:: তাইন্দংয়ে পাহাড়ি গ্রামে হামলায় জড়িতদের শাস্তি সহ কয়েকটি দাবিতে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান ::
গত ৩ আগস্ট খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন তাইন্দংয়ে পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলায় জড়িতদের বিচার, পুড়ে দেয়া বৌদ্ধ বিহারের পুনঃনির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার দাবিতে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের উদ্যোগে আজ ১৮ আগস্ট রবিবার খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা শহরের মহাজন পাড়ার শিবলী বৌদ্ধ বিহারের সামনে থেকে বিকাল ৩টায় পদযাত্রা সহকারে শাপলা চত্বরে গিয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি নন্দ প্রিয় থেরো’র সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু। এছাড়া সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মুরব্বী ও সমাজ সেবক কিরণ মারমা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, দীঘিনালা পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের নেতা শুভোদয় ভিক্ষু এবং মৈত্রীপুর বৌদ্ধ বিহারের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র বড়–য়া প্রমুখ। মানব বন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অগ্রজ্যোতি থেরো এবং পরিচালনা করেন অনুপম চাকমা।
মানববন্ধনে বিভিন্ন বিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষু ছাড়াও এলাকার নারী-পুরুষ ও সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
ড.জিনবোধি ভিক্ষু তার বক্তব্যে বলেন, বৌদ্ধরা শান্তি প্রিয় জনগণ। আমাদের ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে। এই অঞ্চলে আমাদের অবস্থান অনেক পুরনো। এই শান্তিপ্রিয় জনগণের উপর নানাভাবে হামলা করা হচ্ছে। আজকে তাইন্দংয়ে বৌদ্ধ বিহার ও পাহাড়ি গ্রামে হামলা করা হয়েছে। এর থেকেও বড় ধরণের হামলা হতে পারে। এ ধরণের ন্যাক্কারজনক হামলার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে।
তিনি হামলাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
মানববন্ধন শেষে নন্দপ্রিয় থেরো এবং অগ্রজ্যোতি থেরো’র নেতৃত্বে ৬ সদস্যের ভিক্ষুসংঘের একটি প্রতিনিধি জেলা প্রশাসক মাসুদ করিম মহোদয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেন। এ সময় প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলেন কিরণ মারমা, দীপায়ন চাকমা, অনুপম চাকমা, কংচাইরী মাস্টার প্রমূখ।
জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপিতে তারা তাইন্দং হামলায় পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধ মন্দির পুনঃনির্মাণ, লুণ্ঠিত বুদ্ধমূর্তি উদ্ধার, ভেঙ্গে দেওয়া বুদ্ধমূর্তির প্রতিস্থাপন ও মন্দিরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পুড়ে দেওয়া ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণসহ ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পাহাড়ি পরিবারকে যথাযথ পুনর্বাসন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে হামলার ষড়যন্ত্রকারী, ইন্ধনদাতা ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, হামলার সাথে বিজিবির সংশ্লিষ্টতার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং যামিনীপাড়া জোন কমান্ডারসহ দায়ী বিজিবি কমান্ডার ও জওয়ানদের প্রকাশ্য আদালতে বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য প্রত্যেক পাহাড়ি এলাকায় গ্রাম প্রতিরক্ষা দল বা ভিডিপি গঠন করা সহ ৮ দফা দাবি পেশ করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নে সেটলাররা পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ি গ্রামে হামলা চালায়। এতে পাহাড়ি জনসাধারণের ৩৪টি বাড়ি ও একটি দোকান ঘর পুড়ে দেয়ার পাশাপাশি দু’টি বৌদ্ধ বিহারেও আক্রমণ করা হয়। সেটলাররা সর্বেশ্বর পাড়ায় জনশক্তি বৌদ্ধ বিহারের দেশনা ঘর পুড়ে দেয় এবং এই বিহারসহ মনুদাস পাড়ার জনসেবা বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধমূতি চুরি ও ভাঙচুর করে। এছাড়া সেটলাররা আড়াই শতাধিক বাড়িঘরে ভাংচুর, লুটপাট ও সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করে। সেটলারদের হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে ১২টি গ্রামের তিন সহস্রাধিক পাহাড়ি বাড়িঘর ছেড়ে ভারত সীমান্তে, পানছড়ি উপজেলায় এবং বনে-জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। তাদের সাথে দুই বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষুরাও অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। (তথ্য সূত্র: সিএইচটি নিউজ বাংলা)
No comments
Post a Comment