আড়াই মাস ধরে আদিবাসী ২১টি পরিবার শ্রেণিকক্ষে

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় প্রায় আড়াই মাস ধরে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছে ভূমিহীন ২১টি আদিবাসী পরিবার। বাবুছড়া উচ্চবিদ্যালয়ের দুটি কক্ষে গাদাগাদি করে রাত কাটাচ্ছেন পরিবারগুলোর ৮৪ জন সদস্য। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
গত ১০ জুন যত্নমোহন খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়ার কার্বারিপাড়া এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে আদিবাসীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ১২ জুন যত্নমোহন কার্বারিপাড়া ও শশী মোহন কার্বারিপাড়া এলাকার ভূমিহীন ওই ২১টি পরিবার বাবুছড়া উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন, সংসদীয় কমিটি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলেও সমস্যা সমাধানে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টিতে মোট চারটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একটি দ্বিতল পাকা ভবন, বাকিগুলো আধা পাকা। আধা পাকা একটি ভবনে বসবাস করছে আদিবাসী পরিবারগুলো। ভবনের যে দুটি শ্রেণিকক্ষে তারা বাস করছে, সেখানে সপ্তম শ্রেণির ‘ক’ শাখার ও অষ্টম শ্রেণির ‘ক’ শাখার শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হতো। বর্তমানে অন্য একটি শ্রেণিকক্ষে পর্দা টেনে দুই ভাগ করে একই সঙ্গে দুটি করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
বাবুছড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্রীয় চাকমা বলেন, বিদ্যালয়ের দুই শ্রেণিকক্ষে পরিবারগুলো আশ্রয় নেওয়ায় স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যালয়েরও ক্ষতি হচ্ছে। ক্লাস চলার সময় আশ্রয় নেওয়া লোকজনের চেঁচামেচিতে শিক্ষকেরা ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে মনোযোগ রাখতে পারছে না। তা ছাড়া বিদ্যালয়টি জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র। সামনে পরীক্ষা শুরু হবে। অল্প সময়ের মধ্যে বিষয়টির সুরাহা করা উচিত।
মা-বাবার সঙ্গে বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্রী অপ্সরী চাকমা (১৬) বলে, ‘আমি কোনো দোষ না করলেও ১১ জুন পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। পরে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে ছয় দিন ও হাটহাজারী সেফ হোমে ১৬ দিনসহ মোট ২২ দিন বন্দী ছিলাম। বর্তমানে জামিনে রয়েছি। এখন বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে সবার সঙ্গে গাদাগাদি করে বসবাস করছি। এখান থেকেই কলেজে ক্লাস করতে যেতে হচ্ছে।’
মায়াদেবী চাকমা বলেন, ‘আমরা ২১টি পরিবার একসঙ্গে রান্না করে খাচ্ছি। রাতে কক্ষ দুটিতে গাদাগাদি করে ঘুমাচ্ছি। আমাদের খবর কেউ রাখে না। আমাদের ভূমি ফেরত পাব কি না তাও জানি না।’
জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রনালয় সম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাদের কথা শুনেছি। বিজিবির কথাও শুনেছি। এটি একটি মানবিক সমস্যা। তাই এটিকে মানবিক বিবেচনার ভিত্তিতেই সমাধানের চেষ্টা করছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলুল জাহিদ পাভেল বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে ত্রাণ দিতে চাইলেও তারা তা গ্রহণ করছে না।’

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.