রাঙামাটিতে ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল মান্নানের সাহসী পদক্ষেপে সরকারী শত কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার
নির্মল বড়ুয়া মিলন,রাঙামাটি :: রাঙামাটিতে ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল মান্নানের
সাহসী পদক্ষেপের কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের
সরকারী ১শত কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৷
গত ২৪ মার্চ থেকে সেতু ও সড়ক বিভাগ মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের এর পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভুমিতে অবৈধ ও বেআইনী দখলদারদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয় ৷ তারই অংশ হিসাবে ২৮ মার্চ সোমবার রাঙামাটি শহরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভেদভেদী ও কলেজ গেইট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় ৷ এই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ষ্টেট অফিসার) আব্দুল মান্নান ৷ তাকে সহযোগিতা করেন রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রশিদসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী, উপবিভাগীয় সহকারী, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রশিদ এর সঙ্গীয় ৬০ জন পুলিশ সদস্য৷
এসময় সড়ক বিভাগের ভেদভেদী হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে অবৈধ দখলদারদের বাড়ীঘর ও ৫ টি মুরগীর খামার উচ্ছেদ করা হয় ৷
গত ২৪ মার্চ থেকে সেতু ও সড়ক বিভাগ মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের এর পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভুমিতে অবৈধ ও বেআইনী দখলদারদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয় ৷ তারই অংশ হিসাবে ২৮ মার্চ সোমবার রাঙামাটি শহরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভেদভেদী ও কলেজ গেইট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় ৷ এই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ষ্টেট অফিসার) আব্দুল মান্নান ৷ তাকে সহযোগিতা করেন রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রশিদসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী, উপবিভাগীয় সহকারী, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রশিদ এর সঙ্গীয় ৬০ জন পুলিশ সদস্য৷
এসময় সড়ক বিভাগের ভেদভেদী হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে অবৈধ দখলদারদের বাড়ীঘর ও ৫ টি মুরগীর খামার উচ্ছেদ করা হয় ৷
উচ্ছেদ অভিযান চলাকালীন সময়ে অবৈধ দখলদারদের মূল হোতা এডভোকেট আফসার
আলী, মাসুদুল হক (বদরুল), আব্দুল হালিম, মোঃ শাহ আলম প্রকাশ পাইপ পিটার শাহ
আলমসহ অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা গুলি ভলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় ৷
এসময় মাসুদুল হক (বদরুল) তার পক্ষে জায়গার দলিল,ম্যাপ,২০১৫ সালে গ্রোভল্যান্ড খাজনা প্রদানের রশিদ,খতিয়ান,১৮ জুন ২০১৫ তারিখে ১০২ রাঙাপানি মৌজার হেডম্যান রাজা দেবাশীষ রায় জায়গা বিক্রির অনুমতিসহ নামজারীর দেব মোহন চাকমা, পিতা সত্যাবান চাকমা,সাং- ভেদভেদী,১০২ নং রাঙাপানি মৌজা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা অনুকুলে সংযুক্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সুপারিশ প্রদান পত্র ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) রাঙামাটি সদর উপজেলা কার্যালয়ের স্মারক নং- মিউটিশন মামলা নং ২৫৯ (এস)/২০১৪ (১০২) সহকারী কমিশনার (ভুমি) রাঙামাটি সদর উপজেলা মোঃ সোহেল পারভেজ নিকট বিশেষ বিবেচনায় শুনানী আবেদন এর ছায়া কপি প্রতিবেদককে দেখান ৷
মাসুদুল হক (বদরুল) তার পক্ষে উপস্থাপিত জায়গা ১০২ নং রাঙাপানি মৌজার ১নং ভলিয়ম রাঙামাটি দলিলে দেখা যায় দেব মোহন চাকমা সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর ১৯৮২ সালে তিন একর জায়গার অনুকুলে ৬শত টাকা খাজনা ডেপুটি কমিশনার চিটাগং হিলট্র্যাক্স বরাবর পরিশোধ করেন ৷
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তত্কালীন চেংগীভেলী প্রজেক্ট এর প্রয়োজনে সরকারী নিয়ম মেনে তত্কালীন জায়গা ও গাছ পালার ক্ষতিপুরণ দিয়ে দেব মোহন চাকমার তিন একর জায়গা হুকুম দখল করে ৷ দেব মোহন চাকমা তার পাওনা ক্ষতিপুরণের টাকা বুঝে নিয়ে স্বপরিবারে খতিয়ান নং ২৭৭, জায়গার হোল্ডীং নং ৩১ থেকে উচ্ছেদ হয়ে চলে যান ৷
মজার ব্যাপার হল দীর্ঘ ২৩ বছর পর ২০১৫ সালের জুলাই মাসের ২ তারিখ রাঙামাটি চাকমা সার্কেল রাজা দেবাশীষ রায় এর কার্যালয়ে কে বা কাহারা দেব মোহন চাকমা’রা নামে ৮ টাকা ২৫ পয়সা গ্রোভল্যান্ড খজনা পরিশোধ করেন ৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চাকমা সার্কেল চীফ এর প্রচলিত ভুমি আইন অনুয়ায়ে একনাগাড়ে ১২ বছর গ্রোভল্যান্ড খজনা পরিশোধ করা না হলে সে ভুমি নিজে থেকে খাস খতিয়ান ভুক্ত হয়ে সরকারী ভুমিতে পরিনত হয় ৷
রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী গ্রামে স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী দেব মোহন চাকমার বড় ছেলে নিহার বিন্দু চাকমা ও মেঝ ছেলে রসিক বিন্দু চাকমা জানান তাদের পিতা এই জায়গা বিক্রয় করার ব্যাপারে তারা দু’জনে কিছুই জানেন না ৷
দেব মোহন চাকমা বর্তমানে তার ছোট ছেলে দয়াল বিন্দু চাকমা’র সাথে খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাস করেন ৷
মাসুদুল হক (বদরুল) তার পক্ষে উপস্থাপিত জায়গার মুল কাগজ গুলিতে বেশ কয়েক জায়গায় গড়মিল রয়েছে এসব জায়গার দলিল পত্র নিরিক্ষা করা বা যাচাই করা প্রয়োজন ৷
এদিকে কলেজ গেইট এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যালয়ের সামনে গড়ে ওঠা দোকান পাট, কাচা বাজার ও মাছ বাজারের দোকান গুলি উচ্ছেদ করা গেলেও কিছু অংশ জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি দীপেন দেওয়ানের বাঁধার মুখে থমকে যায় উচ্ছেদ অভিযান ৷ সাবেক এই বিএনপি নেতার দাবি অবৈধভাবে দখলকৃত জায়গার তার কাগজ পত্র রয়েছে, যদিও তিনি কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি ৷ উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্থ দোকান মালিক ও আশে পাশের উশৃংখল আইন অমান্যকারী জনতারা চট্টগ্রাম - রাঙামাটি সড়কে ব্যারিকেট দিয়ে বন্ধ করে দেয় যান চলাচল এতে ব্যাহত হয় সরকারী উচ্ছেদ অভিযান ৷ পরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় সেনাবাহিনীর ১৬ বীর ইনফেন্টারী রেজিমেন্ট রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মালিক শামস উদ্দিন মোহাম্মদ মঈন পিএসসি ও সহকারী পুলিশ সুপার রাঙামাটি (সদর সার্কেল) চিত্ত রঞ্জন পালের তাত্ক্ষনিক মধ্যস্থতায় সাময়িকভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ করা হয় ৷
দীপেন দেওয়ানের এই ধরনের সরকারী কাজে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিকাল সাড়ে ৭ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জরুরী সভা ডাকা হয়, এতে জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, জোন কমান্ডার মালিক শামস উদ্দিন মোহাম্মদ মঈন ,পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোস্তফা জামান, সহকারী পুলিশ সুপার চিত্ত রঞ্জন পাল,ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল মান্নান, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রশিদ, ৯ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও কলেজ গেইট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারন সম্পাদক শাহ আলম সভায় উপস্থিত ছিলেন ৷ জরুরী সভায় দীপেন দেওয়ানকে তার ভুমির কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হলেও দীপেন দেওয়ান সভায় উপস্থিত হননি ৷ স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সাধারন মানুষ মনে করেন দীপেন দেওয়ান নিজেও একজন অবৈধ দখলদার, যিনি নিজের অবৈধভাবে দখল করা ভুমি রক্ষা করার জন্য নিজেকে নেতা সাজিয়ে সরকারী কাজে বাধা প্রদান করছেন ৷
এব্যাপারে জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ বলেন, দীপেন দেওয়ান জেলা বিএনপি’র এক জন সদস্য ও নয় ৷ দীপেন দেওয়ান যদি বিএনপি’র নাম ব্যবহার করে সরকারী কাজে বাধা প্রদান করেন বা অন্যায় করেন সেই দায়ভার জেলা বিএনপি কোন ভাবে নিবেনা ৷ অপ্রীতিকর কোন কিছু ঘটলে সেটা দীপেন দেওয়ানের ব্যক্তিগত ৷
এখানে উল্লেখ্য, যে ভেদভেদী ও কলেজ গেইট এলাকার অন্যান্য দখলদারদের স্থাপনা যখন উচ্ছেদ করা হয় তখন দীপেন দেওয়ান কিছু না বলে ঘরে বসে ছিলেন ৷ দীপেন দেওয়ানের অবৈধভাবে দখল করা জায়গায় গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা শুরু হলে দীপেন দেওয়ান সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের হুমকি দেন ৷
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল মান্নান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মানুনুর রশিদের এ অভিযান সাহসী পদক্ষেপ বলে স্বাগত জানিয়েছেন রাঙামাটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সাধারন ভুক্তভোগীরা, যারা ব্যক্তি মালিকানাধীন ভুমি পর্যন্ত হারিয়েছেন এই ধরনের অবৈধ ভুমি খেকোদের দাপটে৷ তাদের দাবী রাঙামাটির ইতিহাসে এধরনের দৃষ্টান্ত এটাই প্রথম এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা ৷ ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল মান্নান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মানুনুর রশিদের এই কার্যক্রম যেন কোন বাঁধায় থমকে না যায় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা এবং এই ধরনের ভুমি খেকোদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে যথাযত আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন রাঙামাটির স্থায়ী বাসীন্দারা ৷
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান,খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় প্রতি দিন শতশত একর সরকারী ও ব্যক্তিমালিকাধীন ভুমি রাতারাতি দখল করে নিচ্ছে বেআইনী দখলদারেরা৷ জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতা/কর্মীদের সমন্বয়ে বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলী,বিএনপি,সমঅধিকার ও পিসিজেএসএস দলের নাম ব্যবহার করে একটি চক্রের ভুমিদসু্যরা নামে বেনামে বেআইনী ভাবে দখল করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি - কোটি টাকা, বিশেষ করে রাঙামাটি শহরে ডিসি বাংলো এলাকা,পুরাতন পুলিশ লাইন এলাকা,পুরাতন ষ্টেডিয়াম এলাকা (উন্নয়ন বোর্ডের পিছনে),পুরাতন হাসপাতাল এলাকা,বাস ষ্টেশন (শানত্মি নগর),কৃষি সম্প্রসারন এলাকা,ফরেষ্ট কলোনী,জেলা প্রশাসক এর কার্যালয় (সোনালী ব্যাংক এর পিছনে),জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী এলাকা (পাবলিক হেলথ),কলেজ গেইট এলাকা, টিটিসি সড়ক,পিটিআই সড়ক,ভেদ ভেদী,রেডিও সেন্টার,টিভি সেন্টার ও মানিকছড়ি এলাকায় প্রতিনিয়ত অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে ৷
রাঙামাটি শহরে যে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে এসবে মূলে রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ৷ আর এই চক্রের সদস্যরা হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগে ১৩ জানুয়ারী ১৯৮৬ সালে চাকুরীতে যোগদানকারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্লাম্বার মোঃ শাহ আলম,পিতা মোঃ জহিরুল হক গ্রাম মির্জানগর জেলা নোয়াখালী,রাঙামাটি কলেজ গেইট এলাকার আব্দুল হালিম, এদের সাথে জড়িত রয়েছে ক্ষমতাসীন দল,বিএনপি,জাতীয় পার্টি,পিসিজেএসএস,পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন ও ইউপিডিএফ এর নেতাকর্মীরা ৷
এসব অবৈধ দখলদার এবং ভুমিদস্যুদের আইনগত সহায়তা প্রদানকারী হলেন জানা গেছে এডভোকেট আফসার আলী ৷
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর দুইজন কর্মচারীও সেই অবৈধ ভুমিতে জায়গা ক্রয় করে মুরগির ফার্ম ও নিজেরা স্বপরিবারে বসবাস করছেন ৷
এডভোকেট আফসার আলী নিজেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়ী রাখার গ্যারেজ অবৈধভাবে দখল করে গ্যারেজকে নিজে থাকার বাড়ি বানিয়ে স্বপরিবার বসবাস করছেন ৷ একজন আইনের রক্ষাকারী এডভোকেট হয়ে যদি এমন বেআইনী অবৈধ কর্মে লিপ্ত হয় তবে সাধারন আইন না জানা মানুষ কি করবে সাধারন জনমনে প্রশ্ন ৷
এদিকে ২৯ মার্চ রাত ১০টার দিকে খবর পাওয়া যায় যে, উচ্ছেদকৃত ভেদভেদী এবং কলেজ গেইট এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গাতে একরাতের ব্যবধানে নতুন করে আবার অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা শুরু করেছে দখলদারেরা ৷
এসময় মাসুদুল হক (বদরুল) তার পক্ষে জায়গার দলিল,ম্যাপ,২০১৫ সালে গ্রোভল্যান্ড খাজনা প্রদানের রশিদ,খতিয়ান,১৮ জুন ২০১৫ তারিখে ১০২ রাঙাপানি মৌজার হেডম্যান রাজা দেবাশীষ রায় জায়গা বিক্রির অনুমতিসহ নামজারীর দেব মোহন চাকমা, পিতা সত্যাবান চাকমা,সাং- ভেদভেদী,১০২ নং রাঙাপানি মৌজা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা অনুকুলে সংযুক্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সুপারিশ প্রদান পত্র ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) রাঙামাটি সদর উপজেলা কার্যালয়ের স্মারক নং- মিউটিশন মামলা নং ২৫৯ (এস)/২০১৪ (১০২) সহকারী কমিশনার (ভুমি) রাঙামাটি সদর উপজেলা মোঃ সোহেল পারভেজ নিকট বিশেষ বিবেচনায় শুনানী আবেদন এর ছায়া কপি প্রতিবেদককে দেখান ৷
মাসুদুল হক (বদরুল) তার পক্ষে উপস্থাপিত জায়গা ১০২ নং রাঙাপানি মৌজার ১নং ভলিয়ম রাঙামাটি দলিলে দেখা যায় দেব মোহন চাকমা সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর ১৯৮২ সালে তিন একর জায়গার অনুকুলে ৬শত টাকা খাজনা ডেপুটি কমিশনার চিটাগং হিলট্র্যাক্স বরাবর পরিশোধ করেন ৷
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তত্কালীন চেংগীভেলী প্রজেক্ট এর প্রয়োজনে সরকারী নিয়ম মেনে তত্কালীন জায়গা ও গাছ পালার ক্ষতিপুরণ দিয়ে দেব মোহন চাকমার তিন একর জায়গা হুকুম দখল করে ৷ দেব মোহন চাকমা তার পাওনা ক্ষতিপুরণের টাকা বুঝে নিয়ে স্বপরিবারে খতিয়ান নং ২৭৭, জায়গার হোল্ডীং নং ৩১ থেকে উচ্ছেদ হয়ে চলে যান ৷
মজার ব্যাপার হল দীর্ঘ ২৩ বছর পর ২০১৫ সালের জুলাই মাসের ২ তারিখ রাঙামাটি চাকমা সার্কেল রাজা দেবাশীষ রায় এর কার্যালয়ে কে বা কাহারা দেব মোহন চাকমা’রা নামে ৮ টাকা ২৫ পয়সা গ্রোভল্যান্ড খজনা পরিশোধ করেন ৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চাকমা সার্কেল চীফ এর প্রচলিত ভুমি আইন অনুয়ায়ে একনাগাড়ে ১২ বছর গ্রোভল্যান্ড খজনা পরিশোধ করা না হলে সে ভুমি নিজে থেকে খাস খতিয়ান ভুক্ত হয়ে সরকারী ভুমিতে পরিনত হয় ৷
রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী গ্রামে স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী দেব মোহন চাকমার বড় ছেলে নিহার বিন্দু চাকমা ও মেঝ ছেলে রসিক বিন্দু চাকমা জানান তাদের পিতা এই জায়গা বিক্রয় করার ব্যাপারে তারা দু’জনে কিছুই জানেন না ৷
দেব মোহন চাকমা বর্তমানে তার ছোট ছেলে দয়াল বিন্দু চাকমা’র সাথে খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাস করেন ৷
মাসুদুল হক (বদরুল) তার পক্ষে উপস্থাপিত জায়গার মুল কাগজ গুলিতে বেশ কয়েক জায়গায় গড়মিল রয়েছে এসব জায়গার দলিল পত্র নিরিক্ষা করা বা যাচাই করা প্রয়োজন ৷
এদিকে কলেজ গেইট এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যালয়ের সামনে গড়ে ওঠা দোকান পাট, কাচা বাজার ও মাছ বাজারের দোকান গুলি উচ্ছেদ করা গেলেও কিছু অংশ জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি দীপেন দেওয়ানের বাঁধার মুখে থমকে যায় উচ্ছেদ অভিযান ৷ সাবেক এই বিএনপি নেতার দাবি অবৈধভাবে দখলকৃত জায়গার তার কাগজ পত্র রয়েছে, যদিও তিনি কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি ৷ উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্থ দোকান মালিক ও আশে পাশের উশৃংখল আইন অমান্যকারী জনতারা চট্টগ্রাম - রাঙামাটি সড়কে ব্যারিকেট দিয়ে বন্ধ করে দেয় যান চলাচল এতে ব্যাহত হয় সরকারী উচ্ছেদ অভিযান ৷ পরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় সেনাবাহিনীর ১৬ বীর ইনফেন্টারী রেজিমেন্ট রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মালিক শামস উদ্দিন মোহাম্মদ মঈন পিএসসি ও সহকারী পুলিশ সুপার রাঙামাটি (সদর সার্কেল) চিত্ত রঞ্জন পালের তাত্ক্ষনিক মধ্যস্থতায় সাময়িকভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ করা হয় ৷
দীপেন দেওয়ানের এই ধরনের সরকারী কাজে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিকাল সাড়ে ৭ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জরুরী সভা ডাকা হয়, এতে জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, জোন কমান্ডার মালিক শামস উদ্দিন মোহাম্মদ মঈন ,পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোস্তফা জামান, সহকারী পুলিশ সুপার চিত্ত রঞ্জন পাল,ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল মান্নান, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রশিদ, ৯ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও কলেজ গেইট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারন সম্পাদক শাহ আলম সভায় উপস্থিত ছিলেন ৷ জরুরী সভায় দীপেন দেওয়ানকে তার ভুমির কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হলেও দীপেন দেওয়ান সভায় উপস্থিত হননি ৷ স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সাধারন মানুষ মনে করেন দীপেন দেওয়ান নিজেও একজন অবৈধ দখলদার, যিনি নিজের অবৈধভাবে দখল করা ভুমি রক্ষা করার জন্য নিজেকে নেতা সাজিয়ে সরকারী কাজে বাধা প্রদান করছেন ৷
এব্যাপারে জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ বলেন, দীপেন দেওয়ান জেলা বিএনপি’র এক জন সদস্য ও নয় ৷ দীপেন দেওয়ান যদি বিএনপি’র নাম ব্যবহার করে সরকারী কাজে বাধা প্রদান করেন বা অন্যায় করেন সেই দায়ভার জেলা বিএনপি কোন ভাবে নিবেনা ৷ অপ্রীতিকর কোন কিছু ঘটলে সেটা দীপেন দেওয়ানের ব্যক্তিগত ৷
এখানে উল্লেখ্য, যে ভেদভেদী ও কলেজ গেইট এলাকার অন্যান্য দখলদারদের স্থাপনা যখন উচ্ছেদ করা হয় তখন দীপেন দেওয়ান কিছু না বলে ঘরে বসে ছিলেন ৷ দীপেন দেওয়ানের অবৈধভাবে দখল করা জায়গায় গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা শুরু হলে দীপেন দেওয়ান সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের হুমকি দেন ৷
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল মান্নান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মানুনুর রশিদের এ অভিযান সাহসী পদক্ষেপ বলে স্বাগত জানিয়েছেন রাঙামাটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সাধারন ভুক্তভোগীরা, যারা ব্যক্তি মালিকানাধীন ভুমি পর্যন্ত হারিয়েছেন এই ধরনের অবৈধ ভুমি খেকোদের দাপটে৷ তাদের দাবী রাঙামাটির ইতিহাসে এধরনের দৃষ্টান্ত এটাই প্রথম এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা ৷ ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল মান্নান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মানুনুর রশিদের এই কার্যক্রম যেন কোন বাঁধায় থমকে না যায় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা এবং এই ধরনের ভুমি খেকোদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে যথাযত আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন রাঙামাটির স্থায়ী বাসীন্দারা ৷
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান,খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় প্রতি দিন শতশত একর সরকারী ও ব্যক্তিমালিকাধীন ভুমি রাতারাতি দখল করে নিচ্ছে বেআইনী দখলদারেরা৷ জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতা/কর্মীদের সমন্বয়ে বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলী,বিএনপি,সমঅধিকার ও পিসিজেএসএস দলের নাম ব্যবহার করে একটি চক্রের ভুমিদসু্যরা নামে বেনামে বেআইনী ভাবে দখল করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি - কোটি টাকা, বিশেষ করে রাঙামাটি শহরে ডিসি বাংলো এলাকা,পুরাতন পুলিশ লাইন এলাকা,পুরাতন ষ্টেডিয়াম এলাকা (উন্নয়ন বোর্ডের পিছনে),পুরাতন হাসপাতাল এলাকা,বাস ষ্টেশন (শানত্মি নগর),কৃষি সম্প্রসারন এলাকা,ফরেষ্ট কলোনী,জেলা প্রশাসক এর কার্যালয় (সোনালী ব্যাংক এর পিছনে),জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী এলাকা (পাবলিক হেলথ),কলেজ গেইট এলাকা, টিটিসি সড়ক,পিটিআই সড়ক,ভেদ ভেদী,রেডিও সেন্টার,টিভি সেন্টার ও মানিকছড়ি এলাকায় প্রতিনিয়ত অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে ৷
রাঙামাটি শহরে যে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে এসবে মূলে রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ৷ আর এই চক্রের সদস্যরা হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগে ১৩ জানুয়ারী ১৯৮৬ সালে চাকুরীতে যোগদানকারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্লাম্বার মোঃ শাহ আলম,পিতা মোঃ জহিরুল হক গ্রাম মির্জানগর জেলা নোয়াখালী,রাঙামাটি কলেজ গেইট এলাকার আব্দুল হালিম, এদের সাথে জড়িত রয়েছে ক্ষমতাসীন দল,বিএনপি,জাতীয় পার্টি,পিসিজেএসএস,পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন ও ইউপিডিএফ এর নেতাকর্মীরা ৷
এসব অবৈধ দখলদার এবং ভুমিদস্যুদের আইনগত সহায়তা প্রদানকারী হলেন জানা গেছে এডভোকেট আফসার আলী ৷
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর দুইজন কর্মচারীও সেই অবৈধ ভুমিতে জায়গা ক্রয় করে মুরগির ফার্ম ও নিজেরা স্বপরিবারে বসবাস করছেন ৷
এডভোকেট আফসার আলী নিজেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়ী রাখার গ্যারেজ অবৈধভাবে দখল করে গ্যারেজকে নিজে থাকার বাড়ি বানিয়ে স্বপরিবার বসবাস করছেন ৷ একজন আইনের রক্ষাকারী এডভোকেট হয়ে যদি এমন বেআইনী অবৈধ কর্মে লিপ্ত হয় তবে সাধারন আইন না জানা মানুষ কি করবে সাধারন জনমনে প্রশ্ন ৷
এদিকে ২৯ মার্চ রাত ১০টার দিকে খবর পাওয়া যায় যে, উচ্ছেদকৃত ভেদভেদী এবং কলেজ গেইট এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গাতে একরাতের ব্যবধানে নতুন করে আবার অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা শুরু করেছে দখলদারেরা ৷
তথ্যসূত্র: http://www.chtmediatv.com/2447
No comments
Post a Comment