অভিধর্ম পিটকের অর্ন্তগত গ্রন্থ গুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয়


 
 অভিধর্মের সংজ্ঞাঃ অভি উপসর্গের সঙ্গে “ধর্ম) শব্দটি যোগা করে অভিধর্ম শব্দটি গঠিত হয়েছে। “অভি” উপসের্গের অর্থ অতি বা অতিকতর এবং ধর্ম শব্দের অর্থ চিন্তনীয় বিষয়। সুতরাং অভিধর্মের অর্থ অতিরিক্ত ধর্ম বা অতিকতর ধর্ম।
আচার্য বুদ্ধঘোষ অভিধর্মের অর্থ করেছেন, ধম্মাতিরেক ধম্ম বিস্সেত্থেন অভিধম্মো, অর্থাৎ ধর্মের অতিরিক্ত অভিধর্ম। প্রকৃত পক্ষে ধর্ম ও অভিধর্মের আলোচ্য বিষয় প্রায় একরুপ। যখন পালি শাস্ত্রে ত্রিপিটক রুপে শ্রেণীর বিন্যাস হয়নি, তখন বুদ্ধ বচনকে অর্ন্তভূক্ত ধমৃ বিনয় বলা হত। এখানে ধর্ম বলতে সুত্র পিটকে অর্ন্তভূক্ত সুত্রগুলোর মধ্যে প্রতিত্য সমুৎপাদ, আর্যসত্য স্মৃতিপ্রস্থান, সপ্তবোধ্যঙ্গ, নির্বাণ ইত্যাদি বুদ্ধের ধর্মতত্ত্বকে বুঝায়। উপরোক্ত ধর্মত্ত্ব গুলো অভিধর্মের ও আলোচ্য বিষয়। বিষয় বিন্যাস ও ব্যাখ্যা কুশলতা ব্যতীত উভয়ের তেমন কোন পার্থক্য নেই।
অভিধর্মের নামকরণের কারণ সুত্তপিটকে যা উপমা, কাহিনী এমনকি গাথার সাহায্যে সরস ভঙ্গিতে বর্ণিত ও ব্যাখ্যাত হয়েছে। অভিধর্ম পিটকে উক্ত বিষয় গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে বিশেষভাবে বিভাজন বা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সে জন্য অভিধর্ম পিটক সুত্রপিটকের তুলনায় নীরস ও পান্ডিত্যপূর্ণ হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ের বিশ্লেষণ ও শ্রেণী বিন্যাস অর্ভিদর্ম পিটকের একটি বৈশিষ্ট্য। অভিধর্ম পিটক প্রশ্নোত্তরে পদ্ধতিতে রচিত হয়েছে। মধ্যম নিকায় ও অঙ্গুত্তর নিকায়ে কতিপয় সুত্রে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির মাধ্যমে ও ধর্মতত্ত্ব সুত্র পিটকে শীরধর্ম ও দার্শনিক তত্ত্বের যে তালিকা পাওয়া যায় অভিধর্মপিটকে সে তালিকার বিশদ ও পরিবর্ধিত রুপ পাওয়া যায়। বৌদ্ধ ঐতিহ্যে সুত্রকে অভিধর্মের ভিত্তি বলা যায়।

অভিধর্মের শ্রেণী বিভগ ঃ অভিধর্ম পিটকে সাতটি খন্ড রয়েছ্ েসে গুলো হল- ১) ধম্মসঙ্গণি ২) বিভঙ্গ ৩) ধাতুকথা ৪) পু¹লপঞ্ঞত্তি ৫) কথাবত্থু ৬) যমক ৭) পট্ঠান। এ গ্রন্থ গুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা গেল ঃ
১)    ধম্মসঙ্গণি ঃ ধম্মসঙ্গণি শব্দের অর্থ ধর্মের সংক্ষিপ্ত দেশনা। এতে কামাবচর, রুপবচর, ইত্যাদি মানসিক ও বাহ্যবস্তু সমূহের অবস্থাগুরোর সংগ্রহ ও সংক্ষেপ করে আলোচনা করা হয়েছে। ধম্মসঙ্গণির আলোচ্য বিষয়কে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- ক) চিত্ত চৈতসিকের পরিচয় খ) রুপ বা জড় পদার্থের পরিচয় গ) পূর্বোক্ত বিষয়ের সার নিক্ষেপ।
২)    বিভঙ্গ ঃ বিভঙ্গ বিষয়বস্তু দিক দিয়ে দর্ম সঙ্গণির সমগোত্রীয় হলেও এর রচনা পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক কথায় বিভঙ্গকে ধর্মসঙ্গণির পরিপুরক ও ধাতু কতার মূলভিত্তি বলা যায়। বিষবস্তু বিচারে বিভঙ্গকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ক) সুত্রবাজনীয় খ) অভিধম্ম বাজনীয় গ) পঞ্ঞাপুচ্ছ। গ্রন্থটি অবশ্য আটারটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
৩)    ধাতুকথা ঃ ধাতুকথা শব্দের অর্থ ধাতু সম্পকীয় কথা। এটি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে লেকা অভিধর্ম পিটকের ক্ষুদ্রগ্রন্থ। এর প্রকৃত নাম হওয়া উচিত ছিল খন্ধ আয়তন ধাতুকথা। কারণ এর চর্তুদ্দশ অধ্যায়ে ধর্ম সঙ্গনির ও বিভঙ্গের স্কন্ধ, আয়তন ও ধাতু বিষয়ক আলোচনা আছে। আলোচ্য বিষয় গুলো তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- সংগহিত, সম্পযুক্ত, বিপ্পযুক্ত। এতে পঞ্চস্কন্ধ, দ্বাদশ আয়তন, অষ্টাদশ ধাতু ইত্যাদি বিষয়ক বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
৪)    পু¹লপঞ্ঞত্তি ঃ পু¹লপঞ্ঞত্তি শব্দের অর্থ যে পুস্তক পু¹ল বা ব্যক্তি বিশেষের পরিচয় প্রদান করে। গ্রন্থে প্রথমে স্কন্ধ, আয়তন, ধাতু, সত্য, ইন্দ্রিয় এবং পুদ্গল এ ছয় প্রকার প্রজ্ঞপ্তির  উল্লেখ আছে এবং এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রকার পুদগলের একটি দীর্ঘ তালিকা দেওয়া হয়েছে। তারপর একবিধ পু¹ল, দ্বিবিধ পু¹ল এভাবে দশবিধ পুদ্গলের দশটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
৫)    কথাবত্থু ঃ কথাবত্থু বৌদ্ধ দর্শন সম্পর্কীয় তর্কশাস্ত্র বিশেষ বলা যায়। খৃষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে বুদ্ধগোষ ২৩টি অধ্যায়ে কথাবত্থুর উপর ভাষ্য গ্রন্থ রচনা করেছেণ। প্রত্যেক অধ্যায়ে ৮ হতে ১২টি প্রশ্ন এবয় উত্তর দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নগুলো সাধারণত বিধি প্রকার জটিল মিথ্যাদৃষ্টি সম্পর্কীয়। কথিত আছে, সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে অনুষ্টিত তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতির শেষদিকে সম্মেলনের সভাপতি মো¹ণিপুত্ত তিস্স স্তবির বিভজ্জবাদ বা থেরবাদ প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে কথাবত্থু প্রন্থ রচনা করেন।
৬)    যমক ঃ যমক শব্দের অর্থ যুগ্ন বা জোড়া। এ গ্রন্থে প্রক্যেকটি অধ্যায়ে স্বপর্ক্ষীয় ও প্রতি পক্ষীয় প্রশ্ন ও উত্তর যুগ্ম ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে এর যমক নামকরণ করা হয়েছে। এটি দশটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। যথা- মূল যমক, সংখারা যমক, অনুসয় যমক, চিত্ত যমক, ধম্ম যমক ও ইন্দ্রিয় যমক।
৭)    পট্ঠান ঃ পট্ঠান শব্দের অর্থ প্রধান কারণ বা প্রকৃত কারণ। নাম রুপের যাবতীয় ব্যাপারের পরস্পর সম্পর্ক বা কারণ নির্ণয় এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ২৪ প্রকার প্রত্যয়। যার সহায়তায় কোন কার্য সম্পন্ন হয়, ঘটনা সংগটিত হয়, ফল উৎপাদিত হয় তাই ঐ কার্য ঘটনা বা ফলের প্রত্যয়। সুতরাং এই অর্থে প্রত্যয় সাহায্য কারক বা উপকারক রুপে ব্যবহুত হতে পারে।

অতএব বলা যায় যে, অভিধর্ম পিটকের মূল আলোচ্য বিষয় চিত্ত, চৈতসিক, রুপ, নির্বাণ। এ চারটি বিষয় অভিধর্ম পিটকে পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে আলোচনা করা হয়েছে। এককথায় সুত্রপিটকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

-    সাধনাজ্যোতি ভিক্ষু
বি,এ (অনার্স) এম, এ. এম, এড

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.