্ত্বা নিরোজ্ঝন্তি তেসং বুপসমো সুখো;
সব্বে সত্তা মরন্তি চ মরিংসু চ মরিস্সরে, তথে বহং মরিস্সামি নত্থিমে এত্থ সংসযো’তি।

বাবা তুমি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছ কিন্তু তোমার স্মৃতি চিরদিন আমার মানসপটে আঁকা থাকবে। তোমার   ¯েœহাশীষ যেন আমাদের সকলের সমান অংশীদার হয়। আমার জন্মান্তর কৃত সমস্ত পূণ্যফল তোমার নির্বাণ সুখ কামনায় উৎসর্গ করলাম।

সাধু Ñ সাধু Ñ সাধু

শ্রীমতি তালুকদার, প্রয়াতের কনিষ্ঠা কন্যা ও পিবিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত।

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.