আমরা কি প্রকৃত বৌদ্ধ?

বোধিসত্ত্ব সিদ্ধার্থ গৌতম কল্পকল্পান্তরে পারমিতাসমূহ পুরন করে কপিলাবস্তু রাজা শুদ্ধোধনের ঔরসে মহামায়ার গর্ভে জন্মগ্রহন করে বুদ্ধগয়ার বোধিদ্রম মূলে ছয় বছর সাধনার পর বুদ্ধ নামে অভিহিত হন। তিনি দীর্ঘ পয়ঁতাল্লিশ বছর ভারতবর্ষে আনাচে-কানাচে তাঁর ধর্ম প্রচার করেন। সেই ধর্ম হচ্ছে বৌদ্ধধর্ম আর এই ধর্মের অনুসারী যারা তাঁদেরকেই বৌদ্ধ বলা হয়।
√বুধ হতে বোধি, বুদ্ধ ও বৌদ্ধ শব্দের উৎপত্তি। √বুধ জাগরণে ও বিকশনার্থে ব্যবহৃত হলেও বিশেষ করে এটি ‘জ্ঞান’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই বোধি শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞান, বুদ্ধ অর্থ জ্ঞানী এবং বৌদ্ধ হচ্ছে জ্ঞানের সাধক বা জ্ঞানীর শিষ্য। সাধারণত সম্যকসম্বুদ্ধ তাঁর ধর্ম ও সংঘের শরণাগত হয়ে ধর্মজ্ঞান আহরণে এবং ধর্মময় জীবন যাপনে সচেষ্ট ব্যক্তিকে বৌদ্ধ বলা হয়। আমরা সবাই বৌদ্ধ হিসেবে গর্ববোধ করি। কিন্তু আসলে আমরা কি প্রকৃত বৌদ্ধ? কি কর্ম সম্পাদন করলে একজন প্রকৃত বৌদ্ধ হিসেবে দাবী করতে পারি?
বর্তমানে আমদের পাহাড়ি বৌদ্ধ সমাজে দেখা যায়, কেউ বন, কেউ পার্বত্য ভিক্ষু বলে বিভাজন সৃষ্টি করে থাকে। এমনকি দানীয় সামগ্রী বন্টনের ক্ষেত্রেও কোন ভিক্ষু বা সংঘের অনুমতি না নিয়ে নিজের ইচ্ছা মতো মনগড়াভাবে ভাগ ভাতোয়ারা করে দিয়ে থাকে। এতে কাউকে না কাউকে বঞ্চিত করা হয়। আমি এরুপ অনেক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি, অথচ তারা জানে না দান করার পর এতে গৃহীর পক্ষে হাত দেয়া কোন অধিকার নেই। সংঘকে যখন দান দেয়া হয়েছে, তখন এটি সংঘ সম্পত্তি। সংঘের সম্পত্তি সংঘই বন্টন করা নিয়ে গ্রহন করবেন। এমনকি ভিক্ষু বিনয়েও নির্দেশ দেয়া আছে, সংঘের যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে লটারী মাধ্যমে হলেও বন্টন করে নিতে হবে। সেখানে কোন ব্রতী বা গৃহী সংঘের দানীয় সামগ্রী বন্টন করে চরম অপরাধ।
কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় দায়কেরা ভিক্ষু পরিচয় নিতে গিয়েও বনভিক্ষু না পার্বত্য ভিক্ষু ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করে। এ বিভাজন একজন আদর্শ বৌদ্ধ হিসেবে কখনও কাম্য নয়। এতে পূন্য সঞ্চয়ের নামে অত্যাধিক পাপ কর্ম সম্পাদিত হয়। একজন প্রকৃত বৌদ্ধ এরুপ আদর্শ হওয়া উচিত নয়। আমাদের মনে করতে হবে মার্মা, চাকমা, বড়–য়া, থাই, লংকান এমনকি বনহোক আর পার্বত্য ভিক্ষু হোক একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুই ভিক্ষু। ভিক্ষু জ্ঞানে তাঁকে সম্মান শ্রদ্ধা করা একজন প্রকৃত দায়কের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এরুপ যদি ধারণা করতে পারে তিনি বৌদ্ধ বিবেচিত হতে পারেন। না হয় নামেই বৌদ্ধ থেকে যাবে।
আবার কোন কোন প্রাচীন পার্বত্য বৌদ্ধ বিহার নাম পরিবর্তন করে বনবিহার পরিচয় দিয়ে বনবিহার করা হয়। এমনকি বুদ্ধমূর্তি পর্যন্ত পার্বত্য বুদ্ধ বলে জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়েছে। এরুপ পরিবর্ত সর্প চামড়া সদৃশ পরিবর্তন মাত্র। যতদিন মন-মানসিক পরিবর্তন হবে না, উন্নত হবে না, ততদিন প্রকৃত বৌদ্ধ হওয়া যাবে না। কারণ বৌদ্ধ ধর্ম হল চিত্ত প্রধান ধর্ম। বুদ্ধ বলেছেন, “চেতনাহং ভিক্খবে কম্মং বদামি, একায় চেতনা এক পটি সন্ধিং” অর্থাৎ- অন্তরের চেতনাকেই আমি কর্ম বলি। এক ক্ষনিক একটি মাত্র চেতনা বা কর্ম পুনজন্ম সংঘটন করতে বা সুখ-দুঃখ ভোগাদি ফল দান করতে সক্ষম। কাজেই মন-মানসিকতাই পরিবর্তন করতে হবে।
প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে যে, বর্তমানে প্রাতঃরাশ বা ‘পুত্যসিয়ং’ শব্দটি ব্যবহারিক অর্থে অপব্যবহার দেখা যায়। বিশেষ করে এক শ্রেণী পাহাড়ি বৌদ্ধদের কথোপকথনে। সকালের প্রাতঃরাশকে ‘পানীয়’ বলে আখ্যায়িত করে থাকে। অর্থাৎ পানীয় (প্রাতঃরাশ)। অথচ আমরা যুগ যুগ ধরে প্রাতঃরাশকে (পুত্যা সিয়োং) বলে থাকি। আমরা ‘পানীয়’ শব্দটি বিশ্লে¬ষন করলে পাই, পানীয় শব্দের ইংরেজী শব্দ হচ্ছে উৎরহশরহম- যার অর্থ হচ্ছে, যা পান করার যোগ্য, পান করা যায় এমন বস্তু, যা চিবিয়ে খেতে হয় না। পানীয়, সরবত এগুলো সমার্থক শব্দ। তাহলে দেখুন প্রাতঃরাশ বা খাদ্যভোজ্যকে ব্যবহারিক অর্থে ‘পানীয়’ বলা মানেই সুস্থ মস্তিষ্কে ডাহা মিথ্যা কথা বলার সামিল। এরুপ আরো অনেক ভূল শব্দের ব্যবহার দেখতে পাই, যেমন- উপগুপ্ত স্থবিরকে উপগুপ্ত বুদ্ধ বা জল বুদ্ধ, সীবলি স্থবিরকে সীবলি বুদ্ধ, এমনকি বুদ্ধের একই আসনে নব্য কিছু কিছু বৌদ্ধ ভিক্ষু ছবি বসিয়ে পূজা করে থাকি। এভাবে বংশপরম্পরা ভূল শিক্ষা গ্রহন করেই যাবে। উপমা স্বরুপ বলা যায়, এক সময় দুই ছাত্র এক প্রসিদ্ধ শিক্ষাগুরুর কাছে বিদ্যা শিখতে যায়। শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তরে প্রথম ছাত্র নতুন এবং দ্বিতীয় ছাত্র দুই বছর অধ্যয়ন করেছে বলে জানাই। প্রথম ছাত্র নিকট হতে ৫০০ টাকা এবং দ্বিতীয় ছাত্র হতে ১০০০ টাকা দাবী করেন। দ্বিতীয় ছাত্র আশ্চার্য হয়ে কারণ জানতে চাইলে শিক্ষক বলেন, ওকে দু’বছর সঠিকভাবে শিখানো যাবে। তুমি দু’বৎসর যে ভূল শিখেছে তা ভূলাতে তোমার জন্য অতিরিক্ত দু’বৎসর কষ্ট করতে হবে। এ সত্য অতি অল্প ব্যতীত সব পাহাড়ি বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হিন্দু, মুসলমান ইত্যাদি বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দিতে প্রথম ছাত্রের শিক্ষা দেয়ার মতো সহজ হবে। কিন্তু এসব মিথ্যা বা ভূল শিক্ষা করা পাহাড়ি বৌদ্ধদের দ্বিতীয় ছাত্রের মতো শিক্ষা দেয়া বেশী কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। সাধারণ মানুষের কথাই বা কি? বহু উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যেও সেই অজ্ঞতা, গোরামির অত্যাধিক দেখে আশ্চর্য হয়েছি। সেই ভ্রান্ত ধারনা শুধু অশিক্ষিতদের নয় শিক্ষিতদের রক্তেও যেন ওত:প্রোতভাবে মিশে আছে। সে দারুণ মিথ্যাদৃষ্টি হল, তারা জন্ম হতে বৌদ্ধ এবং জন্ম হতে কিছু বনদায়ক আর কিছু পার্বত্য দায়ক। এ অজ্ঞতার ফলে পাহাড়ি বৌদ্ধদের মধ্যে যেমন কেই যোগ্য দায়ক হয়ে দায়কের গৌরব ও পূন্য অর্জন করতে পারছেন না, তেমনি যোগ্য বৌদ্ধও হতে পারতেছে না। এটাই হলো বাস্তব সত্য।
হিমালয়ে পর্বতে এক প্রকার হরিণ বিচরণ করে থাকে, সেই হরিণের নাভীতে কস্তুরী জন্মাত। কস্তুরী হতে এমন সুগন্ধী বের হতো, সে সুগন্ধের সন্ধানের জন্য হরিণটি পাগলের মতো এদিক ওদিক বিচরন করতো। অবশেষে সে সুগন্ধির সন্ধান না পেয়ে দুর্বল হয়ে মুখে ফেনা বের করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকে। তবুও সে অবোধ হরিণটি বুঝতে পারতো না, তার নাভী থেকে সেই সুগন্ধি বের হচ্ছে। তদ্রুপ আমাদের সমাজে এমন মানুষ আছেন, তারা এ মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে, এক ভিক্ষু থেকে অন্য ভিক্ষুর নিকট গমন করে মুক্তি লাভের আশায়। তবুও তারা বুঝতে পারে না, তাদের নিজেদের অন্তরে দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় নিহিত রয়েছে। তাই বুদ্ধ বলেছেন,
অত্তাহি অত্তনো নাথো, কোহি নাথো পরোসিয়া,
অত্তনা’ব সুদন্তেন নাথং লভতি দুল্লভং।
অর্থাৎ- আপনি আপনার ত্রাণকর্তা, অন্য কেউ আপানার ত্রাণকর্তা নয়, নিজেকে সত্যিকারভাবে সংযত করতে পারলেই দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব। আতœনির্ভরশীল না হয়ে কারো পক্ষে দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়। তাই বুদ্ধ বলেছেন আতœদ্বীপ হয়ে বিচরণ কর, নিজের শরণ নিজেই গ্রহন কর, অন্যের উপর নির্ভর করা কোন প্রয়োজন নেই। এটাই মানব জীবনের প্রকৃষ্ট আশ্রয়।
আমরা বৌদ্ধ মাতা-পিতার ঘরেই জন্ম গ্রহন করলে তাকেই বৌদ্ধ বলে মনে করি। কিন্তু বুদ্ধ এটি সমর্থন করেননি। প্রকৃত বৌদ্ধ সম্পর্কে বুদ্ধ বলেছেন,
ন জচ্চা বসলো হোতি, ন জচ্চা হোতি ব্রাহ্মণো,
কম্মনা বসলো হোতি, কম্মনা হোতি ব্রাহ্মণো (বসল সূত্র, ২৮ নং গাথা)।
অর্থাৎ- জন্মের কারণে চন্দাল বা ব্রাহ্মণ হয় না, কর্মের কারণে চন্দাল বা ব্রাহ্মণ হয়। সেরুপ প্রকৃত বৌদ্ধ জন্মের কারণে নয়, কর্মের কারণেই বৌদ্ধ হতে হয়। কর্মই তার আসল পরিচয় প্রদান করবে। কিরুপ কর্মের দ্বারা বৌদ্ধ হয়। এ সম্পর্কে বুদ্ধ বলেছেন, তাকেই বৌদ্ধ বলা হয় যার কাছে নি¤েœ গুনাবলী গুলো থাকবে। তা হল :
১. বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের শারণাগত। সে শরণগমন কেবল প্রথাগত না হয়ে ত্রিরতেœর গুণ চিন্তায় চিত্তে আনন্দ লাভ করতে হবে।
২. ধর্মাধিপত্যযুক্ত। যথা- ক) আতœাধিপতি, খ) লোকাধিপতি ও গ) ধর্মাধিপতি।
ক) আতœাধিপতি : কোন কোন নরনারী তীব্র আতœসম্মাণ ও আতœমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হয়ে থাকেন। তারা নিজের কুলবংশ, জাতি এবং শিক্ষাদি বিশেষত: নিজের মনুষ্যত্বকে সম্মান ও গৌরব করে পাপ কাজ ও কোন হীন আচরণ করতে পারেন না। তারা নিজেকে সম্মান করে, গৌরব করে, নিজেকে অধিপতি করে, নিষ্পাপ পবিত্র ও উন্নত জীবন যাপন করেন। তাকে বলা হয় আতœাধিপতি।
খ) লোকাধিপতি : জগতে এমন কতগুলো নর-নারী বিদ্যমান তারা কোথাও গোপন স্থান দেখেন না। তারা মনে করেন এই পৃথিবীতে বহু ঋদ্ধিবান, সাধু-সন্ত বিদ্যমান তাঁরা সব সময় সব কিছু দেখতে পান। অজ্ঞ মানুষ বুঝে না, লোকচক্ষুর আড়ালে পাপ করলেও তারা প্রত্যক্ষ করে থাকেন। গোপনে কোনও পাপ কর্ম করা অসম্ভব। এই জন্য গোপনেও পাপ কাজ করা যায় না। যাঁরা সেরুপ ঋদ্ধি সম্পন্ন মহাসত্ত্বযুক্ত লোককে গৌরব করে, অধিপতি করে, শুদ্ধ পবিত্র উন্নত জীবন যাপন করে থাকেন। তাকেই লোকাধিপতি বলা হয়।
গ) ধর্মাধিপতি : জগতে এমন কতগুলো ধার্মিক ব্যক্তি আছেন, তারা মনে করেন “ধর্মই মনুষ্য, দেব ও নিবার্ণ সম্পদের মূল”। ধর্মই জীবনের সার। ধর্মহীন জীবন ব্যর্থ। ধর্মহীন ব্যক্তি বলবান, রুপবান, কুলীন, ধনী ও শিক্ষিত হলেও পশুর সদৃশ। সে জন্য প্রয়োজন হলে ধর্মের জন্য সব, এমনকি জীবনও পরিত্যাগ করে। মানুষ হস্তপদাদি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রক্ষার জন্য মানুষ দুঃখে অর্জিত ধন-সম্পত্তি ব্যয় করে থকে। জীবন রক্ষার জন্য সেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ত্যাগ করে। ধর্মের জন্য সৎপুরুষেরা ধন-সম্পদ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই ত্যাগ করেন। এরুপ নর-নারী সকল প্রকার দুঃখকে বরণ করেও ধর্মকে অবলম্বন করে নিষ্পাপ পবিত্র উন্নত জীবযাপন করে। তাকেই ধর্মাধিপতি বলা হয়।
৩. ধন-সম্পত্তি, মান-সম্পত্তি, আতœীয়-স্বজন এমনকি জীবন বিনাশেও তিনি বুদ্ধধর্ম ত্যাগ করে অন্যকে ভগবান রুপে গ্রহন করনে না। অর্থাৎ বুদ্ধের ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহন করবে না।
৪. মাতা একমাত্র পুত্রকে যেমন আপন প্রাণ দিয়েও রক্ষা করেন, একজন আর্দশ বৌদ্ধ তেমন প্রাণপন কায়-বাক্য-রক্ষা করেন। অর্থাৎ- তিনি প্রাণীহত্যা, চুরি ও ব্যভিচার না করে ‘কায়’ এবং মিথ্যা ভেদ কটু ও বৃথাবাক্য ত্যাগ করে ‘বাক্য’ রক্ষা করবেন।
৫. তিনি দর্শন, শ্রবণ, ঘ্রাণ, আস্বাদন ও স্পর্শে মঙ্গল হয় এমন ভ্রান্তধারণার বশবর্তী না হয়ে সৎকর্মের দ্বারাই মঙ্গল এবং অসৎ কর্মের দ্বারা অমঙ্গল হয়, এ সত্যে বিশ্বাসী হয়ে সম্যক দৃষ্টি সম্পন্ন হন।
৬. তিনি সদাসর্বদা ঈর্ষাবিহীন হয়ে এবং শঠতা-বঞ্চনাদি পাপকর্ম সম্পাদন না করে, বুদ্ধ শাসনে জীবন যাপন করেন।
৭. তিনি সকলে সহিত সম্প্রীতি বজায় রেখে সম্মিলিতভাবে জীবন যাপন করে। সম্যকদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিই তেমনভাবে জীবন যাপন করতে পারেন। অতএব, সম্যকরুপে দেখা, যে যেমন তাকে তেমন দেখাই হচ্ছে প্রজ্ঞা। বিদ্যালয়ে শিক্ষক যেমন ছাত্রদের যোগ্যতানুযায়ী ক্লাশে ভর্তি করেন এবং ক্লাশে ছাত্রদেরও পরীক্ষায় সমান নম্বর না দিয়ে যোগ্যতানুযায়ী নম্বর দিয়ে থাকেন।
৮. যে কোন বৌদ্ধকে আপন শক্তি অনুসারে দায়ক হতে হবে। দান বিষয়ে বুদ্ধ দেশিত ধর্ম এবং বোধিসত্ত্বের ত্রিবিধাকারে পরিপুরিত দান-পারমিতা পুনঃপুনঃ ভাবনা করে ধর্মের প্রচার ও প্রসার এবং মানব সমাজের হিতের জন্য তিনি দান করবেন।
৯. তিনি সংঘ আমার হয়ে অর্থাৎ সংঘের সুখে সুখী ও সংঘের দুঃখে দুঃখী হয়ে সংঘের উন্নতিকামী হয়ে জীবন যাপন করবেন । কারণ সংঘই বুদ্ধ শাসনের ধারক, বাহক, রক্ষক ও প্রবর্ধক।
১০. তিনি শাসনের পরিহানি দেখে তার অভিবৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হবেন। বুদ্ধের পরিনির্বাণের পর হতে সংঘ এবং দায়কই বুদ্ধের শাসন রক্ষা করে আসছেন। সংঘ এবং দায়কের অভিবৃদ্ধিতেই বুদ্ধের শাসন শাসন সমূন্ন হয়। অতীতে ভারতে এবং বৌদ্ধ প্রধান দেশের বিশিষ্ঠ বৌদ্ধরা বুদ্ধশাসন বৃদ্ধির জন্য যেমন ভিক্ষু হয়েছেন। ভিক্ষু হওয়ার জন্য অন্যকে প্রেরণা দিয়েছেন অথবা দায়ক হয়ে সংঘের আহার, বাসস্থান ও শিক্ষার সুব্যবস্থা করেছেন তেমনি বর্তমানে এখানকার বৌদ্ধকেও একক বা সম্মিলিতভাবে বুদ্ধ শাসন শ্রীবৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে। যেমন দু’চাকাকে অবলম্বন করে একটি গাড়ী চলে তেমনি ভিক্ষু ও দায়ককে অবলম্বন করেই বুদ্ধশাসন প্রবর্তিত হয়। তাই বিশিষ্ঠ বৌদ্ধকে ভিক্ষু অথবা দায়ক হয়ে জিনশাসনের অভিবৃদ্ধি জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, বৌদ্ধ মাতা-পিতার পরিবারে জন্ম গ্রহন করে যে বৌদ্ধ হওয়া যায় তা নয়। একজন প্রকৃত বৌদ্ধ হিসেবে দাবী করতে হলে বুদ্ধের নীতি-আদর্শ গুণাবলী থাকা আবশ্যক। নামেই বৌদ্ধ হলে হবে না। কাজেই কর্মেই বৌদ্ধ হতে হবে। তবেই একজন প্রকৃত দায়ক বা বৌদ্ধ হিসেবে পরিচয় দিতে পারা যাবে। একজন আর্দশ বৌদ্ধ হিসেবে পরিগণিত হবে। আদর্শ বৌদ্ধ কারণে সমাজ সদ্ধর্মের শ্রীবৃদ্ধি সাধিত হবে। একজন প্রকৃত বৌদ্ধই বুদ্ধের সত্য ধর্ম উপলদ্ধি করতে সক্ষম হবে। ত্রিরতœ ব্যতীত অন্য কোন শরণ গ্রহন করবেন না। সমন্ত ভ্রান্তধারণা ত্যাগ ত্রিরতœই একমাত্র শরণ হিসেবে জীবনে প্রতিস্থাপিত করবে।
লেখক পরিচিতি: সাধনাজ্যোতি ভিক্ষু, বি, এ (অনার্স) এম. এ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এম, এড, অধ্যক্ষ, হিলচাদিগাং বৌদ্ধ বিহার, যুগ্ন-সেক্রেটারী, পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ- বাংলাদেশ, সেক্রেটারী, পার্বত্য বৌদ্ধ মিশন।
https://www.facebook.com/notes/sadhanajyoti-bhikkhu/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4-%E0%A6%AC%E0%A7%8C%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7/1050077878369620

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.