তথাগত কর্তৃক সিংগালোবাদ সূত্রের সেই উপদেশ কিভাবে বর্তমানকালে অতি প্রাসঙ্গিক সে সম্পর্কে আলোচনা
তথাগত কর্তৃক সেই উপদেশ কিভাবে বর্তমানকালে অতি প্রাসঙ্গিক সে সম্পর্কে আলোচনা করাই এই লেখার উদ্দেশ্য। ধার্মিক গৃহীর বর্জিত চার প্রকার কলুষ কর্ম তথাগত বুদ্ধ সিংগালোবাদ সূত্রের প্রারম্ভে বলছেন, যাঁরা আর্যশ্রাবক বা ধার্মিক গৃহী তারা চার প্রকার খারাপ কর্ম করেনা। যথা-
১. প্রাণী হত্যা,
২. চুরি,
৩. ব্যভিচার ও
৪. মিথ্যাকথা।
৫. নেশা দ্রব্য পান না করা।
২. চুরি বা চৌর্যবৃত্তি:
চুরি বা অদত্ত দ্রব্য হরণ বলতে অপরের অদত্ত দ্রব্য গ্রহণ বা কাউকে প্ররোচনা দিয়ে গ্রহণ করানো, সম্মতি দেয়া ও উৎসাহ দেয়া। চুরি, ছিনতাই, লুটতরাজ ইত্যাদি ঘটনাগুলো বিশ্বজুড়ে হরহামেশাই ঘটছে। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অনেক মানুষ চুরি জাতীয় ঘটনার কারণে পথে বসছে। যাদের অনেক আছে তাদের সম্পদ যদি চুরি হয় তবু তারা তা সামলে নিতে পারে, কিন্তু যারা হতদরিদ্র তাদের ‘হাতের পাঁচ’ যা কিছু আছে তাই যদি চুরি-ডাকাতি বা ছিনতাই হয় তবে তাকে তো পথে বসতেই হয়। মানবিক দৃষ্টিকোণ হতে বিষয়টি কতই ঘৃণ্য তা একটু অনুধাবন করলেই বোঝা যায়।(এখানে ধনীদের সম্পদ চুরির ক্ষত্রে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে তা কিন্তু নয়, চুরি চুরিই তা ধনীদের হোক আর গরীবদের হোক, কমদামী জিনিস হোক আর বেশদামী জিনিস হোক) চুরির দরুণ লোকনিন্দার মুখোমুখি হতে হয়, সমাজে চোর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে, ভাল মানুষ তার সাথে চলাফেরা করে না, যারা চলাফেরা করে তাদের প্রতিও স্বাভাবিক ভাবেই লোকেদের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়, ভাল বন্ধুরা পরিত্যাগ করে, তাকে কেউ বিপদাপদে অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা দেয় না, মান- সম্মান ধুলায় লুটায়, ঘৃণিত হতে হয়, জেল জরিমানা ইত্যাদি বিবিধ শাস্তি পেতে হয়। দেশ-বিদেশের বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ও ছোট কোম্পানিরাও ব্যাংক হতে ঋণ নিয়ে ঋণ খেলাপি করছে অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত ভাবে এবং প্রদত্ত ঋণের টাকাগুলো সাধারণ মানুষের, যা বিরাট চুরির পর্যায়ে পড়ে। মাঝে মাঝে সরকারও এদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে যা চুরিকে প্রশ্রয় দেয়ার শামিল এবং এ কারণে সরকারের জনপ্রিয়তায়ও ধ্বস নামে। আবার ধনী লোকেরা গরীবদের অর্থ আতœসাৎ করছে, বিভিন্ন শিল্প-পুঁজিপতিরা শ্রমিকদের প্রাপ্য সঠিক ভাবে না দিয়ে উদ্বৃত্ত মূল্য নিজেরা আতœসাৎ করছে, বিশ্বে বড় বড় বেশ কিছু দেশ অপর অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশের তেল-গ্যাসসহ বিভিন্ন সম্পদ লুণ্ঠন করছে, গরীব-ধনী, বিজ্ঞ-অনভিজ্ঞদের থেকে অনেক সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ নিচ্ছে, বাধ্য হয়ে ঘুষ দিতে গিয়ে অনেক মানুষকে সর্বস্ব বিকিয়ে দিতে হচ্ছে। অনেক আমলাদের ঘুষ না দিলে ফাইল ‘লাল ফিতায়’ আটকা পড়ছে, যত্রতত্র মাৎসান্যায়াবস্থা। বিভিন্ন প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন দুর্নীতির আখড়া, বিশেষতঃ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের মূল স্তম্ভ আদালতের(‘আদালত’ বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ন্যায় বিচারের মূল স্তম্ভ) প্রতিটি ইটও নাকি ঘুষ খায়। বাংলাদেশের আদালত হতে কাস্টম, স্বাস্থ্য সেবা খাত হতে শিক্ষা খাত প্রভৃতি ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও ঘুষের কারণে মানুষ অহরহ দুর্বিষহ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভেঙে যাচ্ছে পরস্পর পরস্পরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের জোড়া। চুরি হতে নিজেকে বিরত রাখতে পারলে পরসম্পদ যেমন রক্ষিত হবে তেমনি নিজের সম্পদও রক্ষা পাবে। ঘুষের কারণে কোন উপযুক্ত প্রার্থীর চাকরী বন্ধ হবে না, পদোন্নতি বন্ধ হবে না, অযোগ্য লোকরা নিয়োগ পাবার সম্ভাবনা কমে যাবে, দেশে দেশে তেল গ্যাস বা অন্যান্য দ্রব্যের কারণে যুদ্ধাবস্থা কমে যাবে, অর্থনৈতিক বৈষম্য নির্বাসনে বা যাদুঘরে যাবার পথ সৃষ্টি হবে। ধন-ধান্য ও ভোগসম্পদ রক্ষিত হবে, অলব্ধ সম্পদ অর্জন হবে, মানুষ বা প্রাকৃতিক কারণে সম্পদ নষ্ট হবার সম্ভাবনা কমে যাবে, এবং প্রত্যেকেই নিতে পারবে ব্যক্তিক-সামাজিক-রাষ্ট্রিকভাবে স্ব-নির্ভরতার উদ্যোগ। বিশ্বব্যাপী সৃজন হবে সৌভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যরে বাতাবরণ।
No comments
Post a Comment