এ লজ্জা লুকাব কোথায়?

রিকেন বড়ুয়া, থাইল্যান্ড থেকে

হিংসা-প্রতিহিংসা, দ্বেষ-বিদ্বেষ পরিহার করে বিশ্বে শান্তি ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্ত্তক গৌতম বুদ্ধ রাজ সিংহাসন ত্যাগ করেন। দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনার ফলে বুদ্ধত্ব লাভ করে হয়েছেন ত্রিলোক শাস্তা মহাকারুনিক বুদ্ধ। বুদ্ধত্ব লাভ করার পর তিনি যে ধর্ম প্রচার করেছিলেন তা বিশ্বে বৌদ্ধধর্ম নামে পরিচিত। গৌতম বুদ্ধ তাঁর ধর্মের স্থায়ীত্বকল্পে গৈরিক বসনধারী ভিক্ষুসংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রবাহমান ধারায় মূলত ভিক্ষুসংঘগণই বুদ্ধের বহুল প্রচারিত ধর্মকে অধ্যাবদি বিশ্বে প্রচার ও প্রসার করে যাচ্ছেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ সূত্র, বিনয় ও অভিধর্ম পিটকের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিপিটকের বিনয় পিটক মতে সাধারণ গৃহী জীবন হতে সন্ন্যাস বা ভিক্ষু জীবনে প্রদার্পনকালে কিছু শর্ত মেনেই কোন গৃহী ভিক্ষু হতে পারেন। উল্লেখযোগ্য শর্তগুলোর মধ্যে ভিক্ষু পাতিমোক্ষ মতে যদি কোন দায়ক বা গৃহী কোন ভিক্ষুকে আবাসস্থান দান না করে তবে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণকারী ভিক্ষুকে উন্মুক্ত আকাশের নিচে, বনে-জঙ্গলে অবস্থান করতে হবে। যদি কাপড় দান করে তবে শ্মশানের ছেড়া কাপড় বুনে পরিধান করতে হবে। শান্তি ও মৈত্রীর প্রতীক বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ জীবনের সব আরাম আয়েশ বিসর্জন দিয়ে আত্মমুক্তি ও ধর্ম প্রচারের ব্রত নিয়ে ভিক্ষুব্রত গ্রহণ করেন। সময়ের ব্যবধানে এখন কঠোরতম এ নিয়মগুলো অধিকতর সহজ হয়েছে। ‍ভিক্ষু এবং সাধারণ গৃহী একে অপরের পরিপূরক। যেমন একটি ছাড়া অন্যটি নয়।

বুদ্ধের প্রচারিত ধর্ম অনুযায়ী যদি কোন গৃহী অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সংঘের বা ভিক্ষুর উদ্দ্যেশে কোন আবাস তৈরীপূর্বক দান করে তবে সেখানে দাতা আর কর্তৃত্ব-নের্তৃত্ব করতে পারে না। ভিক্ষুসংঘের পরিচালনায় উক্ত বিহার পরিচালিত হয়। কিন্তু বর্তমানে স্বল্প বাঙ্গালী বৌদ্ধদের মধ্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা রকম ঘটনা-দুর্ঘটনার খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। গত ২২ জুলাই সারা বিশ্বে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পবিত্র সংযমের ও বিনয় অধ্যয়নের মাস বর্ষাবাস শুরু হয়। বৌদ্ধ জনসাধারণ বিহারে গিয়ে প্রার্থনা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণ করেন। আর ভিক্ষুরা পূজারীদেরকে বুদ্ধের শিক্ষায় দীক্ষা দেন। অন্যান্য বৌদ্ধ বিহারের মত বন্দর নগরী চট্টগ্রামস্থ নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে উৎসব মূখর পরিবেশে পবিত্র আষাঢ়ী পূর্ণিমার কার্যক্রম শুরু হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাথের দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করে আসছেন। যথারীতি তিনিও ভক্তবৃন্দকে ধর্মদান করার জন্য অন্যান্য ভিক্ষুসংঘের সাথে বিহারের দ্বিতীয় তলায় বসতে চাইলে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির নেতৃবৃন্দ তাকে ধর্মদান থেকে বাধা প্রদান করেন। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি নিচে বুদ্ধমূর্তির পাশেই বসে পঞ্চশীল, অষ্টশীল প্রদান করার জন্য আসেন। সেখান থেকেও তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ‍বাধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির বিজ্ঞ সুধীজন দ্বারা ঘটিত এ অনাকাংখিত দুর্ঘটনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য অন্যন্ত লজ্জাজনক। ইতিপূর্বে কর্তৃত্ব ও নের্তৃত্বের জন্য অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাথেরর সাথে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির নের্তৃবৃন্দের পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে, যা বিজ্ঞ আদালতে এখনো বিচারাধীন। সাধারণ বৌদ্ধ জনগণ জানতে চায় আসলে দায়টা কার? নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারের ইতিহাস অনুযায়ী বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির সভ্য মহোদয়ের মামলার কারণে অতীতেও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কারাবরণ করতে হয়েছে। বৌদ্ধ বিহার হতে বিতাড়িত হয়েছে ভিক্ষুসংঘের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন সংগ্রামী সংঘবন্ধু অজিতানন্দ মহাথের, পন্ডিত প্রজ্ঞাবংশ মহাথের, কারাবরণ করেছে এস জ্ঞানপ্রিয় থেরোসহ বহু ভিক্ষু নানাভাবে লাঞ্চনা বঞ্চনার স্বীকার হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির সভ্যবৃন্দের মূলত কাজটা কি? তারা কি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মঙ্গল চায়, নাকি অমঙ্গল চায়। তাদের এ হীনমন্যতার কারণে কেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অপমানের দায়ভার সকল বাংলাদেশী বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বৌদ্ধ জনসাধারণের জন্য তাদের ভূমিকা কি? তারা কি শুধু নাম আর পদের লোভে বৌদ্ধ সমিতি করেন? একজন ভিক্ষুকে এভাবে অপদস্থ করার প্রকৃত ব্যাখ্যা বৌদ্ধ সমিতির কাছে এখন জনগণ জানতে চায়। একজন ভিক্ষু হিসেবে সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় উপদেশ দেওয়া, ধর্ম বাণী শ্রবণ করানো এটি তার দায়িত্ব ও অধিকার। এ দায়িত্ব ও অধিকার পালনে ‍বাধা প্রদান করার ক্ষমতা বৌদ্ধ সমিতি কোথায় পেল সাধারণ জনগণের প্রশ্ন। চট্টগ্রাম নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহার আগত অনাগত ভিক্ষুদের জন্য উৎসর্গীত হয়েছে। দানকৃত এ প্রতিষ্ঠানের মালিক বৌদ্ধ সমিতি হয় কি করে এবং কোন আইন বলে তারা এ অধিকার পেয়েছে? কেনই বা তারা বলে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি কর্তৃক পরিচালিত চট্টগ্রাম নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহার? তাহলে কি বৌদ্ধ বিহারের জায়গা তাদের ক্রয়কৃত সম্পতি? দানকৃত নয়? জনগণ আরো জানতে চায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে কেন ড. জিনবোধি বৌদ্ধ সমিতির সাথে মামলায় জড়িত হলেন। এটি কি তার ভিক্ষুসংঘের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নাকি একঘেয়েমিতা? যদি একঘেয়েমিতা হয় তাহলে তার পবিত্র ভিক্ষু জীবন রইল কিনা। স্বল্প সংখ্যক বৌদ্ধদের মধ্যে এরকম ঘটনা জাতি আশা করে না। মহামান্য সংঘরাজ ধর্মসেন মহাথের ও বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষ‍ু মহাসভা বিরাজমান এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানে এগিয়ে এসে অনতিবিলম্বে বিশ্ববাসীর কাছে বাঙ্গালী বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে এ লজ্জা থেকে মুক্তি দিবে বলে সকলের বিশ্বাস। কারণ বিশ্বে অন্যান্য দেশে অবস্থানরত ভিক্ষুসংঘগণ বাংলাদেশী বৌদ্ধদের এরূপ কর্মকান্ডের জন্য প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, লাওস, কম্বোডিয়া, মায়ানমারসহ বৌদ্ধপ্রদান দেশে বৌদ্ধ বিহার পরিচালিত হয় বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষুদের মাধ্যমে। পরিচালনার সকল ক্ষমতা থাকে তাদের হাত। দায়ক কিংবা গৃহীরা হন শুধুই সেবক। রাজা থেকে শুরু করে কোটিপতিরা বিহার নিয়ে বাঙ্গালী বৌদ্ধদের মত এরূপ বিশৃংখলা করে না। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি ও বাংলাদেশী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবী। শান্তি ও মৈত্রী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের চলমান জীবনে ফিরে আসুক। হিংসা ভুলে মহামতি বুদ্ধের আদর্শে উজ্জ্বীবিত হোক তাদের জীবন এ প্রত্যয় সকলের।
E-mail: rikenlaw2011@yahoo.com
- See more at: http://dhammainfo.com/viewers-writtings/705#sthash.anM94m7r.mPrac2cf.dpuf
হিংসা-প্রতিহিংসা, দ্বেষ-বিদ্বেষ পরিহার করে বিশ্বে শান্তি ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্ত্তক গৌতম বুদ্ধ রাজ সিংহাসন ত্যাগ করেন। দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনার ফলে বুদ্ধত্ব লাভ করে হয়েছেন ত্রিলোক শাস্তা মহাকারুনিক বুদ্ধ। বুদ্ধত্ব লাভ করার পর তিনি যে ধর্ম প্রচার করেছিলেন তা বিশ্বে বৌদ্ধধর্ম নামে পরিচিত। গৌতম বুদ্ধ তাঁর ধর্মের স্থায়ীত্বকল্পে গৈরিক বসনধারী ভিক্ষুসংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রবাহমান ধারায় মূলত ভিক্ষুসংঘগণই বুদ্ধের বহুল প্রচারিত ধর্মকে অধ্যাবদি বিশ্বে প্রচার ও প্রসার করে যাচ্ছেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ সূত্র, বিনয় ও অভিধর্ম পিটকের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিপিটকের বিনয় পিটক মতে সাধারণ গৃহী জীবন হতে সন্ন্যাস বা ভিক্ষু জীবনে প্রদার্পনকালে কিছু শর্ত মেনেই কোন গৃহী ভিক্ষু হতে পারেন। উল্লেখযোগ্য শর্তগুলোর মধ্যে ভিক্ষু পাতিমোক্ষ মতে যদি কোন দায়ক বা গৃহী কোন ভিক্ষুকে আবাসস্থান দান না করে তবে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণকারী ভিক্ষুকে উন্মুক্ত আকাশের নিচে, বনে-জঙ্গলে অবস্থান করতে হবে। যদি কাপড় দান করে তবে শ্মশানের ছেড়া কাপড় বুনে পরিধান করতে হবে। শান্তি ও মৈত্রীর প্রতীক বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ জীবনের সব আরাম আয়েশ বিসর্জন দিয়ে আত্মমুক্তি ও ধর্ম প্রচারের ব্রত নিয়ে ভিক্ষুব্রত গ্রহণ করেন। সময়ের ব্যবধানে এখন কঠোরতম এ নিয়মগুলো অধিকতর সহজ হয়েছে। ‍ভিক্ষু এবং সাধারণ গৃহী একে অপরের পরিপূরক। যেমন একটি ছাড়া অন্যটি নয়।
বুদ্ধের প্রচারিত ধর্ম অনুযায়ী যদি কোন গৃহী অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সংঘের বা ভিক্ষুর উদ্দ্যেশে কোন আবাস তৈরীপূর্বক দান করে তবে সেখানে দাতা আর কর্তৃত্ব-নের্তৃত্ব করতে পারে না। ভিক্ষুসংঘের পরিচালনায় উক্ত বিহার পরিচালিত হয়। কিন্তু বর্তমানে স্বল্প বাঙ্গালী বৌদ্ধদের মধ্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা রকম ঘটনা-দুর্ঘটনার খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। গত ২২ জুলাই সারা বিশ্বে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পবিত্র সংযমের ও বিনয় অধ্যয়নের মাস বর্ষাবাস শুরু হয়। বৌদ্ধ জনসাধারণ বিহারে গিয়ে প্রার্থনা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণ করেন। আর ভিক্ষুরা পূজারীদেরকে বুদ্ধের শিক্ষায় দীক্ষা দেন। অন্যান্য বৌদ্ধ বিহারের মত বন্দর নগরী চট্টগ্রামস্থ নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে উৎসব মূখর পরিবেশে পবিত্র আষাঢ়ী পূর্ণিমার কার্যক্রম শুরু হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাথের দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করে আসছেন। যথারীতি তিনিও ভক্তবৃন্দকে ধর্মদান করার জন্য অন্যান্য ভিক্ষুসংঘের সাথে বিহারের দ্বিতীয় তলায় বসতে চাইলে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির নেতৃবৃন্দ তাকে ধর্মদান থেকে বাধা প্রদান করেন। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি নিচে বুদ্ধমূর্তির পাশেই বসে পঞ্চশীল, অষ্টশীল প্রদান করার জন্য আসেন। সেখান থেকেও তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ‍বাধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির বিজ্ঞ সুধীজন দ্বারা ঘটিত এ অনাকাংখিত দুর্ঘটনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য অন্যন্ত লজ্জাজনক। ইতিপূর্বে কর্তৃত্ব ও নের্তৃত্বের জন্য অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাথেরর সাথে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির নের্তৃবৃন্দের পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে, যা বিজ্ঞ আদালতে এখনো বিচারাধীন। সাধারণ বৌদ্ধ জনগণ জানতে চায় আসলে দায়টা কার? নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারের ইতিহাস অনুযায়ী বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির সভ্য মহোদয়ের মামলার কারণে অতীতেও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কারাবরণ করতে হয়েছে। বৌদ্ধ বিহার হতে বিতাড়িত হয়েছে ভিক্ষুসংঘের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন সংগ্রামী সংঘবন্ধু অজিতানন্দ মহাথের, পন্ডিত প্রজ্ঞাবংশ মহাথের, কারাবরণ করেছে এস জ্ঞানপ্রিয় থেরোসহ বহু ভিক্ষু নানাভাবে লাঞ্চনা বঞ্চনার স্বীকার হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির সভ্যবৃন্দের মূলত কাজটা কি? তারা কি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মঙ্গল চায়, নাকি অমঙ্গল চায়। তাদের এ হীনমন্যতার কারণে কেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অপমানের দায়ভার সকল বাংলাদেশী বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বৌদ্ধ জনসাধারণের জন্য তাদের ভূমিকা কি? তারা কি শুধু নাম আর পদের লোভে বৌদ্ধ সমিতি করেন? একজন ভিক্ষুকে এভাবে অপদস্থ করার প্রকৃত ব্যাখ্যা বৌদ্ধ সমিতির কাছে এখন জনগণ জানতে চায়। একজন ভিক্ষু হিসেবে সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় উপদেশ দেওয়া, ধর্ম বাণী শ্রবণ করানো এটি তার দায়িত্ব ও অধিকার। এ দায়িত্ব ও অধিকার পালনে ‍বাধা প্রদান করার ক্ষমতা বৌদ্ধ সমিতি কোথায় পেল সাধারণ জনগণের প্রশ্ন। চট্টগ্রাম নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহার আগত অনাগত ভিক্ষুদের জন্য উৎসর্গীত হয়েছে। দানকৃত এ প্রতিষ্ঠানের মালিক বৌদ্ধ সমিতি হয় কি করে এবং কোন আইন বলে তারা এ অধিকার পেয়েছে? কেনই বা তারা বলে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি কর্তৃক পরিচালিত চট্টগ্রাম নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহার? তাহলে কি বৌদ্ধ বিহারের জায়গা তাদের ক্রয়কৃত সম্পতি? দানকৃত নয়? জনগণ আরো জানতে চায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে কেন ড. জিনবোধি বৌদ্ধ সমিতির সাথে মামলায় জড়িত হলেন। এটি কি তার ভিক্ষুসংঘের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নাকি একঘেয়েমিতা? যদি একঘেয়েমিতা হয় তাহলে তার পবিত্র ভিক্ষু জীবন রইল কিনা। স্বল্প সংখ্যক বৌদ্ধদের মধ্যে এরকম ঘটনা জাতি আশা করে না। মহামান্য সংঘরাজ ধর্মসেন মহাথের ও বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষ‍ু মহাসভা বিরাজমান এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানে এগিয়ে এসে অনতিবিলম্বে বিশ্ববাসীর কাছে বাঙ্গালী বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে এ লজ্জা থেকে মুক্তি দিবে বলে সকলের বিশ্বাস। কারণ বিশ্বে অন্যান্য দেশে অবস্থানরত ভিক্ষুসংঘগণ বাংলাদেশী বৌদ্ধদের এরূপ কর্মকান্ডের জন্য প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, লাওস, কম্বোডিয়া, মায়ানমারসহ বৌদ্ধপ্রদান দেশে বৌদ্ধ বিহার পরিচালিত হয় বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষুদের মাধ্যমে। পরিচালনার সকল ক্ষমতা থাকে তাদের হাত। দায়ক কিংবা গৃহীরা হন শুধুই সেবক। রাজা থেকে শুরু করে কোটিপতিরা বিহার নিয়ে বাঙ্গালী বৌদ্ধদের মত এরূপ বিশৃংখলা করে না। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি ও বাংলাদেশী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবী। শান্তি ও মৈত্রী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের চলমান জীবনে ফিরে আসুক। হিংসা ভুলে মহামতি বুদ্ধের আদর্শে উজ্জ্বীবিত হোক তাদের জীবন এ প্রত্যয় সকলের।
E-mail: rikenlaw2011@yahoo.com
- See more at: http://dhammainfo.com/viewers-writtings/705#sthash.anM94m7r.mPrac2cf.dpuf
হিংসা-প্রতিহিংসা, দ্বেষ-বিদ্বেষ পরিহার করে বিশ্বে শান্তি ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্ত্তক গৌতম বুদ্ধ রাজ সিংহাসন ত্যাগ করেন। দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনার ফলে বুদ্ধত্ব লাভ করে হয়েছেন ত্রিলোক শাস্তা মহাকারুনিক বুদ্ধ। বুদ্ধত্ব লাভ করার পর তিনি যে ধর্ম প্রচার করেছিলেন তা বিশ্বে বৌদ্ধধর্ম নামে পরিচিত। গৌতম বুদ্ধ তাঁর ধর্মের স্থায়ীত্বকল্পে গৈরিক বসনধারী ভিক্ষুসংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রবাহমান ধারায় মূলত ভিক্ষুসংঘগণই বুদ্ধের বহুল প্রচারিত ধর্মকে অধ্যাবদি বিশ্বে প্রচার ও প্রসার করে যাচ্ছেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ সূত্র, বিনয় ও অভিধর্ম পিটকের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিপিটকের বিনয় পিটক মতে সাধারণ গৃহী জীবন হতে সন্ন্যাস বা ভিক্ষু জীবনে প্রদার্পনকালে কিছু শর্ত মেনেই কোন গৃহী ভিক্ষু হতে পারেন। উল্লেখযোগ্য শর্তগুলোর মধ্যে ভিক্ষু পাতিমোক্ষ মতে যদি কোন দায়ক বা গৃহী কোন ভিক্ষুকে আবাসস্থান দান না করে তবে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণকারী ভিক্ষুকে উন্মুক্ত আকাশের নিচে, বনে-জঙ্গলে অবস্থান করতে হবে। যদি কাপড় দান করে তবে শ্মশানের ছেড়া কাপড় বুনে পরিধান করতে হবে। শান্তি ও মৈত্রীর প্রতীক বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ জীবনের সব আরাম আয়েশ বিসর্জন দিয়ে আত্মমুক্তি ও ধর্ম প্রচারের ব্রত নিয়ে ভিক্ষুব্রত গ্রহণ করেন। সময়ের ব্যবধানে এখন কঠোরতম এ নিয়মগুলো অধিকতর সহজ হয়েছে। ‍ভিক্ষু এবং সাধারণ গৃহী একে অপরের পরিপূরক। যেমন একটি ছাড়া অন্যটি নয়।
বুদ্ধের প্রচারিত ধর্ম অনুযায়ী যদি কোন গৃহী অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সংঘের বা ভিক্ষুর উদ্দ্যেশে কোন আবাস তৈরীপূর্বক দান করে তবে সেখানে দাতা আর কর্তৃত্ব-নের্তৃত্ব করতে পারে না। ভিক্ষুসংঘের পরিচালনায় উক্ত বিহার পরিচালিত হয়। কিন্তু বর্তমানে স্বল্প বাঙ্গালী বৌদ্ধদের মধ্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা রকম ঘটনা-দুর্ঘটনার খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। গত ২২ জুলাই সারা বিশ্বে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পবিত্র সংযমের ও বিনয় অধ্যয়নের মাস বর্ষাবাস শুরু হয়। বৌদ্ধ জনসাধারণ বিহারে গিয়ে প্রার্থনা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণ করেন। আর ভিক্ষুরা পূজারীদেরকে বুদ্ধের শিক্ষায় দীক্ষা দেন। অন্যান্য বৌদ্ধ বিহারের মত বন্দর নগরী চট্টগ্রামস্থ নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে উৎসব মূখর পরিবেশে পবিত্র আষাঢ়ী পূর্ণিমার কার্যক্রম শুরু হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাথের দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করে আসছেন। যথারীতি তিনিও ভক্তবৃন্দকে ধর্মদান করার জন্য অন্যান্য ভিক্ষুসংঘের সাথে বিহারের দ্বিতীয় তলায় বসতে চাইলে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির নেতৃবৃন্দ তাকে ধর্মদান থেকে বাধা প্রদান করেন। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি নিচে বুদ্ধমূর্তির পাশেই বসে পঞ্চশীল, অষ্টশীল প্রদান করার জন্য আসেন। সেখান থেকেও তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ‍বাধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির বিজ্ঞ সুধীজন দ্বারা ঘটিত এ অনাকাংখিত দুর্ঘটনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য অন্যন্ত লজ্জাজনক। ইতিপূর্বে কর্তৃত্ব ও নের্তৃত্বের জন্য অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাথেরর সাথে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির নের্তৃবৃন্দের পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে, যা বিজ্ঞ আদালতে এখনো বিচারাধীন। সাধারণ বৌদ্ধ জনগণ জানতে চায় আসলে দায়টা কার? নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারের ইতিহাস অনুযায়ী বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির সভ্য মহোদয়ের মামলার কারণে অতীতেও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কারাবরণ করতে হয়েছে। বৌদ্ধ বিহার হতে বিতাড়িত হয়েছে ভিক্ষুসংঘের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন সংগ্রামী সংঘবন্ধু অজিতানন্দ মহাথের, পন্ডিত প্রজ্ঞাবংশ মহাথের, কারাবরণ করেছে এস জ্ঞানপ্রিয় থেরোসহ বহু ভিক্ষু নানাভাবে লাঞ্চনা বঞ্চনার স্বীকার হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির সভ্যবৃন্দের মূলত কাজটা কি? তারা কি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মঙ্গল চায়, নাকি অমঙ্গল চায়। তাদের এ হীনমন্যতার কারণে কেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অপমানের দায়ভার সকল বাংলাদেশী বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বৌদ্ধ জনসাধারণের জন্য তাদের ভূমিকা কি? তারা কি শুধু নাম আর পদের লোভে বৌদ্ধ সমিতি করেন? একজন ভিক্ষুকে এভাবে অপদস্থ করার প্রকৃত ব্যাখ্যা বৌদ্ধ সমিতির কাছে এখন জনগণ জানতে চায়। একজন ভিক্ষু হিসেবে সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় উপদেশ দেওয়া, ধর্ম বাণী শ্রবণ করানো এটি তার দায়িত্ব ও অধিকার। এ দায়িত্ব ও অধিকার পালনে ‍বাধা প্রদান করার ক্ষমতা বৌদ্ধ সমিতি কোথায় পেল সাধারণ জনগণের প্রশ্ন। চট্টগ্রাম নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহার আগত অনাগত ভিক্ষুদের জন্য উৎসর্গীত হয়েছে। দানকৃত এ প্রতিষ্ঠানের মালিক বৌদ্ধ সমিতি হয় কি করে এবং কোন আইন বলে তারা এ অধিকার পেয়েছে? কেনই বা তারা বলে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি কর্তৃক পরিচালিত চট্টগ্রাম নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহার? তাহলে কি বৌদ্ধ বিহারের জায়গা তাদের ক্রয়কৃত সম্পতি? দানকৃত নয়? জনগণ আরো জানতে চায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে কেন ড. জিনবোধি বৌদ্ধ সমিতির সাথে মামলায় জড়িত হলেন। এটি কি তার ভিক্ষুসংঘের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নাকি একঘেয়েমিতা? যদি একঘেয়েমিতা হয় তাহলে তার পবিত্র ভিক্ষু জীবন রইল কিনা। স্বল্প সংখ্যক বৌদ্ধদের মধ্যে এরকম ঘটনা জাতি আশা করে না। মহামান্য সংঘরাজ ধর্মসেন মহাথের ও বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষ‍ু মহাসভা বিরাজমান এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানে এগিয়ে এসে অনতিবিলম্বে বিশ্ববাসীর কাছে বাঙ্গালী বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে এ লজ্জা থেকে মুক্তি দিবে বলে সকলের বিশ্বাস। কারণ বিশ্বে অন্যান্য দেশে অবস্থানরত ভিক্ষুসংঘগণ বাংলাদেশী বৌদ্ধদের এরূপ কর্মকান্ডের জন্য প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, লাওস, কম্বোডিয়া, মায়ানমারসহ বৌদ্ধপ্রদান দেশে বৌদ্ধ বিহার পরিচালিত হয় বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষুদের মাধ্যমে। পরিচালনার সকল ক্ষমতা থাকে তাদের হাত। দায়ক কিংবা গৃহীরা হন শুধুই সেবক। রাজা থেকে শুরু করে কোটিপতিরা বিহার নিয়ে বাঙ্গালী বৌদ্ধদের মত এরূপ বিশৃংখলা করে না। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি ও বাংলাদেশী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবী। শান্তি ও মৈত্রী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের চলমান জীবনে ফিরে আসুক। হিংসা ভুলে মহামতি বুদ্ধের আদর্শে উজ্জ্বীবিত হোক তাদের জীবন এ প্রত্যয় সকলের।
E-mail: rikenlaw2011@yahoo.com
- See more at: http://dhammainfo.com/viewers-writtings/705#sthash.anM94m7r.mPrac2cf.dpuf

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.