সামাজিক উৎসব বৈসাবি


পাবর্ত্য চট্টগ্রামে চাকমা জাতির উৎসব গুলো বৈচিত্রময়। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীও নয়নাভিরাম। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্যপটও বদলে যায়। সেই সঙ্গে মানুষের মনে শিহরণ জেগে উঠে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি, নববর্ষ পালনের আগ্রহে।  তারা যুগ যুগ ধরে উক্ত উৎসব প্রতি পালন  করে আসতেছে বংশ পরম্পরা। সেই ধারা আজও প্রচলিত রয়েছে।
পাহাড়ি বৌদ্ধদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি। চৈত্র মাসের শেষ দিন, বৈশাখ মাসের প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিন  মোট তিন দিন এ উৎসব পালন করা হয়। মূলতঃ তথাগত বুদ্ধের আর্বিভাব, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ এ ত্রিস্মৃতি বিজরিত দিন বৈশাখী পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করেই এই বৈসাবি উৎসব পালন করা হয়। যদিও সম্রাট আকবর  বাংলা সাল গণনার প্রবক্তা। কথিত আছে আগেকার দিনে প্রথমে অগ্রহায়ণ মাসকে অগ্র বা প্রথম মাস হিসেবে গণনা করা হত। ভগবান বুদ্ধের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই বৈশাখ মাস অগ্র মাস হিসেবে গণনা করা হয়েছে।
এ বৈসাবি উৎসবে হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে বন্ধুতের বন্ধন দৃঢ় হয়। সম্প্রীতির বন্ধন আরো জড়ালো হয়। একে অপরের বাড়ীতে বেড়াতে যায় আনন্দ উল্লাস করে । কিন্তু বর্তমানে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়াই উৎসবটি প্রাণ খুলে উদ্যাপন করতে পরতেছে না। এদিকে সেনাবাহিনীও বাঙ্গালি সেটেলার পাহাড়িদের উপর নিপিড়ন অন্যদিকে জেএসএস ও উইপিডিএফ মধ্যে ভাতৃত্ব ঘাটি সংঘাত । এ সমস্ত কারণে সঠিক ভাবে জীবন ধারণ অসম্ভ হয়ে পড়েছে। উৎসব কিভাবে পালন করবে।
বৈসাবি শব্দের তাৎপর্য ঃ
বৈসাবি শব্দের তাৎপর্য হল “বৈ+সা+বি” এ তিনটি শব্দ নিয়ে গঠিত। ত্রিপুরা সম্প্রদায় ভাষায় চৈত্র সংক্রান্তিকে বলে “বৈসু”, মারমা সম্প্রদায়ে ভাষায় বলে “সাংক্রাই” আর চাকমা সম্প্রদায় ভাষায় বলে “বিঝু”। এই তিন সম্প্রদায়ে ভাষার প্রথম শব্দটি নিয়ে বৈসাবি বা চৈত্র সংক্রান্তি শব্দটি গঠিত হয়েছে। এখানে শুধু চাকমাদের বিঝু সম্পর্কে আলোচনা করা গেল ঃ
    বিঝু চাকমাদের জাতীয় উৎসব বলা যায়। চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে এ উৎসব আয়োজন করা হয়। চৈত্র মাসের শেষ দুইদিন ও পহেলা বৈশাখ এই তিন দিন মহাসমারোহে বিঝু উৎসব পালন করা হয়। প্রতি বছর বউকথা কও পাখিটি “কাট্টোল পাগোগ বিঝু এঝোক” অর্থাৎ কাঁটাল পেকেছে বিঝু এসেছে। এই ডাকটি  আকাশে-বাতাসে ধব্বনিত হয় তখন বিঝু উৎসবের আগমনী বার্তা জানিয়ে যায়। প্রহর গুনতে শুরু করে পাড়ার ছেলে মেয়েরা কখন যে বিঝু আসবে। তখন ঘরে ঘরে সাড়া পড়ে যায় বিঝু উৎসবের প্রস্তুতি। বাড়ীর প্রতি সদস্যদের নতুন জামা কাপড় ক্রয় করা হতে শুরু করে আরো কত কি? পর্যায়ক্রমে তিন দিন বিঝু উৎসব পালন করা হয়। প্রথম দিনকে ফুল বিঝু, দ্বিতীয় দিনকে মূল বিঝু এবং তৃতীয় দিনকে গজ্যাপজ্যা দিন বলা হয়। বিঝু উৎসবের প্রস্তুতির জন্য প্রত্যক ঘরে মদ, সেমাই, পিতা ইত্যাদি যোগাড় করে রাখা হয়। এদিন জাতিবর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতি মনোভাব নিয়ে উৎসবে মেতে উঠে।
ফুল বিঝু ঃ
চৈত্র মাসের শেষ দিনের আগের দিনকে চাকমা ভাষায় ফুল বিঝু বলা হয়। এই দিন খুব ভোরে উঠে পাড়ার ছেলে মেয়েরা  ফুল সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। নদীর ঘাটে গিয়ে স্নান করে জল দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে পূজা করে প্রার্থনা করে যেন অনাগত দিন গুলো সুখে ও নিরোগে কেটে যায়। তারপর বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে পূজোপকরণ নিয়ে পূজা করে সমবেত বন্দনা করে ভিক্ষু নিকট হতে শীলাদি গ্রহন করে বাড়ীতে চলে আসে। বাড়ীতে আসার পর ছেলে মেয়েরা বাড়ীর সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর বন্ধু-বান্ধবী, সঙ্গী-সাথী একে অপরকে ফুল বিনিময় করে শুভেচ্ছা জানাই। সন্ধ্যার সময় মন্দিরে প্রদীপ পূজা করে বাড়ীতে এসে ঘরের মূল দরজায় ও আঙ্গিনায়, ঢেকি ঘরে, গোয়াল ঘরে ও নদীতে সারি সারি প্রদীপ জ্বেলে অনাগত দিন গুলোকে সুখের প্রত্যাশা প্রার্থনা করা হয়। এদিনে ছেলে-মেয়েরা  কোন কাজ কর্ম না করে আনন্দ ফুট্টি করে এবং বুড়াবুড়িরা বৌদ্ধ মন্দিরে ধর্মালোচনায় ব্যস্ত সময় কাটায়। মূল বিঝু দিনে খাবার পরিবেশন করার জন্য খাবার তৈরীতে মেয়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে কেটে যায় ফুল বিঝু।
মূল বিঝ ঃ
     বছরের চৈত্র মাসের শেষ দিনে মূল বিঝু পালন করা হয়। এদিনটি হচ্ছে বিঝু উৎসবের মূলপর্ব। এদিনে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যথা নিয়মে ফুল সংগ্রহ করে নদীর ঘাটে গিয়ে স্নান করে ফুল দিয়ে পূজা করার পর বাড়ীতে এসে আয়োজনের কাজে লেগে পড়ে। গ্রামের ছেলে মেয়েরা একে অপরের বাড়ীতে গিয়ে মুরব্বিদের প্রণাম করে ধান বা চাল নিয়ে হাসঁ, মুরগিদের খাওয়াই। চাকমাদের প্রতিটি ঘরে অন্তত ১০/১২ ধরনের তরকারী মিশ্রিত পাজন তরকারী রান্না করা হয়। এ ছাড়াও নানা ধরনের পিঠা লারু, বিন্নি ধানের খৈই, মিষ্টান্ন ইত্যাদি খাদ্য প্রস্তুত করে পরিবেশন করা হয়। এদিনে কাউকে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসতে হয় না। জাতিবর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য দ্বার উন্মূক্ত। সবাই একে অন্যের বাড়ীতে ঘুরে ঘুরে খাওয়ার উৎসবে যোগদান করে। সারাদিন চলে আনন্দ উৎসবে। এভাবে হৈ চৈ করে বেড়ানো ও খাওয়ার উৎসবে আনন্দে পূরাতন বছরকে বিদায় জানানো হয়।
গজ্যাপজ্যা দিন ঃ
    নতুন বছর বৈশাখ মাসের প্রথম দিনকে বলা হয় গজ্যাপজ্যা দিন। গজ্যাপজ্যা দিন অর্থাৎ গড়াগড়ি দিন । এদিন খাওয়া-দাওয়া করে সারাদিন বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে অর্থাৎ বিশ্রামে দিনটিকে অতিবাহিত করা হয়। বিকাবেলা যুবক-যুবতীরা ঘিরাখেলা, ফুট্টিখেলা, ফুটবল খেলা ইত্যাদি খেলায় মেতে উঠে। বছরের প্রথম দিনটি যদি ভালো খাওয়া-দাওয়া হাসি, গল্প করে কাটাতে পারলে বছরের বাকী দিন গুলো সুখে দিন কেটে যাবে মনে করা হয়। এদিনে আতœীয়-স্বজন বুড়া-বুড়ি বা মুরব্বিদের যতœ করে খাওয়ানো হয়। পাড়ার যুবক-যুবতীরা নদী বা কুয়া থেকে কলসি দিয়ে পানি তুলে পাড়ার সকল বুড়াবুড়িদের স্নান করিয়ে প্রণাম পূর্বক আর্শীবাদ গ্রহণ করা হয়। বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে বুদ্ধ পূজা করে ভিক্ষুদের নিকট হতে শীলাদি গ্রহন করে থাকে। সন্ধ্যায় যথারীতি উক্ত নিয়মে প্রদীপ জালানো হয়। এভাবে বছরের প্রথম দিনটি অতিবাহিত করা হয়।
প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান ঃ
চাকমা বৌদ্ধদের প্রধান ধমীর্য় উৎসব কঠিন চীবর দান। এটি শুধু চাকমা বৌদ্ধদের উৎসব নয়, সমগ্র বৌদ্ধ জাতির সামাজিক উৎসব। প্রবারণা পূর্ণিমা পরের দিন থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা মধ্যে এ দানোৎসব সম্পন্ন করতে হয়। একটি বিহার একবার মাত্র চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ কঠিন চীবর দানোৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিটি বিহারে –গ্রামে গঞ্জে ও শহরে বন্দরে বিপুল পরিমাণে সাড়া ও জাগরণের সঞ্চার হয়। যে দিন যে বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব হবে সে দিন-রাত উপাসক-উপাসিকা, দায়ক-দায়িকা ও ছেলে-মেয়েদের চোখে ঘুম থাকে না । তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। বিহারকে সুসজ্জিত ও আলোক সজ্জা করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ঐদিন প্রভাত ফেরী, পঞ্চশীল, অষ্টশীল, বুদ্ধপূজা, সংঘদান, অষ্ঠপরিস্কার দান, অতিথি সৎকার, সর্দ্ধম দেশনা,  কঠিন চীবর দান, কল্পতরু দান, ধজ্বা উৎসর্গ, সন্ধ্যায় প্রদীপ পূজা, পানীয় পূজা, ফানুস বাতি উত্তোলন, বুদ্ধকীর্ত্তন ইত্যাদি অনুষ্টিত হয়।
কঠিন চীবর দান উপলক্ষে আপন জনদের মধ্যে বিভিন্ন গ্রাম থেকে আতœীয়-স্বজনেরা আসবেন এবং বিভিন্ন বিহার থেকে ভিক্ষু সংঘ আসবেন । সবাইয়ের সাথে দেখা হবে, ভাবের আদান প্রদান  এবং কুশল বিনিময় করা হবে। এতে সম্মিলিত ভাবে দান ও ধর্ম শ্রবণের  সুযোগ সৃষ্টি হয়। পরস্পরের মধ্যে মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্ব ভাব গড়ে ওঠে। ইহা সমাজ ও জাতির জন্য অত্যন্ত কল্যাণ কর হবে। বর্তমান সমাজ ও জাতি অগ্রগতির মূলে রয়েছে কঠিন দানোৎসব।  তাই কঠিন চীবর দান বৌদ্ধ সমাজে আর্শীবাদ স্বরূপ। আমাদের জাতীয় স্বার্থে কঠিন চীবর দানোৎসব ধরে রাখতে হবে।
প্রবারণা শব্দের অর্থ কি?
    সংস্কৃত ‘প্রবারণা’ শব্দ হতে পালি ‘পবারনা’ শব্দের উদ্ভব। এর বিবিধ অর্থ হচ্ছে, যেমন- ‘ব্রত সমাপন, আপত্তি দেশনা, শিক্ষা সমাপ্তি, ধ্যান সমাধি শিক্ষার সমাপ্তি, আতœ সংযম, আতœ শুদ্ধি,  আতেœাপলদ্ধি, আমন্ত্রণ পাপ-দেশনা, দোষ ত্র“টি শিকার, মিলনোৎসব, আশার তৃপ্তি, অভিলাশ পুরণ, প্রকৃষ্টরুপে বরণ ও বারণ, অথার্ৎ কুশলকে বরণ এবং অকুশলকে বারণ বা বর্জন করা এবং এক ভিক্ষু অপর ভিক্ষুর নিকট আতœনিবেদনের দ্বারা দোষ ত্র“টি স্বীকারের মাধ্যমে পরিশুদ্ধতা লাভই ‘প্রবারণা’।
প্রবারণ দু’প্রকার ঃ- পূর্ব কার্তিক ও পশ্চিম কার্তিক প্রবারণা। আষাঢ়ী পূর্নিমায় বর্ষাব্রত আরম্ভ করে আশ্বিনী পূর্ণিমায় যে বর্ষাব্রত সমাপ্ত হয়, তাকে পূর্ব কার্তিক প্রবারণা বলে। আর দ্বিতীয় বর্ষাবাসের পর যে প্রবারনা সম্পন্ন হয় তাকে পশ্চিম কার্তিক প্রবারণা বলে। তিনি কঠিন চীবর লাভ থেকে বঞ্চিত হন।
কঠিন চীবর কি ?
যে দিন কঠিন চীবর দান করা হবে, সে দিনের সুর্যোদয় হতে পর দিন সুর্যোদয় পযর্ন্ত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুতাকাটা, কাপড় বুনা, শ্বেতবস্ত্র কর্তন, সেলাই, রং করা, ইত্যাদি কার্য সমূহ একই দিনে সম্পন্ন করতে হয় বিধায় ইহাকে কঠিন চীবর দান বলা হয়। এতে কায়িক ও মানসিক পূন্য বেশী হয়। বাজার থেকেও ক্রয় করে কঠিন চীবর দান কার যায়। তবে আপনি এক ঘন্টার মধ্যে কঠিন চীরব তৈয়ারী করলেও ভিক্ষু যদি ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত পালন না করে, তাহলে কঠিন চীবর দান করতে পারবেন না। কঠিন চীরব দান করার পর ভিক্ষু সংঘ সীমাঘরে গিয়ে ‘কর্মবাচা’ পাঠের দ্বারা বিনয় সম্মতভাবে চীবরকে কঠিনে পরিণত করেন। বিনয় বিধান মতে, কঠিন চীবর দান করা, লাভ করা ও রক্ষা করা কঠিন। এজন্যে ইহাকে কঠিন চীবর দান বলা হয়। তবে এটা শীল বিশুদ্ধিতার উপর নির্ভর করে।
কঠিন চীবরের ধর্মীয় তাৎপর্য ঃ
বিনয় পিটকের মহাবর্গে কঠিন স্কন্ধ ও বিনয়ের অট্ঠকথা ‘সামন্ত পাসাদিকায়’ কঠিন চীবর দানের বিনয়ের বিধান ও ফল সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।
ভিক্ষুগণ এক মাসে ত্রিচীবর যথা- ১. উত্তরাসঙ্গ বা বর্হিবাস ২. সংঘাটিক বা দোয়াজিক ৩. অর্ন্তবাস বা পরিধয়ে বস্ত্র পরিধান করতে পারেন এবং ত্রিচীবরের যে কোন একটি দ্বারা কঠিন চীবর দান করা যায় ।
কঠিন চীবর প্রস্তুত হলে কমপক্ষে পাঁচ জন ভিক্ষু বা সংঘের সম্মূখে উপস্থিত হয়ে ত্রিশরণ সহ পঞ্চশীলাদি তিনবার ‘নমোতস্স ভগবতো অরহতো সম্মাসম্বুদ্ধস্স’ বলে তৎপর তিনবার বলেন ‘ইমং কঠিন চীবরং ভিক্খূ সঙ্ঘস্স দেমা কঠিনং অত্থরিতুং।’  এরপর সংঘ বিনয় বিধান মতে কঠিনে আস্তীর্ণ করেন। ফাল্গুনী পূর্ণিমা পর্যন্ত বিনয়ের মাধ্যমে ইহা রক্ষা করতে  হয়।
বিনয় পিটকে মহাবর্গে উল্লেখ আছে, চীবর লাভী ভিক্ষু পাঁচ প্রকার ফল লাভ করেন, ১. না বলে গমন করা, ২. বিনা ত্রিচীবরে বিচরণ করা, ৩. গণ ভোজন করা, ৪. যথারুচি চীবর পরিভোগ করা ও ৫. যে স্থানে যে সব চীবর পাওয়া যাবে, সমস্তই তাদের হওয়া।
কথিত আছে, একদা ভগবান বুদ্ধ ষড় অভিজ্ঞা লাভী পাঁচশ অর্হৎ ভিক্ষু নিয়ে হিমালয়স্থ অনোবতপ্ত হৃদে উপস্থিত হন। ভগবান ঐ সরোবরে সহস্রদল বিশিষ্ট পঙ্কজোপরি স্থিত হয়ে নাগিত স্থবিরকে কঠিন চীবর দানের ফল বর্ণনা করতে বলেন। এরপর নাগিত স্থবির পূর্ব জন্মে কঠিন চীবর দান করে জন্ম-জন্মান্তর অমিত সুখ উপভোগ করে ছিলেন। নাগিত স্থবির কয়েকটি গাথার মাধ্যমে কঠিন চীবর দানের ফল বর্ণনা করে ছিলেন। যেমন- ‘গুণোত্তম সংঘকে কঠিন চীবর দান করে এযাবৎ আমাকে কোন নরক যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়নি’।
নাগিত স্থবিরের পর ভগবান বুদ্ধ কয়েকটি গাথার মাধ্যমে কঠিন চীবর দানের ফল দেশনা করে ছিলেন। যথা-
অন্যান্য দানীয় বস্তু একশত বৎসর দান করলেও সে সকল পূন্যাংশ কঠিন চীবর দান জনিত পূন্যের ষোল ভাগের একভাগও হয় না।
যে কোন স্ত্রী বা পুরুষ কঠিন চীবর দান করলে, তারা সে উত্তম দানের প্রভাবে জন্ম-জন্মান্তর নারী জন্ম প্রাপ্ত হয় না।
পাঁচ প্রকার গুনযুক্ত এবং পাঁচ প্রকার দোষ বির্বজিত কঠিন চীবর দানের কথা (ভগবান বুদ্ধ) দেশনা করেছেন। ইহার পূন্য অপরিসীম।
    সুতরাং যে কোন ব্যক্তি জীবনে একবার হলেও শ্রদ্ধার সাথে কঠির চীবর দান করা উচিত। দানোত্তম কঠিন চীবর দান অত্যন্ত বৈশিষ্ট্য মন্ডিত, যা অন্য কোন দানে নেই। বস্তুদানের মধ্যে কঠিন চীবর দান শ্রেষ্ঠ । ভগবান বুদ্ধ প্রসংশিত এ দানের দ্বারা মনুষ্য সম্পদ দেব ব্রহ্ম সম্পদ, এমকি নির্বাণ সম্পদও লাভ করা যায়। তবে ইহা নির্ভর করে দাতার দান-শীল-ভাবনার অনুশীলন ও গ্রহীতার শীল-সমাধি-প্রজ্ঞার অনুশীলনের ওপর। শ্রদ্ধাপূর্বক জ্ঞান সম্প্রযুক্ত অসংস্কারিক চিত্তের দান করা, হাতে হাতে ইহার ফল লাভ করা যায়।
লেখক: সাধনাজ্যোতি ভিক্ষু, অধ্যক্ষ হিল চাদিগাং বৌদ্ধ বিহার, বন্দর, চট্টগ্রাম

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.