মানবাধিকার লঙ্ঘন অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না



জাতিসংঘের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেমালুম অস্বীকার করে চলা কোনো একটি গণতান্ত্রিক সরকারের গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) এ প্রবণতা পরিহার করতে সরকারের প্রতি যথার্থই আবেদন জানিয়েছে। দেশে আদিবাসী বলে কিছু নেই বললেই ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি অকার্যকর করে রাখার দায় মুছে যায় না। ওই চুক্তির উল্লেখযোগ্য বিধানাবলি বাস্তবায়ন করতে না পারার সরকারি অসামর্থ্য কিংবা ব্যর্থতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গোপন নেই।
বাল্যবিবাহের হার কিংবা এ বিষয়ে সংসদে পাস করা সাম্প্রতিক আইনের কার্যকারিতা সম্পর্কে কোনো সাফাই বক্তব্য দেওয়া হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ থাকতে বাধ্য। হাইকোর্টে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। নির্বাচনে অনিয়ম এবং গুমের বিষয়ে সরকার যেসব ব্যাখ্যা দিয়েছে, জেনেভা কমিটি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। এটা অসত্য নয় যে, এ-সংক্রান্ত বহুবিধ বৈধ প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরেই জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগকে নির্বিচারে অস্বীকার করার প্রবণতা বন্ধ না করলে তা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে মদদদানকারী মহলকেই উসকে দিতে পারে। এর বিপদ সম্পর্কে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। তাকে মনে রাখতে হবে, অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না।
মনে রাখা দরকার, অন্যান্য দেশি-বিদেশি মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাও জেনেভা কমিটির মতোই একই মূল্যায়ন করছে। এসব মহলের সুপারিশগুলোও অভিন্ন, যা বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা পূর্বশর্ত। এর আগেও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে গিয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন, বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে। কিন্তু সরকারের সেই অঙ্গীকার যে গুরুতর প্রশ্নের সম্মুখীন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
এটা কৌতূহলোদ্দীপক যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের ভারত সফরের শুরুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারত চ্যাপ্টার বলেছে, ভারত-বাংলাদেশ যখন স্থিতিশীল গণতন্ত্রের বিষয়ে গর্ব অনুভব করে, তখন তাদের উচিত মানবাধিকার সুরক্ষায় অধিকতর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। আমরা আশা করব, সরকার এ বিষয়ে তার ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেবে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো,

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.