কুমিল্লায় গোমতি নদীর পাড়ে অমৃতানন্দ নামে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যা

 
নিহত ভিক্ষুটির নাম অমৃতানন্দ ভিক্ষু । গতকাল ২৫ আগস্ট, ২০১৯ তারিখে কুমিল্লা, রেল লাইন গোমতি নদীর পাড়ে এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর লাশ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যার আলামত সংগ্রহের জন্য লাশটি পোস্টমর্টেম'র জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, চলিত বর্ষাবাসের আগে চট্টগ্রামে, দক্ষিন চাঁনগাও স্বধর্ম রত্ন বৌদ্ধ বিহারে থাকতো। কিন্তু বর্ষাবাসের শুরুতে সেখান থেকে চলে গিয়ে ফেনীতে কোন একটা বৌদ্ধ বিহারে বর্ষাবাস যাপন করেছে। ভোটার কার্ড তথ্যমতে ভিক্ষুটির ঠিকানা গ্রাম: বিজিতলা, খাগড়াছড়ি সদর,জেলা : খাগড়াছড়ি বাসিন্দা। কিন্তু এটি তার আসল ঠিকানা নয়। সে বুদ্ধগয়া তীর্থ ভ্রমণে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে ভোটার আইডি কার্ডে উক্ত ঠিকানা ব্যবহার করেছে। তার আসল বাড়ী শিজক দোর, মারিশ্য উপজেলায়। লাশটি নিয়ে আসার জন্য ভদন্ত সুগতলংকার স্থবিরের নেতৃত্বে পার্বত্য ভিক্ষুসংঘের একটি টিম কুমিল্লায় অবস্থান করতেছেন।
জানা যায় তিনি বৌদ্ধ তীর্থস্থান ভারতে বুদ্ধগয়া ভ্রমণের উদ্দেশ্য প্রস্তুতির জন্য আনুসাঙ্গিক কিছু কাজ ছেড়ে নিতে ঢাকায় গিয়েছিলেন। Kalito bhante ফেইচবুকের ভাষ্য অনুযায়ী সে ২৪ আগস্ট সকাল ৯ টার দিকে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে আসেন এবং এখানে থাকার জন্য একটা গেস্ট রুমের চাবি নেন। তার সাথে আমার আগে কোনো পরিচয় হয়নি। আমাকে দেখে কুশল বিনিময় করার পর তার সাথে পরিচয় হলাম। দরজা খুলে দিয়ে গেস্ট রুমে দিয়ে আসলাম। রুমে গিয়ে দুজনে কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা কথাবার্তা বললাম। তারপর আমি বাইরে গেলাম। তাকে দুপুরে খাওয়ার জন্য ডাইনিং হলে যাওয়ার জন্য বলে গেছি। তিনি বলেছিলেন চাদগাও একটা বিহারে ছিলেন বর্তমানে ফেনী একটা বিহারে অবস্থান করছেন। বিকাল বেলা ৪টার দিকে নিচে নেমে এসে আমাকে বলল, আমি চলে যাচ্ছি। তারপর নিচে গিয়ে শ্রদ্ধেয় বড় ভান্তের থেকে অনুমতি নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছিল। তিনি মনে হয় ট্রেন যোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য যাচ্ছিলেন। ভাগ্যর কি নির্মম পরিহাস তিনি আজ লাশ হয়ে কুমিল্লার গোমতী নদীর পাড়ে কে বা কারা হত্যা করে রেখে চলে যায়। আজ সকাল বেলায় তার লাশ পাওয়া যায়। এটি কোনভাবে এক্সিডেন্ট নই তার শরীরের রহস্যজনক ভাবে কিছু আঘাতের দাগ দেখা যাচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধম্য রহজ্যজনক মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

Sugatalankar bhante ঘটনা স্থল থেকে জানিয়েছেন, আমরা বর্তমানে কুমিল্লায় আছি। গতকাল রাত বেশি হওয়ায় আপডেট দেওয়া সম্ভব হয়নি সেজন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা প্রায় রাত ১২ টা নাগাদ নিম্নে উল্লেখিত বিহারে পৌঁছেছি এবং আমাদেরকে রিসিভি করেন এখানে অবস্থান করা কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবী ও পাহাড়ী পুলিশ সদস্য। আমরা উনাদের সাথে এবং এখানে অবস্থান করা ভান্তেদের সাথে দীর্ঘক্ষণ প্রয়াত অমৃতানন্দ ভিক্ষু মহোদয়ের ব্যাপারে আলোচনা করেছি এবং এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রয়াত ভিক্ষু মহোদয় মৃত্যুর একদিন আগে ঢাকা ধর্মরাজিক মহাবিহারে অবস্থান করেছিলেন। মূলত তীর্থভ্রমনে বুদ্ধগয়ায় যাওয়ার জন্যই কিছু কাজে তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন। মৃত্যুর দিন তিনি রাত ৯ টায় রাজধানী ট্রেনে ঢাকা থেকে ফেনির উদ্দেশ্যে ( যেখানে তিনি বর্ষাব্রত অধিষ্ঠান করেছিলেন) রওনা হন এবং পরদিন সকালেই কুমিল্লার গোমতি নদীর পাড় থেকে তাঁর রক্তাক্ত মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এবং মাথায় বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তাঁর মৃত্যু কোনমতেই স্বাভাবিক ছিলনা। তাঁকে কি কারনে হত্যা করা হলো তা তদন্তের বিষয় এবং এধরনের অস্বাভাবিক মৃত্যু কারও প্রত্যাশিত নয়। অত্যন্ত সুকৌশলে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। একজন নিরপরাধ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে এভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে, বাংলাদেশে আমরা কেউ নিরাপদ নয়। দেশে এর আগেও বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হয়েছে এবং সর্বশেষ বলি হলেন অমৃতানন্দ ভিক্ষু মহোদয়। এ মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই এবং অতিসত্বর সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যাকান্ডের আসল রহস্য উন্মোচন সহ অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা হোক। ভান্তের মরদেহ বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছে এবং আজ সকালে পোস্ট মর্টেম করার পরে আমাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। 
 

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.