আদিবাসীদের জন্য পৃথক বিসিএস পরীক্ষা: কিছু ভাবনা
বর্তমান প্রচলিত নীতিমালায় আসন সংরক্ষিত থাকলেও তা শুধুমাত্র প্রিলিমিনারী ও লিখিত পরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়ওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষার সময়ে প্রযোজ্য হয় যা আদিবাসী পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রকৃত অর্থে কোন সুবিধা দেয় না। বরং এই কোটা পদ্ধতির কারণে সহপাঠীদের কাছে উপহাস শুনতে হয়। অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা আদিবাসী চাকরী প্রর্থীদের একই মানের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। তা সত্বেও ‘কোটা’ বিষয়ক যে ‘তকমাটা’ আদিবাসীদের পেতে হয় তা বঞ্চনাকে আরো অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়। পৃথক পরীক্ষার ব্যবস্থা সুপারিশের ক্ষেত্রেও এটি একটি যুক্তি হিসেবেই উল্লেখ করেছেন গবেষকগণ। কিন্তু এটি করতে গিয়ে তাঁরা ভুলে গেলেন যে সম্পুর্ণ পৃথক পরীক্ষার ব্যবস্থা চেয়ে আদিবাসী চাকরী প্রার্থীদেরকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন। এই গবেষণার সুপারিশ অনুযায়ী প্রিলিমিনারী, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ধাপগুলো শুধুমাত্র আদিবাসীদের জন্যই অনুষ্ঠিত হবে। ফলে পরীক্ষা থেকে শুরু করে নিয়োগ পাওয়া, ক্যাডার সার্ভিস সবখানেই তারা মূলধারার ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে ‘বিচ্ছিন্ন’ থেকে যাবে। একটি ‘সমান্তরাল’ বা ‘অধীনস্থ’ ক্যাডার ধারা তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। ফলে উপহাস, বঞ্চনা ও হেয় প্রতিপন্য করার প্রবণতা কোনভাবেই কমবে না বরং কয়েকগুণে বাড়বে বলেই আমি মনে করি। বর্তমান সময়েও এই কোটা ব্যবস্থার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে প্রার্থী চাক বা না চাক তাকে কোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তার প্রতি হেয় মনোভাব পোষণ করা হয়। প্রার্থীর পরীক্ষায় নির্ধারিত মেধা তালিকার আর কোন বিশেষ গুরুত্বই থাকে না। পদ্ধতিগতভাবেই তার পরিচিতির সাথে ‘কোটা’র তকমাটা লেগে যায়। তার উপর এখন যদি পৃথক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় তার প্রভাব কী হবে তা ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বৈকি।
বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে এই ধরণের গবেষণা প্রয়োজন ছিল। তবে সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেদেরকে পুরোপুরি পৃথক ও বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চাইতে প্রচলিত নীতিমালার মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান খোঁজাই আদিবাসীদের জন্য সর্বোত্তম বলে আমি মনে করি। সেজন্য নিম্নেক্ত বিষয়গুলো নিয়ে হয়ত আরো গভীরভাবে ভাবা উচিত এবং নীতি নির্ধারকদের সাথে কাজ করা উচিত।
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কর্মকমিশনের ১ম, ২য়, তয় ও ৪র্থ শ্রেণীর চাকরীতে সংরক্ষিত আসন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন যা এখন নেই। শুধু নীতিমালা প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, বরং নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থাপনা নীরিক্ষণ জরুরী। কোটা পূরণের প্রক্রিয়ায় মেধাতালিকা ও কোটায় অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্টকরণ প্রয়োজন। এসকল প্রক্রিয়ার সাথে সাথে কোটাকে মেধাহীনতার তকমা থেকে বের করে আনার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করাও জরুরী।
কোটাকে ‘পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী’ উদ্ধারের মাধ্যম হিসেবে না দেখে একে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা খুব জরুরী। আর তা করতে হলে ‘বিচ্ছিন্নতা’ বা পৃথকিকরণ নয়। বরং মূলধারার জাতীয় নীতিমালার অবকাঠামোর মধ্যে থেকেই কোটাকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
শুধুমাত্র চাকরীতে প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা এই সমস্যার সমাধান হতে পারে না। বরং শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার, বহুমুখী শিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা, গুণগত মানের শিক্ষায় আদিবাসীদের প্রবেশগম্যতা সহজীকরণ ও বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনে নিবিড় পরিচর্যার ব্যবস্থা এবং কোচিংএর ব্যবস্থা করা এই সমস্যার সমাধানে পথ দেখাতে পারে।
মোদ্দাকথা আদিবাসীদের জীবনে এই কোটা ব্যবস্থার গুরুত্ব অনেক। বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে আদিবাসীদের জন্য এই কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি সুফল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে পুরোপুরি পৃথক বিসিএস পরীক্ষার অবকাঠামো কোনভাবেই আদিবাসীদের জন্য কাঙ্খিত ব্যবস্থা হতে পারে না। বিদ্যমান জাতীয় নীতিমালা অবকাঠামোর মধ্যে থেকেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে মূলাধারার সাথে সম্পৃক্ত থেকেই সমাধান খুঁজতে হবে। বিচ্ছিন্নতা নয়, অন্তর্ভুক্তিই আদিবাসীদের জন্য মুক্তি দিতে পারে।
অসীম দিও
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক
তথ্যসূত্র ঃ আচিক নিউজ২৪.কম
বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে এই ধরণের গবেষণা প্রয়োজন ছিল। তবে সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেদেরকে পুরোপুরি পৃথক ও বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চাইতে প্রচলিত নীতিমালার মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান খোঁজাই আদিবাসীদের জন্য সর্বোত্তম বলে আমি মনে করি। সেজন্য নিম্নেক্ত বিষয়গুলো নিয়ে হয়ত আরো গভীরভাবে ভাবা উচিত এবং নীতি নির্ধারকদের সাথে কাজ করা উচিত।
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কর্মকমিশনের ১ম, ২য়, তয় ও ৪র্থ শ্রেণীর চাকরীতে সংরক্ষিত আসন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন যা এখন নেই। শুধু নীতিমালা প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, বরং নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থাপনা নীরিক্ষণ জরুরী। কোটা পূরণের প্রক্রিয়ায় মেধাতালিকা ও কোটায় অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্টকরণ প্রয়োজন। এসকল প্রক্রিয়ার সাথে সাথে কোটাকে মেধাহীনতার তকমা থেকে বের করে আনার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করাও জরুরী।
কোটাকে ‘পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী’ উদ্ধারের মাধ্যম হিসেবে না দেখে একে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা খুব জরুরী। আর তা করতে হলে ‘বিচ্ছিন্নতা’ বা পৃথকিকরণ নয়। বরং মূলধারার জাতীয় নীতিমালার অবকাঠামোর মধ্যে থেকেই কোটাকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
শুধুমাত্র চাকরীতে প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা এই সমস্যার সমাধান হতে পারে না। বরং শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার, বহুমুখী শিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা, গুণগত মানের শিক্ষায় আদিবাসীদের প্রবেশগম্যতা সহজীকরণ ও বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনে নিবিড় পরিচর্যার ব্যবস্থা এবং কোচিংএর ব্যবস্থা করা এই সমস্যার সমাধানে পথ দেখাতে পারে।
মোদ্দাকথা আদিবাসীদের জীবনে এই কোটা ব্যবস্থার গুরুত্ব অনেক। বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে আদিবাসীদের জন্য এই কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি সুফল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে পুরোপুরি পৃথক বিসিএস পরীক্ষার অবকাঠামো কোনভাবেই আদিবাসীদের জন্য কাঙ্খিত ব্যবস্থা হতে পারে না। বিদ্যমান জাতীয় নীতিমালা অবকাঠামোর মধ্যে থেকেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে মূলাধারার সাথে সম্পৃক্ত থেকেই সমাধান খুঁজতে হবে। বিচ্ছিন্নতা নয়, অন্তর্ভুক্তিই আদিবাসীদের জন্য মুক্তি দিতে পারে।
অসীম দিও
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক
তথ্যসূত্র ঃ আচিক নিউজ২৪.কম
No comments
Post a Comment