আদিবাসী নারীর উপর সহিংসতার কথা মনে হলে আঁতকে উঠি: বাঞ্ছিতা চাকমা
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পাহাড়ি নারী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
লেখাপড়া করা বাঞ্ছিতা বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সেই সব
দিনের কথা তুলে ধরেন।
এরপর কয়েক দশক পার হলেও এখনও যে ওই এলাকায় বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের হাতে পাহাড়িদের নির্যাতন-বৈষ্যমের শিকার হতে হয় সে কথাও বলেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটারের উচ্চতর সামাজিক গবেষণা মিলনায়তনে ‘পাহাড়ি নারীর সহিংসতার স্মৃতি ও পরিচিত নির্মাণের ভিন্ন পাঠ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন বাঞ্ছিতা চাকমা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির ও গবেষক বিপাশা চাকমা বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন।
বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, প্রথম ‘আদিবাসী’ ছাত্রী হিসেবে ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই ।
“তখন পাহাড়ে সশস্ত্র আন্দোলন চলছে। আমি ভেবেছিলাম সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে রাঙামাটিতে চলে যাব। কিন্তু বাবা বলেন, পড়াশুনা কর, সরকারি চাকরি করলে আদিবাসী সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করা যাবে।
“তখন যে সহিংসতা হয়েছিল তার কথা মনে পড়লে এখনও আঁতকে উঠি। ভয় কাজ করে। আমার ছোট বোনকে নিয়ে শহরে থাকতেন বাবা-মা। পরে তাকে গ্রামে রাখা হয়েছে, যাতে সেটেলারদের নির্যাতন থেকে রেহাই পায়।”
সর্বশেষ ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সেটেলারদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন সে সময় রাঙামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা বাঞ্ছিতা।
“তখন বাঙালিরা আমাকে অধ্যক্ষ হিসেবে ভালোভাবে নেয়নি, বরং নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করে।”
ওই দিনের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সকালের দিকে যখন কলেজে যাই তখন দেখি বাঙালি ছাত্ররা লাঠি নিয়ে কোথায় যেন হামলা করতে যাচ্ছে। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলি, দুই একটা লাঠিও নিয়ে নেই। পরে দুপুরে দিকে কলেজে মারমারি শুরু হল, আমি নিচের অধ্যক্ষ কক্ষে বসে আছি আর বাঙালি শিক্ষকরা আমাকে একা ফেলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। পরে দেখা গেল পুরো রাঙামাটি শহরে ভাংচুর, বাড়িতে আগুন দেওয়া হল। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হল।”
বাঙালি ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে উল্টো তাদের মার খাওয়ানোর অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন বলে জানান বাঞ্ছিতা চাকমা।
“আমি কয়েক বাঙালি ছাত্রকে রুমে ডেকে নিয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়াই। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে চলে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু উল্টো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল যে আমি এর জন্য দায়ী।”
তার কাছে লেখাপড়া শিখে আসা বাঙালিদের আচরণের কারণে নিজেকে শিক্ষক হিসেবে ব্যর্থ মনে হয়-বলেন বাঞ্ছিতা।
“আমার শিক্ষকতা জীবনে অনেক বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীকে পড়িয়েছি। তারা অনেক ভালো ভালো জায়গায় আছে, কিন্তু তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। বরং তারা আমাদের ওই ভাবে দেখে।”
তিনি বলেন, “আদিবাসী নারী নিয়ে তাদের একটা খারাপ ধারণা আছে। এর কারণ আমাদের নাক চ্যাপ্টা, আমরা কোনো ভালো পদে থাকতে পারব না, তাদের পদতলে থাকতে হবে- এই ধরনের একটা মানসিকতা তাদের মধ্যে আছে।”
বিপাশা চাকমা বলেন, “সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন থাকলেও আদিবাসী নারীদের কোনো আসন নেই। একজন অবাঙালি নারীকে তাদের প্রতিনিধি করা হয়েছে। সরকারকে বলব, আদিবাসী নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন তৈরি করতে।”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “আদিবাসী নারীদের প্রতিনিধিত্ব করার মতো একজন নারী নেই সংসদে। তবে সংরক্ষিত আসনের জন্য একজন আদিবাসী নারী খোঁজার উদ্যোগ নেয় সরকার। পরে দেখা গেল একজন বাঙালি নারীকে সেই আসনের প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।”
এর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমি যতই তাদের প্রতিনিধিত্ব করি না কেন, তাদের দুঃখ-কষ্ট আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।”
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
এরপর কয়েক দশক পার হলেও এখনও যে ওই এলাকায় বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের হাতে পাহাড়িদের নির্যাতন-বৈষ্যমের শিকার হতে হয় সে কথাও বলেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটারের উচ্চতর সামাজিক গবেষণা মিলনায়তনে ‘পাহাড়ি নারীর সহিংসতার স্মৃতি ও পরিচিত নির্মাণের ভিন্ন পাঠ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন বাঞ্ছিতা চাকমা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির ও গবেষক বিপাশা চাকমা বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন।
বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, প্রথম ‘আদিবাসী’ ছাত্রী হিসেবে ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই ।
“তখন পাহাড়ে সশস্ত্র আন্দোলন চলছে। আমি ভেবেছিলাম সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে রাঙামাটিতে চলে যাব। কিন্তু বাবা বলেন, পড়াশুনা কর, সরকারি চাকরি করলে আদিবাসী সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করা যাবে।
“তখন যে সহিংসতা হয়েছিল তার কথা মনে পড়লে এখনও আঁতকে উঠি। ভয় কাজ করে। আমার ছোট বোনকে নিয়ে শহরে থাকতেন বাবা-মা। পরে তাকে গ্রামে রাখা হয়েছে, যাতে সেটেলারদের নির্যাতন থেকে রেহাই পায়।”
সর্বশেষ ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সেটেলারদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন সে সময় রাঙামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা বাঞ্ছিতা।
“তখন বাঙালিরা আমাকে অধ্যক্ষ হিসেবে ভালোভাবে নেয়নি, বরং নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করে।”
ওই দিনের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সকালের দিকে যখন কলেজে যাই তখন দেখি বাঙালি ছাত্ররা লাঠি নিয়ে কোথায় যেন হামলা করতে যাচ্ছে। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলি, দুই একটা লাঠিও নিয়ে নেই। পরে দুপুরে দিকে কলেজে মারমারি শুরু হল, আমি নিচের অধ্যক্ষ কক্ষে বসে আছি আর বাঙালি শিক্ষকরা আমাকে একা ফেলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। পরে দেখা গেল পুরো রাঙামাটি শহরে ভাংচুর, বাড়িতে আগুন দেওয়া হল। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হল।”
বাঙালি ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে উল্টো তাদের মার খাওয়ানোর অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন বলে জানান বাঞ্ছিতা চাকমা।
“আমি কয়েক বাঙালি ছাত্রকে রুমে ডেকে নিয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়াই। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে চলে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু উল্টো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল যে আমি এর জন্য দায়ী।”
তার কাছে লেখাপড়া শিখে আসা বাঙালিদের আচরণের কারণে নিজেকে শিক্ষক হিসেবে ব্যর্থ মনে হয়-বলেন বাঞ্ছিতা।
“আমার শিক্ষকতা জীবনে অনেক বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীকে পড়িয়েছি। তারা অনেক ভালো ভালো জায়গায় আছে, কিন্তু তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। বরং তারা আমাদের ওই ভাবে দেখে।”
তিনি বলেন, “আদিবাসী নারী নিয়ে তাদের একটা খারাপ ধারণা আছে। এর কারণ আমাদের নাক চ্যাপ্টা, আমরা কোনো ভালো পদে থাকতে পারব না, তাদের পদতলে থাকতে হবে- এই ধরনের একটা মানসিকতা তাদের মধ্যে আছে।”
বিপাশা চাকমা বলেন, “সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন থাকলেও আদিবাসী নারীদের কোনো আসন নেই। একজন অবাঙালি নারীকে তাদের প্রতিনিধি করা হয়েছে। সরকারকে বলব, আদিবাসী নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন তৈরি করতে।”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “আদিবাসী নারীদের প্রতিনিধিত্ব করার মতো একজন নারী নেই সংসদে। তবে সংরক্ষিত আসনের জন্য একজন আদিবাসী নারী খোঁজার উদ্যোগ নেয় সরকার। পরে দেখা গেল একজন বাঙালি নারীকে সেই আসনের প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।”
এর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমি যতই তাদের প্রতিনিধিত্ব করি না কেন, তাদের দুঃখ-কষ্ট আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।”
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2017-03-10 00:13:55.0
No comments
Post a Comment