আদিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিতে হবে-সুলতানা কামাল
বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার রিপোর্ট ২০১৫ এর প্রকাশ ও মোড়ক উন্মোচন |
ডেক্স রির্পোটঃ-২০১৫ সালে
কমপক্ষে ৭৪ জন আদিবাসী যার মধ্যে আদিবাসী নারী ও স্কুলের ছাত্রীকে পর্যন্ত
ফৌজদারী অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। কমপক্ষে ১১৭ জন আদিবাসীর বিরুদ্ধে
মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং
সমতলের ১৩ জন আদিবাসী (৩ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু হত্যাসহ) বিচার
বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। ১৯১ জনের অধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে
মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যেখানে
২০১৪ সালে মাত্র ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। একই সময়ে কমপক্ষে ১৩৪ জন
আদিবাসী যার মধ্যে ১০১ জন পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং ৩৩ জন সমতলের আদিবাসীকে
নির্যাতন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করা হয়েছে। এধরনের ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে
রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষগুলো, যেমন- নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর
পরোক্ষ সমর্থন বা নিস্ক্রিয় ভূমিকা ছিল। গতবছর সমতলের কমপক্ষে ৮৪টি আদিবাসী
পরিবারের বাড়িতে দুষ্কৃতিকারীরা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে অন্যদিকে সমতল ও
পার্বত্য চট্টগ্রামের কমপক্ষে ৩৪টি আদিবাসী পরিবারের বাড়ি ভূমিদস্যুরা
অগ্নিসংযোগ করে ভস্মিভূত করেছে।
২০১৫ সালে কমপক্ষে ৪৫ টি আদিবাসী পরিবার নিজেদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে এবং ১৪০০ টি পরিবার উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৬৫৭ টি পরিবার। ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সমতলের অন্তত একটি আদিবাসী গ্রাম হামলার শিকার হয়েছে, অপরদিকে সমতলের ১১.৫ একরসহ মোট ৫,২১৬ একর জমি রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় পক্ষ কর্তৃক দখল করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ২২.৫ একরসহ প্রায় ১৩২৬.৯৯ একর ভূমি অবৈধ জবরদখল ও অধিগ্রহণের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৫ সালে ভূমিদুস্যরা সমতল অঞ্চলে ১১ জনসহ মোট ২৮ জন প্রতিবাদকারী আদিবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে।
১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি ২০১৫ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে অনুমোদনের ফলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার আদিবাসী খাসি জনগোষ্ঠীর পাল্লাথল পুঞ্জির মোট ৩৬০ একর ভূমি ভারতের হাতে চলে যাওয়ার শংকায় প্রায় ৩৫০ টি খাসিয়া ও গারো পরিবার চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে। এতে করে তাদের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
২০১৫ সালে সারাদেশে ৮৫ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৪ জন পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং ৪১ জন সমতলের আদিবাসী নারী ও শিশু। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মোট ৪৩৪ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতন সহ বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। ২০১৫ সালে ২৬ টি ধর্ষণ ও গণধর্ষণ, ৩ টি হত্যা, ১১ টি শারীরিক লাঞ্ছনা, ১৬ টি ধর্ষণের চেষ্টা, ৫টি অপহরণ, ৬ টি শারীরিক ও যৌন হয়রানি এবং ২টি পাচারের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে সংঘটিত মোট ৬৯ টি ঘটনার মধ্যে ৩৮টি পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং বাকিগুলো সমতলে সংগঠিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ভূমি ও অন্যান্য অধিকারসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো বাস্তব অগ্রগতি ব্যতীত ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ এর বিরোধাত্মক ধারা সংশোধনের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার রিপোর্ট ২০১৫ এর প্রকাশ ও মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে বুধবার (২৩ মার্চ) দি ডেইলি স্টার ভবনের তৌফিক আজিজ খান সেমিনার হলে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার রিপোর্টের অন্যতম একজন সম্পাদক পল্লব চাকমা এসব তথ্য তুলে ধরেন।
কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন রবীন্দ্রনাথ সরেন এর সভাপতিত্বে মোড়ক উন্মেচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম; জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান; বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত; উন্নয়ন সংস্থা অক্সফামের প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর এমবি আক্তার; বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাপেং ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন চৈতালী ত্রিপুরা এবং সঞ্চালনা করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের ফাল্গুনী ত্রিপুরা। অক্সফামের সহযোগিতায় কাপেং ফাউন্ডেশন প্রতিবছরের ন্যায় আদিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখার স্বপ্ন নিয়ে যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষ মাথা উঁচু করে দাড়াবে। সাধারণ মানুষজন বড়লোক হবে এই উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেনি। সেই স্বপ্নগুলোকে পাশাপাশি রেখে যদি আজকের আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থতির প্রতিবেদনের সাথে তুলনা করি তাহলে আজকের এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তারা একাত্তরের আমাদের স্বপ্নকে সরাসরি লঙ্ঘিত করছে বলেই মনে করি। আর মাত্র দুদিন পরেই স্বাধীনতা দিবস আমরা পালন করবো, বড় বড় বথা বলবো কিন্তু লোকদেখানো এসবের সাথে আমাদের অনেকেরই মনের মিল নেই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবেই আদিবাসীদের প্রান্তিকতার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আজকে আদিবাসীদের সার্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে যে কথাগুলো বলা হয়েছে সেগুলো অবশ্যই রাষ্ট্রকে ইতিবাচকভাবে শুনতে হবে এবং আদিবাসীসহ দেশের আপামর জনসাধারনের মানবাধিকার রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা নারী পুরুষ যে কেউ যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি যে মতের থাকি যে দলেরই থাকি আমরা যদি নিরাপদ থাকি তাহলে বুঝবো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নতুবা নয়।
আয়েশা খানম বলেন, আদিবাসীদের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম, অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার বেদনা, বারংবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও তার বিচার না হওয়া আদিাবাসীদের মনে একধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করছে। এদেশের বৈচিত্র্যতা রক্ষা করতে হলে রাষ্ট্রকে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আদিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আদিবাসী নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি যে নির্যাতন নিপীড়ণ তা কিন্তু আদিবাসী জীবনের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিশ্বব্যাপি যখন সমতার কথা বলা হচ্ছে তখন আমাদের দেশে আদিবাসীদের সমতাতো দেওয়া হচ্ছেনা বরং সমতার জায়গাগুলোকে সংকীর্ণ করে দেওয়া হচ্ছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫ বছর হতে চলেছে, এই সময়কে যদি আমরা পাকিস্তান শাসনামলের ২৫ বছরের সাথে তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে সেই সময়ে সংখ্যালঘুদের যে অবস্থা আর আজকের স্বাধীন দেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থার কি কোন পরিবর্তন হয়েছে? গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসলেও সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থতির কোন উন্নততর দিক আমরা দেখছিনা। বাংলাদেশের সংবিধান পঞ্চদশ সংশোনীর মাধ্যমেও আমরা আসাম্প্রদায়িক হতে পারেনি। এই কারনেই এখনো এদেশের সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত হয়নি বলেই তিনি মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের ক্ষুদ্র পরিচয়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে সরকার নিজেই দেশের জনগণের সাথে বৈষম্য করেছে। ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ বলে জাতিগত বিভক্ততা বাড়িয়েছে।
নিরুপা দেওয়ান বলেন, আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে তারপরও কিন্তু আদিবাসীরা এখনো আশায় বুক বেধে আছে। আদিবাসীরা এখনো বিশ্বাস করে সংবিধানের চোখে, রাষ্েট্রর চোখে এদেশের সকল নাগরিক সমান। তিনি আরো বলেন, যে চতনা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম সে চেতনা নিশ্চয় বর্তমান সরকার ধারন করে। বর্তমান সরকারই পার্বত্য চুক্তিও করেছিল। সুতরাং এই সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া পাওয়া বা প্রত্যাশাও বেশী। তাই সরকারকে আদিবাসীদের বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যে দীর্ঘসূত্রিতা তার কারনে অনেকরকম জটিলতা বাড়ছে। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে কিন্তু একধরনের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। যখন পাহাড়ী আদিবাসীরা কোন কিছুর প্রতিবাদ করে তখনই সমঅধিকারের নামে সেখানে আদিবাসীদের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া হয়। আমি মনে করি সরকারকে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। সরকার কেন বিষয়গুলো নিয়ে টালবাহানা করছে সেটারও জবাবদিহিতা সরকারকে দিতে হবে বলে মনে করি।
এমবি আক্তার বলেন, আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আদিবাসী অধিকার আন্দোলন গত ১৫-২০ বছর ধরে একই রকম অবস্থায় আছে। হয় এটি আন্দোলনের ব্যর্থতা নয়তো রাষ্ট্র ব্যবস্থা আদিবাসীদের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। আমরা মানবাধিকারের কথা যখন বলি তখন অনেকসময় সরকার মনে করে আমরা সরকারের শত্রু। আসলে তা নয়, এটি হচ্ছে আমাদের বাস্তবিক অবস্থা। রাষ্ট্রকে মানবাধিকার রক্ষায় আরো বেশী যতœবান ও সক্রিয় হতে হবে। এদেশের সংখ্যালঘু-আদিবাসীদের কথা শুনতে হবে বলেই আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ যে বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ তা শুধুমাত্র আদিবাসীদের কারনে। তাই তাদের মানবাধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রসহ দেশের সকল মানুষের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা শুধুমাত্র বাঙালিদের জন্য নয়, এদেশের সকল মানুষের, সংখ্যালঘূ, আদিবাসী সকলের।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, আমাদের রাষ্ট্র আমাদের সরকার যেন আজকের এই রিপোর্টকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। সাধারণত সরকার নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। আদিবাসীদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা যেন কমতে থাকে তা এই রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি প্রশ্নে তিনি বলেন, দেশের সরকল নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ, তাদের নিরাপত্তা বিধান রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেমন তার বুঝার বড় মাপকাঠি হচ্ছে সেদেশের সংখ্যালঘু জনগণ কি অবস্থায় আছে। যদি তারা ভালো না থাকে তাহলে বুঝতে হবে গণতন্ত্রের অবস্থা ভালো নয়। রাষ্ট্র্র যদি আদিবাসী মানুষের হত্যার বিচার করতে না পারে, আদিবাসী নারী ধর্ষণের বিচার করতে না পারে, আদিবাসীদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে না পারে অন্তত যেন রাষ্ট্র আদিবাসী মানুষের প্রতি মানবিক হয়, দুঃখ প্রকাশ করে।
সভাপতির বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, আদিবাসীদের প্রতি প্রতিনিয়ত নানা ধরনের নির্যাতন নিপীড়ণ চলছে। এটা নিশ্চয় কেউ অস্বীকার করবেনা। প্রতিদিনি আমরা সংবাদপত্রে আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও দেখি। তিনি আরো বলেন, আমরা আদিবাসীরাও মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু এই ৪৫ বছর পর আমরা উপলব্ধি করছি স্বাধীনতার ফলে যা অর্জিত হয়েছ তার সবই ভোগ করবে বাঙালি। কেননা সংবিধানেই বলা আছে এদেশের নাগিরকগণ বাঙালি বলে পরিচিত হবেন।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় আরো অংশ্রগহণ করেন, মানবাধিকার কর্মী রোজালিন কস্তা, জান্নাতুল ফেরদৌসী, অজয় এ মৃ, হামিদুর রহমান, শিপন রিবদাস প্রাণকৃষ্ণ, গনেশ মার্ডী, চঞ্চনা চাকমা প্রমুখ।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্ট ২০১৫ এর সম্পাদনা করেছেন প্রফেসর মংসানু চৌধুরী ও কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। মানবাধিকার রিপোর্টের কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করেছেন কাপেং ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মঙ্গল কুমার চাকমা; কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর বাবলু চাকমা; বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য পার্বতী রায়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুরাগ চাকমা; জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক মানিক সরেন; কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট অফিসার সিলভিয়া খিয়াং।
২০১৫ সালে কমপক্ষে ৪৫ টি আদিবাসী পরিবার নিজেদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে এবং ১৪০০ টি পরিবার উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৬৫৭ টি পরিবার। ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সমতলের অন্তত একটি আদিবাসী গ্রাম হামলার শিকার হয়েছে, অপরদিকে সমতলের ১১.৫ একরসহ মোট ৫,২১৬ একর জমি রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় পক্ষ কর্তৃক দখল করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ২২.৫ একরসহ প্রায় ১৩২৬.৯৯ একর ভূমি অবৈধ জবরদখল ও অধিগ্রহণের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৫ সালে ভূমিদুস্যরা সমতল অঞ্চলে ১১ জনসহ মোট ২৮ জন প্রতিবাদকারী আদিবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে।
১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি ২০১৫ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে অনুমোদনের ফলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার আদিবাসী খাসি জনগোষ্ঠীর পাল্লাথল পুঞ্জির মোট ৩৬০ একর ভূমি ভারতের হাতে চলে যাওয়ার শংকায় প্রায় ৩৫০ টি খাসিয়া ও গারো পরিবার চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে। এতে করে তাদের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
২০১৫ সালে সারাদেশে ৮৫ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৪ জন পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং ৪১ জন সমতলের আদিবাসী নারী ও শিশু। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মোট ৪৩৪ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতন সহ বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। ২০১৫ সালে ২৬ টি ধর্ষণ ও গণধর্ষণ, ৩ টি হত্যা, ১১ টি শারীরিক লাঞ্ছনা, ১৬ টি ধর্ষণের চেষ্টা, ৫টি অপহরণ, ৬ টি শারীরিক ও যৌন হয়রানি এবং ২টি পাচারের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে সংঘটিত মোট ৬৯ টি ঘটনার মধ্যে ৩৮টি পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং বাকিগুলো সমতলে সংগঠিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ভূমি ও অন্যান্য অধিকারসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো বাস্তব অগ্রগতি ব্যতীত ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ এর বিরোধাত্মক ধারা সংশোধনের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার রিপোর্ট ২০১৫ এর প্রকাশ ও মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে বুধবার (২৩ মার্চ) দি ডেইলি স্টার ভবনের তৌফিক আজিজ খান সেমিনার হলে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার রিপোর্টের অন্যতম একজন সম্পাদক পল্লব চাকমা এসব তথ্য তুলে ধরেন।
কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন রবীন্দ্রনাথ সরেন এর সভাপতিত্বে মোড়ক উন্মেচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম; জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান; বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত; উন্নয়ন সংস্থা অক্সফামের প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর এমবি আক্তার; বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাপেং ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন চৈতালী ত্রিপুরা এবং সঞ্চালনা করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের ফাল্গুনী ত্রিপুরা। অক্সফামের সহযোগিতায় কাপেং ফাউন্ডেশন প্রতিবছরের ন্যায় আদিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখার স্বপ্ন নিয়ে যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষ মাথা উঁচু করে দাড়াবে। সাধারণ মানুষজন বড়লোক হবে এই উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেনি। সেই স্বপ্নগুলোকে পাশাপাশি রেখে যদি আজকের আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থতির প্রতিবেদনের সাথে তুলনা করি তাহলে আজকের এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তারা একাত্তরের আমাদের স্বপ্নকে সরাসরি লঙ্ঘিত করছে বলেই মনে করি। আর মাত্র দুদিন পরেই স্বাধীনতা দিবস আমরা পালন করবো, বড় বড় বথা বলবো কিন্তু লোকদেখানো এসবের সাথে আমাদের অনেকেরই মনের মিল নেই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবেই আদিবাসীদের প্রান্তিকতার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আজকে আদিবাসীদের সার্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে যে কথাগুলো বলা হয়েছে সেগুলো অবশ্যই রাষ্ট্রকে ইতিবাচকভাবে শুনতে হবে এবং আদিবাসীসহ দেশের আপামর জনসাধারনের মানবাধিকার রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা নারী পুরুষ যে কেউ যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি যে মতের থাকি যে দলেরই থাকি আমরা যদি নিরাপদ থাকি তাহলে বুঝবো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নতুবা নয়।
আয়েশা খানম বলেন, আদিবাসীদের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম, অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার বেদনা, বারংবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও তার বিচার না হওয়া আদিাবাসীদের মনে একধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করছে। এদেশের বৈচিত্র্যতা রক্ষা করতে হলে রাষ্ট্রকে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আদিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আদিবাসী নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি যে নির্যাতন নিপীড়ণ তা কিন্তু আদিবাসী জীবনের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিশ্বব্যাপি যখন সমতার কথা বলা হচ্ছে তখন আমাদের দেশে আদিবাসীদের সমতাতো দেওয়া হচ্ছেনা বরং সমতার জায়গাগুলোকে সংকীর্ণ করে দেওয়া হচ্ছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫ বছর হতে চলেছে, এই সময়কে যদি আমরা পাকিস্তান শাসনামলের ২৫ বছরের সাথে তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে সেই সময়ে সংখ্যালঘুদের যে অবস্থা আর আজকের স্বাধীন দেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থার কি কোন পরিবর্তন হয়েছে? গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসলেও সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থতির কোন উন্নততর দিক আমরা দেখছিনা। বাংলাদেশের সংবিধান পঞ্চদশ সংশোনীর মাধ্যমেও আমরা আসাম্প্রদায়িক হতে পারেনি। এই কারনেই এখনো এদেশের সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত হয়নি বলেই তিনি মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের ক্ষুদ্র পরিচয়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে সরকার নিজেই দেশের জনগণের সাথে বৈষম্য করেছে। ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ বলে জাতিগত বিভক্ততা বাড়িয়েছে।
নিরুপা দেওয়ান বলেন, আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে তারপরও কিন্তু আদিবাসীরা এখনো আশায় বুক বেধে আছে। আদিবাসীরা এখনো বিশ্বাস করে সংবিধানের চোখে, রাষ্েট্রর চোখে এদেশের সকল নাগরিক সমান। তিনি আরো বলেন, যে চতনা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম সে চেতনা নিশ্চয় বর্তমান সরকার ধারন করে। বর্তমান সরকারই পার্বত্য চুক্তিও করেছিল। সুতরাং এই সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া পাওয়া বা প্রত্যাশাও বেশী। তাই সরকারকে আদিবাসীদের বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যে দীর্ঘসূত্রিতা তার কারনে অনেকরকম জটিলতা বাড়ছে। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে কিন্তু একধরনের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। যখন পাহাড়ী আদিবাসীরা কোন কিছুর প্রতিবাদ করে তখনই সমঅধিকারের নামে সেখানে আদিবাসীদের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া হয়। আমি মনে করি সরকারকে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। সরকার কেন বিষয়গুলো নিয়ে টালবাহানা করছে সেটারও জবাবদিহিতা সরকারকে দিতে হবে বলে মনে করি।
এমবি আক্তার বলেন, আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আদিবাসী অধিকার আন্দোলন গত ১৫-২০ বছর ধরে একই রকম অবস্থায় আছে। হয় এটি আন্দোলনের ব্যর্থতা নয়তো রাষ্ট্র ব্যবস্থা আদিবাসীদের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। আমরা মানবাধিকারের কথা যখন বলি তখন অনেকসময় সরকার মনে করে আমরা সরকারের শত্রু। আসলে তা নয়, এটি হচ্ছে আমাদের বাস্তবিক অবস্থা। রাষ্ট্রকে মানবাধিকার রক্ষায় আরো বেশী যতœবান ও সক্রিয় হতে হবে। এদেশের সংখ্যালঘু-আদিবাসীদের কথা শুনতে হবে বলেই আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ যে বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ তা শুধুমাত্র আদিবাসীদের কারনে। তাই তাদের মানবাধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রসহ দেশের সকল মানুষের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা শুধুমাত্র বাঙালিদের জন্য নয়, এদেশের সকল মানুষের, সংখ্যালঘূ, আদিবাসী সকলের।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, আমাদের রাষ্ট্র আমাদের সরকার যেন আজকের এই রিপোর্টকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। সাধারণত সরকার নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। আদিবাসীদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা যেন কমতে থাকে তা এই রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি প্রশ্নে তিনি বলেন, দেশের সরকল নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ, তাদের নিরাপত্তা বিধান রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেমন তার বুঝার বড় মাপকাঠি হচ্ছে সেদেশের সংখ্যালঘু জনগণ কি অবস্থায় আছে। যদি তারা ভালো না থাকে তাহলে বুঝতে হবে গণতন্ত্রের অবস্থা ভালো নয়। রাষ্ট্র্র যদি আদিবাসী মানুষের হত্যার বিচার করতে না পারে, আদিবাসী নারী ধর্ষণের বিচার করতে না পারে, আদিবাসীদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে না পারে অন্তত যেন রাষ্ট্র আদিবাসী মানুষের প্রতি মানবিক হয়, দুঃখ প্রকাশ করে।
সভাপতির বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, আদিবাসীদের প্রতি প্রতিনিয়ত নানা ধরনের নির্যাতন নিপীড়ণ চলছে। এটা নিশ্চয় কেউ অস্বীকার করবেনা। প্রতিদিনি আমরা সংবাদপত্রে আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও দেখি। তিনি আরো বলেন, আমরা আদিবাসীরাও মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু এই ৪৫ বছর পর আমরা উপলব্ধি করছি স্বাধীনতার ফলে যা অর্জিত হয়েছ তার সবই ভোগ করবে বাঙালি। কেননা সংবিধানেই বলা আছে এদেশের নাগিরকগণ বাঙালি বলে পরিচিত হবেন।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় আরো অংশ্রগহণ করেন, মানবাধিকার কর্মী রোজালিন কস্তা, জান্নাতুল ফেরদৌসী, অজয় এ মৃ, হামিদুর রহমান, শিপন রিবদাস প্রাণকৃষ্ণ, গনেশ মার্ডী, চঞ্চনা চাকমা প্রমুখ।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্ট ২০১৫ এর সম্পাদনা করেছেন প্রফেসর মংসানু চৌধুরী ও কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। মানবাধিকার রিপোর্টের কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করেছেন কাপেং ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মঙ্গল কুমার চাকমা; কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর বাবলু চাকমা; বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য পার্বতী রায়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুরাগ চাকমা; জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক মানিক সরেন; কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট অফিসার সিলভিয়া খিয়াং।
তথ্যসূত্র: www.chtnews24.com, বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৬ ০৩:৩১:৫৩ পূর্বাহ্ন
No comments
Post a Comment