রামুতে ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ মন্দিরগুলো পুননির্মাণের পর সেগুলো উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের রামু, উখিয়া এবং কক্সবাজারে গত বছর সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধমন্দিরগুলো পুননির্মাণের পর আজ মঙ্গলবার সেগুলো উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফেসবুকে কোরান শরীফ অবমাননার অভিযোগে গত বছর এই হামলার সময় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরবাড়ি এবং তাদের মন্দির আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সম্পর্কিত বিষয়

 সরকারি সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ বিহারগুলো পুননির্মাণ করা হলেও সেখানকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তার বোধ কতোটা ফিরেছে?

রামুর শ্রীকুল গ্রামের একজন বাসিন্দা দীপক বড়ুয়া। প্রায় এক বছর আগে রামুর বৌদ্ধ পল্লিতে যখন সাম্প্রদায়িক হামলা হয়, তখন ঘর ছেড়ে পালিয়ে একজন প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন দীপক বড়ুয়া।

তবে সেখানেও হামলার শিকার হয়ে পালিয়েছিলেন অন্যস্থানে। মিঃ বড়ুয়া বলেন, এখন থাকার মতো একটা জায়গা তৈরি হলেও, হামলার আগে এলাকায় সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে যে সুসম্পর্ক ছিল সে সম্পর্ক ফিরে আসাটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।
‘সম্প্রীতির ব্যাপারটা আসলে একদিনে আর অল্প সময়ের মধ্যে ফিরে আসে না। অনেকদিনের অনেক বছরের সম্প্রীতির যে সম্পর্ক ছিল তা একদিনেই নষ্ট হয়ে গেছে। সে সম্পর্কটা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে।’

একই ধরনের মন্তব্য করেন রামুর স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান হামলার বেশ কিছুদিন পর এলাকার মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক একটা সম্পর্ক তৈরি হলেও হামলার শিকার এমন অনেকের মনেই চাপা ক্ষোভ কাজ করছে।

তিনি বললেন আগে যেমন বড়ুয়া ও অন্য ধর্মের দুজনে বন্ধু ছিল। কিন্তু ঘটনার দিন তার বন্ধুকে বেরতে দেখে বড়ুয়ার মনে হয় ঘটনায় সে হয়ত জড়িত ছিল।

‘এমন সাধারণভাবে সবাই কথাবার্তা বলতেছে কিন্তু ভেতরে একটা ক্ষোভ কাজ করছে অনেকের মনে। পাশাপাশি থাকার পরও কথা বলতেছে ঠিকই কিন্তু মনের মধ্যে একটা ক্ষোভ কাজ করতেছে।’

ফেসবুকে কোরান শরীফ অবমাননার অভিযোগে ২০১২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে উখিয়া, ও টেকনাফ উপজেলায়।

দু'দিনের সহিংস হামলায় রামু ও উখিয়ায় ১৯টি বৌদ্ধ বিহার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পুড়ে যায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শত বছরের ইতিহাস।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ জাতীয় সুরক্ষা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী বিপ্লব বড়ুয়া বলছিলেন, ঐতিহ্যের যে নিদর্শন হারিয়ে গেছে তা কোনভাবেই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়, তবে বিহারগুলো পুননির্মাণের ফলে তাদের মনের ক্ষত কিছুটা হলেও পূরণ হবে।

‘এখানে যে সমস্ত বৌদ্ধ মন্দির ছাই হয়ে গিয়েছিল আগুনে, সেগুলো শুধু বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সম্পদ ছিল না। আমরা মনে করি এগুলো জাতীয় সম্পদ, হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এখানে যা ক্ষতি হয়েছে, আমরা যা হারিয়েছি তা কোনভাবেই প্রতিস্থাপন করা সম্ভব না।’

সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পর সরকারের উদ্যোগে রামু, উখিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা সংস্কার ও বিহারগুলো পুননির্মাণ করা হয়।

 রামুতে ১২টি এবং উখিয়ার ৭টিসহ মোট ১৯টি বৌদ্ধ বিহার নতুন করে নির্মাণ হলেও সেখানকার মানুষকে কি এ সংস্কার আশ্বস্ত করতে পেরেছে?

রামু ও উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরেছেন ঠিকই তবে অনেকের মনের মধ্যে একটা ভয় এখনো কাজ করছে ।

অনেকে মনে করছে ওইদিন যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে।

তারা বলছেন বিহার নির্মাণকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী অনেকদিন তাদের সাথে ছিল। কিন্তু বিহার নির্মাণ শেষে সেনাবাহিনীর চলে যাওয়ার সম্ভাবনায় একটা ভয় অনেকের মনেই কাজ করছে বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা দীপক বড়ুয়া।

হামলার শিকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ স্থানীয় সকল বাসিন্দা আশা করছেন, ওই হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হলে তাদের পরস্পরের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরো জোরদার হবে।

সুত্র: বিবিসি বাংলা

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.