রাঙামাটির নানিয়ারচর: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রামবাসীর চাঁদায় শ্রেণিকক্ষ!

ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত। অবশেষে গ্রামবাসীর চাঁদায় তৈরি হলো শ্রেণিকক্ষ। ছবিটি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের মাইচছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলোঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত। অবশেষে গ্রামবাসীর চাঁদায় তৈরি হলো শ্রেণিকক্ষ। ছবিটি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের মাইচছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
মাইচছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় ২০১২ সালে। এরপর কেটে গেছে চার বছর। এখনো নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই গ্রামবাসী নিজেদের চাঁদায় নির্মাণ করে দিয়েছে শ্রেণিকক্ষ। টিন আর বেড়ার এই শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়টির অবস্থান রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে।
শিক্ষকেরা জানান, তিন কক্ষের বেড়ার ঘরে শিক্ষার্থীরা কোনো রকমে বসতে পারে। তা–ও বর্ষা মৌসুমে আতঙ্কে থাকতে হয়। বেশ কয়েকবার চালা উড়ে গেছে। নড়বড়ে হয়ে গেছে খুঁটি। এদিকে কোনো উপায় না থাকায় পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষ শিক্ষক মিলনায়তন হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে মাইচছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন কক্ষের ভবন নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। কিন্তু তিন বছর না যেতেই ভবনের ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়তে শুরু করে। এরপর ২০০৯ সালের দিকে ভবনটি পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ওই বছর ছাদের পলেস্তারা খসে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে ভবনের এই অবস্থার কথা লিখিতভাবে জানানো হয়। এরপর আরও দুই বছর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলে। ২০১২ সালে শিক্ষা কার্যালয় ও এলজিইডির কর্মকর্তারা যৌথভাবে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরিত্যক্ত ভবনটি ভেঙে পড়া বাকি আছে। ভবনের অধিকাংশ পিলার ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দরজা-জানালা ভাঙা। তিনটি কক্ষের মধ্যে একটিতে শিক্ষকেরা বসেন। পাশের বেড়ার ঘরে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের পিলার ভেঙে বেরিয়ে এসেছে রড। উঠে গেছে পলেস্তারা l প্রথম আলোবিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের পিলার ভেঙে বেরিয়ে এসেছে রড। উঠে গেছে পলেস্তারা l প্রথম আলো
শিক্ষকেরা জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনজন শিক্ষক কর্মরত। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৬ জন।
প্রধান শিক্ষক শংকর প্রসাদ চাকমা বলেন, বিদ্যালয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি রয়েছে। সেগুলো রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত ভবনটিতে। বেড়ার ঘরেও নথিপত্র রাখার পরিবেশ নেই।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সূত্র জানায়, ১৯৫৪ সালে গ্রামবাসীর উদ্যোগে মাইচছড়ি বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটির জাতীয়করণ হয় ১৯৭৩ সালে। এরপর থেকে গ্রামবাসী বেড়ার ঘর নির্মাণ করে দীর্ঘ বছর পার করে। ২২ বছর পর (১৯৯৫ সালে) ভবন পেয়েও অনিয়ম-দুর্নীতি হওয়ায় বেশি দিন ব্যবহার করা যায়নি। এ দুরবস্থার জন্য অভিভাবকদের অনেকে তাঁদের সন্তান বিদ্যালয়ে ভর্তি করান না। আর্থিকভাবে সচ্ছল অভিভাবকেরা দূরের বিদ্যালয়ে সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন।
মাইচছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও অভিভাবক নয়ন চাকমা বলেন, বিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠদানের সুব্যবস্থা নেই। এ জন্য ভয়ে অনেকে সন্তান বিদ্যালয়ে পাঠান না।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি করণ চাকমা বলেন, ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর এ পর্যন্ত তিনটি বেড়ার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামবাসীর আর্থিক অনটনের কারণে টেকসই ঘর নির্মাণ করা সম্ভব হয় না। সে জন্য এসব ঘর বেশি দিন টেকে না। চার বছর ধরে আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে নতুন ভবন নির্মাণের, কিন্তু হচ্ছে না।
নানিয়ারচর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দীপিকা খীসা বলেন, শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভবনে যেন কেউ না ঢোকে। বিকল্প ব্যবস্থা করে বিদ্যালয় পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের জন্য এলজিইডিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এলজিইডির নানিয়ারচর উপজেলা প্রকৌশলী পান্না বিজয় চাকমা বলেন, ‘মাইচছড়ি সরকারি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকায় চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে বরাদ্দ পেলে সেই বিদ্যালয়টি আগে টেন্ডারের মাধ্যমে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
----
তথ্যসুত্রঃ  প্রথমঅালো, ০৯ এপ্রিল ২০১৭, ০০:২৩

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.