৬২ বছরে সংখ্যালঘুর সংখ্যা নেমে এসেছে ৯ শতাংশে

দৈনিক প্রথম আলো
বিশেষ প্রতিনিধি | আপডেট: ০২:২৯, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩ | প্রিন্ট সংস্করণ
৬২ বছর আগে ১৯৫১ সালে এ দেশে মোট জনসংখ্যার ২৩ দশমিক ১ শতাংশ ছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তখন দেশ ছিল পরাধীন। ৬২ বছরে স্বাধীন দেশে এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৯ শতাংশের নিচে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নির্বাচন: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার ক্রমহ্রাসমান এই চিত্র তুলে ধরা হয়। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের লিখিত ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন আয়োজক সংস্থা শারির নির্বাহী পরিচালক প্রিয় বালা বিশ্বাস। শারি ছাড়াও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হরিজন ঐক্য পরিষদ, দলিত পঞ্চায়েত ফোরাম ও দলিত নারী আন্দোলন এই সভার আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন শারির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এম গুল হোসেন।
আবুল বারকাতের দেওয়া ধারণাপত্রে বলা হয়, ১৯৫১ সালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মোট জনসংখ্যার ২৩ দশমিক ১ ভাগ, ’৬১-তে ১৯ দশমিক ৬, ’৭৪-এ ১৪ দশমিক ৬, ’৮১-তে ১৩ দশমিক ৩, ’৯১-এ ১১ দশমিক ৭ এবং ২০০১ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪ ভাগে। বর্তমান সময়ে তা ৯ ভাগের নিচে অবস্থান করছে।
সভায় প্রধান অতিথি তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির পৃষ্ঠপোষক বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া যদি ওই সব জঙ্গিবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গ ত্যাগ না করেন, তাহলে বাংলার মানুষ তাঁকেও বর্জন করবে। আজ বেগম জিয়াকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তিনি জঙ্গিবাদীদের ত্যাগ করবেন, নাকি রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিদায় নেবেন।
সংস্কৃতিসচিব রঞ্জিত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নির্বাচন এলেই সব দোষের নন্দঘোষ হয়ে যাই আমরা সংখ্যালঘুরা।’
সম্প্রতি সাতক্ষীরা ঘুরে আসার বিষয় বর্ণনা করে সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, নলতা এলাকায় জামায়াত-শিবির নানা ধরনের ক্রিয়াকলাপ চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে সতর্ক হতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সংখ্যালঘু অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি।’
খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল রোজারিও বলেন, ‘বড়দিনের আগের দিন অবরোধ আহ্বান করায় রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়ে আমরা কোনো অনুষ্ঠান পালন করতে পারিনি। স্বাধীন জাতি হিসেবে এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।’
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন যারা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন শক্ত অবস্থান নিচ্ছে না বলেই এর সমাধান হচ্ছে না।
সভায় উপস্থিত পাবনার সাঁথিয়ার সুষমা রানী সাহা নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা যখন কালীপূজার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত, তখন প্রতিমায় পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে প্রশাসনের লোকজন এসে কোনো রকম পদক্ষেপ না নিয়েই ফিরে যায়।’
২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে নির্যাতিত বরিশালের অপূর্ব লাল সরকার বলেন, ‘নির্বাচনের পর আমাকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে মারধর করে পা ভেঙে দেয়, দীর্ঘ চিকিৎসার পরও আজ অবধি আমি হাঁটতে পারি না।’
সভার সমন্বয় করেন শারির প্রকল্প সমন্বয়কারী রঞ্জন বকসী।

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.