প্রসেক্রপিশনে এখনো ঘোরানো-প্যাঁচানো লখো



আদালতের নির্দেশ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সত্ত্বেও পাঠযোগ্য হয়নি রোগীর জন্য লেখা ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন)। এখনো বড় হরফে লেখা হচ্ছে না রোগীর ব্যবস্থাপত্র। ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম ইংরেজি বড় হরফে এবং ওষুধের ব্যবহার বিধি স্পষ্টাক্ষরে লেখার জন্য চিকিৎসকদের নির্দেশনা দিয়ে গত ১ মার্চ চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মাঠ পর্যায়ে সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। খোদ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের মত সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে সেই অবস্থা আরও নাজুক। ফলে জনস্বার্থে প্রদান করা হাইকোর্টের রায় এখনো উপেক্ষিত। উপরন্তু, আগের মত অস্পষ্ট ও টানা অক্ষরে যেভাবে ব্যবস্থাপত্র লেখা হতো এখনো সেই অবস্থা অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে হঠাৎ করেই বড় হরফে ব্যবস্থাপত্র লিখতে সময় লাগছে। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যেই নির্দেশনাটি বাস্তবায়িত হবে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, একমাস সুযোগ দেওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণে নামবেন তারা।

সরেজমিনে গতকাল চমেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রেসক্রিপশনে আগের মতই লিখছেন চিকিৎসকরা। সকাল ১১টা থেকে কয়েকঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করেও বড় হরফের কোন ব্যবস্থাপত্রের হদিস মেলেনি। এছাড়া নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, জিইসি, আন্দরকিল্লাহ ও জামালখানসহ বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসি মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একেকটা ফার্মেসিতে গড়ে দৈনিক ৫০০ শতাধিক রোগীদের ব্যবস্থাপত্র আসে। কিন্তু এর মধ্যে বড় হরফে লেখা দুয়েকদিন পর এক-দুইটা হাতে পড়ে। জামালখান এলাকার ড্রাগ হাউস নামের এক ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা তারেক হোসেন জানান, আজ (গতকাল) এবং আগেরদিন মিলিয়ে একটাও বড় হরফে লেখা প্রেসক্রিপশন পাইনি। তবে এর আগেরদিন একটা পেয়েছিলাম। তিনি বলেন, এখনো ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। আগে যেমন লিখতেন এখনো সেভাবেই লেখা হচ্ছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন মজুমদার আজাদীকে বলেন, আমরা গত ১ মার্চ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সকল সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে হাইকোর্টের নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি। চিকিৎসকরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তবে অনেকদিনের অভ্যাস বলে একটু সময় লাগছে। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না থাকায় মাঠ পর্যায়ে কোন পর্যবেক্ষণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা একমাস সময় নিচ্ছি। এরপর মাঠে নামবো। যেহেতু হাইকোর্টের নির্দেশনা সুতরাং কারো ভালো না লাগলেও সেটা মানতে হবে।

এ ব্যাপারে চিকিৎকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, চমেক হাসপাতালে একজন ডাক্তার গড়ে দৈনিক ২০০-২৫০ জন রোগী দেখেন। এত রোগীর প্রেসক্রিপশন লিখতে গিয়ে বড় হরফের বিষয়টা মাথায় থাকে না। দীর্ঘদিনের অভ্যাস বলেই হয়তো একটু সময় লাগছে। তবে চিকিৎসকরা আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করছে। আশা করছি আগামী ২-৩ মাসের মধ্যেই পুরোপুরি নিয়মের মধ্যে চলে আসবে। অন্যদিকে প্রাইভেট লেভেলে (ব্যক্তিগত চেম্বার) ডাক্তাররা এই নির্দেশনা মোটামুটি মেনে চলার চেষ্টা করছে বলেও দাবি করেন তিনি। একই অভিমত ব্যক্ত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, সবাইকে এই নির্দেশনা মানতে হবে। হাইকোর্টের রায়ের প্রতি আমাদের সম্মান দেখানো উচিত। তবে নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা এখন আলোচনার সুযোগ নেই। কেননা ইতোমধ্যে আদালতের মাধ্যমে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।

এদিকে উপজেলা পর্যায়ে যেহেতু গরীব ও অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত লোকের বসবাস সুতরাং সেখানে এই নির্দেশনার দ্রুত বাস্তবায়ন চান সচেতনমহল। এ প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, উপজেলা পর্যায়ে একটু একটু লেখা হচ্ছে। পুরনো অভ্যাস বলে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আন্তরিকতার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের সুপারভিশনও (পর্যবেক্ষণ) প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ‘দুর্বোধ্য ব্যবস্থাপত্র: ভুল ওষুধ গ্রহণের ঝুঁকিতে রোগীরা’ শিরোনামে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে। এরপর গত ৯ জানুয়ারি পড়ার উপযোগী করে স্পষ্ট অক্ষরে রোগীর ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) লিখতে চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সার্কুলার জারির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীর ব্যবস্থাপত্র স্পষ্ট এবং বড় হরফে লেখার জন্য চিকিৎসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো চিকিৎসক যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এই নির্দেশ অমান্য করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
তথ্যসূত্র: আজাদী,

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.