শ্মশান দখলকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশংকা
খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশংকা দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহুর্তে
শান্ত পাহাড়ের পরিবেশ হয়ে উঠতে পারে অশান্ত ও উত্তপ্ত, বিনষ্ট হতে পারে
পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। খাগড়াছড়ি
জেলা সদরের ভূয়াছড়ি এলাকার রাজশাহী টিলা নামক এলাকায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের
২০০বছরের পুরনো শ্মশানটি জৈনিক জামায়াত নেতা ও স্কুল শিক্ষক মাহবুল হক
সেলিম প্রকাশ সেলিম হুজুর ও একটি ভূমি দস্যু চক্রদের দ্বারা বেদখল করে
নিতে-নিতে শ্মশানটি মৃত্যু পথের যাত্রী হওয়ায় সম্প্রতি সময়ে উক্ত এলাকায়
দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা। এ ভূমি দস্যুর ও চক্রটির হাত হতে শ্মশানটি
উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ ইস্যুকে
কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম
জানা
যায়, ১৮ জুন সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের স্থানীয় সাবেক ইউপি
মেম্বার কমল জয় ত্রিপুরা এ শ্মশানটি পুন:রুদ্ধারে ধর্মমন্ত্রী বরাবরে জনৈক
সেলিম হুজুরের ভূমি দস্যুতার বিবরণ দিয়ে অভিযোগ প্রেরণ করেন এবং
অভিযোগপত্রের ছায়াকপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক
মন্ত্রী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ সরকারী বিভিন্ন
দপ্তরে অনুলিপি প্রেরন দেখানো হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়,
ভূয়াছড়ি এলাকার প্রায় ৬৫টি পরিবারের একমাত্র শ্মশানটি ২০০৪ সালে জামায়াতে
ইসলামী নেতা বর্তমানে খাগড়াছড়ি মিউনিসিপ্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা
বিষয়ক সহকারী শিক্ষক মাহবুল হক সেলিম ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২.০০ একরের
শ্মশানটি বেদখল করে খাস ভূমি বলিয়া স্থানীয় একাধিক বাঙ্গালী পরিবারের নিকট
নোটারী পাবলিক এর মাধ্যমে বেচাবিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
আরও উল্লেখ করা হয়, মাহবুল হক সেলিম তৎসময়ে নামে-বেনামে খাস ভূমির
কাগজপত্রাদি তৈরী করে এলাকাছাড়া বাঙ্গালীদের পরিত্যক্ত ভূমিও বেচা-বিক্রি
করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রাজশাহী টিলা
এলাকায় প্রবেশমূখে স্বাস্থ্য ক্লিনিক সংলগ্ন মেইন সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে
শ্মশানটি অবস্থিত। কিছুদিন আগেও উক্ত ভূমিতে দাহ করার চিহ্নও রয়েছে। তবে
পশ্চিম পার্শ্বে চারিদিকে বেঁড়া দিয়ে ফলজ বাগান সৃজন করা হয়েছে। শ্মশানের
মধ্যে খানে রয়েছে একটি ক্লাব ঘর। শ্মশানের মধ্যে ক্লাবঘর ও পার্শ্বে আম
বাগানটি মালিকানা সম্পর্কে জানতে চাহিলে স্থানীয় মৃত আনন্দ ত্রিপুরার ছেলে
সুজল ত্রিপুরা (২৮), জ্ঞানজয় ত্রিপুরা ছেলে প্রশান্ত ত্রিপুরা (১৯), সাধন
ত্রিপুরার স্ত্রী চিরতা ত্রিপুরা (৩৫), কামিনী কুমার কার্বারীর ছেলে পারুল
জয় ত্রিপুরা (৪০), স্থানীয় বাঙ্গালী রেজিয়া বেগম, মো: সফিকুল ও রবিউল সহ
স্থানীয় মন্দিরের পুরোহিত জয়মনি ত্রিপুরা এবং সাবেক কমলছড়ি ইউপি’র ২নং
ওয়ার্ডের মেম্বার কমল জয় ত্রিপুরাসহ অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫জন শ্মশানটির সীমানা
দেখিয়ে দেখিয়ে বর্ণনা দেন, সেলিম হুজুরের একক আধিপত্যের কাহিনী। উপস্থিত
লোকজন বলেন, সেলিম হুজুর শ্মশানের মধ্যে আনসার ভিডিপি সদস্যদের ক্লাব ঘরের
জায়গাটি বিক্রি করেছেন, দখল করে রেখেছেন শ্মশানটি আম বাগান করে ঘেড়াবেড়া
দিয়ে।
এছাড়াও শ্মশানের পাশ্ববর্তী রেজিয়া বেগম
অভিযোগ করেন, সেলিম হুজুরের নিকট ০.১৫শতক একর ভূমি ৭৫ হাজার টাকা ক্রয়
করলেও বর্তমানে সেলিম হুজুর আবারও মোটা অংকের অর্থ খোয়ার জন্য পায়তারা
চালাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, সেলিম হুজুরের বাড়ী জেলার পানছড়ি উপজেলায়।
রাজশাহী টিলার ফাতেমা বেগম অভিযোগ করেন, প্রথম অবস্থায় সেলিম হুজুর এ
এলাকায় এসে রাজশাহী টিলা মসজিদের ইমামতী শুরু করেন এবং বাঙ্গালীদের বাসায়
বাসায় এক বেলা করে ভাতও খেতেন। পরক্ষণে সে বিএনপি’র প্রভাবশালী
নেতাকর্মীদের সাথে আতাঁত করে এ এলাকায় একাধিক স্থানের খাস ভূমির ভূয়া
কাগজপত্রাদি তৈরী করে নামে বেনামে ভূমি জবরদখল করে বেচাবিক্রি করে আর্থিক
ভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠেন। শ্মশানের ভূমি বেদখল করায় এলাকায় ও এলাকার
স্থানীয় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা যায়।
এ
বিষয়ে এবং ভূমির মালিকানা নিয়ে অভিযোগ যাচাইয়ে মাহবুল হক প্রকাশ সেলিম
হুজুরের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্ঠা করা হলেও তিনি কোন তথ্য দিতে রাজি
হননি, বরং বার বার ব্যস্ততা দেখান।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে খাগড়াছড়ি সদর
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানের নিকট
যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি তড়িৎ গতিতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে
মুঠোফোনে অবগত করেন এবং নির্দেশ প্রদান করেন এলাকায় পুলিশ টীম প্রেরণ করে
খতিয়ে দেখার জন্য। এছাড়াও তিনি অভিযোগপত্রটি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট
প্রেরণ করেন। তবে স্থানীয়রা জানান, এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কোন
টীম রাজশাহীটিলা এলাকায় যায়নি। স্থানীয় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন
অবিলম্বে ভূমি দস্যুদের হাত হতে ঐতিহ্যবাহী শ্মশানটি উদ্ধারে স্থানীয়
প্রশাসন ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেন


No comments
Post a Comment