ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের জীবনি

 ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন অত্যন্ত সুপরিচিত বৌদ্ধ ভিক্ষু। তিনি বঞ্চিত মানবতার মুক্তির জন্য শিক্ষার আলো বিস্তারে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। অতি বাল্যকালেই তিনি যে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখী হন পরবর্তীতে সেটিই তাঁকে সন্যাস জীবন অবলম্বন করে মানব সেবায় আত্মনিবেদিত হতে প্রেরণা যোগায়। এই উদ্দেশ্যে তিনি পিছিয়ে পড়া আদিবাসী সমাজের উন্নয়নে বহু শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং অদ্যাবধি তুলে চলেছেন। এভাবে তিনি ধীরে ধীরে অসংখ্য অনাথ, অসহায় ও ছিন্নমূল শিশুদের আশ্রয়, অভিভাবক, আশা-আকাঙ্খা ও ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর হয়ে পড়েন। তিনি একজন আজীবন ছাত্র, সমাজকর্মী ও আলোকিত প্রতিষ্ঠান নির্মাতা।

বাল্যজীবন:
ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের ১লা ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সালে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থানাধীন বাবুছড়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পারিবারিক নাম বলেন্দ্র দেব চাকমা। পিতার নাম নরেন্দ্র লাল চাকমা এবং মাতার নাম ইন্দ্রপতি চাকমা। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট। জন্মের ঠিক বছর দেড়েকের মধ্যেই তাঁর পিতা পরলোক গমন করেন এবং তিনি হয়ে পড়েন এতিম।

শিক্ষা জীবন :
মহাথের ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন। তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় নিজ গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করার পর অর্থাভাবে তাঁর পরিবার শিক্ষা বন্ধ করে দেন। কিন্তু তিনি সাহস ও মনোবল কোনটাই হারাননি। তিনি পাশ্র্ববর্তী গ্রামে টিউশনি করে পড়ালেকা চালিয়ে যান। এভাবে তিনি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৫ সালে ১৭ বছর বয়সে তিনি ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের মহোদয়ের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান দীঘিনালার বোয়াখালীতে পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাশ করেন। এসএসসি পাশের পরপরই তিনি ১৯৬৮ সালে উপসম্পদা লাভ করেন।

১৯৬৯ সালে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি চট্টগ্রামের মির্জাপুর শান্তিধাম বিহারে গমন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি নাজিহাট ডিগ্রী কলেজ ও হাটহাজারী কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং তথা থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে বিএ অনার্স ও ১৯৭৮ সালে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ১৯৮০ সালে পালি সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন।

শিক্ষা জীবন :
মহাথের ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন। তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় নিজ গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করার পর অর্থাভাবে তাঁর পরিবার শিক্ষা বন্ধ করে দেন। কিন্তু তিনি সাহস ও মনোবল কোনটাই হারাননি। তিনি পাশ্র্ববর্তী গ্রামে টিউশনি করে পড়ালেকা চালিয়ে যান। এভাবে তিনি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৫ সালে ১৭ বছর বয়সে তিনি ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের মহোদয়ের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান দীঘিনালার বোয়াখালীতে পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাশ করেন। এসএসসি পাশের পরপরই তিনি ১৯৬৮ সালে উপসম্পদা লাভ করেন।

১৯৬৯ সালে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি চট্টগ্রামের মির্জাপুর শান্তিধাম বিহারে গমন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি নাজিহাট ডিগ্রী কলেজ ও হাটহাজারী কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং তথা থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে বিএ অনার্স ও ১৯৭৮ সালে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ১৯৮০ সালে পালি সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন।

সমাজ সেবা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান :
১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে তিনি পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই বছর তিনি তাঁর পরমারাধ্য গুরু ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরো- যিনি বোয়ালখালী দশবল বৌদ্ধ রাজবিহার ও পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ- তার নির্দেশ ও সুপরামর্শে এবং স্থানীয় কিছু ভিক্ষু ও দায়কের সহযোগিতায় রাঙ্গামাটির রাঙ্গাপানি গ্রামে মোনঘর অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। পরে উক্ত আশ্রমে আশ্রিত অনাথ, অসহায় ও ছিন্নমূল শিশুদের আধুনিক ও যুগোপযগি শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে ১৯৮০ সালে মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

রাঙ্গামাটি জেলা সদরে অবস্থিত মোনঘর এনজিও এবং মোনঘর শিশু সদন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠান বহু মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত্ ব্যক্তি উপহার দিয়েছে সমাজে। অনেক হতদরিদ্র, অনাথ, অসহায় ও ছিন্নমূল শিশু এই প্রতিষ্ঠান থেকে আধুনিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে দেশে বিদেশে সুনামের সহিত প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিভিন্নভাবে সমাজ রাষ্ট্রের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের এই স্বপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে ১৯৭৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তিনি তাঁর পিতৃ-প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমেরও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত। ১৯৮০ সালে তিনি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় বোয়ালখালিতে অনাথ আশ্রম আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের মহোদয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহ:
 আনন্দ বিহার পালি কলেজ(১৯৮০)পালি ভাষায় ত্রিপিটক শিক্ষা দেয়ার একটি অনন্য বিদ্যাপীঠ।
মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়(১৯৮০), রাঙ্গাপানি, রাঙ্গামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা বিস্তারে একটি অনন্যসাধারণ বিদ্যানিকেতন।
মোনঘর পালি কলেজ(১৯৮১), রাঙ্গাপানি, রাঙ্গামাটি। পালি ভাষায় ত্রিপিটক শিক্ষা করার একটি উৎকৃষ্ট প্রতিষ্ঠান।
মোনঘর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র(১৯৮৩), রাঙ্গাপানি, রাঙ্গামাটি। মোনঘর শিশু সদন থেকে ঝড়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
মোনঘর সংগীত বিদ্যালয়(১৯৮৩), রাঙ্গাপানি, রাঙ্গামাটি।
মোনঘর ফাইন আর্ট স্কুল(১৯৮৩), রাঙ্গাপানি, রাঙ্গামাটি।
মোনঘর মিনি হসপিটাল(১৯৮৪), রাঙ্গাপানি, রাঙ্গামাটি। মোনঘরের ছাত্র-ছাত্রী তথা স্থানীয় জনসাধারণের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী একটি হাসপাতাল।
বনফুল চিলড্রেন হোম(১৯৯১), মিরপুর- ১৩, ঢাকা- ১২১৬। ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের একটি আবাসিক সুবিধা সম্পন্ন শিশু সদন।
বনফুল প্রাথমিক বিদ্যালয়(১৯৯২), মিরপুর- ১৩, ঢাকা- ১২১৬। বনফুল চিলড্রেম হোম- এর আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি প্রাইমারী স্কুল।
মোনঘর প্রি-ক্যাডেট স্কুল(১৯৯২), রাঙ্গাপানি, রাঙ্গামাটি।
আদিবাসী ভাষা শিক্ষা একাডেমি(২০০০), রাঙ্গাপানি, রাঙ্গামাটি। আদিবাসীদের ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
প্রজ্ঞা কম্পিউটার জোন (২০০১), তবলছড়ি, রাঙ্গামাটি। তথ্য প্রযুক্তির উপর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান।
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজ (২০০৪), মিরপুর- ১৩, ঢাকা- ১২১৬।
বনফুল আদিবাসী ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট (২০০৪)
প্রজ্ঞা চর্চা পাঠাগার ও বৌদ্ধ ধর্মীয় আঞ্চলিক পাঠাগার, আনন্দ বিহার, তবলছড়ি, রাঙ্গামাটি

ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে অবদান :
পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি সর্বোচ্চ বৌদ্ধ ধর্মীয় সংটঠন। এই সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায় তথাগত বুদ্ধের শিক্ষা বিস্তার করা ও জীবনযাপন উন্নয়ন করা। পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মে উন্নয়নে সংগঠনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে ।এই সংগঠনে ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এক্ই সংগঠনে সভাপতি হিসেবে তিনি ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

আন্র্তজাতিক সম্মেলন মহাসম্মেলনে যোগদান :
শিক্ষা, ধর্ম উন্নয়ন এবং বিশ্বশান্তির কার্যক্রম পরিচালনায় তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তনরাজ্য, কানাডা, চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জাপান, শ্রীলঙ্কা, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেন।

পুরষ্কার ও সম্মাননা :
কোরিয়ান বৌদ্ধ জোগ্য অর্ডার পুরস্কার-২০০০
বুদ্ধ পূর্ণিমা সমৃতিস্মারক ও গুণীজন সম্মাননা পুরস্কার- ২০০১
শিশু করুণা সংঘ সম্মাননা, কলকাতা, ভারত।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কর্তৃক বয়স্ক গুণী ব্যক্তি সম্মাননা- ২০১৪

বর্তমান দায়িত্বরত :
    অধ্যক্ষ, আনন্দ বিহার পালি কলেজ, রাঙ্গামাটি
    অধ্যক্ষ, আনন্দ বিহার, তবলছড়ি, রাঙ্গামাটি
    অধ্যক্ষ, শাক্যমুনী বৌদ্ধ বিহার, মিরপুর- ১৩, ঢাকা- ১২১৬।
    সদস্য, বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষাবোর্ড, ঢাকা
    সভাপতি, অত্তদীপা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
    সভাপতি, বনফুল আদিবাসী ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট
    সভাপতি, পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম, দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি
    সভাপতি, বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজ
    সভাপতি, দি মিডল ওয়ে ট্রাস্ট, রাঙ্গামটি
    সভাপতি, পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম ব্যবস্থাপনা কমিটি
তথ্যসূত্র: https://bn.wikipedia.org.


No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.