পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর জনসমর্থন বাড়ছে

সৈকত দেওয়ান, খাগড়াছড়ি | আপডেট: ০১:০৮, জানুয়ারি ০৯, ২০১৪ | প্রিন্ট সংস্করণ
নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বর্জন প্রশ্নে সারা দেশের জনসাধারণ যেখানে বিভক্ত, সেখানে পাহাড়ের মানুষ ভিন্ন পথেই হাঁটছে। তাদের এভাবে হাঁটার পথে নেতৃত্ব দিচ্ছে এ এলাকার আঞ্চলিক দলগুলো। গত এক যুগে জনসমর্থনের দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছে এসব দল। এবারের নির্বাচনে প্রতিফলন ঘটল তার।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে খাগড়াছড়ি আসনে আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত প্রার্থী প্রসিত বিকাশ খীসা পরাজিত হলেও ভোটের সংখ্যার বিচারে দলটি পিছিয়ে নেই; বরং গত তিনবারের ভোটের হিসাব পর্যালোচনা করে দিন দিন তাদের পক্ষে জনসমর্থন বাড়ার প্রমাণ মিলছে। অন্যদিকে, এবার রাঙামাটিতেও সরকারি দলের প্রার্থী দীপঙ্কর তালুকদারকে হারিয়ে জিতেছেন আঞ্চলিক দল জনসংহতি (এমএন লারমা) সমিতিসমর্থিত প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার।
এবারের নির্বাচন নিয়ে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়িতে তিনটি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল। ২০০১ সালে প্রার্থী ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা। সে সময় তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৩৭ হাজারের কিছু বেশি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংগঠনটির প্রার্থী ছিলেন উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা। তিনি পেয়েছিলেন ৬০ হাজার ৪১০ ভোট। এবারের সংসদ নির্বাচনে আবার প্রসিত বিকাশ খীসা প্রার্থী হয়ে ভোট পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৭০০। দেখা যায়, গত প্রায় ১২ বছরে ইউপিডিএফের ভোট বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার, অর্থাৎ দ্বিগুণের কাছাকাছি।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশের বড় দলগুলোর বাইরে থেকে ভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠন ও দলের কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিরাট চ্যালেঞ্জ। সম্পূর্ণ বিরূপ পরিস্থিতিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের ঐক্য ধরে রাখা এবং জনসমর্থন আদায়ে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখা বেশ তাৎপযপূর্ণ।
খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়া এলাকার সমাজকর্মী অনুপম চাকমা বলেন, ‘ইউপিডিএফের দাবি ও কর্মসূচিতে আমাদের (পাহাড়িদের) অধিকারের এবং দাবি প্রতিফলিত হয় বলেই এ দলকে আমরা সমর্থন করি। দেশের অন্য বড় দলগুলো আমাদের অধিকার ও এ অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদাসীন। ফলে, ইউপিডিএফ জনসমর্থনের দিক থেকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে।’
ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আহ্বায়ক সচিব চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতেই আমাদের আন্দোলন-কর্মসূচি। ইউপিডিএফ চায়, পাহাড়ি ও বাঙালি—উভয় সম্প্রদায়ের গরিব-মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। এবারের নির্বাচনে ভোটের পরিসংখ্যান প্রমাণ করে, আমাদের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন বাড়ছে।’ সচিব চাকমা আরও বলেন, ইউপিডিএফ তিনটি সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের যেকোনো নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
তবে এর বিপরীত মতও রয়েছে। খাগড়াছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী জাহেদুল করিমের মতে, খাগড়াছড়িতে যেকোনো নির্বাচনে ইউপিডিএফ বড় একটি পক্ষ। পাহাড়িদের বড় একটি অংশ এ দলকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে সংসদ নির্বাচনের মতো বড় নির্বাচনে তাদের সফলতা এখনো নেই। কারণ, শুধু পাহাড়িদের ভোটে কোনো নির্বাচনে জয়ী হওয়া খাগড়াছড়িতে অসম্ভব।

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.