শীলবান নয় এমন কোন ভিক্ষুকে দান করা ও দানের পূণ্যফল সম্পর্কিত আলোচনা
রচনায় : প্রাঞ্জল বড়ুয়া।
পুদ্গল বা পুগ্গল শব্দটির অর্থ ব্যবহারিক সত্যানুসারে- ব্যক্তি, পুরুষ, সত্বা ইত্যাদি বুঝায়। অর্থাৎ ব্যক্তি বিশেষকে উদ্দেশ্য করে যে দান দেওয়া হয়, তাকে পুদ্গলিক দান বলে। পুদ্গলিক দান ক্ষেত্র চৌদ্দ প্রকার। যথা-
১) সম্যকসম্বুদ্ধ
২) পচ্চেক বুদ্ধ
৩) অর্হৎ
৪) অর্হৎ মার্গস্থ
৫) অনাগামী
৬) অনাগামী মার্গস্থ
৭) সকৃদাগামী
৮) সকৃদাগামী মার্গস্থ
৯) স্রোতাপন্ন
১০) স্রোতাপন্ন মার্গস্থ
১১) বুদ্ধ শাসনের বর্হিমুখী ঋষি প্রব্রজালাভী, কামে বীত রাগী, লৌকিক ধ্যানলাভী, পঞ্চ অভজ্ঞান প্রাপ্ত ও কর্মবাদী
১২) পৃথকজন (যারা মার্গস্থ ও ফলস্থ নয়)
১৩) দুঃশীল ব্যক্তি এবং
১৪) তীর্যক প্রাণী (পশু-পাখি)
এর মধ্যে যাকেই দান করা হোক না কেন, সে দান পুদ্গলিক সংজ্ঞায় অভিহিত হবে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, তীর্যক প্রাণীকে দান দিলে যে পূণ্যফল লাভ হবে, তার চেয়ে অধিক পূণ্যফল লাভ হবে একজন দুঃশীল ব্যক্তিকে দান দিলে। অনুরূপ ভাবে, একজন দুঃশীলকে দান দিলে যে পূণ্যফল লাভ হবে তার চেয়ে অধিক পূণ্যফল লাভ হবে একজন পৃথকজনকে দান দিলে। এভাবে করে একজন পৃথকজনের চেয়ে বুদ্ধ শাসনের বর্হিমুখী ঋষি প্রব্রজালাভী, কামে বীত রাগী, লৌকিক ধ্যানলাভী, পঞ্চ অভজ্ঞান প্রাপ্ত ও কর্মবাদী ব্যক্তিকে; তার চেয়ে স্রোতাপন্ন মার্গস্থকে; স্রোতাপন্ন মার্গস্থের চেয়ে স্রোতাপন্নকে; স্রোতাপন্নের চেয়ে সকৃদাগামী মার্গস্থকে; সকৃদাগামী মার্গস্থের চেয়ে সকৃদাগামীকে; সকৃদাগামীর চেয়ে অনাগামী মার্গস্থকে; অনাগামী মার্গস্থের চেয়ে অনাগামীকে; অনাগামীর চেয়ে অর্হৎ মার্গস্থকে; অর্হৎ মার্গস্থের চেয়ে অর্হৎকে; অর্হতের চেয়ে পচ্চেক বুদ্ধকে; পচ্চেক বুদ্ধের চেয়ে একজন সম্যকসম্বুদ্ধকে দান দিলে অধিকতর পূণ্যফল লাভ হবে।
পুদ্গলিক দানের পূণ্যফলের তারতম্য এরূপই। কিন্তু কেন? কারণ, অনুর্বর জমিতে অধিক বীজ বপন করলেও যেমন অধিক ফসল ফলে না, তেমনি দুঃশীল পুদ্গলকে (ব্যক্তি) দান দিলেও অধিক পূণ্যফল লাভ হয় না। আবার, উর্বর জমিতে অল্পমাত্র বীজ বপন করা হলেও যদি তাতে প্রয়োজন অনুসারে সেচ দেওয়া যায়, তবে যেমন অধিক ফসল ফলে; তেমনি শীলবান ও গুণসম্পন্ন পুদ্গলকে দান দিলে অধিক পূণ্যফল লাভ হয়। আর তাই বৌদ্ধ সাহিত্যে উক্ত হয়েছে- বিচেয্য দানং দাতব্বং যত্থ দিন্নং মহাপ্ফলং, অর্থাৎ যেরূপ ক্ষেত্রে দান করলে মহাফল লাভ হয়, সেরূপ ক্ষেত্র অন্বেষণ বা বিচার করে দান দিতে বলা হয়েছে।
এবার আমরা পুদ্গলিক দানের বিশুদ্ধি সম্পর্কে আলোচনা করব। দান চার প্রকারে দাতা ও গ্রহীতা কর্তৃক বিশুদ্ধ বা অবিশুদ্ধ হয়। যথা-
১) যদি দাতা শীলবান হয়, কিন্তু গ্রহীতা দুঃশীল হয়; তবে দাতার শীলগুণে সে দান বিশুদ্ধি লাভ করবে। অর্থাৎ, দাতার শীলের কারণে সে দান নিষ্ফল হবে না। উদাহরণ- অনুর্বর জমিতে ভাল মানের বীজ বপন করলে, বীজের কারণে যেমন অল্পসংখ্যক হলেও ফসল উৎপন্ন হয়, তেমনি দাতার শীলের কারণে দাতা পূণ্য হতে বঞ্চিত হয় না।
২) যদি দাতা দুঃশীল হয়, কিন্তু গ্রহীতা শীলবান হয়; তবে গ্রহীতার শীলগুণে সে দান বিশুদ্ধি লাভ করবে। অর্থাৎ, গ্রহীতার শীলের কারণে সে দান নিষ্ফল হবে না। উদাহরণ- উর্বর জমিতে নিকৃষ্ট মানের বীজ বপন করলে, যেমন জমির উর্বরতার কারণে অল্পসংখ্যক হলেও ফসল উৎপন্ন হয়; তেমনি গ্রহীতার শীলের কারণে দাতা পূণ্য হতে বঞ্চিত হয় না।
৩) যদি দাতা ও গ্রহীতা উভয়ে দুঃশীল হয়; তবে সে দান অবিশুদ্ধ হবে। দান অবিশুদ্ধ হলে পূণ্যফল আসা করা যায় না। উদাহরণ- অনুর্বর জমিতে নিকৃষ্ট মানের বীজ বপন করলে যেমন কোন ফসল উৎপন্ন হয় না, তেমনি দাতা ও গ্রহীতা উভয়ে দুঃশীল হলে সে দানও নিষ্ফল হয়।
৪) যদি দাতা ও গ্রহীতা উভয়ে শীলবান হয়; তবে সে দান উভয়পক্ষ হতেই বিশুদ্ধি লাভ করবে। এরূপ দানে অধিক পূণ্যফল লাভ হয়। উদাহরণ- উর্বর জমিতে ভাল মানের বীজ বপন করলে যেমন অধিক ফসল উৎপন্ন হয়, তেমনি দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের শীলগুণে সে দান মহাফলপ্রদ হয়।
মহাকারুণিক বুদ্ধ ত্রিপিটকের 'মজ্ঝিম নিকায়ে' দক্ষিণ বিভঙ্গ সুত্তে দানের বিশুদ্ধি সম্পর্কে দেশনা করেছেন-
সুপ্রসন্ন মনে আর ধর্মলব্ধ বস্তু
কর্মফলে বিশ্বাসিয়া যেই শীলবান
দুঃশীলেরে করে দান উদার হৃদয়ে,
তাহার দক্ষিণা সেই দাতার শীলেতে
হইবে বিশুদ্ধ। ভাষে বুদ্ধ ভগবান।
উপরোক্ত আলোচনা হতে বুঝতে পারি যে, শীলবান নয় এমন কোন ভিক্ষুকে যদি কোন কিছু দান করা হয়, তবেও সে দানের ফল সুখকর হবে; যদি দাতা শীলবান হয়। অর্থাৎ, দাতার শীলগুণ প্রভাবে সে দান দাতাকে পূণ্যফল ও সুখ প্রদান করবে।
পরিশেষে, যেটা না বললে অনেকের মধ্যে সংশয় থেকে যেতে পারে তা হল, আমাদেরকে পুদ্গলিক দান ও সংঘদানের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে উপরের আলোচনাটুকু পুদ্গলিক দান ভিত্তিক। তবে, সংঘ সর্বদাই পরিশুদ্ধ-বিশুদ্ধ। সংঘের মধ্যে বিশুদ্ধ-অবিশুদ্ধ তারতম্য করতে নেই। কারণ, সংঘের মধ্যে বুদ্ধ, বুদ্ধের সময়কালিন অর্হৎ ভিক্ষুসংঘ হতে শুরু করে অতীত, বর্তমান, অনাগতের সকল ভিক্ষুসংঘ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তাই সংঘদান সর্বদাই বিশুদ্ধ এবং সংঘদানের পূণ্যফল লাভ হতে দাতা কখনো বঞ্চিত হয়না
পুদ্গল বা পুগ্গল শব্দটির অর্থ ব্যবহারিক সত্যানুসারে- ব্যক্তি, পুরুষ, সত্বা ইত্যাদি বুঝায়। অর্থাৎ ব্যক্তি বিশেষকে উদ্দেশ্য করে যে দান দেওয়া হয়, তাকে পুদ্গলিক দান বলে। পুদ্গলিক দান ক্ষেত্র চৌদ্দ প্রকার। যথা-
১) সম্যকসম্বুদ্ধ
২) পচ্চেক বুদ্ধ
৩) অর্হৎ
৪) অর্হৎ মার্গস্থ
৫) অনাগামী
৬) অনাগামী মার্গস্থ
৭) সকৃদাগামী
৮) সকৃদাগামী মার্গস্থ
৯) স্রোতাপন্ন
১০) স্রোতাপন্ন মার্গস্থ
১১) বুদ্ধ শাসনের বর্হিমুখী ঋষি প্রব্রজালাভী, কামে বীত রাগী, লৌকিক ধ্যানলাভী, পঞ্চ অভজ্ঞান প্রাপ্ত ও কর্মবাদী
১২) পৃথকজন (যারা মার্গস্থ ও ফলস্থ নয়)
১৩) দুঃশীল ব্যক্তি এবং
১৪) তীর্যক প্রাণী (পশু-পাখি)
এর মধ্যে যাকেই দান করা হোক না কেন, সে দান পুদ্গলিক সংজ্ঞায় অভিহিত হবে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, তীর্যক প্রাণীকে দান দিলে যে পূণ্যফল লাভ হবে, তার চেয়ে অধিক পূণ্যফল লাভ হবে একজন দুঃশীল ব্যক্তিকে দান দিলে। অনুরূপ ভাবে, একজন দুঃশীলকে দান দিলে যে পূণ্যফল লাভ হবে তার চেয়ে অধিক পূণ্যফল লাভ হবে একজন পৃথকজনকে দান দিলে। এভাবে করে একজন পৃথকজনের চেয়ে বুদ্ধ শাসনের বর্হিমুখী ঋষি প্রব্রজালাভী, কামে বীত রাগী, লৌকিক ধ্যানলাভী, পঞ্চ অভজ্ঞান প্রাপ্ত ও কর্মবাদী ব্যক্তিকে; তার চেয়ে স্রোতাপন্ন মার্গস্থকে; স্রোতাপন্ন মার্গস্থের চেয়ে স্রোতাপন্নকে; স্রোতাপন্নের চেয়ে সকৃদাগামী মার্গস্থকে; সকৃদাগামী মার্গস্থের চেয়ে সকৃদাগামীকে; সকৃদাগামীর চেয়ে অনাগামী মার্গস্থকে; অনাগামী মার্গস্থের চেয়ে অনাগামীকে; অনাগামীর চেয়ে অর্হৎ মার্গস্থকে; অর্হৎ মার্গস্থের চেয়ে অর্হৎকে; অর্হতের চেয়ে পচ্চেক বুদ্ধকে; পচ্চেক বুদ্ধের চেয়ে একজন সম্যকসম্বুদ্ধকে দান দিলে অধিকতর পূণ্যফল লাভ হবে।
পুদ্গলিক দানের পূণ্যফলের তারতম্য এরূপই। কিন্তু কেন? কারণ, অনুর্বর জমিতে অধিক বীজ বপন করলেও যেমন অধিক ফসল ফলে না, তেমনি দুঃশীল পুদ্গলকে (ব্যক্তি) দান দিলেও অধিক পূণ্যফল লাভ হয় না। আবার, উর্বর জমিতে অল্পমাত্র বীজ বপন করা হলেও যদি তাতে প্রয়োজন অনুসারে সেচ দেওয়া যায়, তবে যেমন অধিক ফসল ফলে; তেমনি শীলবান ও গুণসম্পন্ন পুদ্গলকে দান দিলে অধিক পূণ্যফল লাভ হয়। আর তাই বৌদ্ধ সাহিত্যে উক্ত হয়েছে- বিচেয্য দানং দাতব্বং যত্থ দিন্নং মহাপ্ফলং, অর্থাৎ যেরূপ ক্ষেত্রে দান করলে মহাফল লাভ হয়, সেরূপ ক্ষেত্র অন্বেষণ বা বিচার করে দান দিতে বলা হয়েছে।
এবার আমরা পুদ্গলিক দানের বিশুদ্ধি সম্পর্কে আলোচনা করব। দান চার প্রকারে দাতা ও গ্রহীতা কর্তৃক বিশুদ্ধ বা অবিশুদ্ধ হয়। যথা-
১) যদি দাতা শীলবান হয়, কিন্তু গ্রহীতা দুঃশীল হয়; তবে দাতার শীলগুণে সে দান বিশুদ্ধি লাভ করবে। অর্থাৎ, দাতার শীলের কারণে সে দান নিষ্ফল হবে না। উদাহরণ- অনুর্বর জমিতে ভাল মানের বীজ বপন করলে, বীজের কারণে যেমন অল্পসংখ্যক হলেও ফসল উৎপন্ন হয়, তেমনি দাতার শীলের কারণে দাতা পূণ্য হতে বঞ্চিত হয় না।
২) যদি দাতা দুঃশীল হয়, কিন্তু গ্রহীতা শীলবান হয়; তবে গ্রহীতার শীলগুণে সে দান বিশুদ্ধি লাভ করবে। অর্থাৎ, গ্রহীতার শীলের কারণে সে দান নিষ্ফল হবে না। উদাহরণ- উর্বর জমিতে নিকৃষ্ট মানের বীজ বপন করলে, যেমন জমির উর্বরতার কারণে অল্পসংখ্যক হলেও ফসল উৎপন্ন হয়; তেমনি গ্রহীতার শীলের কারণে দাতা পূণ্য হতে বঞ্চিত হয় না।
৩) যদি দাতা ও গ্রহীতা উভয়ে দুঃশীল হয়; তবে সে দান অবিশুদ্ধ হবে। দান অবিশুদ্ধ হলে পূণ্যফল আসা করা যায় না। উদাহরণ- অনুর্বর জমিতে নিকৃষ্ট মানের বীজ বপন করলে যেমন কোন ফসল উৎপন্ন হয় না, তেমনি দাতা ও গ্রহীতা উভয়ে দুঃশীল হলে সে দানও নিষ্ফল হয়।
৪) যদি দাতা ও গ্রহীতা উভয়ে শীলবান হয়; তবে সে দান উভয়পক্ষ হতেই বিশুদ্ধি লাভ করবে। এরূপ দানে অধিক পূণ্যফল লাভ হয়। উদাহরণ- উর্বর জমিতে ভাল মানের বীজ বপন করলে যেমন অধিক ফসল উৎপন্ন হয়, তেমনি দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের শীলগুণে সে দান মহাফলপ্রদ হয়।
মহাকারুণিক বুদ্ধ ত্রিপিটকের 'মজ্ঝিম নিকায়ে' দক্ষিণ বিভঙ্গ সুত্তে দানের বিশুদ্ধি সম্পর্কে দেশনা করেছেন-
সুপ্রসন্ন মনে আর ধর্মলব্ধ বস্তু
কর্মফলে বিশ্বাসিয়া যেই শীলবান
দুঃশীলেরে করে দান উদার হৃদয়ে,
তাহার দক্ষিণা সেই দাতার শীলেতে
হইবে বিশুদ্ধ। ভাষে বুদ্ধ ভগবান।
উপরোক্ত আলোচনা হতে বুঝতে পারি যে, শীলবান নয় এমন কোন ভিক্ষুকে যদি কোন কিছু দান করা হয়, তবেও সে দানের ফল সুখকর হবে; যদি দাতা শীলবান হয়। অর্থাৎ, দাতার শীলগুণ প্রভাবে সে দান দাতাকে পূণ্যফল ও সুখ প্রদান করবে।
পরিশেষে, যেটা না বললে অনেকের মধ্যে সংশয় থেকে যেতে পারে তা হল, আমাদেরকে পুদ্গলিক দান ও সংঘদানের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে উপরের আলোচনাটুকু পুদ্গলিক দান ভিত্তিক। তবে, সংঘ সর্বদাই পরিশুদ্ধ-বিশুদ্ধ। সংঘের মধ্যে বিশুদ্ধ-অবিশুদ্ধ তারতম্য করতে নেই। কারণ, সংঘের মধ্যে বুদ্ধ, বুদ্ধের সময়কালিন অর্হৎ ভিক্ষুসংঘ হতে শুরু করে অতীত, বর্তমান, অনাগতের সকল ভিক্ষুসংঘ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তাই সংঘদান সর্বদাই বিশুদ্ধ এবং সংঘদানের পূণ্যফল লাভ হতে দাতা কখনো বঞ্চিত হয়না
No comments
Post a Comment