ধবংসের অপেক্ষায় প্রাচীন চৈত্য
কেউ বলেন লাওয়ে জাদি আর কেউ বা বলেন চাতোপা জাদি। রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের পাশ ঘেষে জাদি পাড়া নামক স্থানে প্রায় ৩০০-৩৫০ ফুট উচুঁ পাহাড়ের চুড়ায় যুগ যুগ ধরে জাদিটি মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে।ramo.
জাদির পাদদেশের ৩০০ ফুট নিচু ভূমির পশ্চিম ও উত্তর পাশের স্থান স্থানীয় মগ ও বড়ুয়া বৌদ্ধরা শশ্মান হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন সুদীর্ঘ কাল থেকে। রামুতে বৌদ্ধদের উল্লেখযোগ্য শশ্মান বলতে এই একটি শশ্মানই বিদ্যমান আছে। অন্যান্য খন্ড খন্ড সকল শশ্মান প্রায় দখল বেদখল হয়ে গেছে।
বিশেষ করে শ্রীকুল, হাইটুপী, পূর্ব মেরংলোয়া, মধ্যম মেরংলোয়া, উখিয়ারঘোনা, দ্বীপশ্রীকুল, জাদিপাড়া, মগ পাড়াসহ প্রায় দশ গ্রামের মানুষ উক্ত জাদির শশ্মানকে মৃতব্যক্তি সৎকারের কাজে ব্যবহার করেন।
এক সময় জাদির সীমানা প্রাচীরের উপর দাঁড়ালে বিশ কিলোমিটার দূরের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখা যেত। একই সাথে প্রায় ৭-৮ মাইল দূর থেকে উক্ত জাদির সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত। প্রকৃতির কোলে লালিত পাহাড় চুড়ায় অবস্থিত দৃষ্টি নন্দন এ জাদিটি এক সময় সবাইকে আকৃষ্ট করে রাখত।
পাহাড় চুড়ায় অবস্থিত এ জাদির উচ্চতা ও প্রায় ১০০ ফুট। জাদি পাহাড়ে ওঠার মত পরিকল্পিত কোন সিঁড়ি নেই। উত্তর পশ্চিম কোণায় পাহাড়ের গা বেয়ে অনেক কষ্টে উপরে উঠতে হয়। পাহাড় ধ্বসের কারণে জাদির উত্তর ও পশ্চিম পাশের প্রাচীর ধ্বসে পড়েছে অনেক আগে থেকে। এর স্মৃতি চিহ্ন এখনো পর্যন্ত দেখা যায়। তার উপরে ২০১২ সালে প্রবল বর্ষণের কারণে পাহাড়ের বিশাল অংশসহ দক্ষিণ পাশের সীমানা প্রাচীরটি ধ্বসে পড়ায় বর্তমানে জাদিটি সম্পূর্ণ ভাবে ঝুঁকির কবলে পড়েছে।
সীমানা প্রাচীরের সাথে পাহাড়ের প্রায় ২০ ফুট মাটি ধ্বসে পড়ায় বর্তমানে ভাঙ্গন জাদির গোড়া ছুঁয়েছে। জাদির উত্তর পাশেও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। চারদিকের রক্ষাকবচ হারিয়ে মাঝখানে জাদিটি কেবল ভিত্তিভূমির উপর দাঁড়িয়ে আছে ধ্বসে পড়ার অপেক্ষায় । এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সীমানা প্রাচীর পুণঃনির্মাণ এবং পাহাড় ধ্বস ঠেকাতে দ্রুত যথাযত ব্যবস্থা না নিলে যেকোন সময় জাদি ধ্বসে পড়ে প্রাণহানিসহ বড় ধরণের অঘটন ঘটতে পারে।
জাদির পাদদেশ দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য ছোট বড় যাত্রীবাহী যানবাহন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলাচল করে। উক্ত জাদি ধ্বসে পড়া থেকে রক্ষা করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
১৯৯২ সালে উক্ত জাদিটি সর্বশেষ সংস্কার করা হয়। পরে ২০১১ সালে জাদির গায়ে সোনালী রং লাগানো হয়। তবে এই পর্যন্ত জাদির সংস্কার এবং রক্ষায় সরকারি ভাবে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নি। এই জাদি রামুর সুপ্রাচীন পুরাকীর্তি।
জানা যায়, জাদিটি লাওয়ে মোরং সর্বপ্রথম তৈরি করেন আনুমানিক ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। পরে রামুর খিজারী দালালের জেঠা মংপ্রু বৈদ্য জাদিটি প্রথম সংস্কার করেন। পরবর্তীতে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে দঅং দালাল ওটার উপরে বর্তমান আকারের জাদিটি নির্মাণ করেন। পাহাড়ের মাথায় মাটি তুলে চারপাশ চওড়া করেন এবং চারদিকে সীমানা প্রাচীর দেন এবং চওড়া করে ইট বিছিয়ে ঢেকে দেন যা এখনো দেখা যায়।
এই কাজে দুই ধরণের ইট ব্যবহৃত হয়েছে। একটার গায়ে মার্কা আছে ও. ডি অর্থ উ দঅং বা শ্রীযুক্ত দঅং অন্যটির মার্কা উল্টা এন. ও. ডি । এটির অর্থ পাওয়া যায় নি।
No comments
Post a Comment