রাখাইনদের মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে

রাখাইন সম্প্রদায়ের দখলকৃত ভূমি, উপাসনালয় ও শ্মশান দখলমুক্ত করে, ভূমিদস্যু ও দখলবাজদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

তিনি বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা রাখাইনরা নির্যাতিত হচ্ছে। এই নির্যাতন বন্ধ করে তাদের মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে নাগরিক প্রতিনিধি দল আয়োজিত ‘পটুয়াখালী ও বরগুনার রাখাইন জনপদ সরেজমিন পরিদর্শনোত্তর’ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। 

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বাংলাদেশে শত শত বছর ধরে রাখাইনরা বসবাস করে আসছে। রাখাইন সম্প্রদায় নিয়ে দেশের একাডেমিক পর্যায়ে গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাদের অধিকার রক্ষার জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের নৈতিক কর্তব্য হচ্ছে, সংখ্যালঘ্যুদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রে তা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, রাখাইনদের ভূমি দখলের জন্য স্থানীয় ভূমিদস্যুরা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। তাদের উপাসনালয় ও শ্মশান দখল করে সেখানে মার্কেট ও বিভিন্ন প্রজেক্ট করছে। এতে রাখাইনরা তাদের ভূমিসহ সর্বস্ব হারিয়ে সেখান থেকে অন্যখানে চলে যাচ্ছে।

রাখাইনদের মানবাধিকার রক্ষা ও নৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান এই বিশিষ্ট গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

তিনি বলেন, রাখাইনরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে রাখাইনরা বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ, প্রতিবন্ধী ভাতা কোনোটাই পায় না।  অনেকদিন ধরেই রাখাইনরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, কেবল দু-একটি উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।  এর জন্য সরকারকে যেমন সহযোগিতা করতে হবে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।

১৩ দফা দাবির মধ্যে অন্যান্য দাবিগুলো হলো- কুয়াকাটা পৌরসভার ১৮ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটিতে কমপক্ষে তিনজন রাখাইন আদিবাসী  অর্ন্তভুক্তকরণ, রাখাইনদের ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষা ও বিকাশের  ব্যবস্থা গ্রহণ, তাঁতশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, জমি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রজাসত্ত্ব আইন-১৯৫০ এর কঠোর প্রয়োগ, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শ্মশান তৈরি, রাখাইনদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, রাখাইনদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউড ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইইডি) নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান, ডেইলি বাংলাদেশ অবজারভারের বিশেষ প্রতিনিধি সালিম সামাদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষক অনুরাগ চাকমা, চলচ্চিত্র নির্মাতা রাশেদ রাইন, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চলা চাকমা প্রমুখ। 

সুত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
   
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.