করোনাভাইরাস: সংক্রমণ ভীতিতে ভারতে অনেক সংবাদপত্র ছাপা বন্ধ
করোনাভাইরাস ভীতিতে বিক্রি কমতে থাকায় কলকাতার বেশ কিছু পত্রিকা আপাতত তাদের ছাপা সংস্করণ বন্ধ করে দিয়েছে
শুধু কাগজ দোষী নয়? সংবাদপত্র থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটা? জানতে চেয়েছিলাম কলকাতায় অবস্থিত অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন এন্ড পাবলিক হেল্থ-এর পরিচালক মধুমিতা দোবের কাছে। "সংক্রমণ ছড়ানোর একটা সম্ভাব্য মাধ্যম সংবাদপত্র ঠিকই। কিন্তু আলাদা করে শুধু কাগজের ওপরে জোর দেওয়াটা ঠিক নয়,'' তিনি বলেন। ''সংক্রমিত রোগীর ড্রপলেট শুধু কাগজ কেন দরজার হাতল, চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার সহ অনেক জায়গাতেই পড়তে পারে। এখানে শুধু কাগজের ওপরে জোর না দিয়ে ওই সবকটি জিনিস হাতের সংস্পর্শে আসার পরেই হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা দরকার," মধুমিতা দোবে বলেন। অর্থাৎ, সংবাদপত্র থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই, তা নয়। তবে শৈবাল দাশগুপ্ত মনে করেন কারেন্সি নোট বা প্যাকেট বন্দি খাবারের থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। "জানি ওসব থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তবুও যতটা সম্ভব সংক্রমণ বাড়িতে ঢোকার পথ তো বন্ধ করতেই হবে,'' তিনি বলেন। ''আর কাগজও যেহেতু একটা সম্ভাবনা, তাই সেটাকে আপাতত বন্ধ রেখেছি। আর খবর জানার জন্য ওই সব কাগজের ইন্টারনেট সংস্করণ তো আছেই," শৈবাল দাশগুপ্ত বলেন। আর এই একই ভয় থেকে বহু মানুষ নিজেরাই কাগজ দিতে বারণ করে দিয়েছেন হকারদের। ফলে, হু হু করে কমছে কাগজের সার্কুলেশন।
হকারদের উদ্বেগ
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সোদপুর শহরের এক বড় সংবাদপত্র বিক্রেতা দীননাথ সিংহ রায়। তিনি বলছিলেন, কাগজ বন্ধ হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে, শুধুই যে পাঠকের ভয়, তা নয়। ''ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলেও আমরা যে কাগজ আনতে পারছি না কলকাতা থেকে, সেটাও একটা কারণ, তিনি জানান। ''আবার যে হকাররা বাড়ি বাড়ি কাগজ দেন, তিনিও এই লকডাউনের মধ্যে বাড়ির বাইরে বেরুতে সাহস পাচ্ছেন না। রাস্তায় লোক নেই, তাই পথ-চলতি মানুষ যে সংখ্যক কাগজ কিনতেন, সেটা অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে। আমরা তাই কাগজ নিয়ে এসে জমিয়ে রেখে কী করব," মি. সিংহ রায় বলেন। কয়েকটি সংবাদপত্র গোষ্ঠী এজেন্ট এবং হকারদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে গ্লাভস দিয়েছিল। তবে মি. সিংহ রায় বলেন যে ওই গ্লাভস একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিতে হয়।
বর্তমান পত্রিকার প্রকাশক জীবানন্দ বসু বলছিলেন, শুক্রবার থেকে তারা আবারো ছাপা শুরু করার পরিকল্পনা করেছেন।"কাগজের বিতরণ ব্যবস্থা ভীষণভাবে মার খাচ্ছে। সেজন্যই বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি আজ। কিন্তু এরমধ্যেই আমাদের কাছে এজেন্টরা যে খবর পাঠিয়েছেন, তাতে অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে,'' তিনি বলেন।''সেজন্য শুক্রবার আমরা আবার কাগজ ছাপব। এরকম একটা কঠিন সময়ে বর্তমান পত্রিকা গোষ্ঠী মনে করে যে সাধারণ মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ খবর, তথ্য পৌঁছিয়ে দেওয়াটা একটা গুরুদায়িত্ব," মি. বসু বলেন।আজকাল পত্রিকাও বলছে তারাও শুক্রবার কাগজ ছাপবে। তবে মুম্বাইয়ের সংবাদপত্রগুলি পয়লা এপ্রিলের আগে কাগজ ছাপবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তথ্যসূত্র: অমিতাভ ভট্টশালী, বিবিসি বাংলা, কলকাতা, ২৬ মার্চ ২০২০

No comments
Post a Comment