আগামীকাল ১০নভেম্বর প্রয়াত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ৩৪তম মৃত্যু বার্ষিকী

আগামীকাল ১০নভেম্বর প্রয়াত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ৩৪তম মৃত্যু বার্ষিকী। এ উপলক্ষে দিনটি যথাযথ পালন করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ থেকে দিন ব্যাপি বিভিন্ন কর্মসুচী হাতে নেয়া হয়েছে জানা যায়। নিম্নে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনি আলোচনা করা গেল।
জন্ম : মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (মঞ্জু)
১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ সাল
মহাপ্রুম গ্রাম, বুড়িঘাট, নানিয়ারচর থানা, রাঙ্গামাটি
মৃত্যু : ১০ নভেম্বর, ১৯৮৩ সাল
খেদারা ছড়ার থুম, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি
পেশা : শিক্ষকতা, আইনজীবি
যে জন্য পরিচিত রাজনীতিবিদ

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (জন্ম: ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ - মৃত্যু: ১০ নভেম্বর, ১৯৮৩) ছিলেন একজন আদিবাসী নেতা এবং রাজনীতিবিদ।পাহাড়ি জনতার প্রাণের দাবিতে তিনি সারা জীবন আন্দোলন করে গেছেন। ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর[১] তাঁর আন্দোলনের সফলতা অর্জিত হয় শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। তিনি ছিলেন আসলে শোষিত মানুষের নেতা।[২]

শিক্ষা জীবন

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার প্রথম বিদ্যালয় ছিল মহাপ্রুম জুনিয়র হাইস্কুল। তিনি ১৯৫৮ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বিএ ও বিএড ডিগ্রি লাভ করেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৫ ও ১৯৬৮ সালে যথাক্রমে। তিনি ১৯৬৯ সালে এলএলবি ডিগ্রিও লাভ করেন।[৩]
কর্মজীবন

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৬ সালে দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে। তিনি ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে কলোনি হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বার এসোসিয়েশনে আইনজীবী কাজ শুরু করেন।[৩]
ব্যক্তিগত জীবন

তাঁর মায়ের নাম ছিল সুভাষিণী দেওয়ান এবং বাবার নাম চিত্তকিশোর চাকমা। তাঁর সহধর্মিনীর নাম পঙ্কজিনী চাকমা এবং ছেলে জয়েস লারমা, মেয়ে পারমিতা লারমা। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা, ভাই শুভেন্দু প্রভাষ লারমা এবং জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।[৩]
রাজনৈতিক জীবন

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে তিনি পাহাড়ী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।১৯৬০ সালে পাহাড়ি ছাত্র সমাজের নেতা হয়ে যান। ১৯৫৮ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬১ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। তিনি পাকিস্তান সরকারের হাতে গ্রেফতারও হন ১৯৬৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। পরে ১৯৬৫ সালে শর্তসাপেক্ষে ছাড়া পান।[৪] তিনি ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তিনি ১১টি আদিবাসী গোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন জনসংহতি সমিতি এবং বঙ্গবন্ধুর কাছে মোট ৪ দফা দাবি পেশ করেন আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের জন্য। ঐ বছরের ৩১শে অক্টোবর তিনি সংসদ ত্যাগ করেন সংবিধানে পাহাড়ীদের বাঙালী বলার প্রতিবাদে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৫] ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দেন ইংল্যান্ডে। তিনি মনে করতেন পাহাড়ি ও বাঙ্গালী ২টি আলাদা গোষ্ঠী। তাই বঙ্গবন্ধু যখন বলতেন পাহাড়িরাও বাঙালী তা তিনি মেনে নেননি। তিনি ১৯৭৫ সালে বাকশালেও যোগদান করেছিলেন।
সশস্ত্র সংগ্রাম

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের দিনই তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং গড়ে তোলেন জনসংহতি সমিতির সামরিক শাখা শান্তি বাহিনী। একই সাথে তিনি গড়ে তুলেছিলেন মহিলা সমিতি, জুমিয়া সমিতি, যুব সমিতি ও গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠী। অনেকের মতে ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত হয় শান্তিবাহিনী।[১] মার্ক্সীয় আদর্শ তিনি ধারণ করেছিলেন তাঁর আন্দোলনের জন্য। পরে জিয়াউর রহমান নতুন বাঙালীদের পাহাড়ী অঞ্চলে অভিবাসিত করলে তাঁদের সংগ্রাম তীব্র হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে তাদের লড়াই তীব্রতর হয়ে ওঠে।[৬] মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার দলেও সৃষ্টি হয় অন্তর্দন্ধ এবং দলটি ২টি ধারা এম এন রায় গ্রুপ ও প্রীতি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। ১৯৭৭ সালে এবং ১৯৮২ সালেও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জনসংহতি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর তিনি বিপক্ষ দলের আক্রমণে ৮ জনসহ মারা যান খাগড়াছড়িতে।[৭]
তথ্যসূত্র
1. "ভেঙ্গে গেলো জনসংহতি সমিতি, নতুন কমিটি"। সংগৃহীত ২৩শে ফেব্রুয়ারি,২০১১।
2. "আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দেওয়াটা ছিল ভুল"। দৈনিক প্রথম আলো। ১২-১১-২০১০। সংগৃহীত ২৩শে ফেব্রুয়ারি,২০১১।
3. কবীর, বিলু (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "খন্ডিত বীক্ষণে মানবেন্দ্র লারমা"। দৈনিক সংবাদ। সংগৃহীত ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১।
4. খীসা, দীপায়ন (১ জানুয়ারি, ২০০২)। "মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা চির অম্লান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে"। সংগৃহীত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
5. ত্রিপুরা, শক্তিপদ (১০ নভেম্বর ২০১০)। "এম এন লারমা : আদিবাসীদের এক অবিসংবাদিত নেতা"। দৈনিক কালের কন্ঠ। সংগৃহীত ২৩শে ফেব্রুয়ারি,২০১১।
6. হাসান, সোহরাব (১১-১১-২০১০)। "শ্রদ্ধাঞ্জলিঃশহীদ এম এন লারমার সংগ্রাম"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগৃহীত ২৩শে ফেব্রুয়ারি,২০১১।
7. "মানবেন্দ্র লারমার স্বপ্ন পূরণের আহ্বান"। দৈনিক প্রথম আলো। ১২-১১-২০১০। সংগৃহীত ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১।

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.