করোনাভাইরাসের কারণেই কি খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তি?
বাংলাদেশে সরকারের আকস্মিক সিদ্ধান্তে বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন।
সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারিতে বাংলাদেশেও যখন উদ্বেগ আতংক রয়েছে, তখন ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে তাঁকে মুক্তি দেয়া নিয়েও নানা আলোচনা চলছে।
করোনাভাইরাস নিয়ে দেশের পরিস্থিতি এবং এই মুক্তির মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতাদের অনেকে।
তবে সরকার বলছে, খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে বলেছেন, আন্দোলন বা বিএনপির কোনো কৃতিত্ব ছাড়াই সরকার সদয় হয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে। তারা বলছেন, তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে সরকার এই সময়টাকে সুবিধাজনক বলে মনে করেছে।
রাজনৈতিক চাপ ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে যখন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অনেকে অবাক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার কাছেও এটি আকস্মিক বিষয় ছিল।
তবে গত কয়েকদিনের কিছু ঘটনার যোগসূত্র মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন অনেকে।
তিনদিন আগে খালেদা জিয়ার ভাই এবং বোনসহ পরিবারের তিনজন সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলেন।
পরদিনই বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলন করে এখন করোনাভাইরাসের দুর্যোগ পরিস্থিতিতে মিসেস জিয়ার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় তাঁর মুক্তি চেয়েছিলেন।
এর একদিন পরই সরকারের পক্ষ থেকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং তাদের আইনজীবী ফোরামের অন্যতম নেতা মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেছেন, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি এবং ঝুঁকি নিয়ে তারা যে বক্তব্য তুলেছিলেন, অন্যান্য বিষয়ের সাথে সেই বক্তব্যও সরকার বিবেচনায় নিয়েছে বলে তারা মনে করেন।
"করোনাভাইরাস বিশ্বে মহামারি হয়েছে এবং বাংলাদেশেও ছড়িয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে উনার বয়স ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি তাঁকে মুক্তি দেয়ার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হতে পারে বলে আমরা মনে করি।"
খালেদা জিয়া জেলে থাকার দুই বছরেরও বেশি সময়ে তাঁর মুক্তির জন্য বিএনপি বড় কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। আইনগত পথেও সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত তার ভাই শামীম ইসকান্দার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে নির্বাহী আদেশে মুক্তি চেয়ে আবেদন করেছিলেন গত ১০ই মার্চ।
খালেদা জিয়ার মুক্তির পর তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম বলেছেন, তাদের আবেদনের পাশাপাশি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তার মুক্তির বিষয়টি তরান্বিত করেছে বলে তারা মনে করেন।
"আমরা খুশি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আর ওঁর শরীরিক অবস্থা এতই খারাপ যে এখন বাসায় থেকেই চিকিৎসা চলবে।"
তিনি আরও বলেছেন, "সরকার হয়তো মনে করেছে, বয়স্ক মহিলা এবং এই সময়ে তার হাসপাতালে থাকা ঠিক হবে না। কারণ হাসপাতালে এখন ভাইরাস সমস্যা হয়। যদি কোনো কিছু হয়, তখন দায়িত্ব তো ওনাদের নিতে হবে। এটাও একটা কারণ হতে পারে।"
আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি নেত্রীর মুক্তির ব্যাপারে তার ভাইবোনরা সরকারের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন। এখন শর্ত সাপেক্ষে সরকার সদয় হয়ে মুক্তি দেয়ায় বিএনপির জন্য এটি 'বড় দূর্বলতা' হিসাবে চিহ্নিত হবে এবং এটি সরকারকে রাজনৈতিক 'সুবিধা' দেবে।।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মিসেস জিয়ার পরিবারের তাগিদ এবং সরকারের সদয় হওয়ার বিষয়কেই তুলে ধরেছেন।
"বেগম খালেদা জিয়ার ভাই একটা আবেদন দিয়েছিলেন। এরমধ্যে ইনসিডেন্টালি করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি বা করোনাভাইরাস বিবেচনা করে মতামত দেয়া হয় নাই। প্রথমত বয়স, দ্বিতীয়ত মানবিক কারণ এবং সরকার সদয় হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী সাজা ৬মাস স্থগিত করে মুক্তি দেয়া হয়েছে," বলেন তিনি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সর্ম্পকিত দু'টি দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া কারাভোগ করছিলেন। তার এই সাজা এখন ছয় মাস স্থগিত থাকবে।
তথ্যসূত্র :বিবিসি বাংলা, ঢাকা
No comments
Post a Comment