বিদ্যুতের এ কী হাল খাগড়াছড়িতে!
এমনিতেই দিনে অন্তত ১২ ঘণ্টার লোডশেডিং। তার ওপর একটু ঝোড়ো
বাতাস এলে কিংবা আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে বিদ্যুৎ চলে যাবে। আবার বিদ্যুৎ
থাকলেও মেনে নিতে হবে লো-ভোল্টেজের ভোগান্তি। দুরবস্থার এখানেই শেষ নয়।
সপ্তাহের প্রতি শনি ও সোমবার সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ
সরবরাহ বন্ধ থাকা—এই হচ্ছে খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ সেবার হাল!
বিদ্যুতের এই দুর্ভোগ কেবল কয়েকটি দিন বা মাসের জন্য নয়। বছরজুড়েই চলছে এ অবস্থা। শহর-গ্রামনির্বিশেষে জেলার সর্বত্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। জেলা সদরের গ্রাহকেরা মাঝে মাঝে বিদ্যুতের দেখা পেলেও উপজেলাগুলোর অবস্থা আরও করুণ। কখনো কখনো সেখানে একটানা কয়েক দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। গ্রামের অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ। সন্ধ্যা হলে কেরোসিনের কুপিই ভরসা। শহরের অনেক দোকানপাটেও রাতে কুপি বা মোমবাতি জ্বালানো হয়। অনেকে চালান জেনারেটর।
খাগড়াছড়ির আবাসিক হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নয়ন খান প্রথম আলোকে বলেন, হোটেলে পানি সরবরাহ, বৈদ্যুতিক পাখা, বাতি ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সচল রাখতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লিটার ডিজেল পোড়াতে হয়। আবার বিদ্যুৎ বিলও দিতে হয়।
জেলা শহরের কনফিডেন্স মিনারেল ওয়াটার কারখানার ব্যবস্থাপক শাক্যশিং চাকমা বলেন, লো-ভোল্টেজের কারণে জেনারেটর চালাতে হয়। অথচ প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। জেনারেটর দিয়ে পানি উৎপাদন করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে।
জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুতের অভাবে। খাগড়াছড়ি আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা নয়নময় ত্রিপুরা বলেন, সপ্তাহে দুই দিন বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীদের কষ্ট হয়। বিদ্যুতের ভোল্টেজ না থাকায় পানির পাম্প চলে না। এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র, এমনকি নেবুলাইজার মেশিনও চালানো সম্ভব হয় না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) খাগড়াছড়ি কার্যালয়ের সূত্র জানায়, খাগড়াছড়ির নয়টি এবং রাঙামাটির তিনটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ১১০ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রামের হাটহাজারী গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। সঞ্চালন লাইনের দূরত্ব এত বেশি এবং পুরোনো হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এ ছাড়া বর্তমান চাহিদার তুলনায় আশির দশকে তৈরি এই অবকাঠামোর ক্ষমতাও অনেক কম। তখন ৫০ হাজার গ্রাহকের কথা বিবেচনা করে অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। এখন গ্রাহকের সংখ্যা কয়েক লাখ। সারা দেশে বিদ্যুৎ খাতের অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন গত কয়েক বছরে হয়েছে, খাগড়াছড়িতে তার ছোঁয়া লাগেনি।
প্রতি সপ্তাহের শনি ও সোমবার টানা নয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার কারণ সম্পর্কে পিডিবির ওই সূত্র বলেন, বর্তমানে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের খুঁটি পরিবর্তনের কাজ চলছে। এ জন্য অনেক জায়গায় গাছ কাটতে হচ্ছে। এ কারণে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্যই শনি ও সোমবার বিদ্যুৎ সরবরাহ নয় ঘণ্টা বন্ধ রেখে ওই কাজ করা হয়।
বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলায় দিনের বেলার সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ২৫ মেগাওয়াট এবং রাতের সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ৩২ মেগাওয়াট বলে জানিয়ে পিডিবির ওই সূত্র বলেছে, দিনের বেলা সরবরাহ করা হয় সর্বোচ্চ ১৬ মেগাওয়াট এবং রাতে ২০ মেগাওয়াট। শুধু যে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, তা নয়। আছে লো-ভোল্টেজের সমস্যাও।
শহরের খবংপুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিজয়া খীসা বলেন, যখন বিদ্যুৎ থাকে তখনো ভোল্টেজ কম থাকায় ফ্রিজ, পানির মেশিন চলে না। পাখা ঘোরে না। আবার ঘন ঘন ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখতে হয়।
পানছড়ি উপজেলার নবময় চাকমা বলেন, বিদ্যুতের জন্য অনেক সভা-মিছিল করেও কোনো লাভ হয়নি। এখন তিনি তাঁর বাড়িতে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল এবং পানির জন্য টিউবওয়েল বসিয়েছেন।
এ বিষয়ে পিডিবির খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকসংখ্যা ও গ্রাহকের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। তা ছাড়া ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বিদ্যুৎ সমস্যার আরেকটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ির জন্য আলাদা একটি গ্রিড উপকেন্দ্র ও লাইন স্থাপনের কাজ হচ্ছে। এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। তারপর আর বিদ্যুতের সমস্যা হবে না।
বিদ্যুতের এই দুর্ভোগ কেবল কয়েকটি দিন বা মাসের জন্য নয়। বছরজুড়েই চলছে এ অবস্থা। শহর-গ্রামনির্বিশেষে জেলার সর্বত্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। জেলা সদরের গ্রাহকেরা মাঝে মাঝে বিদ্যুতের দেখা পেলেও উপজেলাগুলোর অবস্থা আরও করুণ। কখনো কখনো সেখানে একটানা কয়েক দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। গ্রামের অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ। সন্ধ্যা হলে কেরোসিনের কুপিই ভরসা। শহরের অনেক দোকানপাটেও রাতে কুপি বা মোমবাতি জ্বালানো হয়। অনেকে চালান জেনারেটর।
খাগড়াছড়ির আবাসিক হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নয়ন খান প্রথম আলোকে বলেন, হোটেলে পানি সরবরাহ, বৈদ্যুতিক পাখা, বাতি ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সচল রাখতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লিটার ডিজেল পোড়াতে হয়। আবার বিদ্যুৎ বিলও দিতে হয়।
জেলা শহরের কনফিডেন্স মিনারেল ওয়াটার কারখানার ব্যবস্থাপক শাক্যশিং চাকমা বলেন, লো-ভোল্টেজের কারণে জেনারেটর চালাতে হয়। অথচ প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। জেনারেটর দিয়ে পানি উৎপাদন করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে।
জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুতের অভাবে। খাগড়াছড়ি আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা নয়নময় ত্রিপুরা বলেন, সপ্তাহে দুই দিন বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীদের কষ্ট হয়। বিদ্যুতের ভোল্টেজ না থাকায় পানির পাম্প চলে না। এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র, এমনকি নেবুলাইজার মেশিনও চালানো সম্ভব হয় না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) খাগড়াছড়ি কার্যালয়ের সূত্র জানায়, খাগড়াছড়ির নয়টি এবং রাঙামাটির তিনটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ১১০ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রামের হাটহাজারী গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। সঞ্চালন লাইনের দূরত্ব এত বেশি এবং পুরোনো হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এ ছাড়া বর্তমান চাহিদার তুলনায় আশির দশকে তৈরি এই অবকাঠামোর ক্ষমতাও অনেক কম। তখন ৫০ হাজার গ্রাহকের কথা বিবেচনা করে অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। এখন গ্রাহকের সংখ্যা কয়েক লাখ। সারা দেশে বিদ্যুৎ খাতের অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন গত কয়েক বছরে হয়েছে, খাগড়াছড়িতে তার ছোঁয়া লাগেনি।
প্রতি সপ্তাহের শনি ও সোমবার টানা নয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার কারণ সম্পর্কে পিডিবির ওই সূত্র বলেন, বর্তমানে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের খুঁটি পরিবর্তনের কাজ চলছে। এ জন্য অনেক জায়গায় গাছ কাটতে হচ্ছে। এ কারণে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্যই শনি ও সোমবার বিদ্যুৎ সরবরাহ নয় ঘণ্টা বন্ধ রেখে ওই কাজ করা হয়।
বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলায় দিনের বেলার সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ২৫ মেগাওয়াট এবং রাতের সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ৩২ মেগাওয়াট বলে জানিয়ে পিডিবির ওই সূত্র বলেছে, দিনের বেলা সরবরাহ করা হয় সর্বোচ্চ ১৬ মেগাওয়াট এবং রাতে ২০ মেগাওয়াট। শুধু যে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, তা নয়। আছে লো-ভোল্টেজের সমস্যাও।
শহরের খবংপুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিজয়া খীসা বলেন, যখন বিদ্যুৎ থাকে তখনো ভোল্টেজ কম থাকায় ফ্রিজ, পানির মেশিন চলে না। পাখা ঘোরে না। আবার ঘন ঘন ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখতে হয়।
পানছড়ি উপজেলার নবময় চাকমা বলেন, বিদ্যুতের জন্য অনেক সভা-মিছিল করেও কোনো লাভ হয়নি। এখন তিনি তাঁর বাড়িতে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল এবং পানির জন্য টিউবওয়েল বসিয়েছেন।
এ বিষয়ে পিডিবির খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকসংখ্যা ও গ্রাহকের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। তা ছাড়া ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বিদ্যুৎ সমস্যার আরেকটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ির জন্য আলাদা একটি গ্রিড উপকেন্দ্র ও লাইন স্থাপনের কাজ হচ্ছে। এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। তারপর আর বিদ্যুতের সমস্যা হবে না।
তথ্যসূত্র প্রথম আলো,জয়ন্তী দেওয়ান, খাগড়াছড়ি | ২৫ মার্চ ২০১৭, ০২:৩২
No comments
Post a Comment