ধাতু কথা গ্রন্থের মূল বিষয় বস্তু

  1. **ধাতু কথা গ্রন্থের মূল বিষয় বস্তু আলোচনা করা ?

    উত্তর ঃ সুচনা ঃ অভিধর্মের পিটকের তৃতীয় গ্রন্থ ধাতু কথা। এটি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে লেখা  অভিধর্মের পিটকের ক্ষুদ্রতম গ্রন্থ। আসলে এর প্রকৃত নাম খন্ধ-আয়তন –ধাতু কথা হওয়া উচিত ছিল। কারন এর চতুর্দশ অধ্যায়ে ধম্মা সঙ্গনি ও বিভঙ্গ স্কন্ধ, আয়তন ও ধাতু বিষয়ক আলোচনা আছে। আলোচনা গুলো তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়, যথা- সংগহিত, সম্পযুক্ত ও বিপ্পযুত্ত। এতে পঞ্চস্কন্ধ, দ্বাদশ আয়তন, অষ্টাদশ ধাতু, সপ্ত বোধ্যঙ্গ, চতুরার্য সত্য, পঞ্চবল, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ, চারি ধ্যান ইত্যাদি বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা গেলঃ-

    মূলবিষয়বস্তু ঃ ধাতু বলতে বুঝায় যারা নিজ নিজ স্বভাব ধারন করে। ধাতুকে ভাঙ্গানো যায় না বা অন্য কোন পরিবর্তনও করা যায় না। ধাতু বলতে কোন বস্তুর গুনবাচক অর্ত নির্দেশ করে। তাই প্রকৃত পক্ষে ধাতু বস্তুর শূণ্যতা নির্দেশ করে। আমাদরে দৃশ্যতঃ বস্তু যেহেতু ধাতু নিয়ে গঠিত, পারমার্থিক ভাবে আমি, তুমি, সে, পাহাড়, পর্বত, স্ত্রী, পুরুষ ইত্যাদি শূণ্যতায় নির্দ্দেশ করে। কারণ একমাত্র শাশ্বত এবং অসংস্কৃত নিবার্ণ ব্যতীত ধাতু সর্মহ সকল জড়াজড়ের মৌলিক উপাদান।
        ধাতু সমূহ স্থায়ীভাবে বিদ্যমান থাকে না। কার্য কারণের যথাযথ শর্তগুলি পূর্ণ হলে ধাতু সমূহ এদের নিজস্ব গুনগত স্বভাব প্রর্দশনের জন্য এবং নিজস্ব গুনগত কর্ম সম্পাদনের জন্য উৎপত্তি হয় এবং নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদনের পর নির্দিষ্ট সময়ে নিরুদ্ধ হয়। সুতরাং ধাতু সমূহের উৎপত্তি ও বিলয়ের ব্যাপারে কারও কোন অদৃশ্য হাত নেই এবং কারও দয়া দাখ্ষিন্যের উপর নির্ভর করে না। সে যত ক্ষমতাবান ও শাক্তিশালী হোক না কনে। অন্য কথায় ধাতু সমূহের উৎপত্তিতে কারও সম্পর্ক নেই। কারও পক্ষপাতিত্ব নেই এবং এরা কারও নয়। এদের উদয় বিলয় সম্পূর্নরুপে কার্যকারণের উপর নির্ভরশীল।
        ধাতু মূল পাঠে আমরা দু,টা পর্বে ভাগ করে নিতে পারি। যথা – ১) মাতিকা বা বিষয়সুচী ২) প্রশ্নোত্তরে বিষয়ের বিধম ব্যাখ্যা। মতিকায় আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে শুধৃ পদ্ধতি ও বিষয় দৌয়া হয়েছে, তা নয় মাতিকায় ভিত্তি ও নিহিত আছে। এখানে ৫ টা ভাগ আছে। যথা উপদেশ বা পদ্ধতি ২) আলোচ্য বিষয়ের অভ্যন্তর মাতিকা ৩) পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য ৪) পদ্ধতির লক্ষণ সমূহ ও ৫) আলোচ্য বিষয়ের বাহির মাতিকা।
    ১)    উদ্দেশ বা পদ্ধতি ১৪ প্রকারে উল্লেখ করে প্রশ্নোত্তরে মাধ্যমে পরবর্তী পর্যায়ে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।
    ২)    অভ্যন্তর মাতিকার আলোচ্য বিষয় ১০৫টি। বিভঙ্গ নামক গ্রন্থে এ বিষয় গুলোর আলোচনা এলোমেলো এবং বিক্ষিপ্ত। তাই ধাতুকথায় এদের একত্রিত করে অভ্যন্তর মাতিকা নামে অভিহিত করা হয়েছে। অভ্যন্তর মাতিকায় সর্ব চিত্ত সাধারণ চৈতচিকের সাদটা স্পর্শগুচ্ছ হতে জীবিতেন্দ্রিয় ও একাগ্রতাকে বাদ দিয়ে চিত্ত ও অধিওমাক্ষকে এই স্পর্শ গুচ্ছে অর্ন্তভ’ক্ত করা হয়েছে। কারণ জীবিতেন্দ্রিয় শুধু রুপীয় জীবনে দরকার এব একাগ্রতা সকল এিত্ত অর্ন্তভ’ক্ত নেই। চ্তি ে অধিমোক্ষ স্বন্ধ, আয়তন ও ধাতু শ্রেণীকরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
    ৩)    পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হচ্চে- ক) স্কন্ধ, আয়তন ও ধাতুর সাথে শ্রেণীকরণ করে আলোচ্য বিষয়গুলো শ্রেণীভ’ক্ত ও শ্যেণী বর্হিভূত করে দেখানো। আলোচ্য বিষয় অন্য কোন বিষয়ের সহিত শ্রেণীকরণ করা হয়নি। খ) াালোচ্য বিষয় গুলো চার প্রকার অপরুপী স্কন্ধের সাথে সম্পযোগে ও বিপ্রযোগে দেখানো হয়েছে। একানে রুপ স্কন্ধ ও নির্বাণ সম্পযোগে ও বিপ্রযোগে বিবেচনা করা হয়নি। কারণ এরা পরস্পর সম্প্রযুক্ত ও নয় এবং বিপ্রযুক্ত ও নয় এবং চার অরুপীয় স্কন্ধ সব সময় বিপ্রযুক্ত।
    ৪)    পদ্ধতির লক্ষণ সমূহ আলোচ্য বিষয়ের স্কন্ধ, আয়তনে ও ধাতুতে শ্রেণীকরণ করা যায় কিনা দেখানো হয়েছে। যেমন- চক্ষু াায়তন এবং শ্রোত্রায়তন রুপ স্কন্ধের সহিত শ্রেণীভূক্ত এবং শ্রেণীকরণে একই লক্ষণ সমূহ বিদ্যমান। সুখ বেদনা ও দুঃখবেদনা বেদনাস্কন্ধের সহিত শ্রেণীভূক্ত এবং শ্রেণীকরণে একই লক্ষণ সমূহ বিদ্যমান। কিন্তু চক্ষ আয়তন ও সুখ বেদনা একই শ্রেণীভূক্ত নয় এবং এদের লক্ষণ সমূহও একেই নয়। তাছাড়া একই সঙ্গে উৎপত্তি, একই সঙ্গে নিরোধ, একই অবলম্বনে স্থিতি এবং একই ভিত্তিতে অবস্থান ইত্যাদি চার লক্ষণে সম্প্রযোগ আছে কিনা দেখানো হয়েছে।
    ৫)    বাহির মাতিকায় ধর্মসঙ্গনীর ২২টি তিক এবং ১০০টা দুক ধাতুকথায় আলোচ্য বিষয় হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

    পরিশেষে বলা যায় যে, প্রশ্নোত্তরে বিষয়ের বিশদ ব্যাখ্যার উদ্ধেশ্য হচ্ছে অভিধর্মে পরমার্থ সত্যের দ্বারা বস্তুনিরপেক্ষ গুণাবলী প্রকাশিত করে এদর বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া এবং যক্তি পূর্ব আলোচনা করা। ধাতুকথায় ও বিষবস্তুর গুণাবলীস্কন্ধ, আয়তন ও ধাতুতে শ্রেণীভূক্ত করে দেখানো হয়েছে। এখানে সুত্ত পিটকের মত প্রচলিত ভাষায় সত্ত্ব, প্রাণী, স্ত্রী, পুরুষ, আমি, তুমি, পাহাড়, পর্বত ইত্যাদি বর্ণনাতœক আলোচনা নেই। অভিদর্ম দতে এ গুলো জড়াজড়েন কতগুলো শব্দ মাত্র। প্রকৃত পক্ষে এদের কোন অস্তিত্ব নেই। জড় পদার্থ ৮টি অবিনিভাজ্য রুপ নিয়ে গঠিত এবং অজড় বা প্রাণী সমূহ নামরুপ বা পঞ্চোপাদান স্কন্ধের সমষ্টি মাত্র। জগতের বেশীন ভাগের লোকেরা এরুপ বিকৃত ধারণা বা অন্ধ বিশ্বাস বা মত পোষণ করে যে বস্তুর একটা পৃথক অস্থিত আছে এবং সেরুপ প্রাণীদের ও একটা পৃথক সত্বা বা অস্তিত্ব আছে। তারা সেভাবে চিন্তা করে, কথা বলে ও কাজ করে। তাই তাদের ধারনা জন্মে যে দেহের ও মনের কাজ করার জন্য একটা পৃথক অস্থিত্ব আছে এবং সকল কাজরে জন্য কারক ্র রয়েছে। তাই তারা প্রকৃত সত্য উপলদ্ধি করতে পারে না এবং তাদের এই পৃথক অস্থিত্বকে আতœা বলে র্ভল করে। ধাতু কথায় মানুয়ের এ ভূল ধারণাকে দুরীভূত করার জন্য ভগবান বুদ্ধ বলেছেন যে কেবল মাত্র স্কন্ধ আয়তন এবং দাতু ছাড়া প্রকৃত পক্ষে ব্যক্তি বা বস্তু বলতে কিছুর অস্থিত্ব নেই।
     সাধনাজ্যোতি ভিক্ষু
    বি, এ (অনার্স), এম, এ. এম, এড.

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.