মঙ্গলজনক ও সুখকর পারিবারিক জীবন গঠনের উপায়
- সাধনাজ্যোতি ভিক্ষু
আমরা সবাই মঙ্গল ও সুখ চাই। এটা শুধু মুখে চাইলে হবে না। চাই কর্ম প্রচেষ্টা। তখনই মঙ্গল ও সুখী হওয়া যায়। আমাদের স্বভাব হলো যখন দুঃখে জর্জরিত হই তখন ধর্মের শরণাপন্ন হই আর যখন সুখে অবস্থান করি তখন ধর্মকে বা ভগবানকে পর্যন্ত চিনি না। আমাদের উচিত সুখে দুঃখে সদা সর্বদা ধর্মের শরনাপন্ন হয়ে কুশলকর্মে নিয়োজিত হওয়া। তবে এ ধর্মকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে প্রতিপালন করলে চলবে না। বৌদ্ধ ধর্মে অন্ধ বিশ্বাস ও অন্ধ ভক্তির কোন স্থান নেই। বৌদ্ধধর্ম হল বাস্তব সম্মত ও বিজ্ঞান ভিত্তিক ধর্ম। বর্তমানে আমাদের সমাজে অন্ধ বিশ্বাস ও অন্ধ ভক্তি বেড়ে গেছে। যথাযথ ভাবে বিচার, বিশ্লেষন না করে অন্ধ বিশ্বাস ও অন্ধ ভক্তির জালে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। তাই এ সুযোগে আমাদের সমাজে স্বঘোষিত অনুবুদ্ধ, ষড়াভিজ্ঞা অরহৎ, অরহৎ, মার্গলাভী ও ধুতাঙ্গ সাধকের কোন অভাব নেই। পারিবারিক সুখ ও শান্তি খুঁজতে গিয়ে আমার এসব স্বঘোষিত অনুবুদ্ধ, ষড়াভিজ্ঞা অরহৎ, অরহৎ, মার্গলাভী ও ধুতাঙ্গ সাধকের নিকট দৌড়াদোড়ি করেও এর অন্ত খুঁজে পাচ্ছি না। বুদ্ধ নিজেই বলেছেন, “তুমহেহি কিচ্চং আতপ্পং অক্খাতারো তথাগতা” তোমাদের মঙ্গলের জন্য তোমাদেরকেই উদ্যমের সাথে চেষ্টা করতে হবে। তথাগতগণ ধর্মব্যাখ্যাকারী বা পথ প্রর্দশক মাত্র। আমার ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য আমাকেই আহার করতে হবে; অপরে আহার করলে আমার ক্ষুধা নিবারণ হবে না। কিংম্বা ছাত্রের জন্য যেমন শিক্ষক পড়া শিখতে পারে না, ছাত্রকেই শিখতে হয়: তেমনি প্রত্যেকের সুখকর ও মঙ্গলজনক হবে বুদ্ধের নির্দেশিত পথ অবলম্বন করে শুধু আতœ প্রচেষ্টায় লাভ করতে হয়। উপসংঘরাজ পরম শ্রদ্ধেয় জ্ঞানশ্রী মহাথেরো দেশনায় বলে থাকেন, হিমালয়ে এক ধরনের হরিণ বাস করে। সেই হরিণের নাভীতে এক ধরনের কুস্তুরী জন্মে সেই কুস্তুরী থেকে এমন সুগন্ধি বের হয় সেই গন্ধে হরিণটি মোহিত হয়ে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করতো যে সুগন্ধিটি কোথা হতে আসতেছে। দৌড়াদৌড়ি করতে করতে সে হয়রান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তবুও জানতো না যে সেই সুগন্ধটি তার নিজের নাভী হতে আসতেছে। সেরুপ আমরাও সেই অবোধ প্রাণীর মতো শুধু দৌড়াদৌড়ি করতেছি তবুও জানতে পারছি না যে মঙ্গলজনক ও সুখকর জিনিসটা নিজের মধ্যে লুকিয়ে আছে। ভগবান বুদ্ধ ‘ব্যগ্ঘপজ্জ’ সূত্রে পারিবারিক জীবনে মঙ্গলজনক ও সুখকর আনয়ন করার জন্য চারটি উপদেশ দিয়েছেন। যথা : ১) উৎসাহ ২) সংরক্ষণ ৩) কল্যাণ মিত্রের সং¯্রব ৪) শৃঙ্খলা জীবনযাপন।
উৎসাহ ঃ উৎসাহ শব্দের অর্থ কাজে আগ্রহ, তৎপরতা, উদ্যম, উদ্দীপনা, অদ্যবসায় ইত্যাদি । পারবারিক জীবন যাপন করতে হলে কৃষি, বাণিজ্য, গো-পালন, সৈনিকের কাজ অথবা সরকারী-বেসকারী চাকুরী দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করবে, সে কাজের দক্ষতা, পরিশ্রমী ও উপায়কুশল হতে হবে । যে কাজ নিয়মে করা উচিত, সে কাজ সে নিয়মে তা সুসম্পন্ন করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তত্ত্ব নিতে হবে এবং প্রত্যেক নিয়মে পূর্ণ উৎসাহ রাখতে হবে । যে কোন কাজ আজ করবো কাল করবো করে ফেলে রাখা চলবে না, যথা সময়ে তা সম্পাদন করতে হবে । খরগোশ ও কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতার মতো হলে চলবে না । যে কাজটি করবেন সে কাজটি নিরলস ভাবে সম্পাদন করতে হবে, তবেই আসবে সফলতা ।
সংরক্ষণ ঃ সংরক্ষণ অর্থ রক্ষনাবেক্ষণ করা, কারও জন্য বিশেষ ভাবে রক্ষণ, বিশেষ উদ্দেশ্যে রক্ষণ, বিশেষভাবে রক্ষণ ও তত্বাবধান ইত্যাদি । বহু কষ্টে, বহুশ্রমে ও উদ্যোগে সঞ্চিত ভোগ সম্পদ যেন অন্যায় ভাবে কেউ আয়ত্ত করতে না পারে, চোরে যেন হরণ না করে, অগ্নিতে যেন দগ্ধ না হয়, বন্যার প্লাবনে যেন বিনষ্ট না হয় এবং জ্ঞাতিরা যেন ঈর্ষাপরায়ন হয়ে নষ্ট না করতে পারে; সে বিষয়ে সর্বদা সর্তকভাবে রেখে সুষ্ঠভাবে নিজের ভোগ সম্পত্তি রক্ষা করাকে “সংরক্ষণ” বলে।
কল্যাণ মিত্রের সংস্রব ঃ যাঁরা শ্রদ্ধবান, পূণ্যবান, দাতা, সুশীল, সমদর্শী, প্রজ্ঞাবান, পরের মঙ্গলকামী, হিতোপদেশ দানে পরকে কল্যাণ কাজে নিয়োজিত করেন এবং বিপথেপরিচালিত ব্যক্তিকে সুপথে পরিচালিত করে, তারাই কল্যাণ মিত্র নামে পরিচিতি। সর্বদা এরুপ কল্যাণ মিত্রের সঙ্গে মেলামেশা, সাক্ষাৎ এবং আলাপ-আলোচনা করে, তাদের সৎগুণাবলী নিজ নিজ জীবনে করে তোলাই উচিত। কল্যাণ মিত্রের কল্যাণকর উপদেশে খল্যাণজনক কার্য্য সম্পাদনের সুবদ্ধি জাগ্রত হয় এবং পরকালে সুগতি লাভের হেতু হয়। এটাই হল কল্যাণ মিত্র সংসর্গেও উপকারীতা।
শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন ঃ নিজের আয়-ব্যয় পরিমাণ বুঝতে হবে। কৃপনতা ত্যাগ করে আয়ের অনুপাতে ব্যয় করতে হবে। মিতব্যয়ী হতে হবে। অর্থেও সদ্ব্যবহার করতে হবে। যাতে আয় অপেক্ষা ব্যয় অধিক না হয়, তৎপ্রতি সর্তক থাকতে হবে। যারা আয়-ব্যয়ের পরিমাণ বুঝে চলেন না, জগতে তারা সব কিছুতেই ব্যর্থ মনোরথ হয়। প্রভূত ভোগ সম্পদ থাকা সত্বেও যারা কৃপনতার আশ্রয় গ্রহণ করে, তারাও ইহলোকে পারলৌকিক মঙ্গলদায়ক কোন কর্ম সাধন করতে পাওে না । আয়-ব্যয়ের পরিমাণ বুঝে যথারীতি মতে জীবন যাত্রা নির্বাহ করাকে “শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন” বলে।
বহু কষ্টে ও বহু শ্রমোদ্যোগে সঞ্চিত ভোগ সম্পত্তি চারটি কারণে বিনষ্ট হয়ে থাকে। সে চারটি কারণ, এই ঃ ১) বেস্যাসক্তি, ২) মদ্যপানাসক্তি, ৩) দুত্যক্রীড়াসক্তি ৪) দুঃশীল ও কুলোকের সহিত মিত্রতা । এই চারটি বিষয় ধনক্ষয়ের প্রধান কারণ। এসব সর্বতোভাবে পরিত্যাগ করলে ইহকাল পরকালের সুখ-সম্পদ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। যেমন কোন পুকুরে জল প্রবেশের চারটি পথ ও জল বের হওয়ার চারটি পথ আছে। যদি কেউ এর জল প্রবেশের রাস্তা গুলো বন্ধ করে দেয় এবং বের হওয়ার পথ গুলো খুলে রাখে তখন পুকুরের জল শীঘ্রই শুকিয়ে যাবে। তদ্রুপ সম্পত্তি নাশের চারটি রাস্তা স্বরুপ বেস্যাসক্তি, মদ্যপানাসক্তি, দুত্যক্রীড়াসক্তি, দুঃশীল ও কুলোকের সহিত মিত্রতা এগুলো পরিত্যাগ না করলে সঞ্চিত ধন অচিরেই নিঃশ্চ হয়ে যাবে। ফলে ইহ-পরকালে তাদের দুঃখের সীমা থাকে না। এজগতে চারটি গুণ দ্বারা মানবের ইহ-পরকালের মহাউপকার সাধন হয়। সে চারটি গুণ হল ঃ ১) শ্রদ্ধাগুণ, ২) শীলগুণ, ৩) দানগুণ, ৪) প্রজাগুণ।
১) শ্রদ্ধাগুণ ঃ যার নিকট এরুপ দৃঢ় বিশ্বাস ও ধারণা আছে যে- ভগবান বুদ্ধ“অরহত, সম্যকসম্বুদ্ধ, বিদ্যাচরণ সম্পন্ন, সুগত, লোকবিদু, সর্বশ্রেষ্ট, অদম্য পুরুষের দমনকারী সারথি এবং নর-দেব-ব্রহ্মাদি জীবকুলের শিক্ষক ও শাসক এই দৃঢ় বিশ্বাস ও ধারণাকেই “শ্রদ্ধাগুণ” বলে।
মিলিন্দ প্রশ্ন গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, শ্রদ্ধার লক্ষণ দুটো প্রসন্নতা উৎপাদন ও অগ্রগতি সাধন। শ্রদ্ধা উৎপন্ন হলে পঞ্চনীবরণ ক্ষীণ হয়ে হয়ে যায়। পঞ্চনীবরণ প্রহীন চিত্তে কলুষ বিহীন, নির্মল ও সুপ্রসন্ন হয়। এটাই শ্রদ্ধার প্রসন্নতা উৎপাদন লক্ষণ। অন্যেও চিত্ত পাপমুক্ত দেখে সৎব্যক্তিরা স্রোতাপত্তি, সকৃদাগামী, অনাগামী ও অর্হত্বফল প্রাপ্তির জন্য উদ্যোগী হন। না পাওয়ার বিষয় পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। অনধিগত বিষয় অধিগত করার চেষ্টা করেন। অপ্রাপ্ত বিষয় প্রাপ্তির জন্য বার বার উদ্যম গ্রহন করেন।
বুদ্ধ বলেছেন, ‘সদ্দায় তরতি ওঘং’ অথার্ৎ শ্রদ্ধার দ্বারা মহা পড়াবু অতিক্রম করা সম্ভব। কর্ম ও কর্ম ফলকে বিশ্বাস করার নামই শ্রদ্ধা তবে এটা অন্ধ বিশ্বাস নয়, যুক্তি সঙ্গত বিশ্বাসই শ্রদ্ধা। হস্তহীন ব্যক্তি যেমন রত্নাদি দর্শন করলেও গ্রহন করতে অক্ষম, তেমনি শ্রদ্ধা না থাকলে দান-শীল-ভাবনাদি পূন্য কর্ম সম্পাদন করতে পারে না। এই কারণে শ্রদ্ধা হস্ত সদৃশ।
শ্রদ্ধা চার প্রকার ঃ যথা- ১) আগমনীয় শ্রদ্ধা- এটি সর্বজ্ঞ মহাকারুনিক বুদ্ধেও নিকট বিদ্যমান থাকে। ২) অধিগম শ্রদ্ধা- আর্যশ্রাবক ও মার্গ লাভীরা এরুপ শ্রদ্ধার অধিকারী। ৩) প্রসাদ শ্রদ্ধা- বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘ এর নাম উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে মহা কপ্পিন রাজা যেরুপ শ্রদ্ধা উৎপন্ন হয়েছিল এটাই প্রসাদ শ্রদ্ধা বা ত্রিরত্নের প্রতি শ্রদ্ধা। ৪) ওকপ্পন বা অকম্পন শ্রদ্ধা- শ্রদ্ধেয় বস্তুর গুরুত্ব উপলদ্ধি পর যে শ্রদ্ধা উৎপন্ন হয় এটাই ওকপ্পন শ্রদ্ধা।
২) শীলগুণ ঃ প্রাণী হত্যা, চুরি, পরদার লঙ্ঘন, মিথ্যা-পিশুন-পরুষ-সম্প্রলাপ ভাষণ ও সুরা-গাজা-অহিফেনাদি যে কোন নেশাদ্রব্য সেবন হতে বিরত হওয়াকে “শীলগুণ” বলে।
যা দ্বারা মনের পরিদাহ নির্বাপিত হয়ে শীতল হয় তার নাম শীল। বিচ্ছিন্ন শির প্রাণীর যেমন শীল বিহীন দুঃশীল ব্যক্তিও তেমন মৃত প্রায়। এই অর্থে শীলের অপর নাম “ শির”। শীলের মধ্যে সমস্ত কুশল ধর্ম প্রতিষ্ঠা বা আশ্রয় লাভ করে বৃদ্ধি পায় এই অর্থে শীলের অপর নাম “প্রতিষ্ঠা”। শীলের সংস্পর্শে কায়িক-বাচনিক-মানসিক বিসৃঙ্খলা দুরকরে ইন্দ্রিয় সমূহ সুদান্ত-সুসংযত হয়, এই অর্থে শীলের অপর নাম “দমগুণ”।
প্রব্রজিত হোক বা গৃহী হোক প্রত্যেকে শীল পালন করা একান্তই কর্তব্য । যেহেতু প্রাণী মাত্রেই সুখ আকাক্সক্ষা করে। সেই সুখ শীলের মাধ্যমে লাভ করা যায়। শীল ব্যতিত ইহ-পারত্রিক উভয়কালে সুখ লাভের আর অন্য কোন পন্থা নেই। সুতরাং যে যত অধিক পরিমাণে নিখুঁতভাবে শীল রক্ষা করবেন তিনি ততই সুখের ভাগী হবেন। সেজন্যে বুদ্ধ বলেছেন শীলরক্ষা জনিত পূন্য প্রভাবে দেবলোক প্রাপ্তি ঘটে যে কোন জন্মে বহুল ভাবে ভোগ সম্পদ হয় এবং অনাবিল পরম শান্তি নির্বাণও লাভ হয়। বিশুদ্ধি মার্গে বলা হয়েছে শীল দুই প্রকার চারিত্র ও বারিত্র শীল।
৩) দানগুণ ঃ কৃপনতা ত্যাগ করে যথাশক্তি দান করা এবং তাতে প্রীতি উৎপাদন করা, ভিক্ষুসংঘ, পথিক, যাচক ও দীন-দুখী এমনকি পশু পক্ষীদেরকেও যথাশক্তি দানদিয়ে উপকার করা এটাই “দানগুণ” বলে। যে দানে বস্তু সম্পত্তি, চিত্ত সম্পত্তি ও প্রতিগ্রাহক সম্পত্তি পরিপূর্ণ থাকলে সে দানে মহাফল লাভ হয়। সদুপায় উপার্জিত টাকা-পয়সা ব্যয়ে এবং পরকে পীড়া প্রদান না করে ধর্মতঃ যে দানীয় বস্তু সংগ্রহ কার হয় তাই “বস্তু সম্পত্তি” বলে। অসদুপায়ে উপার্জিত টাকা-পয়সা এবং পরকে পীড়া প্রদানের দানীয় বস্তু সংগ্রহ করে যে দান দেয়া হয়, তা কুশলাকুশল চিত্তের চেতনানুযায়ী পাপ-পূণ্য উভয় ফল উৎপন্ন হয়, তাকে “হীনদান” বলে। দান দেয়র পূর্বে, দান দেয়ার সময় এবং দান দেয়ারপর এই ত্রিবিধ অবস্থায় চিত্তে লোভ, দেষ ও মোহ শূন্য হয়ে দানপ্রীতি দানের আনন্দ উৎপন্ন হওয়ার নাম “ চিত্ত সম্পত্তি”। শীলবান গ্রহীতাদের “প্রতিগ্রাহক সম্পত্তি” বলে। সেই শীলবান ব্যক্তিরাই বলে অনুত্তর পূন্য ক্ষেত্র ভিক্ষুসংঘ।
৪) প্রজ্ঞাগুণ ঃ সংস্কারের অনিত্যতা উপলদ্ধি অর্থাৎ জগতে যাবতীয় বস্তুর সৃষ্টি ও বিনাসের নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহ সম্বন্ধে সম্যকরুপে হৃদয়ঙ্গম করে দুঃখ হতে মুক্তি চেষ্টা করাকে “প্রজ্ঞাগুণ” বলে। এই চারটি বিষয়ও গৃহীদের ইহ-পরকালের হিতসুখাবহ।
প্রজ্ঞার লক্ষণ ছেদন ও অবভাসন। কৃষক যেমন এক হাতে ধান্যাদি ধারণ কওে অপর হাতে কাস্তে দ্বারা তা ছেদন করে, সেরুপ সাধক প্রজ্ঞারুপ কাস্তে দ্বারা তৃষ্ণা চেদন করেন। এটাই প্রজ্ঞার ছেদন লক্ষণ। প্রজ্ঞা অবিদ্যা অন্ধকার বিনাস করে বিদ্যালোক উৎপন্ন করে। এই বিদ্যার আলোকে আর্য সত্য প্রকাশিত হয়, অনিত্য, দুঃখ, অনাত্ন প্রর্দশন করে। এটাই প্রজ্ঞার অবভাসন লক্ষণ।
প্রজ্ঞা হল জগতের তত্ববিষয়ক বিষয়ের যথাভূত দর্শন। বিষয় বা আলম্বনের স্বভাব জানাই প্রজ্ঞা । প্রজ্ঞা মোহকে পরাভূত করে। প্রজ্ঞাই সর্বশ্রেষ্ঠ ইন্দ্রিয় । এটা নিবার্ণ প্রদর্শী। বুদ্ধের উপদেশ ও বাণী সমূহ চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধকে সংক্ষেপ করলে সাইঁত্রিশ প্রকার বোধিপক্ষীয় ধর্মে পরিনত হয়। এ সাইঁত্রিশ প্রকার বোধিপক্ষীয় ধর্মকে সংক্ষেপ করলে চারি আর্য সত্য এ সত্যসমুহকে সংক্ষেপ করলে শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা বলা হয়। আবার যদি এ তিন বিষয়ের সার চয়ন করা হয়, তবে একমাত্র প্রজ্ঞাই অবশিষ্ট থাকে। বৌদ্ধধর্ম সাধনার মূল উদ্দেশ্য এ প্রজ্ঞার পূর্ণতা লাভ। সাধনাক্ষেত্রে প্রজ্ঞা উদ্বোধন হলেই জগতের সকল দুঃখের উপলদ্ধি ও নিবৃত্তি ঘটে। সুতরাং দুঃখধ্বংসকারী ব্যক্তির পক্ষে সর্ব প্রথমে সাধনায় নিযুক্ত হয়ে প্রজ্ঞার উদ্বোধন করা নিতান্তই কর্তব্য।
লেখক : বি. এ (অনার্স), এম.এ, এম. এড, অধ্যক্ষ, হিলচাদিগাং বৌদ্ধ বিহার, সম্পাদক, হিলচাদিগাং ( ধর্মীয় ও সামাজিক মুখপত্র)।
No comments
Post a Comment